শিক্ষার্থীকে পাঠের প্রতি আগ্রী করে ভোগার পর্ত কী?
আগ্রহের শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখো।
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের পুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর
শিক্ষার্থীকে পাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলার শর্ত
আমরা জানি মনোযোগ লিখনের অন্যতম প্রধান শর্ত। আর আয়ছ গুনোযোগকে নিশ্চিত করে। তাই শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি শিক্ষার্থীর যাতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়, শিক্ষককে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এর জন্য শিক্ষক নীচে উল্লেখিত কৌশলগুলি বাবহার করতে পারেন।
[1] পাঠের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দিতে হবে। এর ব্যাবহারিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাকে ওয়াকিবহাল করাতে হবে।
[2] শিক্ষার্থীর বয়স, মানসিক বিকাশ, স্বাভাবিক অনুরাগ এবং সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে। অনেক ক্ষেয়ে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক অনুরাণ অনুযায়ী নির্বাচন করা সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর ব্যাবহারিক প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
[3] শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু যেন খুব সহজ বা কঠিন না হয়। বিষয়বস্তু খুব সহজ হলে যেমন শিক্ষার্থী আগ্রহী হয় না, তেমনই খুব কঠিন হলেও বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ থাকে না। শিক্ষণীয় বিষয়ের মান যেন শিক্ষার্থীর সামর্থ্য অনুযায়ী হয়।
[4] প্রেষণা আগ্রহের অন্যতম উপাদান। শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর প্রেষণা সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টির ব্যাবহারিক তাৎপর্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে সচেতন করা।
[5] শিক্ষককে লক্ষ রাখতে হবে শিক্ষণীয় বিষয়টি যেন শিক্ষার্থীর কাছে বিরক্তিকর না হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষক কৌতুকের সাহায্যে বিষয়ান্তরে চলে গিয়ে বিভিন্ন রকম শিক্ষা-উপকরণের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষকে গতিশীল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করবেন।
[6] শিশুর পূর্বজ্ঞানের সঙ্গে সংগতি রেখে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে হবে। ফলে শিশুরা সহজেই পাঠে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুর ব্যক্তিগত আগ্রহকে শিক্ষার অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তাই মনোবিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শিশুকে পাঠে আগ্রহী করা প্রয়োজন।
আগ্রহের শিল্পগত তাৎপর্য শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের গুরুত্ব
শিক্ষাক্ষেত্রে ,র্বিশেষত শিখনে আগ্রহ পুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীচে আগ্রহের শিক্ষাগত তাৎপর্য আলোচনা করা হল-
[1] অনেক শিক্ষামনোবিদ বলেন, আগ্রহতেই শিক্ষার শুরু ও শেষ। বিষয়বস্তুর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা গেলে শিখনের একটি বড়ো অংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে করা যায়।
[2] আগ্রহ কাজে সক্রিয়তা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। আর সক্রিয়তা শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের জটিল বিষয়। অধ্যয়ন করতে হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর উদ্দীপনা ও সক্রিয়তা একান্ত প্রয়োজন যা আগ্রহের মাধ্যমেই সৃষ্ট হয়।
[3] শিখনে (যা শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়) মনোযোগ একটি আবশ্যিক শর্ত। আর এই মনোযোগ আকর্ষণের অন্যতম ব্যক্তিনির্ভর শর্ত হল আগ্রহ।
[4] শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ শিক্ষার অন্যতম লক্ষন। এই লক্ষ্যপূরণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠক্রমের সাথে সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিভিন্ন সহ- পাঠক্রমিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীকে আগ্রহী হতে হবে।
[5] ব্যক্তিজীবনে আগ্রহের বিকাশ ঘটে। বয়স অনুযায়ী আগ্রহের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন বা বিকাশের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত পুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে তেমনি পাঠ্যবিষয় ও সংপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিশুর আগ্রহের পরিবর্তন অনুযায়ী নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।
[6] শিক্ষার প্রতি আগ্রহ শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। শিক্ষার প্রতি আগ্রহ শিশু-শিক্ষার্থীকে পরিণত বয়সে শিক্ষাবিদ হতে সাহায্য করে। আর এই শিক্ষাবিদ শিক্ষা- ব্যবস্থার উন্নতিকরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন।