welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বাস্তুবিদ্যার মূল নীতিসমূহ(Basic Ecological Principles)

বাস্তুবিদ্যার মূল নীতিসমূহ(Basic Ecological Principles)


Ecology শব্দটি গ্রিক Dicos শব্দ থেকে গৃহীত এবং এর অর্থ বাসস্থান এবং Logos-এর অর্থ জ্ঞান, অর্থাৎ ইকোলজি শব্দের অর্থ বাসস্থান সম্পর্কে জ্ঞান। মানব সমাজের বাইরে যে জৈব ও অজৈব জগৎ আছে, যার সঙ্গে মানবগোষ্ঠী নিজের জীবনযাত্রাকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তাকে পরিবেশ বা Environment বলা হয়।

যে ক্রিয়া পদ্ধতিতে একটি বিশেষ বসতি অঞ্চলে জীবগোষ্ঠীগুলি একে অপরের সঙ্গে এবং ওই বসতি অঞ্চলের জড় প্রকৃতি বা অজৈব পরিবেশের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক বা মিথস্ক্রিয়া (interaction) বজায় রাখে, তাকে বাস্তুতন্ত্র বা Ecosystem বলে। বিজ্ঞানী গুডাম (Odum, 1966) বাস্তুসংস্থানে কার্যের ওপর ভিত্তি করে বাস্তুতন্ত্রকে দুটি উপাদানে ভাগ করেছেন।

(a) স্বভোজী উপাদান (autotrophic components) e (b) পরভোজী উপাদান (heterotrophic components):

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে বাস্তুতন্ত্রে নিম্নলিখিত নীতিসমূহ বিদ্যমান-

1. জৈব জগৎ এবং অজৈব জগতের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অজৈব জগতের সূ র্যরশ্মি জৈব জগৎকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে জৈব জগতের দুইটি প্রধান উপাদান যথা-স্বভোজী এবং পরভোজী। এই উপাদানগুলি পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

2. বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণ বায়োস্ফিয়ার (biosphere) একটি বাস্তুতন্ত্র গঠন করে। এদের মধ্যে বিভিন্ন চক্র কাজ করে, যেমন জলচক্র (hydrological cycle), রাসায়নিক চক্র (chemical cycle) প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য যে এদের মধ্যে একটি একমুখী শক্তিপ্রবাহের ক্রিয়া কাজ করে। এই প্রকারের চক্রসমূহ এবং শক্তিপ্রবাহের ফলে জৈব জগতের জীবগোষ্ঠীগুলির মধ্যে শক্তি, জল ও রাসায়নিক পদার্থ রূপান্তরিত ও সঞ্চারিত হয়।

3. বাস্তুতন্ত্র সর্বদা প্রাণময়। এদের মধ্যে কোনো প্রাণী পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গেলেও জৈব জগতে তার প্রাণ সর্বদা বজায় থাকে।

4. বিজ্ঞানী হ্যালম্যান (Hallman)-এর মতে বাস্তুতন্ত্রে কতকগুলি পরিবেশগত নীতি আছে। তাঁর মতে-(i) বাস্তুতন্ত্রে কোনো পদার্থ বিনষ্ট হয় না, শুধু রূপান্তরিত হয়। (।।) পৃথিবীর সম্পদ সীমিত ও সীমাবদ্ধ। (iii) প্রকৃতির বহু লক্ষ বছরের মিথস্ক্রিয়ার ফলে বর্তমান বাস্তুতন্ত্রের উদ্ভব বা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বাস্তুতন্ত্র আরও পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হবে।

5. বাস্তুতন্ত্রে অজৈব এবং জৈব জগতের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অপরিবর্তনীয় হলেও বিভিন্ন সময় এর হার কম-বেশি হয়।

6. প্রাকৃতিক বিপর্যয় জীবজগৎ তথা মানুষের কাছে ক্ষতিকারক। যেমন বন্যা হলে বিভিন্ন জীবাণু জলে সংক্রামিত হয় এবং এর ফলে বহু লোক মারা যায়।

7. প্রাণীমণ্ডলের বিভিন্ন প্রাণীর নিজেদের মধ্যে এবং অজৈব জগতের সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কসমূহ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক এবং নিরপেক্ষ হতে পারে।

৪. বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে শক্তিপ্রবাহ তাপ বিজ্ঞানের দুটি নিয়মের দ্বারা পরিচালিত হয়। (1) বহিগামী ও অন্তগামী শক্তির মধ্যে সর্বদা ভারসাম্য বজায় থাকে। (ii) যেখানে কোনো কার্য সম্পাদিত হয় তখন একটি শক্তি নিঃশেষিত হয়।

9. জীবমণ্ডলের মধ্যে যে ভূ-জৈব রাসায়নিক চক্র কাজ করে তার দ্বারা সম্পূর্ণ জীবজগৎ প্রভাবিত হয়। বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদন দুটি নিয়ন্ত্রকের ওপর নির্ভরশীল যথা- (i) সৌরশক্তির পরিমাণ-সালোকসংশ্লেষের সময় এর পরিমাণ সর্বদা সমান থাকে না। (ii) উদ্ভিদসমূহ সৌরশক্তিকে যেভাবে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তার কার্যকারিতা সর্বদা সমান থাকে না।

