welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

সমুদ্রতলের বিস্তৃতি Sea Floor Spreading

ভূগাঠনিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় বা ধারণা হল সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি বা সমুদ্রবস্তুর বিশ্লেষণ । বর্তমানে প্রায় সমস্ত ভূতত্ত্ববিদ

 

★সমুদ্রতলের বিস্তৃতির উৎপত্তি ও ধারণা  Origin and Concept of Sea Floor Spreading

 • ভূমিকা ( Introduction ) 

ভূগাঠনিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় বা ধারণা হল সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি বা সমুদ্রবস্তুর বিশ্লেষণ । বর্তমানে প্রায় সমস্ত ভূতত্ত্ববিদগণ যথা - ফ্রান্সিস বেকন থেকে আলফ্রেড ওয়েগনার যেভাবে মহাদেশীয় ভূখণ্ডর চলাচল এবং বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী মহাদেশ ও মহাসাগরের বিতরণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার সম্পূরক হিসাবে সমুদ্রতল প্রসারণতত্ত্বের সূচনা হয় । শিশুদের খেলা Puzzle যেমন একটি ছবির বহু টুকরো অংশ জুড়ে পুনরায় একটি ছবি তৈরি করা হয় , ঠিক একই ভাবে কার্বেনিফেরাস যুগে দক্ষিণ গোলার্ধে আশারল্যান্ড এবং উত্তর গোলার্ধে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে দুটি সুবিশাল মহাদেশীয় খণ্ড ছিল । এই দুটি খন্ডকে একত্রিত করলে প্যানজিয়া ( pangea ) নামে একটি সুবৃহৎ মহাদেশ গঠিত হয় । এবং এই মহাদেশের চারপাশে যে বিশাল অন্তহীন সমুদ্র ছিল , তাকে প্যানথালাসা বা বৃহৎ মহাসাগর নামে অভিহিত করা হয় । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এগুলি ক্রমশ সরে গিয়ে বিভিন্ন মহাসাগরে এবং মহাদেশের রূপ নিয়ে অবস্থান করেছে । সমুদ্রতলদেশের প্রসারণশীলতা সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই মহাদেশীয় চলনশীলতার সম্পূরক হিসাবে কাজ করেছে । আলফ্রেড ওয়েগনারের মহাদেশীয় চলন ধারণা থেকে বোঝা যায় যে , সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মহাসমুদ্র ও মহাদেশের ভূখণ্ডের অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সামুদ্রিক ভূত্বকের প্রসারণের এক বড়ো ধরনের সম্পর্ক রয়েছে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দশকে সমুদ্রতল প্রসারণ তত্ত্ব সংস্থান বিদ্যায় নতুন ধারণার সৃষ্টি করেছে । এই প্রস্তাবটি 1953 সালে বিজ্ঞানী Hess থেকে Dietz- এর দ্বারা প্রথম উপস্থাপিত হয় । 

• ধারণার উৎপত্তি ( Origin of Concept )

 ভূপৃষ্ঠের প্রধান দুটি অংশ হল - মহাদেশ ও মহাসাগর । মহাদেশীয় ভূখণ্ডের সঞ্চরণ বিষয়টি যেমন বিভিন্ন বিজ্ঞানী দ্বারা স্বীকৃত তেমনি মহাসাগরগুলির ভূখণ্ড অপরিবর্তনীয় নয় । 1950 ও 60 - এর দশকের মধ্যে ডুবিজ্ঞানীরা ভূ - অভ্যন্তরে কতকগুলি সমীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে ,



1. সমুদ্র তলদেশের ভূপৃষ্ঠের গভীরতা 6 7 কিমি কিন্তু মহাদেশীয় ভূত্বকের গভীরতা 30-40 কিমি । 

2. শুধুমাত্র আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশেই শৈলশিরা অবস্থান করে তা নয় কিন্তু সব সমুদ্রের তলদেশেই শৈলশিরা অবস্থান করে , যা দীর্ঘ আঁকাবাঁকা সমুদ্রবস্তুকে আঁকড়ে রেখেছে । এই শৈলশিরা শীর্ষ বরাবর যে ফাঁকের সৃষ্টি হয় , সেই ফাটল দিয়ে ভূ - অভ্যন্তরের গণিত তরল ম্যাগমার নিঃসরণ ঘটে । 

3. কোনো সমুদ্রবক্ষের শিলার বয়স প্রায় ক্রিটেশাস যুগে নয় । কারণ ক্রিটেশাস যুগের সূচনা ঘটে প্রায় 140 মিলিয়ান বছরে পূর্বে । অর্থাৎ , এই তথ্য থেকে বলা যায় যে মহাদেশীয় ভূত্বক প্রাচীন ও সামুদ্রিক ভূত্বক নবীন শিলায় গঠিত । 

● ধারণার বিবর্তন ( Evolution of Concept )

 প্রয়াত ডুবিজ্ঞানী প্রফেসর হ্যারি হেস ( Harry Hess 1960 ) তাঁর লেখা History of Ocean বইটিতে সর্বপ্রথম সমুদ্রবক্ষের বিস্তারের ধারণা ব্যাখ্যা করেন । তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং জলসেনা বিভাগের প্রধান দায়িত্বে থাকার সময় , যখন তিনি নৌবাহিনী পরিচালনা করতেন তখন মহাসাগরীয় গভীরতা পরিমাপ করতেন । সেই গভীরতা পরিমাপ প্রাপ্ত তথ্যকে বিশ্লেষণ করে তাঁর ধারণা তুলে ধরেছিলেন সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ , তুরসায়নবিদ এবং ভূপদার্থবিদদের গবেষণাগুলিকে তিনি নিবিড় ও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ধারণা গড়ে তুলেছেন । তিনি উত্তর আমেরিকার উপকূল বরাবর মেক্সিকো থেকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ জরিপ করেন । এবং এই জরিপ থেকেই প্রাপ্ত তথ্যেকে বিশ্লেষণ করে তিনি মতবাদ উল্লেখ করেন যে পৃথিবীর সমুদ্রতলব্যাপী প্রায় সব সমুদ্রে বিশাল সামুদ্রিক শৈলশিরা অবস্থান করছে ।


 এই সমস্ত শৈলশিরায় রয়েছে অসংখ্য ফাটল বা চ্যুতি । এই চ্যুতি বরাবর গুরুমণ্ডল থেকে উঠে আসা ঊর্ধ্বগামী তাপীয় পরিচালন স্রোতের উপর মধ্যমহাসাগরীয় শৈলশিরা অবস্থিত । এবং মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরা থেকে মহাসামুদ্রিক ভূত্বক বিপরীত দিকে গতিশীল হয় ফলে এই দুইয়ের মধ্যে যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয় এবং মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরা বরাবর গুরুমণ্ডল থেকে আগত অবিরাম ব্যাসন্ট জাতীয় গণিত লাভার ঊর্ধ্বমুখী নির্গমন ঘটে থাকে । এই গলিত লাভা থেকে জলীয় বাষ্প নির্গত হয় পরবর্তী সময়ে শীতল ও জমাট বেঁধে কঠিন ভূত্বকের সৃষ্টি হয় এবং আগের সৃষ্টি হওয়া পুরাতন সমুদ্রতল ক্রমশ দূরে সরে যায় , ফলস্বরূপ সমুদ্রতলের ক্রমশ বিস্তার ঘটছে । এভাবে সমুদ্রতলের ভূহক যতই বিস্তার লাভ করছে ততই দুদিকের সীমানায় অবস্থিত মহাদেশীয় ভূত্বক একে অন্যের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে । এইভাবে পর্যায়ক্রমে মধ্য মহাসামুদ্রিক শৈলশিরা ( mid oceanic ridge ) বরাবর দীর্ঘ নতুন ভূহকের সৃষ্টি হয়ে চলেছে এবং সমুদ্র বক্ষের বিস্তৃতি ঘটছে । এই ধরনের সামুদ্রিক নতুন ভূহক সৃষ্টির ঘটনা শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষেত্রে নয় ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে । বিভিন্ন গবেষণা এবং হিসেব করে বিজ্ঞানী হেস দেখেছেন যে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব উপকূল পশ্চিম উপকূল থেকে বছরে 1 সেমি করে সরছে । প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রের তলদেশের প্রসারণের হার বছরে 5 সেনি কিন্তু ভারত মহাসাগরের সমুদ্রের তলদেশের প্রসারণের হার বছরে প্রায় 20 সেমি । এই গতি কম হলে 20 কোটি বছরে সমগ্র সামুদ্রিক ভুলক গঠিত হবে ।

• সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতির কারণ ( Casuses of Sea Floor Spreading ) । 

( 1 ) ম্যাগমার পরিচলন স্রোত : সমুদ্রবন্ধে বিস্তৃতির প্রধান কারণ হল ম্যাগমার পরিচলন হোত । মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা বরাবর ম্যাগমার পরিচলন স্রোতের জন্য দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায় । ফলে সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি ঘটে । 

( i ) সঞ্চরণশীল পাত : ভূগর্ভের অভ্যন্তরে পাতগুলি সর্বদা সঞ্জয়শীল । কোন স্থানে পাতগুলি পরস্পর থেকে দুরে যাচ্ছে আবার কোথাও পরস্পরের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাতের বিনাশ হচ্ছে । 

★সমুদ্রতলের বিস্তৃতির প্রমাণ Evidences of Sea Floor Spreading ।

মার্কিন বিজ্ঞানী হ্যারি হেস - এর সমুদ্র তলের বিস্তৃতির প্রমাণগুলি হল--

 1. সমুদ্র সঞ্চয়ের গভীরতা ( Depth of Ocean Deposit ) ।

গভীর সমুদ্রে সঞ্চয়ের পরিমাণ খুব কম । এর থেকে প্রমাণিত হয় যে তলদেশ খুব বেশি প্রাচীন নয় । সামুদ্রিক শৈলশিরা থেকে উপকূলের দিকে যত যাওয়া যায় ততই সমুদ্র সময়ের গভীরতা বৃদ্ধি পায় এবং সঞ্চয়ের নীচের স্তর ওপরের স্তর অপেক্ষা পুরোনো হয় । শৈলশিরা অঞ্চলে নবীন অবক্ষেপ এবং উপকূলের দিকে ক্রমণ প্রাচীন অবক্ষেপ দেখা যায় 

2. আগ্নেয় শিলার ব্যয়াস ( Age of Igneous Rocks ) 

মহাসাগরীয় ভূত্বক থেকে আগ্নেয় শিলার নমুনা সংগ্রহ করে দেখা গেছে যে , শৈলশিরার কাছাকাছি অঞ্চলে আগ্নেয় শিলার বয়স কম এবং শৈলশিরা থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে বয়স অপেক্ষাকৃত বেশি । শৈলশিরায় সমান্তরাল ফাটলের উপস্থিতি এবং এই ফাটলের মধ্যে নবীন ব্যাসন্ট লাভার বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যায় । এই লাভাই নবীন আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে এবং সমুদ্রতলের বিস্তার ঘটায় ও আমেয় দ্বীপের জন্ম দেয় ।

 3. গায়টের অবস্থান ( Location of Guyot ) 

সমুদ্র তে প্রায় সমতল শীর্ষদেশযুক্ত আগ্নেয় পর্বতকে ' গায়ট ' বলে । সমুদ্রগর্তে লাভা জনে গায়ট সৃষ্টি হয় , এবং সমুদ্র তরলের আঘাতে ক্ষয় পেয়ে সমতল আকার ধারণ করে । সমুদ্রের তলদেশের প্রায় সব গায়টই সমুদ্রতলের কাছাকাছি অবস্থান করার কথা অথচ দেখা গেছে যে , সামুদ্রিক খাত অঞ্চলে গায়টগুলি অনেক গভীরে অবস্থিত । সমুদ্রতল বিস্তৃত হওয়ার ফলে সামুদ্রিক ভূত্বক মহাসাগরীয় খাতে ঢুকে যাচ্ছে এবং সামুদ্রিক খতের দিকে গায়েটগুলির গভীরতা ক্রমশ বাড়ছে 

4. চুম্বকত্ব প্রমাণ 

বিজ্ঞান ( B Brunhes ) এবং কেডালিয়র ( R Chevalier ) - এর মতে , সমুদ্রবক্ষে এমন অনেক আগ্নেয় শিলা রয়েছে যেগুলো বর্তমান ভূ - চুম্বকীয় দিকের বিপরীতে চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হয়েছে । এঁদের সমীক্ষা থেকে জানা যায় সামুদ্রিক শৈলশিরার সমান্তরালে উভয়দিকে বলয়ের মতো বিস্তৃত উচ্চ ও নিম্নমানের চৌম্বকত্ব রয়েছে । এক এক বলয়ে চৌম্বকীয় মেরুর বিপরীত অভিমুখ লক্ষ করা যায় । অর্থাৎ , একটি বলয়ে যদি তার উত্তর মেরু পৃথিবীর উত্তরমেরুর দিকে থাকে , তাহলে পাশের বলয়ে তা বিপরীত হবে । যখন কোনো শিলা স্বাভাবিক চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হয় , তখন ভূ - চুম্বকর এবং শিলা চুম্বকত্ব পরস্পর যোগ হয়ে চৌম্বকক্ষেত্রের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় । আর যখন পরস্পর বিপরীত হয় তখন চৌম্বকত্ব বিয়োগ হয়ে তীব্রতা হ্রাস পায় । বিজ্ঞানী ভাইন ও ম্যাথুজের সমীক্ষা অনুযায়ী এই বলয়গুলো মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরার প্রায় সমান দূরত্বে ডোরাকাটা বিন্যাসরূপে দেখা যায় । এই বিন্যাস প্রমাণ করে মধ্য - সামুদ্রিক শৈলশিরার অ থেকে সমান হারে সুদিকে সমুদ্রের তলদেশ বিস্তৃত হয়ে চলেছে । এই চৌম্বকর বিন্যাস চিহ্নিতকরণের ফলে সামুদ্রিক ব্যাসন্ট শিলার বয়স এবং সেইসঙ্গে সমুদ্রতলের বিস্তারের হারও পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে । দেখা গেছে বর্তমান মহাসাগরীয় তলের গভীর অংশের শতকরা 50 ভাগ গড়ে উঠেছে বিগত 6.5 কোটি বছরের মধ্যে । 

5. গভীর সমুদ্রের খনন ( Mining of Deep Sea ) : 

সমুদ্রতলের বিস্তারের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হল - গভীর সমুদ্রের খনন প্রকল্প । যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের ( US - National Science Foundation ) আর্থিক সহায়তায় পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রের তলদেশের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয় । তাতে দেখা যায় উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে মধ্য - সামুদ্রিক

শৈলশিরা অঞ্চলে মাত্র 2 কিমি গভীরতায় তীব্র তাপপ্রবাহের অস্তিত্ব যা ম্যাগমা চেম্বারের উপস্থিতির লক্ষণ চিহ্নিত করে । এছাড়া শৈলশিরার সমান্তরালে ফাটলের উপস্থিতি এবং এই ফাটলের মধ্যে নবীন ব্যাসন্ট লাভার বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া গেছে ।

 7. ভূমিকম্পের উপস্থিতি ( Presence of Earthquake ) :

 ভূমিকম্পের কেন্দ্রগুলি মধ্য - সামুদ্রিক শৈলশিরার কাছে যে গভীরতায় অবস্থিত তার থেকে অনেক বেশি গভীরতায় মহাসাগরীয় খাত দেখা যায় । মহাসাগরীয় খাতে 700 কিমিরও অধিক গভীরতায় ভূকম্পের কেন্দ্র অবস্থান করে । এই ধারণা থেকে বলা যায় যে মহাসাগরীয় ভূত্বক সামুদ্রিক খাতের মধ্যে দিয়ে 700 কিমি গভীরতায় নেমে যেতে পারে । 

৪. শিলায় তাপীয় প্রবাহের পার্থক্য ( Difference of Heat Flow in Rocks ) : 

সংগৃহীত শিলার নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায় যে , মহাদেশীয় শিলার প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলের পরিমাণ সামুদ্রিক শিলা অপেক্ষা অধিক । যেহেতু তেজস্ক্রিয় পদার্থের স্বাভাবিক ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে তাপের উদ্ভব ঘটে সেহেতু ধরে নেওয়া হয় যে মহাদেশীয় অংশে মহাসমুদ্র অপেক্ষা অধিক ভূতাপ নির্গত হয় । আশ্চর্যজনকভাবে মহাসমুদ্র ও মহাদেশের ভূতাপ প্রবাহের মধ্যে বিশেষ তারতমা 

9. অভিকর্ষ অসংগতি ( Gravity Anomaly ) : 

সমুদ্রতলদেশ ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে হতে কোনো এক সময়ে তা মহীখাত অংশে অধঃপাত বলয় বরাবর আম্ব্রেনোস্ফিয়ার প্রবেশ করে । তখন ওই ভূত্বকীয় শিলা গলে গিয়ে অপেক্ষাকৃত হালকা শিলার সাথে মিশে যায় , ফলস্বরূপ শিলার ঘনত্ব হ্রাস পায় , তাই মহীযাত অংশে শিলার ধনাত্মক অভিকর্যের পরিবর্তে ঋণাত্মক অভিকর্ষ লক্ষ করা যায় । 

10. ট্রান্সফর্ম চ্যুতি ( Transform Fault ): 

মহাসমুদ্রে ভূত্বকের প্রসারণ এবং তার বিভিন্ন প্রমাণ যেটি উইলসন দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । তিনি লক্ষ করেন যে ভূত্বকীয় খণ্ডের চলাচল যুক্ত রয়েছে অনুভূমিকায় সরণের সঙ্গে যুক্ত কিছু আয়াম ছাড়ি । তিনি লক্ষ করেন যে বিশেষ ক্ষেত্রে ভূত্বকের এই ভূমিরূপগুলি হঠাৎ এক এক চ্যুতি বরাবর আকস্মিকভাবে থেমে গেছে । 1965 সালে তিনি ' নেচার ' পত্রিকায় বলেন যে সমস্ত সচল ও প্রসারণশীল ভূত্বকীয় খন্ডগুলো পরস্পর সংযুক্ত এবং একটা চ্যুতি বরাবর একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন । যা পরবর্তী সময় এই ভূখণ্ডগুলিকে পাত হিসাবে চিহ্নিত করেন । এই পাত দুধরনের । যথা — মহাসাগরীয় ও মহাদেশীয় । মহাসাগরীয় ভূত্বকে চৌম্বকীয় বিচ্যুতির বলয়গুলি অনুভূমিক বরাবর সরে যায় , এই ছাতি ট্রান্সফর্ম ছাতি নামে পরিচিত । ট্রান্সফর্ম চ্যুতির ক্ষেত্রে মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরার অংশবিশেষ । চ্যুতি বরাবর সমকোণে সরে যায় । উত্তর আমেরিকার পশ্চিমপ্রান্তে সান আদ্রিয়াস্ চ্যুতি যার একদিকে রয়েছে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় উচ্চভূমি এবং অন্যদিকে রয়েছে জোয়ান ডে ফুরস্ শৈলশিরা ।  

★সমুদ্রতলের বিস্তৃতির প্রক্রিয়া Mechanism of Sea Floor Spreading 

সমুদ্রতলের প্রসারণের প্রক্রিয়া নিয়ে কতকগুলি তথ্য পরিলক্ষিত হয়েছে । সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল 

1. তপ্ত বিন্দু ( Hotspot Theory ) : 

ভূ - অভ্যন্তরের বিশৃঙ্খল ক্রিয়ার ফলে ভূত্বকের ফাটলের মাধ্যমে ম্যাগমা নির্গমনের প্রক্রিয়ায় আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয় । অগ্ন্যুৎপাত এটা প্রমাণ করে যে ভূপৃষ্ঠের পাতগুলি সঞ্চরণশীল অর্থাৎ পাতগুলি সঞ্চারিত হচ্ছে , সুতরাং , তপ্তবিন্দু বরাবর তাপীয় ক্রিয়ার ফলে সামুদ্রিক পাতগুলি সঞ্চালিত হয়ে নতুন সমুদ্রবন্ধের সৃষ্টি

2. বৃত্তচাপের দ্বীপের বিস্তৃতি ( Island Arc Spreading ) 

Danking 1970 সালে মত প্রকাশ করেন যে বুঝাপীয় । দ্বীপগুলি নির্দিষ্ট সময় অন্তর দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় এবং এর সরণের ফলে দ্বীপমালার মাঝে অবস্থিত বুচাপ বেসিনে । সামুদ্রিক ভূত্বকের সৃষ্টি করে । 

3. সামুদ্রিক খাত তত্ত্ব ( Ocean Trench Theory ) : 

এই তত্ত্ব অনুসারে আগ্নেয়খাত সামুদ্রিক খাতের মধ্যবর্তী অংশ সামুদ্রিক ভূতকা এবং পলিমিশ্রিত কতকগুলি ফালি ও স্তূপ দ্বারা গঠিত , যারা সামুদ্রিক খাতের নিম্নগামী পাত হতে পৃথক হয়ে নতুন সমুদ্রতল গঠন করে । 

4. বর্তমান তত্ত্ব ( Recent Hypothesis ) : 

সমুদ্রতল প্রসারণ সম্পর্কিত আধুনিক মতটি প্রকাশ করেন Harry Hess ( 1960 ) Dietz ( 1962 ) , Frederick Vine ( 1963 ) এবং Drummond Mathews ( 1963 ) । এদের মতে , পরিচলন স্রোত ক্রিয়ার ফলে ফাটলের সব অংশ দিয়ে ম্যাগমার মাধ্যমে মধ্য - সামুদ্রিক শৈলশিরার সৃষ্টি হয় । এবং পরিচলন স্রোতের ক্রিয়ার ফলে যে সমস্ত ব্যাসন্ট জাতীয় নিঃসারী ও উদ্‌বেধী ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় , তারাও নতুন সমুদ্রতল গঠনে সাহায্য 

★মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরা Mid - Oceanic Ridge 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত অন্যতম হাতিয়ার ছিল ডুবো জাহাজ । এই ডুবোজাহাজের নাবিকেরা মহাসাগর গর্ভের পৃষ্ঠে যে বৈচিত্র্যপূর্ণ চিত্র বা তথ্য সংগ্রহ করে তুলে ধরেন , তা মহাদেশীয় ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্যের তুলনায় অনেক বেশি বিচিত্র । সাধারণত মহাসাগর গর্ভে ধনাত্মক সমস্থিতিক বৈষম্য ( positive isostatic anomaly ) , বিস্তীর্ণ গভীর সমভূমি , সুদীর্ঘ পর্বতশ্রেণি কিংবা ঋণাত্মক বৈষম্য বলয় । এদের মধ্যে যা হল সুদীর্ঘ পর্বতশ্রেণি । এই পর্বতের অস্তিত্বের আভাস পাওয়া গিয়েছিল ঊনবিংশ শতকে । এই সমস্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করে তা লিপিবদ্ধ করার সময়ে পাশাপাশি সংগ্রহ করা হল । মহাসাগর গর্ভের ভূপৃষ্ঠে প্রায় 7 হাজার নমুনা । এই সমস্ত নমুনাগুলির পরীক্ষা এবং গবেষণা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে । প্রাথমিক তথ্য থেকে যা পাওয়া গেল তা হল মহাসাগরীয় ভূত্বকের তেজস্ক্রিয় মিতিক প্রাচীনত্ব । এবং বোঝা গেল শিলার প্রাচীনত্রই 20 কোটি বছরের বেশি নয় । কিন্তু মহাদেশীয় ভূপৃষ্ঠে প্রাচীনতম শিলার প্রাচীনত্ব ততদিনে 300 কোটি বছর ছাড়িয়ে গেছে । তাহলে কী মনে হয় মহাসাগরীয় তলের স্থায়িত্ব মহাদেশীয় ভূপৃষ্ঠের তুলনায় কম ? এই প্রশ্নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আরও মহাসাগর পৃষ্ঠের ভূ - ভাগ সম্বন্ধে বহু তথ্য এসে পৌঁছালো । তথ্যগুলি নাড়াচাড়া করে বোঝা গেল যে , উত্তর আটলান্টিকের কেন্দ্র দিয়ে প্রসারিত শৈলশ্রেণিটি ভূপৃষ্ঠে অবস্থানরত শৈলশ্রেণির মতো বিচ্ছিন্ন নয় । এটির বিস্তার প্রায় ৪০ হাজার কিমি । এর একদিকে আমেরিকান পাত এবং অন্যদিকে ইউরেশীয় ও আফ্রিকান পাত পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাওয়ায় এর উদ্ভব । এই শৈলশ্রেণি বরাবর অগভীর ভূমিকম্প প্রায়ই লক্ষ করা যায় । ভূমিকম্পের P ও S তরঙ্গের গতিবিধি পর্যালোচনা করে জানা গেছে যে , এই পর্বতশ্রেণি ভূ - ভাগে অন্যান্য পর্বতশ্রেণির মতো ভগিল পর্বত নয় । এটি একটি গ্রস্ত উপত্যকা । দুপাশের গ্ল্যাবেনের মধ্যবর্তী খাতটি লাভায় ভরে গিয়ে তা গ্ল্যাবেনের সমউচ্চতায় পৌঁছে গেছে কিংবা কোথাও কোথাও দাতা সন্বিত হয়ে মহাসাগর পৃষ্ঠের উপর উত্থিত হয়ে দ্বীপরূপে প্রকাশিত হয়েছে । ওই সময় আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর এই দ্বীপটির অবস্থান বলে এর নাম দেওয়া হয়েছিল মধ্যমহাসাগরীয় শৈলশিরা । কিন্তু , এর কেন্দ্রে হস্ত উপত্যকার নাম দেওয়া হল মধ্যসাগরীয় বিদার ( mid oceanic rift ) । 1956 থেকে 1960 সালের মধ্যে এই শৈলশিরা প্রায় ৪০ শতাংশ মানচিত্রে দেখা সম্ভব হল তখনই বোঝা গেল এটি আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যে হলেও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে নয় । প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যরেখা থেকে অনেকটা পূর্বদিকে সরে গেছে । অর্থাৎ মধ্য আমেরিকা পার হয়ে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম তটরেখার কাছাকাছি চলে এসেছে । 

• সামুদ্রিক শৈলশিরার গঠন ( Oceanic Ridge Formation ) 

সমুদ্রপৃষ্ঠের বিস্তৃতির মতবাদের পর ধরে নেওয়া হয় যে সামুদ্রিক শৈলশিরা পৃথিবীর গুরুমণ্ডল থেকে পরিচলন স্রোত নির্গত লাভার অংশবিশেষ এবং পরে তা শীতল হয়েছে । ভূকম্পীয় তরঙ্গের গবেষণা থেকে জানা যায় যে , শৈলশিরাগুলির উপর  অসংখ্য ফাটল বা চ্যুতির অবস্থান রয়েছে এবং এগুলি অগভীর ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল । আবার , আধুনিক গবেষণায় দেখা যায় যে প্রাচীন সামুদ্রিক ভূত্বক মহাদেশগুলির উপর সংরক্ষিত আছে এবং সেগুলির জটিল গঠন প্রমাণ করে যে সামুদ্রিক শৈলশিরার গঠন সম্পর্কে পূর্বের ধারণা সঠিক ছিল না ।

• মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরার উদ্ভবের কারণ ( Causes of the origin of Mid - Oceanic Ridge )

 মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরাগুলি শিলামণ্ডলে অনেক দূর বিস্তৃত গভীর ফাটলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসা ম্যাগমার স্তর দ্বারা গঠিত হয়েছে । অর্থাৎ , দুটি অপসারী পাত পরস্পর থেকে যত দূরে সরে যায় ততই মধ্যবর্তী ফাটলটি চওড়া হতে থাকে । সেইসলো ভূত্বক পাতলা হয়ে যায় । ফলস্বরূপ অ্যাসথেনোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে । ফলে সেখান থেকে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ উপরে উঠে এসে নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বকের সৃষ্টি এবং ফাটল বরাবর উচ্চ শৈলশিরা গঠিত হয় । গুরুমণ্ডলের উপরে 120-700 কিমি অংশের মাগমার ঘনত্ব কম এবং এখানে শিলা গলিত পেরিডোটাইটের দ্বারা গঠিত । এই স্তরটি ক্ষুষ্ণমণ্ডল বা অ্যাসথেনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত । এই ক্ষুব্বমণ্ডল থেকে ঊর্ধ্বগামী ম্যাগমা তলদেশের ফাটলগুলি দিয়ে ঝরনার মতো উপরে উঠে আসে ( upwelling ) ও শৈলশিরার প্রসার ঘটে । সমুদ্র তলদেশের কাছাকাছি এসে এই ম্যাগমার চাপ অপেক্ষাকৃত কামে যায় এবং আংশিক গলন শুরু হয় । ভূত্বকের ঠিক নীচে এই ম্যাগমা ঠান্ডা হয়ে গ্যাব্রো শিলা তৈরি করে । এছাড়া কিছু ম্যাগমা ভূত্বকের ফাটলের মধ্যে দিয়ে দেওয়ালের মতো উদভেদী শিলার সৃষ্টি করে যাকে ডাইক ( dyke ) বলা হয় । এবং , বাকী ম্যাগমা ব্যাসল্ট লাভার প্রবাহ বিশেষত পিলো লাভার ( Pillow Lava ) বা বালিশাকার লাভার সৃষ্টি করে । এইভাবে সঞ্চয়কারী পাতসীমা ব্যাসল্টের লাভা প্রবাহ দ্বারা গঠিত হয় , এবং তা পুরাতন ব্যাসল্ট গঠিত ডাইকের ফাটল ভর্তি লাভার উপর শায়িত থাকে । যেহেতু নবীনতম সমুদ্রতল উত্তপ্তপ্রবণ হয় তাই তারা দুর্বলতম ভূত্বকের অংশবিশেষ হয় । সেই কারণে শৈলশিরার চূড়াগুলি সবসময় প্রসারণ বা বিস্তারের স্থান হিসাবে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে । • 

• মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরার বৈশিষ্ট্য ( Characteristics of the Mid - Oceanic Ridge ) 

1 ) অপসারী পাতসীমান্তে ( divergent plate boundary )দুটি পাত দুদিকে সরে যাওয়ায় মধ্যবর্তী অংশে প্রচুর পরিমাণে লাভা বেরিয়ে এসে আগ্নেয়শিলার সাহায্যে মহাসাগরীয় শৈলশিরা সৃষ্টি করে । 

( 2 ) আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী অংশে যে ইংরাজি S আকৃতির শৈলশিরা রয়েছে তা এভাবেই তৈরি হয়েছে । এই শৈলশিরার আকৃতির সঙ্গে দুপাশের মহাদেশীয় প্রান্তের মিল রয়েছে । দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয় । 

( 3 ) আটলান্টিকের মধ্যশৈলশিরা একটি সংরক্ষণ সীমা বরাবর ম্যাগমার উপরে উঠার ফলে গঠিত হয়েছে । 

( 4 ) মধ্য আটলান্টিক সামুদ্রিক শৈলশিরার দুপাশে সামুদ্রিক ভূত্বকগুলি বছরে 10 -14 সেমি হারে সরে যাচ্ছে । 

( 5 ) মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরার উপরের অংশ আগ্নেয় শঙ্কু পাহাড়ের মতো তীক্ষ্ণ হয় এবং উপরের চূড়াগুলি সমান্তরাল ফাটল

 ( 6 ) শৈলশিরার শীর্ষ থেকে সংগৃহীত লাভা সবই ব্যাসন্টিক লাভা শৈলশিরার কেন্দ্রীয় অংশ থেকে দুপাশে প্রায় 100km পর্যন্ত এই লাভা বর্তমান ।

