welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি(Origin of Temperate Cyclone)

নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি(Origin of Temperate Cyclone)


1863 সালে বিজ্ঞানী Robert Fitzroy প্রথম নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি সম্বন্ধে গবেষণা করেন। 1887 সালে বিজ্ঞানী Ralph Abercromby এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি প্রথম বলছিলেন, দুটি বিপরীতধর্মী বায়ুর সংঘর্ষে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি হয়। পরে বিজ্ঞানী Napier Shaw (1926) এবং Lempert আরও গবেষণা করেন এবং বিপরীতধর্মী বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষ তত্ত্বকে জোরালো সমর্থন করেন। পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে নরওয়ের একদল বিজ্ঞানী (V. Bjerknes, J. Bjerknes ও অন্যান্য বিজ্ঞানী) এ বিষয়ে এক স্পষ্ট ধারণা উপস্থাপন করেন যা মেরু সীমান্ত তত্ত্ব (polar front theory) বা তরঙ্গ তত্ত্ব (wave theory) নামে জনপ্রিয়।

মেরু সীমান্ত তত্ত্ব (Polar Front Theory)

এই তত্ত্ব অনুসারে দুই বিপরীত বায়ু অর্থাৎ উদ্বু ও শীতল বায়ুপুঞ্জ এই অঞ্চলে একটি তল (separation) বরাবর মিলিত হয়। এই তল যেখানে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে মিলিত হয় তার নাম সীমান্ত বা front। ঠিক যেন সীমান্তের দুদিকে দুই যুযুধান সৈন্যবাহিনী দাঁড়িয়ে আছে। এই সীমান্তের উৎপত্তি (frontogenesis), চলন (movement) এবং বিলোপন (frontolysis) প্রক্রিয়ার দ্বারা এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা করা হয়।

প্রকৃতপক্ষে প্রথমে শীতল ও উয় বায়ুপুঞ্জের মধ্যে সীমান্ত বরাবর সামান্য বক্রতলের সৃষ্টি হয়। একে তরঙ্গের (wave) মতো দেখতে হয়। এই তরঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য সাধারণত 1500-3000 কিমি হয়ে থাকে অর্থাৎ ঘূর্ণবাতের ব্যাসের সমান। এদের শীর্ষে (apex) অবস্থান করে নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল। এর দুদিকে থাকে দুটি বায়ুপুঞ্জ, শীতল বায়ুপুঞ্জের সামনের সীমান্তকে শীতল সীমান্ত (cold front) এবং উদ্বু বায়ুর সামনের অংশটি উদ্বু সীমান্ত (warm front) নামে পরিচিত।

এখন নিম্নচাপকেন্দ্রের সলো সংশ্লিষ্ট দুটি বায়ুপুঞ্জের মধ্যে শীতল সীমান্ত অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে এগোতে থাকে এবং ক্রমে উয় সীমান্তকে ধরে ফেলে। ফলে উন্ন বায়ু হালকা বলে ভারী শীতল বায়ুর ওপর উঠতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়াকে অন্তর্ধারণ (occlusion) বলে এবং এর ফলে সৃষ্ট নতুন ধরনের বায়ুপ্রাচীরকে অন্তর্ভূত সীমান্ত (occluded front) বলে।

এরপর সীমান্তের উভয় পার্শ্বে বায়ুপুঞ্জের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, চাপ কমতে থাকে। ফলে বেগও ক্রমশ কমতে থাকে। এইরূপ অবস্থায় উদ্বু বায়ুর জলীয় বাষ্প শীতলতার সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। অবশেষে নিম্নচাপ কোশ এবং সীমান্তগুলির বিলোপন (frontolysis) প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ঘূর্ণবাত অচিরেই বিলুপ্ত হয়। এই সমগ্র প্রক্রিয়া অর্থাৎ উৎপত্তি (frontogenesis) থেকে বিলোপনে (frontolysis) সময় লাগে গড়ে প্রায় 7-10 দিন। এই সীমান্ত ঢালের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য নীচের সমীকরণটি ব্যবহার করা যায়। ঢাল বা (Slope) বা যেখানে, S = সীমান্ত S = (2omega*Sin*phi)/G * (T(V_{1} - v_{2}))/(T_{1} - T_{2}) ∞ = পৃথিবীর কৌণিক গতি phi = নির্দিষ্ট অক্ষাংশ v 1 oplus v_{2} = বায়ুপুঞ্জের গতিবেগ T_{1} ও T_{2} = বায়ুপুঞ্জের তাপমাত্রা G = মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ T = দুটি বায়ুপুঞ্জের গড় তাপমাত্রা

জেট স্ট্রিম তত্ত্ব (Jet Stream Theory)

মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি সম্বন্ধে জেট স্ট্রিম তত্ত্বের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উর্ধ্বাকাশে জেট স্ট্রিমের উদ্ভব, মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি ও উৎপত্তি নতুন মাত্রা দেয়। উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ারে জেট বায়ুর বিশাল ঢেউকে রসবি তরঙ্গ (rossby wave) বলে। রসবি তরঙ্গের অধোভলঙ্গ ঊর্ধ্ব-ট্রপোস্ফিয়ারে যেখানে অবস্থান করে, ঠিক তার নিম্নে আবহাওয়ার পার্থক্য ঘটে। এক্ষেত্রে উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ার থেকে ভূপৃষ্ঠে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর অবিরাম অভিসরণ হতে থাকে। আবার ভূপৃষ্ঠে নিম্নচাপে অবস্থিত অভিসারিত বায়ু উপরের দিকে উঠে, উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ারে প্রতিসারিত হয়ে একটি প্রতিসরণ অঞ্চলের সৃষ্টি করে যা ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত নিম্নচাপকে আরো প্রবল হতে সাহায্য করে। মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলের এই ধরনের প্রক্রিয়াকে নিম্নচাপ গঠনকারী প্রক্রিয়া বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01