welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আগ্নেয়গিরি ও অগ্নুৎপাত(Volcanoes and volcanity)

সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে মানুষ ভীত হয়ে দেখে আসছে ভূপৃষ্ঠের কোনো না কোনো স্থানে উত্তপ্ত তরল পদার্থ ভূ - অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠের উপর প্রাকৃতিক

 


{★} অগ্ন্যুৎপাতের উৎপত্তি , ধারণা ও সংজ্ঞা Origin , Concept and Definition of Vulcanicity 

• উৎপত্তি ( Origin ) 

সভ্যতার আদিলগ্ন থেকে মানুষ ভীত হয়ে দেখে আসছে ভূপৃষ্ঠের কোনো না কোনো স্থানে উত্তপ্ত তরল পদার্থ ভূ - অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠের উপর প্রাকৃতিক সম্পদসহ জনবসতি ও মানুষকে ধ্বংস করছে । খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে জোয়োগ্লিনির লেখায় ভিসুভিয়াসের আগ্নেয়োচ্ছ্বাসের বর্ণনা পাওয়া যায় । কিন্তু , তখন ভিসুভিয়াস মানুষের কাছে এক পর্বতশিখর নামে পরিচিত ছিল । পরবর্তী সময়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষ আগ্নেয়গিরিটি মৃত কিংবা সুপ্ত কিংবা আকস্মিক সক্রিয় তা জানতে পারে । মানুষের চোখে প্রথম আগ্নেয়গিরি দেখা হল 1943 সালের 20 ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভূমিরূপ বিবর্তনের ইতিহাসে আগ্নেয়গিরির প্রত্যন্ত প্রভাব লক্ষ করা যায় । পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আগ্নেয়গিরির প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ করা যায় । আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পৃথিবীর অনেক জনপদ শহর নগর ও সভ্যতা চিরতরে হারিয়ে গেছে উর লাভা স্রোতের নীচে চাপা পড়ে । Geological Survey of U.S.A- এর ভূবিজ্ঞানী রবার্ট টিলিং ( Robert Tilling ) - এর মতে , বিগত 1000 সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ভয়াবহতার ধ্বংসলীলায় 3 লাখেরও অধিক মানুষের জীবনহানি ঘটেছে । ডুবিজ্ঞানীদের ধারণায় এবং গবেষণায় দেখা গেছে যে , পৃথিবীর সমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬০ টি অগ্ন্যুৎপাত সংঘটিত হয় এবং বিশ্বের প্রায় 14 শতাংশের অধিক প্রায় 35 কোটি মানুষ আগ্নেয়গিরির বিপদসীমার মধ্যে বসবাস করে চলেছে । এর মধ্যে ভূবিজ্ঞানী রবাট টিলিং ( Robert Tilling ) - এর ধারণা থেকে বলা যায় যে , 1985 সালের কলম্বিয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে প্রায় 22000 মানুষ মারা যায় কারাস্রোতের তলদেশে পিষ্ট হয়ে বা ভেসে গিয়ে আবার 1982 সালে মেক্সিকোর অগ্ন্যুৎপাতে প্রায় 2000 মানুষ মারা যায় এবং 1980 সালে সেন্ট হেলেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে প্রায় 57 জনের মৃত্যু হয় । এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে শুধু ধ্বংসলীলা বা মৃত্যু হয় না । এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং বিশাল এলাকা জুড়ে নতুন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় । 


• সংজ্ঞা ( Definition ) 

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে এসে সঞ্চিত হয় বা , গড়িয়ে গিয়ে শীতল হয়ে । স্ফটিক যুক্ত শিলা গঠন করে , তাকে অগ্ন্যুৎপাত ( Vulcanicity ) বলে ( The term vulcancity covers all those processes in which molten rock material or , magma rises into the crust or , is poured out on the surface , then to solidify as a crystalline or , semicrystalline rock ) ভূপ্রাকৃতিক কারণে ভূ - অভস্তরের ম্যাগমার ভূত্বকে অনুপ্রবেশ অথবা , ভূপৃষ্ঠে উদ্‌গারকে ( নির্গত হওয়াকে ) অগ্ন্যুৎপাত ( Vulcanicity ) বলে । আগ্নেয়গিরি ও অগ্ন্যুৎপাত Volcanoes andVulcanicity ভূত্বকের দুর্বল স্থান ফাটল বা ছিদ্র পথে ভূ - অভ্যন্তর থেকে গ্যাস বাষ্প ধোঁয়া ভন্মসহ প্রচণ্ড উত্তপ্ত তরল শিলা বা ম্যাগমা নিঃশব্দে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যখন বাইরে বেরিয়ে আসে , তাকে অগ্ন্যুৎপাত বলে । ভূত্বকের কোনো দুর্বল স্থান বা ফাটল দিয়ে অথবা কোনো ছিদ্রপথ দিয়ে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমার গ্যাস - বাষ্প যুক্ত উত্তপ্ত তরল শিলা ) প্রবল বেগে ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসা কিংবা ভূপৃষ্ঠে প্রচন্ড বেগে ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়াকে অগ্ন্যুৎপাত বলে । 


• ধারণা ( Concept ) 

আগ্নেয়গিরি এবং অগ্ন্যুৎপাত একটি বিশেষ প্রক্রিয়া এবং একটির সঙ্গে অপরটি আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত । অগ্ন্যুৎপাত যেমন ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া তেমনি আগ্নেয়গিরি হল অগ্ন্যুৎপাতের ভূমিরূপগত ফলাফল । অগ্ন্যুৎপাত অনিশ্চিত এবং কম সময়সাপেক্ষ । হলেও আগ্নেয়গিরি নিশ্চিত এবং দীর্ঘ সময়ব্যাপী সংঘটিত হয় । অগ্ন্যুৎপাত ভূ - অভ্যন্তরে অবস্থানরত পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের ঘটনা হলেও আগ্নেয়গিরি কিন্তু , ভূ - অভ্যন্তরস্থ পদার্থের দ্বারা গঠিত ভূপৃষ্ঠস্ব ভূমিরূপ । পৃথিবীর অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি মহাসাগরের ছোটো ছোটো দ্বীপ জুড়ে অবস্থান করছে । পৃথিবীর ভূত্বকের শিলাস্তর সর্বত্র একরকম কঠিন নয় কিংবা গভীরতাও এক নয় । সাধারণত ভূপৃষ্ঠের দুর্বল স্থানগুলিতে আগ্নেয়গিরির অবস্থান লক্ষ করা যায় । ভূমিরূপ গঠনে যে সব ভূ - অভ্যন্তরীণ বা অন্তর্জাত প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে সেগুলির মধ্যে আকস্মিক আলোড়ন অন্যতম । আর এই আকস্মিক আলোড়নের একটি প্রধান অংশ হল আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপ Volcanic Activity ) আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপ বলতে ভূ - অভ্যন্তর থেকে গ্যাসবাষ্প যুক্ত উত্তপ্ত তরল শিলার উপরে উঠে আসা এবং ভূপৃষ্ঠে বা , ভূপৃষ্ঠের নীচে তা সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গঠন করাকে বোঝায় । ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূ - অভ্যন্তরে যতই যাওয়া যায় ততই তাপ ও চাপ বাড়তে থাকে তাই ভূ - অভ্যন্তরের পদার্থসমূহ প্রচণ্ডচাপে উত্তপ্ত ও স্থিতিস্থাপক অবস্থায় থাকে । কোনো কারণে ভূ - অভ্যন্তরের চাপের ভারসাম্য নষ্ট হলে ভূ - অভ্যন্তরে অবস্থানরত পদার্থসমূহের স্থিতিস্থাপকতা বিনষ্ট হয় এবং ভূপৃষ্ঠের 80 থেকে 160 কিমির নীচে পদার্থসমূহের তরল স্রোত ও প্রচণ্ড গ্যাসের সৃষ্টি হয় । এই তরল শিলা বা ম্যাগমা এবং গ্যাসের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে তা ভূ - অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ভূ - অভ্যন্তরভাগে প্রবল চাপ দেয় তখন দুর্বল ভূত্বকের কোনো ফাটল , ছিদ্র বা সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে প্রবল বেগে উপরের দিকে উঠতে থাকে । এই উপরে ওঠার সময় তা কখনও কখনও ভূত্বকের কোনো অংশ বা ভূপৃষ্ঠের নীচে অনুপ্রবেশ করে কিংবা , ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়ে জলীয় বাষ্প ও গ্যাস ত্যাগ করে লাভা রূপে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । 



{★} আগ্নেয়গিরি বিভিন্ন অংশ Different Parts of Volcano 

আগ্নেয়গিরি থেকে যাবতীয় আগ্নেয় পদার্থ নির্গমন বেরিয়ে আসাকে বলা হয় অগ্ন্যুৎপাত ( Volcanism ) । এই আগ্নেয় পদার্থ ভূ - অভ্যন্তর থেকে ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন অংশ দিয়ে বা অংশ থেকে নির্গত হয় । সেই অংশগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল

 1. নিগর্ম নল : 

যে ফাটল বা ছিদ্রপথে ভূগর্ভস্থ লাভা , ভন্ম বাষ্প ইত্যাদি নির্গত হয় , তাকে নির্গম নল ( Volcanic Pipe ) বলে । এর আকৃতি সাধারণত গোলাকার হয় । একে অনেকে নলাকৃতি পথ ( Conduit ) বলে ।

2. জ্বালামুখ :

 নির্গম নলের যে মুখ দিয়ে লাভা নির্গত হয় , তাকে জ্বালামুখ ( Crater ) বলে । এটি একটি ফানেল বা ও আকৃতির গহবর বিশেষ । গ্রিক শব্দ Crater- এর অর্থ Cup বা Bowl যে কোনো আগ্নেয়গিরিতে একাধিক জ্বালামুখ থাকে । এদের মধ্যে প্রধানটিকে মুখ্য জ্বালামুখ ( Primary Crater ) এবং অপ্রধানগুলিকে গৌণ জ্বালামুখ ( Secondary Crater ) বলে । 

3. গৌণ জ্বালামুখ :

 অনেক সময় মুখ্য জ্বালামুখ ছাড়াও আগ্নেয়গিরির পাশের দিকে এক বা একাধিক ছোটো ছোটো জ্বালামুখ তৈরি হয় । সেখান থেকেও লাভা নির্গত হয় । একে গৌণ জ্বালামুখ ( Secondary Crater ) বলা হয় । ম্যাগমা গহ্বরের সঙ্গে এই সব জ্বালামুখের সংযোগকারী নলকে গৌণ নির্গম নল ( Sub - pipe ) বলে । 

4. ম্যাগমা গহ্বর : 

ভুগর্ভের যেখানে তরল উত্তপ্ত ম্যাগমা সজ্জিত থাকে , তাকে ম্যাগমা গহর ( magma ( chamber ) বলে । ম্যাগমা গহ্বর পর্যন্ত নির্গম নলটি বিস্তৃত থাকে । 

{★} অগ্ন্যুৎপাতের কারণসমূহ Causes of Vulcanicity 

অগ্ন্যুৎপাত হল একটি প্রাকৃতিক ভৌত প্রক্রিয়া । পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টলের উপরের সর্বাধিক 190 কিমি থেকে 700 কিমি ( ভূপৃষ্ঠ থেকে ) গভীরতায় ম্যাগমার ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে । এবং এই ঘনত্বের পরিবর্তনই গুরুমণ্ডলে থাকা ম্যাগমাকে ঊর্ধ্বগামী করে । ঊর্ধ্বগামী ম্যাগমা ভূত্বকের ( মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক ) মধ্যে অথবা বাইরে অনুপ্রবেশ বা বহিঃপ্রকাশ ঘটালে অগ্ন্যুৎপাতের জন্ম হয় । অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টির কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল --

[1] ভূ - অভ্যন্তরে তরল শিলার অস্তিত্ব--

 পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে ভূ - অভ্যন্তরের গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তেজস্ক্রিয় পদার্থের ভাঙনের ফলে উন্নতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে । প্রায় 100 মাইল গভীরতায় উন্নতা 1000 ° C- এর বেশি হয় । ফলে শিলা প্রচণ্ড উত্তপ্ত হলে অভ্যন্তরীণ চাপে স্থিতিস্থাপক বা অর্ধতরল অবস্থায় থাকে । কিন্তু কোনো প্রকার ভূ - আন্দোলনজনিত কারণে স্ব াধীনভাবে চাপের মুক্তি ঘটলে এই স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয় । এবং ওই অর্ধতরল শিলা গলে গিয়ে তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয় ও আয়তনে বৃদ্ধি পায় । এই গলিত তরল শিলা অভ্যন্তরীণ চাপে ভূপৃষ্ঠের দুর্বল অংশ ভেদ করে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায় । 

[2] আণবিক বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের অস্তিত্ব--

আধুনিক ভূ - বিজ্ঞানীদের মতে , ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ নীচের দিকে গেলে আণবিক বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায় । ভূ - অভ্যন্তরে ইউরেনিয়াম রেডিয়াম , থোরিয়াম প্রভৃতি আণবিক পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণের জন্য তাপ বৃদ্ধি পায় এবং ভূ - অভ্যন্তরের উপাদানগুলি তরলে পরিণত হয় । তখন ভূ - অভ্যন্তরভাগের উপাদানগুলির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং ভূত্বকের নিম্নে ক্রম চাপ দিয়ে নানান দুর্বল অংশ তৈরি হয় । তার মধ্যে দিয়ে অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয় । ভূগর্ভে ঊর্ধ্বমুখী চাপ বৃদ্ধি

[3] বিভিন্ন কারণে ভূগর্ভের চাপ বৃদ্ধি--

 পেতে পারে । ভূত্বকের চাপ কমে গেলে বা , রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হলে অথবা , তেজস্ক্রিয় পদার্থের দ্বারা চাপ বৃদ্ধি পেলে কিংবা সবগুলো কারণের সম্মিলনে অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলি তরল হয়ে গেলে তাদের আয়তন বৃদ্ধি পায় । এর ফলে ভূগর্ভে প্রবল ঊর্ধ্বমুখী চাপের সৃষ্টি হয় এবং ভূত্বক ফেটে গিয়ে আগ্নেয় পদার্থগুলো প্রচন্ড বেগে বাইরে বেরিয়ে এসে আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করে ।

[4] ভূগর্ভে জনের প্রবেশের দরুন সৃষ্ট বাষ্পের ভূমিকা--

 নদনদী , খালবিল কিংবা সাগর - মহাসাগরের জল ভূতের বিভিন্ন ফাটলের মধ্যে দিয়ে অনবরত ভুগতে প্রবেশ করলে সেখানকার প্রচণ্ড তাপের ফলে জল বাষ্পে পরিণত হয় । জলের তুলনায় বাষ্পের আয়তন বেশি । এই জন্য এই বাষ্প ভূত্বকের নীচে ভীষণ চাপ দেয় এবং কোনো দুর্বল অংশ নিয়ে ম্যাগমাসহ প্রবল বেগে বেরিয়ে এসে অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টি করে । একারণে পৃথিবীর অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি কোনো কোনো জলভাগের নিকটে অবস্থান করতে দেখা যায় এবং সেই আগ্নেয়গিরিগুলির অগ্ন্যুৎপাতে নির্গত পদার্থগুলোর মধ্যে জলীয় বাষ্পের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি থাকে । 

[5] রাসায়নিক প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব--

ভূগর্ভে অসংখ্য পদার্থের মধ্যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ( Chemical Process ) গ্যাসীয় পদার্থ উৎপন্ন হয় । এছাড়া ভূ - অভ্যন্তরের মধ্যভাগের পদার্থগুলো ক্রমশ শীতল হওয়ার সময়ও বেশ কিছু বায়বীয় ( gaseous ) পদার্থ পরিত্যক্ত হয় , এভাবে বিভিন্ন বায়বীয় পদার্থ সঞ্চিত হলে ভূগর্ভস্থ তরল পদার্থগুলোর ওপর ক্রমশ চাপ বৃদ্ধি পায় এবং , ভূত্বক ফাটিয়ে বা বিভিন্ন গর্ত দিয়ে উৎক্ষিপ্ত হয় ।

[6] ভূ - অভ্যন্তরে তপ্তবিন্দু ও গ্লিউমের অবস্থান--

গুরুমণ্ডলের 21 টি স্থানে তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় ওইসব স্থানের তাপমাত্রা আশেপাশের স্থানগুলির তুলনায় অনেক বেশি । এই স্থানগুলিকে তপ্তবিন্দু বা হটস্পট ( hotspot ) বলা হয় । এইসব তপ্তবিন্দুতে তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাব বেশি থাকায় এখান থেকে লাভা অনবরত ফোয়ারার মতো উপরে উঠতে থাকে । একে ম্যান্টল গ্লিউম ( mantle plume ) বলে । এক একটি প্লিউমের ব্যাস প্রায় 100 কিমি । এইসব গ্লিউমের ঊর্ধ্বমুখী চাপে ভূত্বক প্রথমে ফুলে ওঠে এবং তারপর বিদীর্ণ হয়ে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে ।

