welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পাত সংস্থান তত্ত্ব : সংজ্ঞা অর্থ ও ধারণা Plate Tectonic Theory : Definition Meaning and Concept

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকেই মহাদেশ ও মহাসাগরগুলির উৎপত্তি , অবস্থান ও আকৃতির বিবর্তন অথবা স্থায়ী চরিত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব ও মডেল প্রস

পাত সংস্থান তত্ত্ব : সংজ্ঞা অর্থ ও ধারণা Plate Tectonic Theory : Definition Meaning and Concept 

ভূমিকা ( Introduction ) 


বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকেই মহাদেশ ও মহাসাগরগুলির উৎপত্তি , অবস্থান ও আকৃতির বিবর্তন অথবা স্থায়ী চরিত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব ও মডেল প্রস্তাবিত হতে থাকে । 

1964 সাল থেকে মহাসাগরের তলদেশের প্রকৃতি সম্পর্কে বহু নতুন তথ্য সংগৃহীত হয় । অধ্যাপক আলফ্রেড ওয়েগনারের মহীসঞ্চালন মতবাদ পৃথিবীর ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে এক নতুন চিন্তাধারার সূচনা করলেও সিমান্তরের উপরে সিয়াল স্তরের চলন সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি ।

 মহাদেশের ভেসে চলা নিয়ে পর্যালোচনা করতে করতে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেই মেনে নিয়েছেন যে এই ভেসে চলা কেবলমাত্র মহাদেশ সমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে সমস্ত ভূত্বক গতিশীল । আবার এদিকে এতদিনে প্রমাণ হয়ে গেছে যে সমুদ্রের ভূত্বক স্থির নয় বরং ক্রমপ্রসারণশীল । 

কিন্তু , পৃথিবীর মোট আয়তনের তো হ্রাস - বৃদ্ধি ঘটে না । সুতরাং , সম্প্রসারণের পাশাপাশি সংকোচনও অবশ্যম্ভাবী । তবে এটা জানা দরকার যে কোনো বস্তু একইসঙ্গে সংকোচন ও প্রসারণ হতে পারে না । অতএব ভূত্বক কতকগুলি খণ্ডে বিভক্ত বলে ধরে নেওয়া হয় । ভূত্বকের এই খণ্ডিত অংশগুলিকে পাত ( plate ) বলা হয় । 


• পাতের অর্থ ও উৎপত্তি ( Meaning and Origin of Plate ) 


1365 সালে কানাডার ভূপদর্থবিন জে . ডি . উইলসন ( J. T. Wilson ) সর্বপ্রথম পাত শব্দটি নেচার পত্রিকায় ব্যবহার করেন , এবং 1967 সালে ম্যাকেঞ্চি ( D. Mackenzie ) ও পারকার ( Parker ) পাতের চলন সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেন । 

1968 সালে ফরাসি বিজ্ঞানী পিঁড়ো (xle Pichon ) এই মতবাদকে ভূগঠনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মতবাদ হিসাবে ব্যাখ্যা প্রদান করে প্রতিষ্ঠিত করেন গ্রিক শব্দ টেকটন ( tektion ) - এর অর্থ গঠনকারী — এ থেকেই টেকটনিক ( tectonic ) শব্দটি এসেছে ।

 আবার , অনেক ডুবিজ্ঞানীদের মতে গ্রিক শব্দ Tektonikos ' যার অর্থ অট্টালিকা ( bullding ) বা গঠন ( construction ) থেকে পাত সংস্থান এসেছে । পাত সংস্থান বলতে , পৃথিবীর গঠন বা সংস্থান ব্যাখ্যাকারী এক মডেল - রূপে গড়ে উঠেছে । 


• পাতসংস্থান তত্ত্ব ( Plate Tectonic Theory ) 


সমগ্র পৃথিবীব্যাপী পাতের উদ্ভব , সৃষ্টি , চলন , বিবর্তন , বিরূপণ , বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি , ভূমিকম্প , আগ্নেয়গিরির উদ্ভব ও অবস্থান , তপ্তবলয় , বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা এবং মহাদেশগুলির ভৌগোলিক অবস্থান পরিবর্তন ও সমুদ্রবক্ষের আকার আকৃতির পরিবর্তন প্রভৃতি যে তত্ত্ব বা মতবাদ দ্বারা প্রকৃতভাবে ব্যাখ্যা করা যায় , তাকে পাত সংস্থান তত্ত্ব বলে । আবার অন্যভাবে বলা যায় যে , পাতের বিবর্তন , প্রকৃতি গতি ও তার ফলাফল এই সমস্ত পদ্ধতিগুলিকে একরে পাত সংস্থান তত্ত্ব 


পাতসংস্থান তত্ত্বের সমর্থকগণ ( Supporters of Plate Tectonics Theory ) 


1965 সালে কানাডার স্তূপদার্থবিদ 1.T. Wilson সর্বপ্রথম ' পাত ' শব্দটি ব্যবহার করলেও পাত ভুগঠন মতবাদ কোনো নষ্ট ব্যক্তির নামের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত করা যায় না । ডি . পি . ম্যাকেছি ( D. P. Mackenzie ) . আর . এল . পার্কার ( R. L. Parker ) , বি . আইজাক্‌স্ ( B. Isaks ) , এম . পি . পিঁড়ো ( X. Le Pichon ) , . অলিভার ( p . Oliver ) , এল . আর . সাইকুস গবেষণা সম্মিলিত ফল হল এই মতবাদ । ( LR . Sykes ) , ড . জে . মরগ্যান ( W.1 . Morgan ) . জে . আর . হাইজ্যার ( 1.R. Heirtzler ) প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের মৌলিক 


★ পাতের অস্তিত্বের প্রমাণ Evidence of Plate 


মহাদেশ ও মহাসাগরের উৎপত্তি ও বণ্টন পর্বত মালভূমি - সমভূমির গঠন ভূমিকম্প , অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি সমস্ত ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদানে সর্বজনগ্রাহ্য বহুল প্রচলিত ও সর্বাধুনিক তত্ত্ব হল পাত ভূগঠন তত্ত্ব । পাত সংস্থান মতবাদ অনুসারে পৃথিবীর ভূহক এটি বড়ো পাত নিয়ে গঠিত এবং এই পাতগুলির সীমানায় শৈলশিরা , গভীর সমুদ্রখাত , ডাতি এবং নবীন ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণির অবস্থান রয়েছে । ভূ - গোলকের ভূহক এই দুটি প্রধান পাত নিয়ে গঠিত হলেও এদের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র পাতের অবস্থান রয়েছে । মূলত পাত বলতে শিলামণ্ডলের বিভিন্ন অংশকে বোঝায় । পাতের অস্তিত্ব বিভিন্ন ভাবে প্রমাণিত । নীচে পাতের অস্তিত্বের প্রমাণগুলি আলোচনা করা হল 


( a ) বিজ্ঞানী Tuzo Wilson সর্বপ্রথন পাতের অস্তিত্বের বিষয়ে প্রমাণ দেন যে বিভিন্ন মহাসাগরীয় শৈলশিরায় অর্থাৎ গঠনকারী পাত সীমানায় ম্যাগমার উদগিরণ হচ্ছে । 


( b ) অভিসারী পাত সীমানায় যে বেনিয়ফ বলয় কিংবা অঞ্চলে রয়েছে , সেখানে যে সমস্ত বিভিন্ন গভীরতা যুক্ত ভূমিকম্পের অবস্থান রয়েছে । তার থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে নিমজ্জন পাতের প্রমাণ । সেইসঙ্গে বোঝা যায় পাতগুলির গভীরতা । 


( c ) বিভিন্ন পাত সীমানায় , বিভিন্ন পাতের যে চলাচল , প্রসারণ , সংঘাত কিংবা একটি পাত অন্য পাতের নীচে ঢুকে যায় , সেখান থেকে পাতের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় । 


( d ) যে সীমানা বরাবর পাতের প্রসারণ লক্ষ করা যায় , সেই সীমান্য পাতের উপস্থিতি , উদ্ভব যা গঠনকে প্রমাণিত করে । Tuzo Wilson এই নীতি অনুসরণ করে আইসল্যান্ডের মধ্যভাগে এক ধরনের এন্ড উপত্যকার কথা ঘোষণা করেন 1963 সালে । পরবর্তী সময়ে ঐ জায়গায় উত্তর আটলান্টিক শৈলশিরার প্রসারণশীল সীনায় যত উপত্যকা আবিষ্কৃত হয়েছে ।


 ( e ) বর্তমানে মহাসমুদ্রগুলো যে জায়গায় অবস্থিত , যদি অনেক আগে সেই জায়গায় অবস্থান করত , তাহলে সমুদ্রের তলদেশ খুঁড়লে প্রাচীন যুগের শিলা পাওয়া যেত কিন্তু মহাদেশের প্রাচীন শিলা এবং সমুদ্রগর্ভে নবীন শিলার উপস্থিতি সার্বিকভাবে পাতের নিমজ্জনকে প্রমাণ করে । ( 


( f ) মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরার উভয় পাশে বিপরীত ও স্বাভাবিক চৌম্বকত্বের উপস্থিতি মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা থেকে সমান হারে দুই পাশের পাত সৃষ্টিকে প্রমাণ করে । 


( g ) সামুদ্রিক ভূত্বকের ট্রান্সফর্ম চ্যুতিগুলির বিপরীত গতিশীলতা এবং বৈশিষ্ট্যময় উপস্থিতি থেকেও পাতের অস্তিত্ব হয় । 


( h ) পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রগুলির পর্যবেক্ষণ থেকেও পাতগুলির গতিশীলতার পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় । কিংবা পাতসীমান্ত বরাবর রৈখিকভাবে আগ্নেয়গিরিগুলির অবস্থান ও পাতের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয় ।


★ পাতসংস্থান মতবাদের মূল ভিত্তি Basic of the Plate Tectonic Theory 


পাত সংস্থান তত্ত্ব বা মতবাদ কতকগুলি মূল ধারণার উপর গড়ে উঠেছে । সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল


 1. সময় ভূত্বক চ্যুতিরেখা বরাবর কয়েকটি বিচ্ছিন্ন শিলাপাতের সমষ্টিবিশেষ । এর এক একটি অংশ ভূপৃষ্ঠ হতে 70 কিমি এবং মহাসাগরের তলায় প্রায় 50 কিনির মতো বিস্তৃত । এর সপক্ষে যুক্তি হিসাবে বলা যায় যে , সামুদ্রিক শৈলশিরার শীর্ষদেশে চ্যুতিরেখা থেকে পাতলা সামুদ্রিক ভূত্বক স্থলভাগের দিকে সঞ্চালিত হচ্ছে । ফলে যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয় , তা গুরুমণ্ডল থেকে উঠে আসা ব্যাসল্ট জাতীয় লাভা দ্বারা পূরণ হয় । এইভাবে নতুন ভূত্বকের সৃষ্টি ও সমুদ্রবক্ষের প্রসারণ ঘটে । 


2. ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল মোটামুটি একই থাকে আর যদি তা না হয় তাহলে ভূপৃষ্ঠের পরিধি যে হারে পরিবর্তন হয় তার থেকে অনেক দ্রুত হারে সমুদ্রণক্ষের প্রসারণ হয় । এ ব্যাপারে উল্লেখ করা যায় যে , বিগত 600 মিলিয়নের বেশি বছর সময় ধরে । পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬ শতাংশেরও বেশি বাড়ে এবং ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল কমেছে কি বেড়েছে সেই সম্পর্কে কোনো বৈজ্ঞানিক | যুক্তিসহ ব্যাখ্যা নেই ।


 3. নতুন ভূরত্ব সৃষ্টি হলে তা দৃঢ় পাতে পরিণত হয় । এ সম্পর্কে বলা যায় যে সামুদ্রিক ভূহক সৃষ্টির সময়ে তা ভাঁজপ্রাপ্ত হয়নি । এছাড়া সামুদ্রিক শৈলশিরার দুপাশে বিভিন্ন পটির চৌম্বক অসপাতি সরল ও নিয়মিত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে । থেকে বলা যায় যে , নতুন তৈরি সামুদ্রিক বক নিরূপণ থেকে যুক্ত থাকে ও একে এক দৃঢ় পাত হিসাবে গণ্য করা যায় । 


4. পৃথিবীর গুরুমন্ডলের বাইরের অংশে বিভিন্ন পরিচালন তাপবোশ ( heat cell আছে এদের পরিচলন তাপস্রোতের ফলে ভূপৃষ্ঠের পাতগুলি গতিশীল প্রাপ্ত হয় এবং তখন এই পাতগুলি পরস্পর থেকে দূরে কিংবা পরস্পরের কাছে চলতে শুরু করে । এই পরিচালনা তাগ স্রোত - ই হল পাতগুলির চালিকাশক্তি । 


★পাতের সংজ্ঞা ধারণা ও বৈশিষ্ট্য Definition Concept and Characteristics of Plate 


• সংজ্ঞা ও ধারণা ( Definition & Concept ) পৃথিবীর শিলামণ্ডল কতকগুলি খন্ডে বিভক্ত । এই খণ্ডগুলিকে পাত বলে । ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলীয় শিলামণ্ডলের একত্রিত খণ্ডিত অংশ হল পাত । এই পাত বা শিলামণ্ডলীয় নওগুলি বিভিন্ন ভাবে গতিশীল থাকে । অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের ওপর উপরিভাগে কতকগুলি মহাদেশ অনমনীয় ( rigid ) এবং কঠিন ( solid ) দণ্ড আপেক্ষিকভাবে নিজেদের মধ্যে গতিশীল । এই গতিশীল মণ্ডগুলিকে মূলত পাত বলা হয় । এই পাতগুলিকে ভূত্বকীয় কিংবা শিলামওদীয় পাত বলে । পাতগুলির চলাচলের দ্বারা মহাদেশের গঠন বৃদ্ধি পায় এবং মহাসাগর বা জলভাগের বিস্তৃতি , আয়তন , উৎপত্তি কিংবা বিলুপ্তি প্রভৃতি প্রভাবিত হয় । সাধারণত পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের গঠন পাতগুলিকে সচল রেখেছে । অনেক ক্ষেত্রে গুরুমণ্ড লের উপর অবস্থানরত অ্যাসথেনোস্ফিয়ার পাতের উদ্ভবে এবং গতিশীলতায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে । 


• পাতের বৈশিষ্ট্য ( Characteristics of Plate ) 


1. অবস্থান : 


আমরা যাদের পাত বলছি , তা ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত । ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রের তলদেশে 70 পরিচিত , যা ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের সামান্য অংশ নিয়ে তৈরি । তিনি এবং পর্বতের তলদেশের 150 কিমি পর্যন্ত গভীর অংশটি কঠিন ও দৃঢ় শিলাস্তর দিয়ে গঠিত । এটি শিলামণ্ডল নামে পাত বলে ।


 2. প্রকার :


কোনো পাত শুধু সামুদ্রিক ভূত্বক দিয়ে গঠিত যাকে সামুদ্রিক পাত বলে । কিংবা , মহাদেশীয় ভূত্বক দিয়ে গঠিত যাকে মহাদেশীয় পাত বলে , আবার কোনো পাতে মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় উভয় ভূত্বক আছে । যাকে মহাদেশ - মহাসমুদ্র পাত বলে।


3. প্রান্ত ভাগের প্রকৃতি : 


গতিশীল প্রত্যেকটি পাতের দুপাশে দুটি সীমানা থাকে । যথা সামনের সীমানা ও পিছনের সীমানা । সামনের সীমানাটি সবসময় সক্রিয় থাকে কিন্তু পিছনের সীমানাটি নিষ্ক্রিয় থাকে । 


4. আয়তন : 


পাত বা ছোটগুলি গড়ে কয়েক হাজার থেকে কয়েক লক্ষ বর্গকিনি এলাকা নিয়ে গঠিত । সবচেয়ে বড়ো মেট প্রশান্ত মহাসাগরের 10.32 কোটি বর্গকিি 


5. গতি :


পাতগুলির গতি সর্বত্র সমান নয় । বছরে প্রায় 16 সেমি বেগে প্লেট বা পাতগুলি আপেক্ষিভাবে সঞ্চরণশীল । জানা গেছে , প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটির গতি সর্বাধিক বছরে 10-12 সেনি ।


 6. ভর : 


যে প্লেটের উপরিভাগে তৃভাগ অবস্থিত তাকে মহাদেশীয় প্লেট এবং যেখানে মহাসাগর অবস্থিত তাকে মহাসাগরীয় ছোট বলে । মহাদেশীয় প্লেট সিয়াল দিয়ে গঠিত বলে মহাসাগরীয় প্লেটের চেয়ে হালকা হয় । 


7. পাতসীমান্ত ও পাতসীমানা : 


পাতসীমান্ত ও পাতসীমানা শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও এদের মধ্যে সুক্ষ পার্থক্য রয়েছে । অর্থাৎ , একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা যেখানে পাতগুলিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় , এই সীমারেখাই হল পাত সীমানা । কিন্তু , পাতসীমান্ত হল পাগুলির প্রান্তভাগ যা একটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত । একটি পাতের ক্ষেত্রে পাতসীমানা চিহ্নিত করা যায় কিন্তু , পাতসীমান্ত চিহ্নিত করতে হলে একের অধিক পাশাপাশি অবস্থানরত পাতের প্রয়োজন । 


৪. পাতের সংখ্যা : 


ভুবিজ্ঞানী ডব্লু . জে মরগ্যান ( W.J. Morgan ) ভুধের মধ্যে 20 টি পাতকে শনাস্ত করেছিলেন কিছু বর্তমানে ডুবিজ্ঞানীরা এটি বড়ো পাত ( উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে নিয়ে একটি পাত ধরে ) , ৪ টি মাঝারি পাত এবং 20 টি ক্ষুপাতসহ মোট 34 কিংবা 35 টি পাতের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেছেন । 


9. পাতের দ্বারা গঠিত ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলি : 


ভূত্বকীয় পাতগুলি চলাচলের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভুগাঠনিক ঘটনাবলি লক্ষ করা যায় , যেমন ভাঁজ , চ্যুতি , ভূমিকম্প অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি এবং এদের যারা বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় । 


★পাতের গঠন প্রক্রিয়া Plate Forming Processes 


পাত বা Plate পৃথিবীর স্তবায়িত গঠনের মডেলে একটি প্রমাণিত অস্তিত্ব । এই পাতের সৃষ্টি পৃথিবীর উৎপত্তির পরে যখন শীতলীকরণ ঘটে তখন থেকে শুরু হয়েছে । ভূত্বক ও ঊর্ধ্বগুরুমণ্ডল সহ পৃথিবীর শক্ত বা কঠিন বহিঃস্তর অখমণ্ডল তথা শিলামণ্ডল হিসাবে পরিচিত । পৃথিবীর ভূত্বকের এই অংশেই পাতের গঠন দেখা যায় । এই পাত তুলনামূলক অধিক উদ্বু ও বেশি নমনীয় যা অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের উপর চড়ে বেড়াচ্ছে । ভূপৃষ্ঠের 50-100km গভীরতায় পরবর্তী অঞ্চলটি শুরু হয় । এবং তা প্রায় 400 500 km গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত । কঠিন শিলামণ্ডল বা প্রধান পাতগুলি বেশ কয়েকটি নিখুঁত স্তরায়ণে গঠিত । একেবারে নীচের অংশটি গুরুমণ্ডলের শীতল ও কঠিন ঊর্ধ্বাংশ নিয়ে গঠিত । ভূত্বকের সাথে এই স্তরের উপরে স্পর্সমোহো বিযুক্তি তলের দ্বারা চিহ্নিত হয় । পাতের গঠন একেবারে নীচের স্তরে ঠিক উপরে ভূত্বকের মূল অংশ অবস্থিত । সমুদ্রতলা এলাকায় এই ধরনের ভূত্বকের স্তর খুবই পাতলা বা কয়েক কিমি পুরু । এই স্তরে বড়ো দানাবিশিষ্ট গ্যারো প্রধান সিমাটিক শিলা বা সিলিকার সঙ্গে লৌহ এবং ম্যাগনেশিয়ান প্রধান শিলার গঠন দেখা যায় । সমুদ্র তলস্য শৈলশিরা দিয়ে এবং অন্যান্য আগ্নেয়গিরির কেন্দ্রগুলি দিয়ে লাভা বেরিয়ে এসে পরবর্তী সময়ে শীতল হয়ে জমাট বেঁধে এই স্তরের উপর একটি আবরণ তৈরি করে । মহাদেশের তলদেশে এই স্তর 30 km বা তার বেশি পুরু হয় । এই ধরনের নিম্ন ভূত্বকের স্তরটি সমুদ্রগাত গ্যারো প্রধান শিলা দিয়ে গঠিত । আবার ভূত্বকের উপরের স্তরটি সিয়ালিক শিলা বা সিলিকা এবং অ্যালুমিনা প্রধান কেলাসিত গ্রানাইট শিলাপুরে গঠিত । পৃথিবীর উৎপত্তির পরবর্তী সময়ে যখন উত্তপ্ত অবস্থা থেকে শীতলীভবন ঘটে , তখন থেকে পাত সৃষ্টি শুরু হয়েছিল । ভূত্বক কিংবা , গুরুমণ্ডলের এই পাতের গঠন কতকগুলি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে । সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল 


( 1 ) পৃথিবীর আদিকাল বিগ ব্যাঙ - এর প্রসারণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে । এই প্রসারণের সময় মহাজাগতিক মেঘ থেকে পৌরজগৎ গঠিত হয় । পরবর্তী সময়ে গ্রহরূপে পৃথিবী গ্যাসীয় ও জ্বলন্ত অবস্থা থেকে শীতল হতে থাকে । সেই সঙ্গে ভারী উপাদানগুলির দ্বারা কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডল গঠন হয় । একই সময়ে অতি হালকা সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম যৌগগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মহাদেশীয় কেন্দ্ৰক ( continental nuclei ) গঠন করেছে । অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্বের সিলিকন ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ স্তর সামুদ্রিক ভূত্বক গঠন করেছে । সামুদ্রিক ভূত্বকগুলি গুরুমণ্ডল থেকে উঠে আসা ম্যাগমার ধাক্কায় গতিশীল হয়ে মহাদেশীয় ভূত্বকগুলিতে চ্যুতি বা ভাঁজের সৃষ্টি করে , সেইসঙ্গে মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলির গভীরতা আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে । 


( 2 ) আবার , গুরুমণ্ডলের উপরে প্রায় 70-190 km স্তরে অপেক্ষাকৃত স্বল্প ঘনত্বের শিলামণ্ডলীয় একটি অংশ ও তার নীচে অ্যাসথেনোস্ফিয়ার ( 190-700 km ) সৃষ্টি হয়েছিল । মহাদেশীয় ভূত্বক , সামুদ্রিক ভূত্বক এবং গুরুমণ্ডলীয় শিলামণ্ডল একরে মিলিত হয়ে পাত গঠন করে 


( 3 ) বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে সামুদ্রিক পাতের অংশটি অর্থাৎ সিমা ও নীচের গুরুমণ্ডলীয় শিলামণ্ডলের সেই ধরনের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি । কিন্তু , প্রাক্ জীবীয় পর্বে গভীরতা ছিল 2-3 km , যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ৪km হয়েছে । এই গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হল পৃথিবীর উপরিভাগ অধিক শীতল । 


( 4 ) পাতের মহাদেশীয় অংশটি অর্থাৎ সিয়াল এবং গুরুমণ্ডলের শিলামণ্ডলীয় অংশের আয়তন ও গভীরতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে । ঠিক তেমনি পাতের গাঠনিক জটিলতা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান বিভিন্ন মহাদেশীয় পাতের আকার ধারণা করেছে । এইভাবে বিভিন্ন পাতের উদ্ভব ও তাদের মধ্যে নানাবিধ পরিবর্তন ঘটেছে । 


★ভূত্বকীয় পাতগুলির গঠন ও বর্ণনা Structure and Description of the Lithospheric Plate 


পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুযায়ী ভূত্বকটি 7 টি প্রধান ( উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে আলাদা পাত ধরে ) , ৪ টি মাঝারি এবং 20 টি ক্ষুদ্র পাত দ্বারা গঠিত । নিম্নে প্রধান , মাঝারি ও ক্ষুদ্র পাতগুলির বর্ণনা ও অবস্থান উল্লেখ করা হল 


 প্রধান প্রধান পাতসমূহ ( Major Plates ) 


         

 


পৃথিবীর বিভিন্ন পাত ও তার সীমানা

1. ইউরেশীয় পাত : 


ইউরোপ ও এশিয়ার উত্তর অংশ এবং তার সংলগ্ন সামুদ্রিক অঞ্চলের তলদেশ নিয়ে এই পাত গঠিত ।


2. ইন্দো - অস্ট্রেলিয়ান পাতঃ 


ভারত , ভারত মহাসাগর এবং অস্ট্রেলিয়ার চারপাশের সামুদ্রিক অঞ্চল নিয়ে এই পাতটি গঠিত , ভারত মহাসাগরের একটি বিশাল অল এই পাত নিয়ে গঠিত । 


3. আন্টার্কটিকান পাত : 


আন্টার্কটিকা মহাদেশ এবং তার চারদিকের সামুদ্রিক তলদেশ নিয়ে গঠিত এই পাত । 


4. আফ্রিকান পাত : 


আফ্রিকা মহাদেশ ও আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে পূর্বদিকের অংশ নিয়ে এই পাত গঠিত । 


5. উত্তর আমেরিকান পাত : 


উত্তর আমেরিকা মহাদেশ এবং তার সংলগ্ন উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম অংশ নিয়ে গঠিত এই পাত


 6.দক্ষিণ আমেরিকান পাত :


 ও দক্ষিণ আমেরিকা ও তার সংলগ্ন দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশ নিয়ে এই পাত গঠিত । ত এই পাত 


7. প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত :


 সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ নিয়ে গঠিত পাতটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের অন্তর্গত । 


B. মাঝারি পাতসমূহ ( Medium Plates ) 


প্রধান পাতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোটো আকৃতির পাতগুলিকে মাঝারি পাত বলে । ভূত্বকীয় উল্লেখযোগ্য মাঝারি পাতগুলি হল


 1. আরবীয় পাত ( Arabian Plate ) 


2. বিসমার্ক পাত ( Bismark Plate ) 


3. ক্যারিবিয়ান পাত ( Caribbean Plate ) , 


4. কোকো পাত ( Cocos Plate ) 


5. জোয়ান - ডি - ফোকা পাত ( luan de- Fuca Plate ) .


6. নাজকা বা , পূর্ব প্রশান্ত পাত ( Nazca or East Pacific Plate ) 


7. ক্যারোলিনা পাত ( Carolina Plate ) , 


8. ফিলিপাইন পাত ( Philippines Plate ) |


C. ক্ষুদ্র পাতসমূহ ( Little Plates ) 


মাঝারি পাত অপেক্ষায় ছোটো পাতগুলি সমগ্র পৃথিবী জুড়ে প্রায় ২০ টির মতো অবস্থান করছে । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- পারসা পাত , তুর্কি ঈজিয়ান পাত , আলতোলীয় পাত , চীনা পাত , স্কোশিয়া পাত , ফিজি পাত , প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । 


• পাতের গঠন ( Structure or Form of Plates ) 


পাত পৃথিবীর স্তরায়িত গঠন মডেলে একটি প্রমাণিত রূপ । এই পাতের সৃষ্টি পৃথিবীর উৎপত্তির পরবর্তী সময়ে যখন উত্তপ্ত অবস্থা থেকে শীতলীকরণ ঘটে তখন থেকে সৃষ্টি হয়েছে । পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের গঠন এই সময় থেকে শুরু হয়েছিল । পাতের সৃষ্টির কতকগুলি প্রক্রিয়া ও পর্যায় নিম্নে আলোচনা করা হল


 1. পৃথিবীর সৃষ্টি শুরু হয় বিগ ব্যাং প্রসারণের মধ্যে দিয়ে কিন্তু বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে নয় । এই প্রসারণ পর্বের সময় মহাজাগতিক মেঘ থেকে সৌরজগৎ গঠিত হয় । গ্রহরূপে পৃথিবী ধীরে ধীরে গ্যাসীয় ও জ্বলন্ত অবস্থা থেকে শীতল হতে থাকে । এইসলো ভারী উপাদানগুলি দ্বারা কেন্দ্রমণ্ডল ( Core ) , গুরুমণ্ডল ( mantle ) গঠিত হয়েছে । এই পর্যায়ের এই সময় সবচেয়ে হালকা যৌগ সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম যৌগগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মহাদেশীয় কেন্দ্রক ( continental nuclei ) গঠন করেছিল । অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্বের সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম দ্বারা সীমান্তর অর্থাৎ সামুদ্রিক ভূত্বক গঠন হয়েছে । এই সমনা সামুদ্রিত ভূত্বকগুলি গুরুমণ্ডল থেকে উঠে আসা ম্যাগমার ধাক্কায় সিয়াল স্তর অর্থাৎ , মহাদেশীয় ভূত্বকে ভাঁজ ও চ্যুতির সৃষ্টি করে । সেই সঙ্গে মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলির গভীরতা ও আয়তন বৃদ্ধি পায় । 


2. আবার বিপরীতভাবে , গুরুমণ্ডলের উপরে 70-90 কিমি স্তরে অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্বের শিলামণ্ডলীর একটি অংশ স্বল্প ঘনত্বের শিলামণ্ডল একসঙ্গে পাতরূপে গঠিত হয় । তার নীচে অ্যাসথেনোস্ফিয়ার ( 190-700 কিনি ) সৃষ্টি হয়েছে । অর্থাৎ , মহাদেশীয় ভূত্বক সামুদ্রিক ভূত্বক এবং গুরুমণ্ডলের স্বল্প ঘনত্বের শিলামন্ডল একসঙ্গে পাতরূপে গঠিত হয় ।  


3. ভূতাত্ত্বিক যুগে সিমা ও তার নীচের গুরুমণ্ডলীয় শিলামণ্ডলে সেই ধরনের পরিবর্তন ঘটে । সেই সময় এই স্তরের গভীরতা ছিল 2 থেকে 3 কিমি । কিন্তু , বর্তমানে এর গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে 4 কিমি হয়েছে । পৃথিবীর উপরিভাগ অধিক শীতল হওয়ার ফলেই এই অংশটির গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে । সেইসঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন মহাসাগরীয় পাগুলি অবস্থান করছে । 


4. পাতের মহাদেশীয় অংশটির অর্থাৎ , সিমা ও গুরুমণ্ডলীয় শিলামণ্ডলের আয়তন ও গভীরতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি এর গাঠনিক জটিলতা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিভিন্ন মহাদেশীয় পাতরূপে অবস্থান করছে । 


★বিভিন্ন প্রকার পাতসীমানা ও পাতের গতি Different Plate Boundaries and Plate Movement 


1. প্রতিমারী বা অপসারী বা গঠনকারী পাতসীমানা ( Divergent or Constructive Plate Boundary ) 


                            প্রতিসারী পাত সীমানা

প্রতিসারী পাত সীমানায় একটি পাত অন্য পাত হতে দূরে সরে যায় অর্থাৎ যে সীমানা বরাবর তৃত্বতীয় পাত পরস্পরের বিপরীত দিকে দূরে সরে যায় , তাকে প্রতিমারী পাত সীমানা বলে । এবং এদের মধ্যবর্তী স্থানে সমুদ্রের তলদেশ প্রসারিত হয়ে নতুন সামুদ্রিক ভূত্বকের সৃষ্টি করে । এই স্থানে গঠিত সমুদ্রের তলদেশ একটি মধ্য - সামুদ্রিক শৈলশিরার আকার ধারণ করে । এই সীমান্ত যখন দুটি পাত সরে গিয়ে পরস্পরের বিপরীত দিকে সরে যেতে থাকে তখন তাদের সীমান্তে বিকর্ষণের ফলে চাপ অনেকাংশে হ্রাস পায় ফলে ওই সময়ে ভূ - অভ্যন্তরস্থ পদার্থসমূহ কঠিন থেকে তর অবস্থায় পরিণত হয় । এবং এই সমস্ত তরল পদার্থ লাভারূপে আগের অবস্থানরত পাতের স্থানে সন্বিত হতে থাকে এভাবে ক্রমাগত লাভা নির্গমনের ফলে সমুদ্রগর্তে কঠিন সামুদ্রিক তলদেশ গঠিত হয় । দীর্ঘদিন পাড় সীমানায় ভাস হলে তা শৈলশিরা গঠন করে । পাতের বিভিন্ন প্রতিসরণের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের গঠন হয় বলে একে গঠনকারী প্রতিসারী পাতসীমান্ত বলে । 


2. অভিসারী বা ধ্বংসাত্মক বা বিনাশকারী পাতসীমানা ( Convergent or Destructive Plate Boundary ) 

                                  


                         অভিসারী পাত সীমানা

যে সীমানা বরাবর দুটি শিলামন্ডলীয় পাত পরস্পরের মুখোমুখি অগ্রসর হয় , তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলা হয় । এক্ষেত্রে দুটি পাতের অগ্রভাগ পরস্পরের দিকে গতিশীল থাকায় সংঘর্ষ হয় । এই সংঘর্ষে উৎপন্ন তাপের প্রভাবে শিলা গলে গিয়ে লাভার সৃষ্টি করে এবং দুই পাতের মাঝের ফাঁক দিয়ে অগ্ন্যুগম হয় , কখনও কখনও প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হয় । এই সীমানায় অপেক্ষাকৃত ভারী পাতটি হালকা পাতের নীচে প্রবেশ করে সেই সঙ্গে ভারী পাতটির নিমজ্জিত অংশের বিনাশ ঘটে এইজন্য এই সীমানাকে সংঘর্ষ সীমানা ( Collision Boundary বা বিনাশকারী সীমানা ( Desctructive Boundary ) বলা হয় এই সংঘর্ষ সীমানা প্রধানত তিন প্রকার । যথা--


a . মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানা । 


b . মহাদেশীয় ও মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানা ।


C. মহাসাগরীয় ও মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানা । 


3. নিরপেক্ষ বা সংরক্ষণশীল পাতসীমানা ( Neutral or Conservative Plate Boundary )  

        

                    নিরপেক্ষ পাত সীমানা


কোনোরকম সংঘর্ষ ছাড়াই যে সীমান্ত বরাবর দুটি পাত পাশাপাশি পরস্পরকে অতিক্রম করে তাকে নিরপেক্ষ পাতসীমানা বলে এক্ষেত্রে পাত দুটির গতি সংযোগস্থলের সঙ্গে সমান্তরাল থাকে অর্থাৎ , পাত দুটি পরস্পরের দিকে বা তার বিপরীত দিকে কোনো গতি থাকে না । ফলে নতুন ভূত্বক তৈরি হয় না বা পুরোনো ভূত্বক ধ্বংস হয় না । সেই কারণে এটি সংরক্ষণ সীমানা নামে পরিচিত । এই সীমানা বরাবর দীর্ঘাকার চ্যুতি ও ভূমিকম্প লক্ষ করা যায় । 


● পাতের চলন ( Plate Movement )


 এই পাতগুলির কেন্দ্রীয় অংশ আপাতভাবে স্থিতিশীল ও ভূ - আন্দোলন প্রভাব মুক্ত । তবে এদের প্রান্তভাগগুলি সর্বদা গতিশীল এবং প্রান্তভাগ নির্ণয় করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভূকম্প কেন্দ্রের অবস্থানের সাহায্য নিয়েছে । পাতগুলি সর্বদা গতিশীল , প্রতি বছরে 1 থেকে 6 সেমির মধ্যে এরা চলাচল করে । পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে পাতগুলির গতি সর্বাধিক অর্থাৎ বছরে 10 থেকে 12 সেমি কিন্তু মেরু অঞ্চলে এই গতিবেগ কমতে কমতে প্রায় ০ তে এসে পৌঁছায় । এই গতির দরুন একটি পাত অন্য পাতের কাছে আসে কিংবা দূরে সরে যায় । পাতের গতির স্বাক্ষর চিহ্নিত হয় সীমান্ত অঞ্চলে । পাতগুলির চলমানতার বৈচিত্র্য অনুযায়ী তিন ধরনের সীমান্ত লক্ষ করা যায় যথা 


1. অপসারী বা প্রতিমারী বা গঠনকারী পাতসীমানা । 


2. অভিসারী বা ধ্বংসাত্মক বা বিনাশকারী পাতসীমানা । 


3. নিরপেক্ষ বা সংরক্ষণশীল পাতসীমানা । 


• পাতের গতির কারণ ( Causes of Plate Movement ) 


ভূবিজ্ঞানীরা এখনও সঠিকভাবে প্লেটগুলির গতির কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি । এক্ষেত্রে তাঁরা একাধিক ভূ - অভ্যন্তরীণ পদ্ধতিকে দায়ী করে থাকেন । এই পদ্ধতিগুলি হল 


1. পরিচলন স্রোত ( Convection Current ) 


মনে করা হয় , অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের তরল পদার্থ তাপ পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে পরিচলন স্রোত গঠন করে । এই পরিচলন স্রোতের কথা প্রথম বলেন ভূ - বিজ্ঞানী আর্থার হোমস্ ( Arthur Holmes ) | থ্রোনসের মতে , অ্যাসথেনোস্ফিয়ার জায়গায় জায়গায় দম ঘনত্বের জন্য ভেসে উঠতে থাকে । কোটি কোটি বছর ধরে চলা এই অবস্থায় একাধিক পরিচলন কোশ ( convection cell ) - এর উদ্ভব হয় । পাশাপাশি দুটি পরিচলন কোশ উপরের শিলামগুলে এসে প্রতিহত হলে ভাসমান মেটগুলি পরস্পর থেকে দূরে ছড়িয়ে পড়ে । নিম্নমুখী বিপরীতগামী বা , অভিস কোষ মেটগুলিকে কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয় । 


2. অভিকর্ষ টান ( Gravitation pull ) 


বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন যে , সামুদ্রিক শৈলশিরা এবং সমুদ্রখাতে অভিবা বলের মান , অম্ল হয় । অর্থাৎ , এক্ষেত্রে একটি ঢাল তৈরি হয় । এই অভিকর্ষ বল তারতম্যজনিত ঢালের জন্য মেট সঞ্চালিত হয় অর্থাৎ শৈলশিরা অঞ্চল থেকে সামুদ্রিক খাতের নীচু অঞ্চলে প্লেটের চলন হয় । 


3. গ্লিউম তত্ত্ব ( Plume Theory ) 


ম্যাগমার ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহকে মিউম বলে । বিজ্ঞানীদের মতে , ভূত্বকের নীচে 21 তপ্ত বিন্দু ( hot spot ) রয়েছে , যার থেকে অনবরত গ্লিউম তৈরি হয় । এই গ্লিউমগুলি ভাসমান প্লেটগুলির নীচে ধাক্কা দিয়ে মেটগুলিকে সচল করে । 


4. টান বল ( Slab Pull )


 যখন দুটি প্লেটের একটি অন্যটির নীচে প্রবেশ করে , তখন নিম্নমুখী প্লেটের ঘনত্ব বেড়ে যায় । ফলে , স্বাভাবিক ভাবে একটি টান বল ক্রিয়া করে , যা প্লেটকে গতিশীল করে ।


 5. রিজ পুশ বল ( Ridge Push Force ) : 


মহাসাগরীয় শৈলশিরার প্রতিমারী ক্ষেত্রে সাভার নির্গমনের ফলে যে নতুন ভূত্বকীয় পাত ও শৈলশিরা তৈরি হচ্ছে তাদের চাপ দুপাশের পাতকে দূরে সরাতে সাহায্য করে , একে Ridge Push বলে । এটিও প্লেটের গতির কারণ হিসাবে দায়ী । 


★বিভিন্ন পাতসীমানায় গঠিত ভূমিরূপসমূহ Landforms Associated with Different Plate Boundaries 


• পাতসীমানার ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্য ( Plate Boundary Tectonics ) 


1]অপসারী পাতসীমানার ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্য ( Tectonic Features of Divergent Plate Boundary ) 


অপসারী পাত সীমান্তে বিভিন্ন রকম ভূমিরূপ গঠিত হয় এবং বিভিন্ন ভূগাঠনিক কাজ দেখা যায় । যেমন- সামুদ্রিক শৈলশিরা , চ্যুতি অবল সৃষ্টি , নতুন সমুদ্রের সৃষ্টি ভূমিকম্প প্রভৃতি । 


1. সামুদ্রিক শৈলশিরা ( Oceanic Ridge ) :


পাত দুটি পরস্পর থেকে যত দূরে সরে যায় ততই মধ্যবর্তী ফাটলটি চওড়া হতে থাকে এবং ভূত্বক পাতলা হয়ে যায় । ফলে অ্যাসথেনোস্ফিয়ার ভুপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে । তখন সেখান থেকে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ উপরে উঠে এসে নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বকের সৃষ্টি হয় এবং ফাটল বরাবর উচ্চ শৈলশিরা তৈরি হয় । এভাবে প্রায় প্রতিটি মহাসাগরে মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা ( Mid Oceanic Ridge বা MOR ) তৈরি হয়েছে । এর মধ্যে সর্ববৃহৎ হল- মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা । এটির একদিকে আমেরিকান পাত এবং অন্যদিকে ইউরেশিয়া ও আফ্রিকান পাত পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলশ্রুতি । 


2. চ্যুতি ( Fault ) :


দুটি পাত বিপরীত দিকে সরে গেলে দুদিক থেকে শিলায় টান পড়ে ভূত্বক নীচের দিকে বসে যায় । ফলে রৈখিকভাবে সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকা ও হ্রদ সৃষ্টি হয় । আফ্রিকার পূর্ব প্রান্তে উত্তর - দক্ষিণে বিস্তৃত বৃহৎ পূর্ব আফ্রিকা উপত্যকা , মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরার আইসল্যান্ডের গ্রড উপত্যকা এবং ভিক্টোরিয়া টাঙ্গানিকা - নিয়াসা - কিন্তু প্রভৃতি হ্র অঞ্চল এরূপ ভূমিরূপের উদাহরণ । 


3. নতুন সমুদ্রের সৃষ্টি ( Origin of New Ocean ) : 


সংশ্লিষ্ট পাত - দুটি যদি মহাদেশীয় হয় , তাহলে অপসারী চলনের ফলে প্রথমে কতকগুলি ফাটলের সৃষ্টি হয় । ওই ফাটল দিয়ে প্রথমে আগ্নেয় গ্যাস ও পরে লাভাস্রোেত বেরিয়ে আসে যত দিন যেতে থাকে ওই ফাটল তথা গ্রস্ত উপত্যকার উভয়দিকের মহাদেশীয় ভূত্বক দূরে সরে যায় এবং মধ্যবর্তী অঞ্চলে ধীরে ধীরে সামুদ্রিক ভূত্বক গঠিত হয় । পরে ওই ফাঁকা নীচু জায়গাটি সমুদ্রের জল দ্বারা পূর্ণ হয় এবং নতুন সমুদ্রের সৃষ্টি হয় । এভাবে একটি অখণ্ড মহাদেশ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আফ্রিকান ও আরাবিয়ান পাতের মাঝে লোহিত সাগর কিংবা আফ্রিকান ও সোনালি পাতের মাঝে এডেন সাগরের সৃষ্টি হয়েছে । ইউরেশীয় আফ্রিকান পাত ও আমেরিকান পাত বিপরীতমুখী হওয়ায় এভাবে আটলান্টিক মহাসাগরের সৃষ্টি হয়েছিল । 


4 ভূমিকম্প ( Earthquake ) : 


প্রতিমারী পাত সীমানায় পাতের চলন , চ্যুতি , অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতির কারণে ভূমিকম্প সংঘটিত হয় । 


2] অভিসারী পাতসীমানার ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্য ( Tectonic Features of Convergent Plate Boundary ) 


দুটি পাতের সংঘর্ষ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ভূগাঠনিক ঘটনা ঘটে ও ভূমিরূপ গঠিত হয় । মহাদেশীয় - মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানায় বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় । 


‹★› মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানায় সৃষ্ট ভূমিরূপ 


1. আগ্নেয়গিরি ( Volcanoes ):


 নিমজ্জিত মহাসাগরীয় পাতটি ভূ - অভ্যন্তরীণ তাপে গলে গিয়ে ম্যাগমায় পরিণত হয় । ওই গলিত ম্যাগমা অধঃপাত অঞ্চলের উপরে অবস্থিত মহাদেশগুলির দুর্বল প্রান্তভাগ দিয়ে নির্গত হয়ে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে । মহাদেশের মধ্যে সৃষ্ট বৃত্তাকার আগ্নেয়গিরিগুলিকে আগ্নেয় বৃত্তমালা বা মহাদেশীয় বৃত্তমালা বলা হয় । দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম তীরে এবং নাজকা পাতের সংযোগস্থলে এরূপ আগ্নেয় বৃত্তমালা সৃষ্টি হয়েছে । প্রায় সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরের অধঃপাত অঞ্চলে আগ্নেয়গিরিগুলি বৃত্তামালার আকারে অবস্থান করে , একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা বলা হয় । প্রসরণশীল প্রাপ্তটি দূরে অবস্থান করলে মহাদেশের সীমানায় আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি ঘটে । আবার প্রসারণশীল প্রান্তটি কাছে থাকলে সমুদ্রের মধ্যে আগ্নেয় বৃত্তমালা সৃষ্টি হয় ।


 2. অধঃপাত বলয় Subduction Zone ): 


মহাসাগরীয় পাত মহাদেশীয় পাতের তুলনায় অধিক ভারী হওয়ায় মহাসাগরীয় পাতটি মহাদেশীয় পাতের তলায় 30 ° -80 ° কোণে নিমজ্জিত হয় । অনেক সময় মহাসাগরীয় পাতটি অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের মধ্যে 700 কিমি পর্যন্ত প্রবেশ করে 


3. সমুদ্রখাত ( Ocean Trench) :


জ্জত মহাসগরীয় পাতের অধঃপাত অঞ্চলের ওপর মহাদেশীয় পাত অবস্থান করে । নিমজ্জিত পাতের ঘর্ষণে মহাদেশীয় পাতসীমানার নীচের দিকে বেঁকে গেলে সমুদ্রখাত সৃষ্টি হয় । প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু ও চিলি খাত এভাবে সৃষ্টি হয়েছে । 


4. ভূমিকম্প Earthquake ) :


 মহাসাগরীয় ও মহাদেশীয় পাতের সীমানা অঞ্চলে মহাসাগরীয় পাতের ক্রমাগত অনুপ্রবেশের ফলে সামুদ্রিক খাতগুলিতে প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয় । 1960 সালে চিলি দেশে এ কারণে পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয় ।


5. বেনিয়ফ অঞ্চল ( Beni Off Zone ) :


 মহাদেশীয় পাতের অধ্যগমনের জন্য অধঃপাত বরাবর দুটি পাতের মধ্যে একটি সীমান্ত অঞ্চলের সৃষ্টি হয় । দুটি পাতের সংঘবজনিত কারণে এই অঞ্চল গভীর , মাঝারি ও অগভীর কেন্দ্রবিশিষ্ট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয় । ভূমিকম্পপ্রবণ নিমজ্জিত পাতের এই ঢালু সীমানা তলকে বেনিয়ম অঞ্চল ( Benioff zone ) বলে । ভূমিকম্পবিন বেনিয়ফ - এর মতে এই ঢালু অংশে প্রায়ই ভূমিকম্প সংঘটিত হয় । 


6.ভঙ্গিল পর্বত ( Fold Mountain ) :


মহাসাগরীয় ও মহাদেশীয় পাতের মুখোমুখি চলনের ফলে মহাদেশীয় পাতের নিকটে অগভীর সমুদ্রের পলিরাশি সংকুচিত হয় , ভাঁজ খেয়ে উত্থিত হয়ে ভঙ্গিল পর্বতে পরিণত হয় । উত্তর আমেরিকা মহাদেশের রকি পর্বত এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ পর্বত এভাবে সৃষ্টি হয়েছে ।


‹★› দুটি মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানায় সৃষ্ট ভূমিরূপ : 


দুটি মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানায় সৃষ্ট প্রধান প্রধান ভূমিরূপগুলি হল


1. ভঙ্গিল পর্বত ( Fold Mountain ) 


দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হলে তাদের সংযোগস্থলে উভয়ের প্রান্তভাগ বেঁকে বড়ো বড়ো চ্যুতির সৃষ্টি হয় । ভারী মহাদেশীয় পাতটি অপেক্ষাকৃত হালকা মহাদেশীয় পাতের নীচে প্রবেশ করার সময় দুটি পাতের মাঝখানে অবস্থিত অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত পলিরাশি সংকুচিত হয়ে ভাঁজ খায় । পাত দুটি পরস্পর পরস্পরের কাছে এলে ভাঁজপ্রাপ্ত শিলাস্তর আরও উপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে । ইন্দো - অস্ট্রেলীয় পাত ও ইউরেশীয় পাতের সংঘর্যজনিত কারণে টেথিসে সন্ডিত পলিরাশি ভাঁজ খেয়ে ওপরে উঠে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি করেছে । যে রেখা বরাবর দুটি পাত যুক্ত হয় বা সংঘর্ষ হয় তাকে সুচার লাইন ( Suture line ) বলে । 


2. ফ্লেক টেকটনিক্স ( Flake Tectonics ) 


দুটি মহাদেশীয় পাতের অভিসারী চলনের ফলে ভারী পাত হালকা পাতের নীচে প্রবেশ করে । এক্ষেত্রে নিম্নগামী মহাদেশীয় পাতের ওপরের একটি পাতলা স্তর সংলগ্ন মহাদেশীয় পাতের ওপরে উঠে যায় । এবং বাকি অংশ ওই মহাদেশীয় পাতের নীচে প্রবেশ করে । এই প্রক্রিয়াকে ফ্রেক টেকটনিক্স ( flake tectonics ) বলে ।


 3. ভূমিকম্প ( Earthquake ) 


হিমালয় , আত্মস প্রভৃতি নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলের গঠনকার্য এখনও সম্পূর্ণ হয়নি । দুটি মহাদেশীয় পাতের ক্রমাগত ধাক্কায় এসব অঞ্চলে মৃদু থেকে তীব্র শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটে । 


‹★› দুটি মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানায় সৃষ্টি ভূমিরূপ:


 দুটি মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষ সীমানায় সৃষ্ট প্রধান প্রধান ভূমিরূপগুলি হল 


1. গভীর সমুদ্রখাত ( Deep Ocean Trench )


 দুটি মহাসাগরীয় পাতের মুখোমুখি চলনের সময় অপেক্ষাকৃত ভারী পারটি অপেক্ষাকৃত হালকা পাতের নীচে প্রবেশ করে । দুটি পাতের নিম্নগামী প্রবণতা থাকায় শিলামণ্ডলে অতি গভীর অবতল বাকের সৃষ্টি হয় , এই গভীর অবতল বাকগুলিকেই ব্যাকআর্ক ( back arch ) বেসিন বা গভীর সমুদ্রখাত বলা হয় । যেমন- ভারত মহাসাগরের সুন্দা যাত , প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত প্রভৃতি ।


 2. ভূমিকম্প ( Earthquake ) : 


দুটি পাতের সীমানা সংঘর্ষজনিত কারণে গভীর কেন্দ্রবিশিষ্ট ভূমিকম্প ঘটে ।


 3. আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ বা বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা ( Volcanic Island Arc ) :


অভিসারী পাতদুটি সামুদ্রিক হলে ভারী মহাসাগরীয় পাতটি অপরটির নীচে চলে যায় । এক্ষেত্রে পাতের সঙ্গে সামুদ্রিক জল নীচে প্রবেশ করে । নীচে গিয়ে উচ্চ তাপে জল জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় । এই বাষ্প হালকা বলে ওপরের দিকে উঠতে থাকে এবং পাতের মধ্য দিয়ে আসার সময় সেখানকার গলনাঙ্ক কমিয়ে দেয় । ফলে শিলা গলে গিয়ে ম্যাগমা উৎপন্ন করে । এই ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে উঠে এসে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায় । তাই এই ধরনের সীমান্তের সমান্তরালে কিছুটা দূরে স্থলভাগের দিকে সৃষ্টি হয় ধনুকাকৃতি আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ ( volcanic island arc ) জাপান ও টোঙ্গা অন্যতম উদাহরণ । 


‹★›নিরপেক্ষ পাতসীমানায় সৃষ্ট ভূমিরূপ ( Tectonic Features of Conservative Plate Boundary ) 


নিরপেক্ষ বা সংরক্ষণশীল পাত সীমান্তের সংশ্লিষ্ট ভূগাঠনিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল 


1. ট্রান্সফর্ম চ্যুতি ( Transform Fault ) :


দুটি পাত একে অপরকে পাশ কাটিয়ে বিপরীত বা একই দিকে সরে যাওয়া 


আয়াম স্খলন চ্যুতির সৃষ্টি হয় । এই চ্যুতি ট্রান্সফর্ম চ্যুতি নামে পরিচিত । সমুদ্রতলে এই চ্যুতি সামুদ্রিক ট্রান্সফর্ম চ্যুতি নামে পরিচিত । উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান - আস্ট্রিয়াস চ্যুতি , তুরস্কে আনাতোলিয়া চ্যুতি ট্রান্সফর্ম চ্যুতির উদাহরণ । 


2. ভূমিকম্প ( Earthquake ) : 


দুটি পাত পরস্পর পাস কাটিয়ে যাওয়ার সময় পাতের প্রান্তভাগের সঙ্গে ঘষা লাগে । এ কারণে শিলামণ্ডলে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয় । যেমন – প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতটি উত্তর আমেরিকা পাতের গা উত্তর - পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে প্রায়শই ভূমিকম্প অনুভূত হয় । 


★পাত ভূগাঠনিক তত্ত্বের সমালোচনা Criticism of Plate Tectonic Theory 


ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলির বিশ্লেষণে পাত গাঠনিক তত্ত্ব সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য । এই তত্ত্বের প্রধান প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলি হল ---


1. অসামঞ্জস্য ভৃত্বকের সৃষ্টি ও বিনাশ :


 মহাসাগরীয় শৈলশিরা অঞ্চলে ভূত্বক সৃষ্টি হয় । আবার প্লেটের নিমজ্জন অংশে ভূতকের বিনাশ হয় । কিন্তু পৃথিবীর ভূত্বকের মোট আয়তন স্থির , অর্থাৎ ভূত্বকের সৃষ্টি ও বিনাশের হার সমান থাকার কথা । কিন্তু বাস্তবে লক্ষ করা যায় , নিমজ্জন রেখার দৈর্ঘ্যের তুলনায় শৈলশিরার দৈর্ঘ্য অনেক বেশি । 


2. অসামগ্লসা সামুদ্রিক ভূত্বক সব সমুদ্র নতুন ভূত্বক সৃষ্টির মাধ্যমে আয়তনে বাড়ছে , অথচ প্রশান্ত মহাসাগরের ভূত্বক হারিয়ে যাচ্ছে । এর ব্যাখ্যা এই তত্ত্বে পাওয়া যায়নি । 


3. অসামঞ্জস্য বেনিয়ফ - জোন সবক্ষেত্রে প্লেট সীমান্ত অঞ্চলে বেনিয়ফ - জোনকে চিহ্নিত করা যায়নি । উদাহরণস্বরূপ উত্তর আমেরিকার পাতের পার্শ্ববর্তী অংশে বেনিয়ফ - জোন নেই । ফলে , এখানে গভীর ও মাঝারি ভূমিকম্প কেন্দ্র অনুপস্থিত । 


4. অসম্পূর্ণ পর্বত সৃষ্টির ব্যাখ্যা : পাত ভূগাঠনিক তত্ত্বের সাহায্যে পৃথিবীর অধিকাংশ পর্বত সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করা গেলেও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার পর্বত বা দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রান্সেবার্গ পর্বত সৃষ্টির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি । 


5. পাত সৃষ্টির ব্যাখ্যার অভাব এই মতবাদে ধরে নেওয়া হয় যে , পৃথিবীর ভূত্বক কতকগুলি পাতে বিভক্ত । কিন্তু কীভাবে এই পাতগুলির সৃষ্টি হয়েছিল , তার কোনো ব্যাখ্যা এই তত্ত্বে নেই । 


6. পাত গতিশীলতার সঠিক কারণের অভাব : পাতগুলি চলাচলের কারণ হিসাবে অনেকগুলি ভূ - অভ্যন্তরীণ পদ্ধতির কথা বলা হলেও উপযুক্ত গ্রহণযোগ্য বলের সন্ধান পাত তত্ত্বে পাওয়া যায়নি ।









একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01