বায়ুচাপ বলয়ের স্থানান্তর(Shifting of Pressure Belt)
পৃথিবীতে বায়ুচাপ বলয়গুলি নির্দিষ্ট হলেও তাদের অবস্থান কিন্তু নির্দিষ্ট নয়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে চাপবলয়গুলি সূর্যের আপাত গতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের সীমানা পরিবর্তন করে। সূর্যের উত্তরায়ণের (northern movement) সঙ্গে সঙ্গে নিয়ত চাপবলয়গুলি উত্তর দিকে সরে আসে এবং দক্ষিণায়নের (southern movement) সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিকে সরে আসে। গড়ে 5° থেকে 10 deg পর্যন্ত সরে যায়। উত্তরায়ণের সময় অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ উদ্বুতা নিরক্ষরেখার উত্তরে ধরা পড়ে বলে চাপবলয়গুলো নিজেদের জায়গা থেকে কিছুটা উত্তরে উঠে যায়। আবার দক্ষিণায়নের সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ উদ্বুতা নিরক্ষরেখার দক্ষিণে অনুভূত হয় বলে চাপবলয়গুলো নিজেদের জায়গা থেকে কিছুটা দক্ষিণে নেমে আসে। তবে উত্তর-দক্ষিণে বেশি সরে, মেরুদেশীয় ও মেরুবৃত্ত দেশীয় চাপবলয়গুলি তুলনায় কম সরে।বায়ুর চাপ বায়ুর উদ্বুতার ওপর নির্ভর করে। আবার বায়ুর উদ্বুতা নির্ভর করে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মির আপতন কোণের ওপর।সূর্যের বার্ষিক আপাত গতির জন্য (apparent movement of sun) ভূপৃষ্ঠের একই স্থানে বছরের প্রতিটি দিন মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মির আপতন কোনের পার্থক্য ঘটে এবং তার ফলে সেই বায়ুর উয়তা ও বায়ুর চাপেরও পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ বায়ু চাপবলয়গুলিরও পরিবর্তন হয়। চাপবলয়ের এই সীমানা পরিবর্তনের ফলে নিয়ত বায়ুপ্রবাহেরও পরিবর্তন ঘটে। নিয়ত চাপলয়গুলির এইরূপ সীমানা পরিবর্তন করার ফলে উভয় গোলার্ধে 30° থেকে 40° সমাক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলগুলি বেশি প্রভাবিত হয়। এই অঞ্চলগুলি গ্রীষ্মকালে আয়ন বায়ুর প্রভাব এবং শীতকালে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে আসে। গ্রীষ্মকালে আয়ন বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলের পূর্বাংশে বৃষ্টিপাত হয়। আয়ন বায়ু পূর্বদিক থেকে পশ্চিমে যায়, ফলে এই বায়ু পশ্চিমাংশে এলে অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পৌঁছলে জলীয় বাষ্পের অভাব হেতু বৃষ্টিপাত হয় না। আবার ওই অঞ্চল শীতকালে যখন পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে আসে তখন এর পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাত হয়। কারণ পশ্চিমা বায়ু পশ্চিমদিক থেকে প্রবাহিত হয়, ফলে জলীয় বাষ্প যথেষ্ট থাকে। তাই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দেশসমূহে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। এই বায়ু ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে যখন পূর্বে আসে তখন একইভাবে বায়ুতে আর জলীয় বাষ্প থাকে না, বৃষ্টিপাত হয় না।