welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূ - অভ্যন্তরে ভৌত অবস্থা Physical Condition of the Earth's Interior

ভূ - অভ্যন্তরে ভৌত অবস্থা Physical Condition of the Earth's Interior
 ভূ - অভ্যন্তরে ভৌত অবস্থা Physical Condition of the Earth's Interior



 গ্রিক শব্দ ‘ Geo ' বলতে বোঝায় কঠিন , তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ নিয়ে গড়ে ওঠা পৃথিবী এবং graphy শব্দের অর্থ বর্ণনা । প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরাটোসথেনিস প্রথম ' Geography ' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন যার অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা । আধুনিক যুগের ভৌগোলিক রিচার্ড হার্টশোর্ন ( Richard Hartshorne ) - এর মতে ভূগোল হল ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যের সঠিক শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং যুক্তিপূর্ণ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা । কিন্তু ভূ - অভ্যন্তরকে বাদ দিয়ে ভূগোল বিষয় অসম্পূর্ণ থেকে যায় । কারণ ভূ - অভ্যন্তরের বিভিন্ন বিষয় যেমন তার গঠন প্রকৃতি , খনিজের অবস্থান ভূ - অভ্যন্তরীণ শক্তি , সেইসঙ্গে ভূপৃষ্ঠের উপর গড়ে ওঠা বিভিন্ন ভূমিরূপ এবং বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে । সুতরাং ভূ - অভ্যন্তর ভাগ সম্বন্ধে জানা খুব জরুরি । পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগে সরাসরি পর্যবেক্ষণ কোনো মতে সম্ভব নয় । খনন এবং তেল সংগ্রহকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত মানুষ ভূ - অভ্যন্তরে 7 কিমির বেশি গভীরে পৌঁছাতে পারেনি । অথচ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের তুলনায় তা খুবই সামান্য । 

বিভিন্ন উৎস , ভূ - পদার্থবিদ্যা ও ভূ - কম্পনবিদ্যা প্রভৃতির সাহায্যে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের ভৌত অবস্থা জানতে সাহায করেছে । এই ভৌত অবস্থাগুলি হল উন্নতা , ঘনত্ব ও চাপ । এগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল 

• তাপীয় অবস্থা ( Thermal Condition ) 

তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবীর উপরিভাগ শীতল হয়ে গেলেও ভূ - অভ্যন্তরভাগ এখনো উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে । ভূ - অভ্যন্তরে যতই যাওয়া যায় তাপমাত্রা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে । খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য তৈরি বোরহোল ( bore hole ) বা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা , পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে উন্নতার বিষয়কে অনেক বেশি ধারণা প্রদান করে । আধুনিক ভূ - বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায় যে ভূ - অভ্যন্তরে অনেক কম গভীরতায় ইউরেনিয়াম পটাশিয়াম জাতীয় অতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ রয়েছে । পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে , ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূ - অভ্যন্তরে প্রতি 100 মিটারে 3 ° C কিংবা প্রতি 32 মিটারে 1 ° C হতে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে 2900 কিমি গভীরতায় তাপমাত্রা প্রায় 25000 ° C- এ গিয়ে পৌঁছেছে । এইভাবে যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে উপাদানসমূহ কঠিন অবস্থায় না থেকে গলিত অবস্থায় থাকা জরুরি । কিন্তু বাস্তবে তা বিপরীত । এর অন্যতম কারণ হল ভূ - অভ্যন্তরের ওপর প্রযুক্ত চাপ । ভূত্বকের কাছাকাছি যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় , অত্যধিক গভীরে সেই হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় না কিংবা সর্বত্র এর বৃদ্ধির পরিমাণ একই নয় । ভূ - অভ্যন্তরে তাপমাত্রার গতি প্রকৃতি নিম্নে আলোচনা করা হল

 1. শিলামণ্ডলের অন্তর্গত ভূপৃষ্ঠ থেকে 35 কিমি গভীরতা পর্যন্ত উন্নতা 500 ° C

 2. অ্যাসথেনোস্ফিয়ার আংশিক ভাগে গলিত । কিন্তু 120 কিমি গভীরতায় উন্নতা 1300 ° C । আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূ - অভ্যন্তরে 400-700 কিমি গভীরতায় উন্নতা যথাক্রমে 1500 ° C 1900 ° C । সেইসঙ্গে 2900 কিমি গভীরতায় , অর্থাৎ গুটেনবার্গ বিযুক্তিতলে উন্নতা প্রায় 3700 ° C

3. কেন্দ্রমণ্ডলে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে 4720 কিমি গভীরতায় উন্নতা 6000 ° C , ভূপৃষ্ঠ থেকে 5170 কিমি গভীরতায় উন্নত 6300 ° C এবং 6371 কিমি গভীরতার উন্নতা 6600 ° C

 • ঘনত্ব ( Density ) 

ভূ - বিজ্ঞানীদের মতে উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে শীতল ও কঠিন হওয়ার সময় পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তাদের ঘনাঙ্ক অনুসারে স্থান বিনিময় ঘটে । সবচেয়ে ভারী পদার্থ কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং হালকা পদার্থ ভূত্বকের পাশাপাশি অবস্থান করে । তাই ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পাতলা অংশের বেশিরভাগ স্থান পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত । যাদের গভীরতা মাত্র ০.৪ কিমি থেকে 1.6 কিমি । আর এই পাললিক শিলাস্তরের নীচে রয়েছে কেলাসিত শিলা , যার ঘনত্ব 3.0 থেকে 3.5 গ্রাম / সেমি ' । কিন্তু যেখানে সমগ্র পৃথিবীর গড় ঘনত্ব 5.5 গ্রাম / সেমি ' । সুতরাং অভ্যন্তর ভাগের ঘনত্ব আরো বেশি হওয়া স্বাভাবিক । বিভিন্ন ভূ - বিজ্ঞানীদের মতে ভূ - অভ্যন্তর ভাগে গড় ঘনত্ব প্রায় 11.0 গ্রাম / সেমি ' । উপগ্রহ মারফৎ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে — পৃথিবীর গড় ঘনত্ব 5.517 গ্রাম / সেমি ' ; ভূপৃষ্ঠের গড় ঘনত্ব 2.6-3.3 গ্রাম / সেমি এবং কেন্দ্রমণ্ডলের গড় ঘনত্ব 11 গ্রাম / সেমি । কিন্তু গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়ে 13.6 গ্রাম / সেমি পর্যন্ত হয় । ভূ - অভ্যন্তরে চাপ বৃদ্ধির ফলে ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় । এই ধারণা অনুসারে ভূ - বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে অত্যধিক চাপে সিলিকেটের ইলেকট্রন গঠন পরিবর্তিত হওয়ায় উচ্চ ঘনাঙ্ক বিশিষ্ট বিভিন্ন ধাতব পদার্থ কেন্দ্রমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে । ত্বকেন্দ্রে উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট পদার্থ লোহা ও নিকেল । ডুকেন্দ্রে লোহার পরিমাণ ৪০ শতাংশ এবং নিকেলের পরিমাণ 20 শতাংশ । যার জন্য কেন্দ্রমণ্ডলের অপর নাম নিয়ে ' NIFE ' । অনেকে মনে করেন যে H , অভাধিক চাপে অনেকক্ষেত্রে ধাতুর মতো আচরণ করে । 

•চাপ ( Perssure ) 

ভূ - অভ্যন্তরে উন্নতা ও ঘনত্বের মতো চাপও একধরনের ভৌত অবস্থা যা সম্পূর্ণভাবে ভূ - অভ্যন্তরে উন্নতার উপর নির্ভরশীল । উন্নতার মতো ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূ - অভ্যন্তরে চাপের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । ভূ - অভ্যন্তর ভাগের যতই গভীরে যাওয়া যায় , ততই উত্তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে সঙ্গে সঙ্গে চাপ ও ঘনত্বের বুশি ঘটে । কিন্তু চাপ ও ঘনত্ব এই দুইয়ের বৃদ্ধির হার এক নয় । আবার এই ঘনত্ব বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব এবং উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব । বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন যে , কোনো বস্তুর ঘনত্ব যত বৃদ্ধি পাবে , তার চাপের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পাবে ভূ - অভ্যন্তরে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় ভূ - অভ্যন্তরে চাপ বৃদ্ধির ফলে । এই ভূ - অভ্যস্তরে চাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল ভূপৃষ্ঠের ওপর অবস্থানরত বিশাল শিলা রাশির চাপ । এই চাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অবস্থানরত চাপের তুলনায় 35-37 গুণ বেশি । ভূ - অভ্যন্তরে চাপ ও তাপমাত্রা এক সাম্য অবস্থায় বিরাজ করে । তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে যে , ভূ - অভ্যন্তর ভাগে তাপের তুলনায় চাপের প্রভাব সর্বদা বেশি পরিলক্ষিত হয় । ভূ - অভ্যন্তরে কম গভীরতায় এই চাপ বৃদ্ধির ফলে ভূ - অভ্যন্তরে পদার্থসমূহ সম্পূর্ণ কঠিন কিংবা তরল অবস্থায় না থেকে , নমনীয় স্থিতিস্থাপক ( plastic and elastic ) অবস্থায় অবস্থান করে , অন্যথায় ভূ - অভ্যন্তরস্থ পদার্থসমূহ ফুটতে থাকে । পৃথিবীর ভূ - অভ্যন্তর ভাগে কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে এই চাপ হ্রাস পেলে অভ্যন্তরস্থ পদার্থসমূহ তরল অবস্থায় পৌঁছায় , এবং আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে ভূত্বকের দুর্বল ফাটল বরাবর ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে যা লাভা নামে পরিচিত । পরবর্তী সময়ে লাভা শীতল হয়ে কঠিন আকার প্রাপ্ত হয়ে আগ্নেয়শিলায় পরিণত হয় । পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা গেছে যে , 1.6 কিমি গভীরতায় চাপ 450 টন । এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডলে ( core ) চাপ প্রতিবর্গ ফুটে 20 লক্ষ টন অভিকর্ষজ ত্বরণের মান ভূ - অভ্যন্তরে গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় বলে ভূ - অভ্যন্তর ভাগের চাপ কিছুটা কম হয় । ভূ - অভ্যন্তরে উত্তাপ ভূ - অভ্যন্তরে পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি ঘটায় আবার ভূ - অভ্যন্তরে চাপ ভূ - অভ্যন্তরের পদার্থের আয়তনকে হ্রাস করে । পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভাগে এই দুই শক্তি একসাথে চলতে থাকে । ভূত্বকের শেষ ভাগে অর্থাৎ 33 কিমি গভীরতায় ভূ - অভ্যন্তরে চাপ 9 কিলোবার আবার 700 কিমি গভীরতায় 260 কিলোবার , 2900 কিমি গভীরতায় 1350 কিলোবার , 5150 কিমি গভীরতায় 3340 কিলোবার এবং কেন্দ্রমণ্ডলের শেষ অংশে অর্থাৎ 6371 কিমি গভীরতায় 3700 কিলোবার ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01