হুগলি বা কলকাতা শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণ (Factors of Growth of Hooghly or Kolkata Industrial Region) :
যেসব অনুকূল কারণে এই শিল্পাঞ্চলটি গড়ে উঠেছে সেগুলি হল—
(1) কলকাতা বন্দরের সুবিধা :
কলকাতা বন্দর এই শিল্পাঞ্চলকে সারা বিশ্বের বড়ো বড়ো বাজারের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর ফলে যন্ত্রাংশ বা কাঁচামাল আমদানি করা এবং শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করার কোনো অসুবিধা নেই।
(2) হুগলি নদীর জলপথ :
হুগলি নদীর জলপথের মাধ্যমে সুলভে পণ্য আদান-প্রদান করা যায়। এ ছাড়া, প্রয়োজনীয় জলও হুগলি নদী থেকে পাওয়া যায়।
(3) কয়লা ও বিদ্যুতের সুবিধা :
রানীগঞ্জ ও ঝরিয়া অঞ্চল থেকে আনা কয়লা এখানকার কারখানাগুলিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, ব্যান্ডেল, কোলাঘাট, সাঁওতালদি, টিটাগড়, দুর্গাপুর প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বস্তুত, 1854 সালে রানীগঞ্জের সঙ্গে রেল পথে কলকাতার যোগাযোগ হওয়ার পর থেকে জ্বালানির ব্যাপারে এখানে সমস্যা নেই।
(4) বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা :
ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ও দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন প্রভৃতি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলির উপযুক্ত পরিকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে।
(5) স্থানীয় কাঁচামাল :
ছোটনাগপুর অঞ্চলের খনিজ কাঁচামাল ও স্থানীয় পাট, বাঁশ, রাসায়ানিক দ্রব্য প্রভৃতি সাহায্য পাওয়া যায় বলে হুগলি অঞ্চলে কারখানার সমাবেশ ঘটেছে।
(6) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা :
পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং অনেকগুলি জাতীয় রাজপথ, যেমন - কলকাতা-মুম্বাই রোড, কলকাতা-চেন্নাই রোড, গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড প্রভৃতির মাধ্যমে এই অঞ্চলটি দেশের অবশিষ্টাংশের সঙ্গে যুক্ত। কলকাতার দমদম বিমান বন্দরের মাধ্যমেও বিদেশের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে হুগলি শিল্পাঞ্চলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।
(7) সুলভ শ্রমিক :
হুগলি শিল্পাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকার লোকবসতি ঘন। ফলে একদিকে যেমন সুলভে শ্রমিক পাওয়া যায়, অন্যদিকে তেমনই শিল্পজাত দ্রব্যের যথেষ্ট চাহিদাও সৃষ্টি হয়।
(৪) মূলধন ও কারিগরিবিদ্যা ঃ
পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ মূলধন ও স্বাধীনতার পরে টাটা, বিড়লা, গোয়েঙ্কা প্রভৃতি স্থানীয় ব্যাবসায়ী সমাজের মূলধনের সাহায্যে এবং কারিগরি সহায়তায় এখানে শিল্প গড়ে তোলা সহজ হয়েছে।
(9) ঐতিহাসিক কারণ :
1911 সাল পর্যন্ত ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা এবং তারপরেও ব্রিটিশ শাসিত ভারতের এটাই ছিল অন্যতম প্রধান কর্মকেন্দ্র। ফলে ব্রিটিশরা কলকাতা এবং তার আশেপাশে শিল্প স্থাপনে বিশেষ আগ্রহী ছিল। শিল্প স্থাপনের জন্য প্রশাসনিক, ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন সরকারি সহায়তা পেতে তাই কোনো অসুবিধা হয়নি।
(10) বাজার :
হুগলি শিল্পাঞ্চলের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা আছে। এইসব বিভিন্ন অনুকূল কারণে এই শিল্পাঞ্চলটি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠেছে।