মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক ভূত্বকের পার্থক্য Difference Between the Continental and Oceanic Carst
মহাদেশীয় ভূত্বক ও সামুদ্রিক ভূত্বকের বিভিন্ন ভিত্তি অনুযায়ী পার্থক্য নীচে আলোচনা করা হল—
( 1 ) সংজ্ঞা ( Definition ) :
ভূত্বকের ওপরের যে শক্ত ও কঠিন মহাদেশীয় অংশ রয়েছে যার ওপর আমরা বসবাস করি , তাকে মহাদেশীয় ভূত্বক বলে । সমুদ্রের তলদেশ গঠনকারী ভূত্বককে সামুদ্রিক ভূত্বক বলে ।
( 2 ) অবস্থান ( Location ) :
ভূপৃষ্ঠ থেকে , কনরাড বিযুক্তি পর্যন্ত মহাদেশীয় ভূত্বক বিস্তৃত । শিলামণ্ডলে কনরাড বিযুক্তি থেকে মোহোরোভিসিক বিযুক্তি রেখা পর্যন্ত মহাসাগরীয় ভূত্বক বিস্তৃত ।
( 3 ) ঘনত্ব ( Density ) :
মহাদেশীয় ভূত্বকের ঘনত্ব কম । এই ভূত্বকের আপেক্ষিক ঘনত্ব 2.7-2.75 গ্রাম প্রতি ঘন সেমি । ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এই স্তরের উচ্চতা বেশি । মহাসাগরীয় ভূত্বকের ঘনত্ব কম । এই ভূত্বকের আপেক্ষিক ঘনত্ব 2.9-3.0 গ্রাম প্রতি ঘন সেমি । সুতরাং আপেক্ষিক ঘনত্ব বেশি বলে এই স্তরের উচ্চতা কম ।
( 4 ) গভীরতা ( Depth ) :
এই স্তরের গভীরতা 30-40 কিমি । তবে উচ্চ ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে 70 কিমি পর্যন্ত গভীরতা লক্ষ করা যায় । কিন্তু মহাসাগরীয় ভূত্বকের গভীরতা প্রায় 5-10 কিমি ।
( 5 ) খনিজের প্রকৃতি ( Nature of Minerals ) :
মহাদেশীয় ভূত্বক সিলিকা , অ্যালুমিনিয়াম , পটাশিয়াম , সোডিয়াম প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত হাল্কা খনিজ দ্বারা গঠিত । মহাসাগরীয় ভূত্বক ভারী সিলিকা , ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত ভারী খনিজ দ্বারা গঠিত ।
( 6 ) ওজন ( Weight ) :
মহাদেশীয় ভূত্বক লঘু - আগ্নিক জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত বলে এই স্তর হাল্কা প্রকৃতির । মহাসাগরীয় ভূত্বক গুরু রাসায়নিক শিলা দ্বারা গঠিত বলে এই স্তর অপেক্ষাকৃত ভারী প্রকৃতির ।
( 7 ) বয়স ( Age ) :
মহাদেশীয় ভূত্বকের ভূতাত্ত্বিক বয়স প্রায় 150 কোটি বছর । অর্থাৎ বয়সে প্রাচীন । কিন্তু মহাসাগরীয় ভূতকের ভূতাত্ত্বিক বয়স প্রায় 18 কোটি বছর । অর্থাৎ বয়সে নবীন ।
(8) শিলাত্তরের প্রকৃতি ( Nature of Rocks ) :
মহাদেশীয় ভূত্বক মূলত আগ্নেয় , পাললিক এবং রূপান্তরিত শিলা দিয়ে গঠিত হয় । তবে গ্রানাইট শিলার প্রাধান্য লক্ষ করা যায় মহাসাগরীয় ভূত্বক মূলত আগ্নেয় ও পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয় । তবে ব্যাসল্ট শিলার প্রাধান্য দেখা যায় । ব্যাসন্টের নীচে পেরিডোটাইট এবং তার নীচে ইকোলোজাইট শিলার স্তর থাকে এই শিলাগুলি ব্যাসন্টের সমজাতীয় ।
( 9 ) শিলাস্তর ( Rocks Layer ) :
মহাদেশীয় ভূত্বক মূলত তিনটি শিলাস্তরে বিদ্যমান সেগুলি হল যথাক্রমে গ্রানাইট ব্যাসল্ট ও অলিভিন । মহাসাগরীয় ভূত্বক মূলত তিনটি শিলাস্তরে বিদ্যমান সেগুলি হল যথাক্রমে ব্যাসল্ট , ডাইক এবং গ্যাব্রো ।
( 10 ) গঠনগত বিভিন্নতা ( Structural Variation ) :
মহাদেশীয় ভূত্বকের বিভিন্ন স্থানে বা অংশে গঠন , গভীরতা , উপাদান ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হয় । কিন্তু মহাসাগরীয় ভূতকের বিভিন্ন স্থানে বা অংশে গঠন , উপাদান ও গভীরতা ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির ।
( 11 ) গুরুত্ব ( Importance ) :
মহাদেশীয় ভূত্বকে বেশির ভাগ অংশ শক্ত মাটির স্তর লক্ষ করা যায় বলে , এই অংশে উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবস্থান লক্ষ করা যায় । কিন্তু মহাসাগরীয় ভূত্বকের বিভিন্ন অংশে নরম কাদা মাটির স্তর লক্ষ করা যায় বলে , এই অংশে উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবস্থান ততটা লক্ষ করা যায় না ।
( 12 ) শিলার বয়স ( Age of Rock ) :
মহাদেশীয় ভূত্বকে প্রায় 60 কোটি বছরের প্রাচীন শিলা লক্ষ করা যায় । মহাসাগরীয় ভূত্বকে প্রায় 1.4 কোটি বছরের কম প্রাচীন শিলা লক্ষ করা যায় ।
( 13 ) উদ্ভব প্রক্রিয়া ( Origin Processes ) :
মহাদেশীয় ভূত্বক মূলত পাত সঞ্চালন , মধ্যমহীখাতে পর্বতের সৃষ্টি ও অগ্ন্যুৎপাতের যৌথ প্রভাবে সৃষ্টি হয় । কিন্তু ক্ষুখমণ্ডল থেকে লাভা উদ্গিরণের ফলে নবীনতম সামুদ্রিক ভূত্বকের সৃষ্টি হয় ।