[7] ভূপৃষ্ঠের চাপের হ্রাস--

পর্যবেক্ষণের ফলে দেখা গেছে যে , পৃথিবীর অভ্যন্তরে যতই যাওয়া যায় ততই উন্নতা বৃদ্ধি পেতে থাকে । এই উন্নতা প্রায় প্রতি 30 মিটার গভীরতায় 1 ° C হারে বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ ভুগর্ভে 160 কিমি গভীরতায় শিলাগুলো এত উত্তপ্ত হয় যে , এরা গণিত অবস্থায় থাকবে বলে ধারণা করা যায় , কিন্তু আমরা জানি , চাপপ্রয়োগে পদার্থের গলনাঙ্ক বেড়ে যায় । কিন্তু ভূপৃষ্ঠের চাপের ফলে শিলাগুলো গলিত অবস্থায় না থেকে স্থিতিস্থাপক ( elastic ) অবস্থায় রয়েছে । ভূপৃষ্ঠের এই চাপ নদী , হিমবাহ বা , বায়ুর ক্রিয়ায় ভূহকের কোনো কোনো অংশের নগ্নীভবনের ফলে ও তাপবিকিরণজনিত ভূসংকোচনের ফলে হ্রাস পাওয়ার জন্য ভূগর্ভের শিলাগুলি স্থিতিস্থাপক অবস্থা থেকে তরল অবস্থা প্রাপ্ত হয় । এর ফলে ভূগর্ভস্থ সকল তরল পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় এবং তা প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন ফাটল , ছিদ্র বা অন্য কোনো দুর্বল অংশের মধ্যে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টি করে । ঘটাতে সাহায্য করে 

[8] ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ--

 ভূপৃষ্ঠে প্রতিনিয়ত তাপ বিকিরণ করে শীতল ও সংকুচিত হচ্ছে । এর ফলে ভূপৃষ্ঠের কোথাও কোথাও ভাঁজের সৃষ্টি হয় , চাপ হ্রাস পায় এবং , ভূত্বক ফেটে নানা প্রকার ছিল ও ফাটলের সৃষ্টি করে অগ্ন্যুৎপাত 

[9] ভূ - আন্দোলন--  

ভূ- আন্দোলন অগ্ন্যুৎপাতের অন্যতম প্রধান কারণ । ভূ - বিজ্ঞানী অধ্যাপক ম্যাকডোনাল্ড - এর মতে , -আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের জন্য ভূত্বকের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশে বিভিন্ন ফাটলের সৃষ্টি হয় । ওই ফাটলের পথ ধরে ভূ - অভ্যন্তরের গলিত লাভা , বাষ্প , গ্যাস ও ছাই ইত্যাদি প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে । 

[10 ] ভুত্বকে দুর্বল স্থান বা ফাটলের অবস্থান--

 ভূত্বক সর্বত্র সমান পুরু বা , সমান শত্রু নয় । ভূত্বকের শিলান্তর কোথাও কোথাও দুর্বল থাকে । ভূ - আন্দোলনে ভূত্বকে অনেক ফাটল বা ছিদ্রপথের সৃষ্টি হয়ে থাকে । এসব ফাটল বা ছিদ্রপথে ভূগর্ভে অবস্থিত ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ থেকে আগ্নেয় পদার্থগুলো সহজেই বাইরে আসতে পারে । এইভাবেই অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয়ে থাকে । 

[11] পাত - ভূগাঠনিক কারণ--

 ভূত্বক প্রধানত ত্রুটি প্রধান ৪ টি মাঝারি পাত ও 20 টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাত নিয়ে গঠিত । প্রায় । সবগুলি পাতই চলমান , তাই পাতগুলির কিনারা বিভিন্ন ধরনের পাতসীমানা গঠন করেছে । এই পাত সীমানাগুলিই অগ্ন্যুৎপাতের প্রধান কারণ । বিশেষত অভিসারী ও প্রতিমারী পাতসীমানায় অগ্ন্যুৎপাত হয় । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ পাত সীমানায় , অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে । নিম্ন প্রতিটি পাতসীমানায় ঘটে থাকা অগ্ন্যুৎপাতের বর্ণনা দেওয়া হল --

( a ) অভিসারী পাতসীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : অভিসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাতের মুখোমুখি সংঘর্ষজনিত কারণে যখন একটি কম ঘনত্বের হালকা মহাদেশীয় পাতের নীচে একটি বেশি ঘনত্বের ভারী সামুদ্রিক পাত প্রবেশ করে , তখন পাতের সামনের কিছু অংশ প্রচণ্ড উত্তাপে গলে গিয়ে ম্যাগমায় পরিণত হয় । এর ফলে ভূ - অভ্যন্তরে প্রচণ্ড চাপ বৃদি পায় । এর সঙ্গে বিভিন্ন দুর্বল স্থান বা ফাটল দিয়ে সমুদ্রের জন্যও প্রবেশ করে বাষ্পে পরিণত হয়ে ভীষণ চাপ সৃষ্টি করে । এসবের ফলে ভূ - অভ্যন্তরের গলিত পদার্থ বাষ্প ও গ্যাসসহ উত্তপাত সীমানা বরাবর অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । 

( b ) প্রতিসারী পাতসীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : প্রতিমারী পাত সীমানা বরাবর যখন দুটি পাতের একটি অপরটির থেকে ক্রমশ দূরে সরে যায় তখন এই দুটি পাতের মাঝখানে এক ফাটল সৃষ্টি হয় । এই ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূ - অভ্যন্তরস্থ গণিত পদার্থ গ্যাস ও বাষ্পসহ অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । এই ধরনের পাতসীমানায় মূলত বিদার বা ফিসার অগ্ন্যুৎপাত ( Fissure eruption ) - এর প্রাধান্য লক্ষ করা যায় । 

( c ) নিরপেক্ষ পাতসীমানায় অগ্ন্যুৎপাত : নিরপেক্ষ পাত সীমানা বরাবর যখন দুটি পাত পরস্পরকে অনুভূমিক ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যায় তখন এই সীমানা বরাবর ট্রান্সফর্ম চাতির সৃষ্টি হয় । এই চ্যুতি বরাবর ভূ - অভ্যন্তরস্থ গলিত ম্যাগমা গ্যাস ও বাষ্প অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে । এই ধরনের পাত সীমানায় - ও মূলত বিদার অগ্ন্যুৎপাতের ধন করা যায় । 

[12] পৃথিবীর ক্রমাগত সংকোচন :

 বিজ্ঞানী জেয়ে ( Geffrey ) - র ধারণা অনুযায়ী পৃথিবী অনবরত তাপ বিকিরণ করে শীতল ও সংকুচিত হচ্ছে । এর ফলে যেমন ভূত্বকে ভাঁজ সৃষ্টি হয় , তেমন কোনো কোনো জায়গায় চাপের প্রভাবে শিলাস্তর ফেটে বিভিন্ন ধরনের ফাটল ও ছিত্র দেখা যায় । এই সমস্ত দুর্বল অংশ বা ফাটল ও ছিন্ন বরাবর ভূগর্ভের গলিত ম্যাগমা গ্যাস ও বাষ্পসহ অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে । 

{★} আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবিভাগ Classification of Volcanoes

 পৃথিবীতে মোট 356 টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে । তার মধ্যে বর্তমানে 245 টি মৃত অবস্থায় রয়েছে এবং বাকি 111 টি আগ্নেয়গিরির মধ্যে 13 টিতে 19 শতকের আগে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল এবং 9৪ টি আগ্নেয়গিরিতে উনিশ ও বিশ শতকে সক্রিয় ছিল , কিন্তু , বর্তমানে নিষ্ক্রিয় প্রায় আগ্নেয়গিরিকে প্রধানত দুটি শ্রেণিবিভাগে ভাগ করা যায় । যথা- ( ক ) আকৃতি ও গঠন অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ এবং ( খ ) প্রকৃতি বা অগ্ন্যুৎপাতের পৌনঃপুনিকতা অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ । এদের উপবিভাগগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল

 ( A ) আকৃতি ও গঠন অনুযায়ী আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Volcanoes according to the Shape and Structure ) 

আকৃতি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয়গিরিকে প্রধানত 4 ভাগে ভাগ করা হলেও বর্তমানে এদেরকে ত্রুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । নিম্নে এগুলি সম্বন্ধে চিত্রসহ আলোচনা করা হল 

[1] শঙ্কু আকৃতির বা মোচাকৃতির আগ্নেয়গিরি ( Conical Shaped or Cinder Cone Volcano 

এই ধরনের আগ্নেয়গিরি সাধারণত একটি বড়ো অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তৈরি হয় । ভূপৃষ্ঠের চারপাশে যে ফাটল বা ছিদ্রপথ নিয়ে ভূগর্ভ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থসমূহ ( পাথরের টুকরো , ছাই , প্রভৃতি ) নির্গত হয় যাকে আমরা পাইরোক্লাস্ট বলি , সেই সমস্ত পদার্থ ছিদ্রপথ বা জ্বালামুখের চারপাশে জমা হয়ে শঙ্কু বা মোচাকৃতির আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করে । একে অনেক সময় পাইরোক্লাস্ট শকুও বলা হয় । পরবর্তী সময়ে এই আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হলেও এই শত্রু বা মোচাকৃতি বজায় থাকে ।


জাপান ও কানচাটকা উপদ্বীপে এছাড়া মেক্সিকোর পারিকুটিন এবং হাওয়াই দ্বীপের সমুদ্রগর্ভে অবস্থিত মৌনা নোয়া এজাতীয় আগ্নেয়গিরির উদাহরণ । 

[2] গম্বুজাআকৃতির আগ্নেয়গিরি ( Dome Shaped Lava Cone Volcano

 এই ধরনের আগ্নেয়গিরির কোনোরকম বিস্ফোরণ না ঘটে না । ভূপৃষ্ঠের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত পদার্থ যথা ম্যাগমা লাভা রূপে ধীরে ধীরে নির্গত হয় । ছিদ্রপথের চারদিকে লাভা জমাট বেঁধে এই ধরনের আগ্নেয়গিরি তৈরি করে । লাভার প্রকৃতি সাজ আগ্নিক ( viscous acidic বলে আগ্নেয়গিরির আকৃতি গম্বুজের মতো হয় । যদি লাভার প্রকৃতি তরল এবং ক্ষারীয় ( basic ) হত তাহলে লাভা ছাড়া গঠিত আগ্নেয়গিরির আকৃতি চ্যাপ্টা প্রকৃতির হত । এই ধরনের আগ্নেয়গিরিকে শিল্ড আগ্নেয়গিরি ( Shield Volcano ) বলে । হাওয়াই দ্বীপের অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি এই ধরনের । 

[3 ] বিস্ফোরণ জ্বালামুখ বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি ( Explorion Vent Vol cano

অনেক সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের দ্বারা ভূপৃষ্ঠের শিলাখণ্ডগুলিকে চুর্ণ - বিচূর্ণ করে উৎক্ষিপ্ত করে , কিংবা , প্রবল বেগে ভূপৃষ্ঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে একটি বড়ো গভীর গর্ত সৃষ্টি করে । এবং , এই গর্তের চারপাশে উত্তপ্ত লাভা প্রস্তরখণ্ড প্রভৃতি জমা হয়ে প্রধান জ্বালামুখ বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি সূচনা করে । এই ধরনের আগ্নেয়গিরি নিম্ন জ্বালামুখ বিশিষ্ট ( low crater ring ) বিশিষ্ট । আইসল্যান্ডের ক্লাফলা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ এই জাতীয় ।

 4 কম্পোজিট বা মিশ্র শঙ্কু বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি ( Composite Cone Volcanity)

 ভূপৃষ্ঠের বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরি এই শ্রেণিভুক্ত । দীর্ঘসময় ধরে ছোটো বড়ো বিভিন্ন ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই ধরনের আগ্নেয ়গিরি সৃষ্টি হয় বা গড়ে ওঠে । অগ্ন্যুৎপাতে উৎক্ষিপ্ত পদার্থ বিভিন্ন আকৃতির হয় বলে এই আগ্নেয়গিরি পাইরোক্লাস্ট নামে পরিচিত । আগ্নেয়গিরির উৎক্ষিপ্ত পদার্থ ছিদ্রপথের চারপাশে সঞ্চিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে লাভা প্রবাহ এসে তাদেরকে ঢেকে দেয় । তাই এতে বিভিন্ন লাভান্তর দেখতে পাওয়া যায় । সেইসলো আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকে । এ জাতীয় আগ্নেয়গিরিতে একটি প্রধান ও অনেক অপ্রধান জ্বালামুখ থাকে । উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোর পোপক্যাটাপেট্ল ও ওড়িজাবা এই প্রকার আগ্নেয়গিরির উদাহরণ ।

[ 5 ] গ্লাগডোম  ও থোলয়েড ( Plugdome & Thaloid )

 অধিক সাম্র ও আগ্নিক প্রকৃতির রায়োলাইটিক ( rhyolitic ) ম্যাগমা উৎক্ষেপণের পর খুব বেশি দূর প্রবাহিত হতে পারে না এরা জ্বালামুখের মধ্যে জমাট বেঁধে খাড়া ঢালবিশিষ্ট গম্বুজ আকৃতির আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে , একে প্লাগডোম বলে । পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মার্টিনিক দ্বীপের মাউন্ট পিলি মাগডোমের উদাহরণ । অনেক সময়প্লাগডোমের মাথা চওড়া ছাতার মতো দেখতে হয় , একে ঘোলয়েড বলে । ফ্লোরস দ্বীপপুঞ্জে ( Flores Islands ) লবেটোবো পেরামপুরান ( Lobetabo Perumpuran ) খোলয়েডের অন্যতম উদাহরণ । 

[6] শিল্ড আগ্নেয়গিরি ( Shield Volcanoes ) 

 ভূগর্ভ থেকে অপেক্ষাকৃত কম সাল বিশিষ্ট অর্থাৎ ভারতীয় প্রকৃতির তরল গাভা উৎক্ষেপণের পর অনেক দূর গড়িয়ে যায় , ফলে কম ঢালবিশিষ্ট স্বল্প উচ্চতর আগ্নেয়গিরি তৈরি হয় , এই ধরনের ঢাল বিশিষ্ট আগ্নেয়গিরিকে শিল্ড আগ্নেয়গিরি বলে হাওয়াই দ্বীপের মৌনা লোয়া ( Mauna Loa ) এ জাতীয় আগ্নেয়গিরি 

[7] হর্নিটো ( Hornito)

 অধিক সাল্ল আগ্নিক প্রকৃতির লাভার গতিশীলতা কম থাকার দরুন স্বচ্ছন্দে প্রবাহিত হতে পারে না । এমন শীতলতর লাভার উৎক্ষেপণ ও সময়ের ফলে খাড়া ঢালযুক্ত ছোটো লাভা গঠিত শ আকৃতির আগ্নেয়গিরিকে হর্নিটো বলে । হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এরকম একাধিক হর্নিটো পাওয়া যায় । 

( B ) প্রকৃতি বা অগ্ন্যুৎপাতের পৌনঃপুনিকতা অনুযায়ী আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Volcanoes according to Frequency of Eruption )

 আবার প্রকৃতি ও অগ্ন্যুৎপাতের ধারাবাহিকতা অনুসারে আগ্নেয়গিরিকে তিনভাগে ভাগ করা যায় । যথা -

1 , সক্রিয় বা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি , 

2. সুপ্ত বা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি ও 

3. মৃত আগ্নেয়গিরি এগুলি সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হল 

[1] সক্রিয় বা জীবন্ত আমেয়গিরি ( Active Volcano )  

যে সকল আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে এখনও অগ্ন্যুৎপাত হয়ে চলেছে , তাদের সক্রিয় বা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি বলে । এই ধরনের আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে যে কোনো সময় অগ্ন্যুৎপাত , হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এই ধরনের আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা প্রকোষ্ঠের আকার সাধারণত বড়ো হয় এবং বিস্ফোরণের তীব্রতা সব সময় এক থাকে না এবং সব ধরনের আগ্নেয় পদার্থ সব সময় একসঙ্গে নির্গত হয় না । অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় যে , নিঃশব্দে কিবো , সশব্দে লাভা বেরিয়ে আসে । ভারতের আন্দামান - নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্যারেন দ্বীপ একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উদাহরণ । জীবন্ত আগ্নেয়গিরিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- 

( 1 ) অবিরাম আগ্নেয়গিরি , 

( 2 ) সবিরাম আগ্নেয়গিরি । 

( 1 ) অবিরাম আগ্নেয়গিরি ( Incessant Volcano ) : যে সব আগ্নেয়গিরিগুলি দৃষ্টির সময় থেকে এখনও পর্যন্ত অনবরত লাভা নির্গত হয় কিংবা , অগ্ন্যুৎপাত হয়ে চলেছে , তাদের অবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইতালির ভিসুভিয়াস ও হাওয়াই দ্বীপের মৌনা লোয়া এই ধরনের আগ্নেয়গিরি 

( 2 ) সবিরাম আগ্নেয়গিরি ( Intermittent Volcano ) : যে সমস্ত জীবন্ত আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে সৃষ্টির পর কিছুদিন অন্তর অন্তর অগ্ন্যুৎপাত হয় , সেগুলিকে সবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে । এই ধরনের আগ্নেয়গিরিগুলিতে নিয়মিত অগ্ন্যুৎপাত লক্ষ করা যায় না , তার কারণ ম্যাগমা প্রকোষ্ঠে আগ্নেয় পদার্থের চাপ হ্রাস পায় । ফলে কিছুকাল অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ থাকে । আবার পরবর্তী সময়ে ম্যাগমা প্রকোষ্ঠে আগ্নেয় পদার্থের চাপ বৃদ্ধি পেলে পুনরায় অগ্ন্যুৎপাত সংঘটিত হয় । ইতালির স্ট্রম্বলি ওই ধরনের আগ্নেয়গিরির উদাহরণ ।

[ 2 ] সুপ্ত বা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি ( Dormant Volcano ) : 

যে সমস্ত আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে বহুদিন আগে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল তারপর দীর্ঘদিন অগ্ন্যুৎপাত সংঘটিত হয়নি কিন্তু , ভবিষ্যতে যে - কোনো মুহূর্তে অগ্ন্যুৎপাত সংঘটিত হতে পারে , তাদের সুপ্ত বা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি বলে । জাপানের ফুজিয়ামা , মেক্সিকোর পারিকুটিন এই ধরনের আগ্নেয়গিরির উদাহরণ । তবে এই ধরনের আগ্নেয়গিরিগুলি খুবই বিপজ্জনক । কারণ ম্যাগমা প্রকোষ্ঠে যে - কোনো মুহূর্তে আগ্নেয় পদার্থের চাপা বৃদ্ধি পেলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে পারে ।

[3] মৃত আগ্নেয়গিরি ( Extinct Volcano ) : 

যে সমস্ত আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে অতীতে অগ্ন্যুৎপাত হয়ে গেছে কিন্তু , ভবিষ্যতে আর কোনো কালেই অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই , তাদের মৃত আগ্নেয়গিরি বলে । যেমন - মায়ানমারের পোপো , মেক্সিকোর কোটপাদ্ধি প্রভৃতি । 

{★} অগ্ন্যুৎপাতের প্রকারভেদ Types of Vulcanic Eruption . 

ভূগর্ভের ম্যাগমা বিভিন্ন ফাটল ও ছিদ্রপথের মধ্যে দিয়ে যখন ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে , তখন তাকে এককথায় অগ্ন্যুৎপাত বলে । ম্যাগমা যখন ভূপৃষ্ঠের উপর সঞ্চিত হয় , তখন তাকে বলা হয় লাভা । ম্যাগমা সাধারণত পাইপের মতো ও দীর্ঘাকৃতির ফাটলের মধ্যে দিয়ে উপরে ওঠে । লাভা নির্গমনের প্রকৃতি অনুসারে অগ্ন্যুৎপাতকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা -1 . কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত এবং 2. বিদার অগ্ন্যুৎপাত এগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল 1. কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত ( Central Eruption ) যে অগ্ন্যুৎপাতের সময় লাভা গ্যাস উত্তপ্ত পাথর , জলীয় বাষ্প , গরম বায়ু বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার এক বা একাধিক নলের মতো জ্বালামুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে , তাকে কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত বলে । অর্থাৎ পাইপের মতো পথ দিয়ে ম্যাগমার নির্গমনকে কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাত বলে । অগ্ন্যুৎপাতের ধরন ও বিস্ফোরণের মাত্রা অনুসারে কেন্দ্রীয় অগ্ন্যুৎপাতকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- 1. অবাধ লাভা অগ্ন্যুৎপাত , 2. অবাধ ও বিস্ফোরক অগ্ন্যুৎপাত ও 3. বিস্ফোরক অগ্ন্যুৎপাত । এগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল

[1] অবাধ লাভা অগ্ন্যুৎপাত ( Effusive Lava Eruption ) 

যে অগ্ন্যুৎপাতে কোনো রকম বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে লাভার উদ্‌গিরণ অবাধে হয় , তাকে অবাধ লাভা অগ্ন্যুৎপাত বলে । এক্ষেত্রে তরল লাভা আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে প্রবাহিত হয় হাওয়াই , আইসল্যান্ড প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জে এ ধরনের অগ্ন্যুৎপাত দেখা যায় । অবাধ লাভা দুই শ্রেণির । যথা- ( a ) হাওয়াই শ্রেণি ( b ) আইসল্যান্ড শ্রেণি । 

( a ) হাওয়াই শ্রেণি ( Hawaiian Type ) 

প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপে অনেকগুলি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে , তাদের মধ্যে মৌনা লোয়া পৃথিবীর সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি , যার উচ্চতা 9750 মিটার । হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনা লোয়া , কিলাউই প্রভৃতি আগ্নেয়গিরি বা , আগ্নেয় পর্বতে এ ধরনের অগ্ন্যুৎপাত ঘটে বলে একে হাওয়াই ধরনের অগ্ন্যুৎপাত বলা হয় । 

( b ) আইসল্যান্ড শ্রেণি ( Icelandic Type )

 অগাধ লাভা অগ্ন্যুৎপাতের একটি উল্লেখযোগ্য ধরন হল আইসল্যান্ড শ্রেণি । কখনো কখনো বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূত্বকের কোনো দুর্বল স্থান দিয়ে তরল লাভা নির্গত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে । আইসল্যান্ডে এজাতীয় অগ্ন্যুৎপাত দেখা যায় বলে একে আইসল্যান্ড শ্রেণি বলে । পৃথিবীর অন্যান্য অংশে যেসব আগ্নেয়গিরিতে এই ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় সেগুলিকে আইসল্যান্ড শ্রেণির আগ্নেয়গিরি বলে । 

[2] অবাধ ও বিস্ফোরক অগ্ন্যুৎপাত ( Effusive and Explosive Eruption ) 

অবাধ ও বিস্ফোরক অগ্ন্যুৎপাতে সাভার প্রকৃতি খুব তরল নয় আবার সাম্রও নয় । যে সব আগ্নেয়গিরিতে কখনও কখনও বিস্ফোরণ ছাড়াই অবাধে ম্যাগমা নির্গত হয় আবার কখনও কখনও প্রচন্ড বিস্ফোরণ হয় ও সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস , ছাই প্রভৃতি নির্গত হয় সেই সব আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতকে অবাধ ও বিস্ফোরক অগ্ন্যুৎপাত বলে । ইতালি , পূর্ব এশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ ,কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ , জাপান দ্বীপপুঞ্জ , উত্তর আমেরিকার রকি পর্বত এবং দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায় ও ধরনের অগ্ন্যুৎপাত লক্ষ করা যায় । এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের চারটি শ্রেণি যথা ( ৯ ) ট্রুথলি শ্রেণি , ( b ) ভলকানো শ্রেণি , ( c ) এটনা - ভিসুভিয়াস শ্রেণি , ( d ) প্লিনি শ্রেণি । 

{★} নিঃসারী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ Landforms produced by Extrusive Vulcanicity 

অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত পদার্থসমূহ ভূপৃষ্ঠে বা ভূত্বকের মধ্যে সম্বিত হয় । ভূ - অভ্যন্তর থেকে ম্যাগনা বেরিয়ে এসে কোথায় জমাটবন্ধ হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে অগ্ন্যুৎগনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় । যথা- ( a ) নিসারী অগ্ন্যু ( b ) উদ্‌বেশী অগ্ন্যুগম জ্বালামুখ বা ভূত্বকের ফাটলের মধ্যে দিয়ে ম্যাগমা বেরিয়ে বেরিয়ে এসে জমাট বাঁধলে , তাকে নিঃসারী অগ্ন্যুদগম্ বলে । নিঃসারী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠে লাভা নির্গত ও সম্ভিত হয়ে যে ভূমিরূপগুলি সৃষ্টি করে তাকে পুনরায় দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- 1. উন্নীত ভূমিরূপ ও 2. অবনত ভূমিরূপ । নিম্নে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল লাভা সঞ্চত হয়ে যে সমস্ত ভূমিরূপের উচ্চতা বাড়ে , সেই ধরনের ভূমিরূপকে উন্নীত ভূমিরূপ বলে । এরা ভূপৃষ্ঠের আপেক্ষিক উচ্চতাও বাড়িয়ে দেয় । তাই এদের ধনাত্মক ভূমিরূপও বলা হয় । বস বা ক্ষয়ের ফলে আগ্নেয়গিরির উঁচু অংশ নীচু হয়ে অবস্থান করার ফলে যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় , তাকে অবনত ভূমিরূপ বলে । নিম্নে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল 

[1] আগ্নেয় পর্বত ( Volcanic Mountain লাভার সাতা ( viscocity ) 

বেশি হলে স্তূপাকারে সম্বিত হয় এবং , শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি করে । আকৃতি ও গঠন অনুসারে নিঃসারী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট আমেয় পর্বতকে চারভাগে ভাগ করা যায় । যথা- 1. শত্রু বা মোচাকৃতির আগ্নেয় পর্বত 2. গম্বুজাকৃতির আগ্নেয় পর্বত , 3 , বিস্ফোরক জ্বালামুখ বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত এবং 4. মিশ্র শত্রু বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত । 

( i ) শঙ্কু বা মোচাকৃতির আগ্নেয় পর্বত ( Conical or Cindershaped Volcanic Mountain ) : 


সাধারণত একবার আকস্মিক বড়ো ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে শত্রু বা মোচাকৃতির আগ্নেয় পর্বত গঠিত হয় । ধন লাভার সলো পাথরের টুকরো , ছাই ইত্যাদির দ্রুত জমাট বাঁধার জন্য পর্বত শঙ্কু বা মোচাকৃতির হয় । পরবর্তীকালে পরপর অগ্ন্যুৎপাত হলেও এর আকৃতির বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না । হাওয়াই দ্বীপের মৌনা লোয়া এ ধরনের আগ্নেয় পর্বত ।

 (ii ) গম্বুজ আকৃতির আগের পর্বত ( Dome Shaped Volcanic Mountain ) কম ঘন লাভা অপেক্ষাকৃত ধীরে নির্গত ও শীতল হয়ে গম্বুজ আকৃতির আগ্নেয় পর্বত গঠন করে । কম ঘন লাভা ছড়িয়ে পড়ে বলে পর্বতের উপরিভাগ চ্যাপ্টা ঢালের মতো হয় । মাউন্ট পিলি গম্বুজ আকৃতির আগ্নেয় পর্বতের উদাহরণ ।

 ( iii ) বিস্ফোরক জ্বালামুখ বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত ( Explosive Vent Volcanic Mountain )                        

 প্রচন্ড বিস্ফোরণসহ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ার জন্য প্রথমে ভূপৃষ্ঠের কাছে একটি গর্ভের সৃষ্টি হয় এবং পরে লাভা জমে প্রধান জ্বালামুখ বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত গঠন করে । আইসল্যান্ডের লাকি এ ধরনের আগ্নেয়গিরি ।

( iv ) মিশ্র শঙ্কু বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্ব ( Composite Cone Volcanic Mountain )                                   

যে সকল আগ্নেয় পর্বতের একটি মুখ্য জ্বালামুখ থাকে এবং অনেকগুলো অপ্রধান জ্বালামুখ থাকে তাদের মিশ্র সংখ্যা বিশিষ্ট আগ্নেয় পর্বত বলে অনেকদিন ধরে ছোট-বড় অনেকগুলো অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এ জাতীয় পর্বতের সৃষ্টি হয়।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01