10. বাস্তুতন্ত্রে যে স্থিতাবস্থা বজায় থাকে তাকে কোনো বাইরের শক্তি নষ্ট করতে পারে না। বাইরের শক্তি দ্বারা বাস্তুতন্ত্রে যদি কোনো পরিবর্তন আসে তবে তা সাময়িক কারণে বাস্তুতন্ত্রে স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকবে। যে প্রক্রিয়ায় দ্বারা এই স্থায়িত্ব বজায় থাকে তাকে 'সমস্থিতি প্রক্রিয়া' বা 'Homostatic System' বলে। বিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছেন। (1) খাদ্য সংস্থানের পরিধি বৃদ্ধি পেলেও বাস্তুতন্ত্রে স্থিতাবস্থা বজায় থাকে, কারণ বাইরের কোনো উদ্ভিদ কোনো বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করলেও ঐ বাস্তুতন্ত্রের নিয়ম নষ্ট হয় না। (1) খাদ্যশৃঙ্খলে স্তরসমূহ বৃদ্ধি পেলে শক্তিপ্রবাহের প্রণালী বাড়বে, সুতরাং স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকবে। (iii) কোনো প্রজাতি চূড়ান্ত অবস্থা প্রাপ্ত হলেও বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে। কারণ বাস্তুতন্ত্রে এমন একটা শক্তি আছে যে বাইরের শক্তিকে প্রতিরোধ করতে পারে।

11. বহিঃশক্তির সঞ্চালনের তীব্রতা অসময়ে বৃদ্ধি পেলে বাস্তুতন্ত্রে পরিবর্তন আসতে পারে।

12. চার্লস ডারউইনের মতে, প্রজাতির ক্রমবিন্যাসের সময় প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম কাজ করে। বর্তমানে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে অনেক প্রজাতি ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে বা বিলুপ্তপ্রায়।

13. জীববিজ্ঞানী ডেভরিশ, ডারউইনের তত্ত্ব সমালোচনা করে বলেছেন যে, ক্রমবিকাশের সময় প্রজাতির মধ্যে পরিব্যাপ্তি ক্রিয়া কাজ করে। ফলে দুটি পৃথক প্রজাতির মধ্যে সংমিশ্রণের ফলে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়।

14. বাস্তুতন্ত্রে উদ্ভিদসমূহের মধ্যে একটি স্বতন্ত্রীকরণ বা Isolation আছে। অর্থাৎ উদ্ভিদের এক একটি প্রজাতি এক একটি পৃথক পরিবেশে বাস করে। যেমন তুন্দ্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ সাভানা অঞ্চলে বসবাস করতে পারে না। প্রাণীজগতেও এইরূপ স্বতন্ত্রীকরণ দেখা যায়। যেমন, নিরক্ষীয় অরণ্যে বানর, শিম্পাঞ্জি, পাখি প্রভৃতি প্রাণী গাছে বাস করে। কিন্তু বাঘ, সিংহের মতো প্রাণীরা গাছে বাস করে না। এই জন্য বাস্তুতন্ত্রে জৈব জগতের এইরূপ পৃথকীকরণ থাকার জন্য সহজে সংকর প্রজনন (cross breeding) হতে পারে না, একমাত্র গবেষণাগারেই তা সম্ভব।

15. বাস্তুবিদ্যা বা Ecology-এর একটি মূলতত্ত্ব হল যে, জৈব জগতের প্রজননসমূহের মধ্যে একটি আনুক্রমিক পরিবর্তনের ধারা আছে, (principles of succession)। যেমন টার্শিয়ারি যুগে যে জীবজগৎ ছিল আধুনিক যুগে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জীববিজ্ঞানী ক্লিম্যান্ট প্রথম উদ্ভিদজগতের মধ্যে এই succession আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে উদ্ভিদজগতের কালক্রমিক পরিবর্তনে 5টি কাল আছে। যথা-

(i) অনাবৃত কাল (phase of nudation), (ii) মাইগ্রেশন কাল (phase of migration), (iii) বাস্তুসংস্থাপক কাল (phase of ecosis), (iv) প্রতিক্রিয়াশীল কাল (phase of reaction), (v) স্থায়িত্বকাল (phase of stabilisation)

16. উদ্ভিদজগতে যে কালক্রমিক পরিবর্তনের ধারা আছে সেই ধারা যখন চরম অবস্থায় পৌঁছায় তাকে চূড়ান্ত প্রজাতি বলা হয়। তার পূর্বেকার অবস্থাকে বলা হয় সাময়িককাল। Clements এই পরিবর্তনের ধারাকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন-

(i) প্রাথমিক অনুক্রম (primary succession) ও (ii) গৌণ অনুক্রম (secondary succession)।

17. বাস্তুতন্ত্রে সম্প্রদায়গত অনুক্রম ছাড়াও আর একটি পৃথক অনুক্রম দেখা যায় যাতে সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে একটি অনুক্রমিক ধারা আসে। বিজ্ঞানী হুইটেকার (Whitakar) একে এটি ভাগে ভাগ করেন।

(i) উন্নত জটিল ও বৈচিত্র্য অবস্থা,

(ii) গঠনগত ও উপাদানগত পরিবর্তনের অবস্থা,

(iii) মাটির প্রবীণতার অবস্থা,

(iv) সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের স্থায়িত্ব অবস্থা।

18. মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর হস্তক্ষেপ করে বাস্তুতন্ত্রে পরিবর্তন আনে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-

(i) মানুষের ধ্বংসাত্মক কাজ (যেমন বনজঙ্গলের উচ্ছেদন),

(ii) বাস্তুতন্ত্রে নতুন প্রজাতির প্রজনন,

(iii) নতুন পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহের স্থানান্তরিতকরণ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01