প্রেষণার বৈশিষ্ট্য লেখো। প্রেষণার প্রকারভেদ আলোচনা করো। 5+3
উত্তর
প্রেষণার বৈশিষ্ট
প্রেষণার বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] চাহিদা বা অভাববোধ: প্রেষণা বিশেষভাবে একটি ব্যক্তিগত চাহিদা থেকে শুরু হয়। কোনো সময় বাক্তি তার বিশেষ কোনো চাহিদাকে প্রত্যকণ করলে বা তার মধ্যে কোনো অভাববোধ দেখা দিলে প্রেষণার উম্মেদ ঘটে।
[2] তাড়না: ব্যক্তির চাহিদা সরাসরি উদ্দেশ্যমুখী আচরণ সৃষ্টি করতে পারে না। ব্যক্তির অভাববোধ তার মধ্যে এক ধরনের মানসিক অবস্থা, অর্থাৎ তাড়নার সৃষ্টি করে। তাড়নাহ পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তিকে উদ্দেপামুখী আয়রণে উদ্বুদ্ধ করে। অর্থাৎ, প্রেষণার সৃষ্টি হয়।
[3] লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ: প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ। প্রেষিত আচরণের পরিণতি হিসেবে বাক্তি লক্ষ্যবস্তু অর্জন করে। লক্ষ্যবস্তু প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে কর্মতৎপরতা হ্রাস পায়।
[4] প্রেষণার হ্রাস ও বৃদ্ধি: যে চাহিদা বা অভাববোধ থেকে প্রেষণার উন্মেষ ঘটে, সেই প্রেষণা পূর্ণ হওয়ার পর বাক্তির মধ্যে আর-একটি নতুন প্রেষণার উদ্ভব ঘটে।
[5] বাধ্যতামূলক ক্ষমতা: মনোবিদদের মতে, প্রেষণার একটি বাধ্যতামূলক ক্ষমতা থাকে। ওই ক্ষমতা মূলত বাস্তির চাহিদার প্রকৃতি এবং লক্ষ্যবস্তুর দ্বারা নির্ধারিত হয়।
[6] ব্যক্তি-আচরণের গতি নির্ণয়: প্রেষণা ব্যক্তি-আচরণের গতি নির্ণয় করে। অর্থাৎ প্রেষণা ব্যক্তির উদ্দেশ্যমুখী আচরণের পাশাপাশি তার কর্মতৎপরতাকে বাড়িয়ে তোলে বা কমিয়ে আনে।
[7]ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষা: প্রেষণা ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষভাবে সাহায্য করে। দৈহিক চাহিদা, সামাজিক চাহিদা ও মানসিক চাহিদা পূরণ না হলে বাক্তিজীবনে যে ভারসাম্যের অভাব ঘটে, প্রেষণা তা দূর করতে সাহায্য করে।
প্রেষণার প্রকারডেদ
মনোবিজ্ঞানীরা প্রেষণাকে যে তিন ভাগে ভাগ করেছেন, তা হল-
[1] জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় প্রেষণা: ব্যক্তির জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় চাহিদাগুলি থেকে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয়, তাকে জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় প্রেষণা বলে। বাস্তির জীবনধারণের জন্য এইসব প্রেষণার উন্মেষ ঘটে বলে নগুলিকে মুখ্য প্রেষণাও বলা হয়। ক্ষুধা, তুয়া, যৌন প্রেষণা, মাতৃত্ব ইত্যাদি হল জৈবিক প্রেষণার উদাহরণ। এগুলি সহজাত প্রেষণা। এগুলি শিক্ষালব্ধ নয়।
[2] ব্যক্তিগত প্রেষণা: ব্যক্তির মানসিক চাহিদা বা আত্মসচেতনতার সঙ্গে যুক্ত প্রেষণাগুলিকে ব্যক্তিগত প্রেষণা বলা হয়। বাক্তির আত্মসচেতনতামূলক চাহিদার মধ্যে সবথেকে পুরুত্বপূর্ণ হল আত্মস্রখার চাহিদা। মনোবিজ্ঞানী ম্যাসলো (Maslow)-র মতে, এই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির মধ্যে আত্মগ্রন্থার প্রেষণার উন্মেষ ঘটে। এই প্রেষণা ব্যক্তিকে তার আত্মমর্যাদা রক্ষার অনুকূল আছরণ সম্পাদন করায় উদ্বুদ্ধ করে। আত্মশ্রদ্ধার প্রেষণা ধীরে ধীরে সীমিত বস্তু থেকে বৃহত্তর লক্ষ্যের অভিমুখী হয়।
[3] সামাজিক প্রেমণা: মানুষ সমাজবদ্ধ জীবা তার মধ্যে নিরাপত্তা, চাহিদাগুলির পরিতৃপ্তির মাধ্যমে সুস্থ সামাজিক জীবন যাপন করতে চায়।
ওইসব সামাজিক গ্রাহদার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রেমশা জাগ্রত হয়, তাকে সামাজিক প্রেষণা বলে। সামাজিক প্রেষণা ব্যক্তির সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে।
আলোনোর সুবিধার জন্য প্রেষণাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হলেও, এই তিন ধরনের প্রেষণা একেবারে পরস্পরবিচ্ছিন্ন নয়। বরং এই প্রেষণাগুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ।