welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

চারনোজেম মাটি (Chernozem Soil)

চারনোজেম মাটি (Chernozem Soil)


উৎপত্তি ( Origin):

চারনোজেম একটি রুশ শব্দ যার অর্থ 'black earth'। এই ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে দাড়ায চান‌ এর অর্থ কালো রঙের এবং জেম লিজা এর অর্থ মাটি। অর্থাৎ চানোজেম হল একটি কালো বর্ণের বলয়িত মাটি গোষ্ঠী। সমগ্র পৃথিবীর উর্বর মাটির মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। এই মাটি হিউমাস সমৃদ্ধ। এই মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা যায়। একে মরিসল মাটি ও বলে। এটি একটি আঞ্চলিক মাটি। প্রায় শুষ্ক নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি জলবায়ু অঞ্চলের যে অংশে এক নির্দিষ্ট ঋতুতে যেখানে আদ্রতা খুবই অভাব দেখা যায়। সেখানে এই মাটি গড়ে ওঠে। এই মাটি মূলত 30° - 50° অক্ষাংশের মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলির মধ্যভাগে অবস্থান করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায়দিক তৃণভূমি এবং স্থেপ তৃণভূমি দেখা যায়। সেই সঙ্গে ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম থেকে উত্তর পশ্চিম দিক বরাবর অঞ্চল এই মাটি গড়ে উঠেছে।। এই মাটির হুইমাসের রং গাঢ় কালো হওয়ার কারণ মাটিতে সংযুক্ত জৈব পদার্থের ক্ষারকীয় বা নিরপেক্ষ রাসায়নিক বিশ্লেষণ বা বিয়োজন। আদ্রোক্রান্তীয় বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জলাভূমিতে যে সমস্ত মাটির সৃষ্টি হয় পিট বা মাক মাটি থাকে কিন্তু তাকে চরনোজেম নামে অভিহিত করা যায় না। নিচে চারণোদের মাটির উৎপত্তির পরিবেশ আলোচনা করা হয়।

1.মূল উপাদান ( Main Components): এই মাটির প্রধান উপাদান হল লোয়েস। সাধারণ মরুভূমির অথবা মহাদেশীয় হিমবাহের হিমবাদ ও হিম অনুবাদ সঞ্চয় থেকে বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে আসা প্রধানত পোলী আয়তনের কণার মহাদেশীয় সঞ্চয়। সেই সঙ্গে কিছু মিহি বালি কনা ও কাদা থাকে। লোয়েসের মধ্যে যে কোনা গুলি আয়তন বড় সেই গুলি পাশাপাশি অঞ্চলে সঞ্চিত হয়। আর যেগুলি আয়তনে ছোট সেইগুলি আশপাশের সমুদ্র সঞ্চিত হয়। এই মাটি আদি উপাদান পাললিক শিলা অববাহিকা থেকে বেশি হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে বেলে পাথর ও কাদা পাথরের মধ্যে যদি 10 থাকে তাহলে তা চার্নোজেমের মূল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে সেই সমস্ত শিলাস্তরে ক্যালসিয়ামের প্রধান থাকা খুবই প্রয়োজন। 

2. জলবায়ু (Climate): এই মাটির সৃষ্টিতে উপ-আদ্র বা মেরু প্রায় নাতিশীতোষ্ণ বাস্তব জলবায়ু প্রয়োজন। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দরকার 50-100 সেমি। সেই সঙ্গে তাপমাত্রার প্রয়োজন গ্রীষ্মের 18°-25°সেলসিয়াস এবং বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 3.5 সেলসিয়াস। এই মাটির বলা এই মহাদেশগুলির অভ্যন্তর ভাগে অবস্থিত হওয়ায় জলবায়ুর চরমভাবাপন্ন। অর্থাৎ সি তো গ্রীষ্মের ও তাপমাত্রার পার্থক্য খুবই বেশি। শীত ঋতুতে তাপমাত্রা 0°C এর নিচে নেমে যায়। আবার গ্রীস মে শুরুতে বমি ভাব বরফ গলার জলের ঢেকে য়ায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় এলুভিয়েশন প্রক্রিয়ার উগাঢ়তা আদ্র ও জলবায়ু অঞ্চলের তুলনায় কম হয়। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের বন্টন ঋতু অনুযায়ী তারতম্যের জন্য জৈব পার্থক্যের খনিজ প্রক্রিয়া তুলনায় গঠনমূল্য হিউমিকেশন কার্যকরী হয় তাই এই মাটি সৃষ্টিতে জলবায়ুর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। 

3. স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Nature Vegetation): চারনোজেম মাটির সৃষ্টিতে জলবায়ুর প্রভাব এর মতো স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। জলবায়ু সমর ভবপন্ন হওয়া এখানে ত্রিনয় প্রধান উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের বলে বিবেচিত হয়। বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে তৃণের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এখানে ঘাসের উপকরাজ প্রতিবেদন কয়েক সেন্টিমিটার এসে পৌঁছে। ঘাস বর্ষজীবী হওয়ার বছরের শেষে এদের দেহাবসের মাটিতে প্রচুর পরিমান যুক্ত হয় বলে মাটিতে হিউমাস সৃষ্টি হয়। মাটির রং ঘন কালো বর্ণের হয়। সে সঙ্গে এদের শিখর থাকা মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ঘাস মূলত মাটি থেকে খনিজ মৌলের দ্বারা বৃদ্ধি পায় বলে এই মাটির আম্লিক না হয়ে সামান্য প্রকৃতি হয়।

4. ভূপ্রকৃতি (Relief) : মলিসল বা চারনোজেম মাটি পৃথিবীর অধিকাংশ সমভূমি ও মালভূমিতে গড়ে ওঠে। যে অঞ্চলে গড়ে উঠবে সেখানকার ভুমিভাগ প্রধানত সমতল। তবে অনেক ক্ষেত্রে তরঙ্গঙ্গায়িত ভূমিভাগেও এই মাটি দেখা যায়। সাধারণত মধু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে ধূলিকণা বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে লোয়েস সমভূমি অঞ্চলে গড়ে তোলে। এই মাটি উত্তর আমেরিকার গ্রেট প্লেন, সেন্ট্রাল প্লেন এবং দক্ষিণ আমেরিকার পারানা-প্যারাগুয়ে সেই সঙ্গে ইউরোপে গ্রেট ইউরোপিয়ান প্লেন ও এশিয়ার গ্রেট নর্দার্ন প্লেনে গড়ে উঠেছে।

উৎপত্তির প্রক্রিয়া (Process of Origin)

এই মাটি দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। যেমন (3) মাটিতে খুব তাড়াতাড়ি জৈব পদার্থের সংযোজন এবং এই সংযোজিত জৈব পদার্থের দ্রুত হারে বিজারণ এবং (চ) মাটির উপরের অংশ থেকে দ্রবণীয় লবণ ও কার্বোনেটের বিধৌতকরণ এবং নীচের অংশে এই সমস্ত পদার্থের সঞ্চয়। বৃষ্টি কিংবা গ্রীষ্মের শুরুতে হিমবাহ গলা জলে মাটির মধ্য দিয়ে নীচের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় লবণ কণাগুলিতে দ্রবীভূত করে। তাই এই মাটির উপরের স্তরগুলি থেকে বিধৌত হয়। আবার উদ্বু ও শুষ্ক গ্রীষ্মকালে মাটির জলের কৈশিক প্রক্রিয়ায় উর্ধ্বগমনের জন্য এই মাটির পরিলেখের মধ্যভাগের হরাইজোনে ক্যালসিয়াম কার্বনেট সম্মিত হয়। এই ক্যালসিয়াম কার্বনেট মাটির প্রস্থচ্ছেদে প্রায় 90-120 সেমি গভীরতায় গোলাকার পিন্ড অথবা ক্ষুদ্র কাঁকরের মতো অবস্থান করে। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ মাটিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী প্রাণী অর্থাৎ কেঁচো, পিঁপড়ে, ইঁদুর প্রভৃতির কার্যাবলির মাধ্যমে জৈব পদার্থের সংযোজন এবং বিজারণ ঘটে। আবার প্রাণীগুলি খাদ্যের সন্ধানে মাটির উপরের স্তরকে খনন করার ফলে, উপরের স্তরের গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 70 সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে এই মাটিতে crotovinas নামে এক বর্ণহীন, কেলাসিত, জলে দ্রবণীয় এক ধরনের পদার্থের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

(i) চারনোজেম মাটিতে কিছু সুনির্দিষ্ট ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

(ii) এই মাটির উপরের দিকে Horizonটি গাঢ় ধূসর বাদামি বর্ণের হয়। মাঝের Horizonটি গাঢ় বাদামি বর্ণের এবং নীচের Horizonটি পীতাভ বাদামি বর্ণের হয়। কিন্তু সচরাচর এই মাটির রং কালো।।

(iii) এই মাটির সব Horizon-এ পলি-দোআঁশ প্রথন দেখা যায়।

(iv) এই মাটির গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্বোনেটের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(v) চারনোজোমের উপরের স্তরের মাটির pH-এর মান 5.5 শতাংশ। কিন্তু নীচের দিকে pH-এর মান ক্রমশ বাড়তে থাকে।

(vi) এই মাটিতে বৃষ্টিপাত অপেক্ষাকৃত কম কিন্তু বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি বলে ঘাস পচে যে জৈব পদার্থ সৃষ্টি হয় তা স্বল্প ধৌত প্রক্রিয়ায় অপসারিত হয় না।

(vii) স্তেপ বা প্রেইরি তৃণভূমি অঞ্চলে এই মাটি বলয় আকারে দেখা যায় বলে একে স্তেপ বা প্রেইরি মাটিও বলে। তবে ভারতের কালো মাটি ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্ট ভিন্ন ধরনের মাটি।

(viii) চারনোজেম মাটির ওপরের স্তরে তৃণ সৃষ্ট জৈব পদার্থের পরিমাণ অধিক এবং নীচের স্তরে জৈব ক্যালসিয়াম ও চুন জাতীয় পদার্থ সঞ্চিত হয়।

(ix) এই মাটি ক্ষারকীয় প্রকৃতির এবং পেডোক্যাল শ্রেণির অন্তর্গত।

(x) এই মাটির কাদা কণার পরিমাণ বেশি বলে জলধারণ ক্ষমতাও বেশি।

(xi) এই মাটি খুব উর্বর হওয়ায় গম সহ অন্যান্য ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে এই মাটিতে।

পরিলেখ (Profile): চারনোজেম মাটির নিম্নলিখিত স্তর গুলি লক্ষ্য করা যায়।

1.Aó স্তর (Aó Layer): এই স্তরটি বছরের শেষে মরে যাওয়া তৃণের নিয়োজিত অংশ যথা পাতা উপাদান দ্বারা গঠিত। এই তোর ইঞ্চি 0.5 থেকে 1 ইঞ্চি পর্যন্ত গভীর বা পুরু হয়।

2.A¹ স্তর (A¹Layer): এই স্তরের রং গাঢ় কৃষ্ণ বর্ণ থেকে গাঢ় বাবা আমি রঙের হয়। ভিজে অবস্থায় এই রং আরো গাঢ় হয়। এই স্তরে হিউমাসে পরিমান শতকরা 4-15 ভাগ এবং 12 ইঞ্চি থেকে 24 ইঞ্চি পুরু। এই স্তরের উপরে দিকে হিউমাসে পরিমাণ নিচের দিকে তুলনায় অনেক বেশি হয়। জৈব পদার্থের প্রভাবে এর স্তরের চূনাকার দানা বদ্ধ গঠন সৃষ্টি হয়। এইরূপ মাটির গঠন খুব দৃঢ় হয় এবং জলের প্রবেশ্যতা ও বাতাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 

3.A² স্তর (A²Layer): এই স্তরটিতে A¹ স্তরের ন্যায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হয় এবং গাঢ় কালো রঙের হয়। গভীরতা ও A¹ স্তরের অনুরূপ।হিউমার বেশি থাকার মাটির গঠন হয় দানবদ্ধ এবং বাদামের ন্যায়।

4.B স্তর (B Layer): ধূসর বনের এই স্তরের গভীরতা 15-25 ইঞ্চি।A স্তরের ন্যায় B স্তরে মাটি গঠন গড়ে ওঠে না। মাটি সাধারণ পিন্ডময় বা পাউডারের ন্যায়। জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য এই স্তরের রং ধূসর। এই স্তরের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও কোনো কোনো ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেটের সঞ্চার। স্তরের পদার্থের সঞ্চয় দাগ শিরা  বা স্তরের আকারে ঘুরতে দেখা যায়। সাদা চুনের দাগ গুলো রুশ পরিভাষা বেলোগ্লাজকি বলে। এই স্তরের নিচের দিকে কোন কোন সময় জিপসাম সঞ্চিত হতে দেখা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01