 ( 7 ) মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিরার বিস্তার প্রায় ৪০ হাজার কিমি এবং সর্বাধিক উচ্চতা প্রায় 3700 মিটার । সাধারণত শৈলশ িরা 2000-2400 কিমি পর্যন্ত চওড়া হয় । 

★সমুদ্রতলদেশের সম্প্রসারণ তত্ত্বের সমালোচনা Criticism of Sea - floor Spreading 

আলফ্রেড ওয়েগনারের মহাদেশীয় চলন তত্ত্ব এবং আর্থার হোমসের তাপীয় পরিচলন স্রোত তত্ত্বের পটভূমিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ববিদ তথা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যারি হেস 1950 - এর দশকে মহাসাগরগুলির তলদেশ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে শেষে 1960 সালে প্রথম সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতির ধারণা সুসংহত ভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করে । ওয়েগনারের ধারণা থেকে এটা বোঝা গিয়েছিল যে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মহাসাগরীয় ও মহাদেশীয় ভূখণ্ডের অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে মহাসামুদ্রিক ভূত্বকের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । তিনি মনে করেন মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা বরাবর লাভার ঊর্ধ্বমুখী নির্গমন ঘটে থাকায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নতুন ভূত্বকের সৃষ্টি হয়ে চলেছে এবং সেইসলো সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি ঘটছে । এই ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায় আটলান্টিক কিংবা ভারত মহাসাগরের ক্ষেত্রে । হিসেব করে দেখা গেছে যে , আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশ প্রতি বছর প্রায় 2 সেমি করে প্রসারিত হচ্ছে । সমুদ্রণক্ষের বিস্তৃতিকে এখন অনেক ডুবিজ্ঞানী মতবাদ না বলে ঘটনা বলে স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করেননি । কিন্তু সমুদ্র বক্ষের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অনেকগুলি সমস্যার কথা বলা হয়েছে । সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল ।

 ( a ) যদি সামুদ্রিক শৈলশিলায় নতুন ভূত্বক সৃষ্টি হয় তাহলে ঐ স্থানে পূর্বে অবস্থানরত পুরানো ভূত্বকের অবস্থান কোথায় হবে । কিংবা সেই ভূত্বক কোথায় যাবে । 

( b ) পুরানো ভূত্বকের সংরক্ষণ কিংবা নতুন ভূত্বকের উৎপত্তি দুইই চলতে থাকবে , যদি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আয়তন প্রতিনিয়ত প্রসারিত হতে থাকে কিংবা পৃথিবীর আয়তন বেলুনের মতো বাড়তে থাকে । এটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে একদিকে যেমন নতুন ভূত্বকের সৃষ্টি হচ্ছে ঠিক তেমনি পুরানো ভূতকের ধ্বংসকে হতে হবে যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।

 ( c ) হ্যারি হেসের মতে সমুদ্রতলের প্রসারণ বা বিস্তৃতি মধ্য মহাসাগরীয় শৈলশিরার কেন্দ্রীয় অবস্থানের জন্য । সেই সঙ্গে এটা বলা যায় যে , সমুদ্র তলদেশে 150 মিলিয়ন বছরের চেয়ে বেশি কোনো প্রাচীন শিলা বা জীবাশ্মের অবস্থান লক্ষ করা যায়নি । 

( d ) এই মতবাদে উল্লেখ আছে যে , সমুদ্রবক্ষের খাত অঞ্চলগুলিতে অগ্রসরমান প্রাচীন ব্যাসন্ট জাতীয় ভূত্বক লক্ষ করা যায় । যা অগ্রসরের পর সদৃশ্য হয়ে যায় বা নিমজ্জিত হয় । 

( e ) যদি প্রাচীন ভূয়ক প্রতি বছর 2 সেমি হারে বিস্তৃত হয় , তাহলে এত মিলিয়ন বছরে সমুদ্রবন্ধের বিস্তার অনেক বেড়ে যেত 

( f ) এইভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতির মতবাদ সমালোচিত হলেও পাতসংস্থান মতবাদ দ্বারা এই তত্ত্ব সমর্থিত হয়েছে । 

★মহাদেশীয় চলন মতবাদের আরও কিছু প্রমাণ Recent Evidences of Continental Drift Theory 

জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েগনার 1922 সালে মহাদেশীয় চলন মতবাদটি " DIE ENTSTEHUNG DER KONTINEN TEUND OZEANE " নামক বইতে প্রকাশ করেন । এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ 1924 সালে প্রকাশিত হয় । এই দ্বিতীয় সংস্করণের উপর তিনি বিভিন্ন দার্শনিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি মূলত একজন আবহতত্ত্ববিদ , সেইসঙ্গে তিনি গবেষণা শুরু করেছিলেন পুরাতত্ত্বকালের আবহাওয়া ও জলবায়ুর বণ্টনকে প্রকাশ করার জন্য । তিনি জলবায়ুর অবস্থানকে দুটি নির্দিষ্ট ঘটনার দ্বারা প্রকাশ করেন সেগুলি হল- ( a ) সূর্যের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ( b ) মহাদেশগুলির স্থানান্তর । ওয়েগনার তার তত্ত্বের একটি পরিপূর্ণরূপে প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেন মূলত উদ্ভিদবিদ্যা , প্রাণীবিদ্যা , গণিত এবং আবহবিদ্যার উপর নির্ভর করে । পরবর্তী সময়ে আধুনিক বিজ্ঞানী আরো অনেকগুলি যুক্তি উপস্থাপিত করেছেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল

 ( 1 ) গাণিসুষ্ঠু সংযোজন ( Computer Joints Fitting ) :

আধুনিক যুগে ডুবিজ্ঞানীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লিওনার্ড অয়লার । তাঁর গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে , ম্যাকেঞ্জি ও পার্কার মার্কেটর অভিক্ষেপের সাহায্যে লিগ - স্ - ফিট ( JIB saw puzzle match ) এর সমর্থনে ব্যাখ্যা দেন । আবার স্যার এডওয়ার্ড বুলার্ড এভারেট এবং স্মিথ প্রভৃতি তুবিজ্ঞানীরা গণক যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে , প্রায় 500 ফ্যাদম গভীরতায় আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলকে জোড়া লাগানো সম্ভব । আবার মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল , পশ্চিম আফ্রিকার নিউগিনি উপকূল ও দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল উপকূলের মধ্যে একটি মিল লক্ষ করা যায় বা জোড়া লাগানো সম্ভব । 1969 সালে অস্ট্রেলিয়া ও আন্টার্কটিকা উপকূলের মধ্যে সর্বোত্তম জোড় ( Computerfit ) দেখানো হয় । 

( 2 ) পুরাচৌম্বকত্ব ( Palaeo - magnetism ) :

 বিখ্যাত ভূ - তত্ত্ববিদ্FJ . Vine ও D. H. Mathenws পুরাচৌম্বকত্ব তত্ত্বের প্রবত্তা । প্রাচীন আগ্নেয় শিলায় শীতল ও জমাটবদ্ধ ক্ষুদ্র - প্রাকৃতিক চুম্বকত্বের ধর্মকে পুরা - চৌম্বকত্ব বলে । পৃথিবীতে ম্যাগনেটাইট , হেমাটাইট জাতীয় লৌহ আকরিক কিংবা নিকেলের মতো খনিজগুলি 5.70 ° সেঃ তাপমাত্রায় চৌম্বকরূপে পরিণত হয় । ফলে এগুলির কোনো কোনো কণিকা চৌম্বক মেরুত্ব লাভ করে , নিজে সূক্ষ্ম চুম্বকের ন্যায় ব্যবহৃত হয় । অগ্ন্যুৎপাতের লাভায় এ ধরনের চুম্বক থাকলে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে সেগুলির চৌম্বকত্ব উত্তর - দক্ষিণ বরাবর সজ্জিত থাকবে । কোটি কোটি বছর পরে শিলাস্তরে প্রাপ্ত ওইসব কণিকার বিন্যাস সে যুগের চৌম্বক অক্ষের অবস্থান এবং চৌম্বক নতির মাত্রা নির্দেশ করে । এভাবে অতীতে মেরুর অবস্থান তথা মহাদেশীয় চলনের প্রমাণ পাওয়া যায় । প্রি - কেম্ব্রিয়ান সময়কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন শিলার নমুনা সংগ্রহ করে দেখা গেছে যে চৌম্বক অক্ষের নতি ও দিক বিভিন্ন । সুতরাং চুম্বকীয় মেরুর অবস্থানে অসঙ্গতি বর্তমান । এই ধারণা থেকে মনে হয় , বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে এই মেরু স্থান পরিবর্তন করেছে । অর্থাৎ মেরুর অবস্থান বোঝা যায় , শিলার চৌম্বকত্বের দিক ও নতি থেকে । তাই বলা যায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে স্থানান্তরিত হয়েছে । 

(3 ) আইসোটোপ ও রেডিওমেট্রিক ডেটিং ( Isotope and Radiometric Dating ) : 

আধুনিক কালের ভূবিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠ কিংবা ভূ - অভ্যন্তরে কোন্ শিলাস্তর কোন্ যুগে সঞ্চিত হয়েছে তা আইসোটোপ কিংবা রেডিওমেট্রিক ডেটিং পদ্ধতির সাহায্যে জানা যায় । সাধারণত আমরা জানি যে , ইউরেনিয়াম , থোরিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে আলফা , বিটা , গামা প্রভৃতির রশ্মি দ্বারা বিভিন্ন পর্যায়ে নির্গত হয়ে সীসায় পরিণত হয় । অর্থাৎ ইউরেনিয়াম এবং থোরিয়াম যুক্ত শিলাস্তরে সামান্য সীসা থাকে । সীসার পরিমাণ যত বেশি হবে , শিলাস্তরের প্রাচীনত্ব তত বেশি হবে । এই পরীক্ষা প্রমাণ করে যে , বিভিন্ন উপকূল অঞ্চল থেকে পাওয়া শিলাগুলির বয়স জানা যায় । যার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে , বিভিন্ন উপকূলভাগ কিংবা মহাদেশগুলি একসময় অবিচ্ছিন্ন ছিল । 

( 4 ) উপরিউক্ত প্রমাণাদি ছাড়াও জিওডেটিক সমীক্ষা ( geodatic survey ) :

থেকে জানা যায় যে গ্রীনল্যান্ড প্রতি বছর প্রায় 20 সেমি করে পশ্চিমে সরে অগ্রসর হচ্ছে । তবে আধুনিক কালের মহাদেশীয় চলনের প্রমাণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল সমুদ্র তলদেশের বিস্তৃতি তত্ত্ব । যা জোরালো ভাবে সমর্থিত করে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01