বাস্তুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ(Classification of Ecosystem)
সাধারণভাবে বাস্তুতন্ত্রকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-প্রাকৃতিক (natural) ও কৃত্রিম (artificial) বাস্তুতন্ত্র।
A. প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র (Natural Ecosystem): স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট বাস্তুতন্ত্রকে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বলে। এর সৃষ্টির পেছনে মানুষের কোনো ভূমিকা নেই। এই বাস্তুতন্ত্র আবার দু-প্রকারের যেমন-
(a) স্থলজ বাস্তুতন্ত্র (Terrestrial Ecosystem): পৃথিবীর স্থলভাগে অবস্থিত বাস্তুতন্ত্র এই পর্যায়ের বাসস্থান বা হ্যাবিট্যাট (habitat) অনুযায়ী এরা পাঁচ রকমের, যেমন- (i) বনভূমির বাস্তুতন্ত্র (forest ecosystem), (ii) তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র (grassland ecosystem), (iii) মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র (desert ecosystem), (iv) তুন্দ্রা বাস্তুতন্ত্র (tundra eco-system) ও (v) সাভানা বাস্তুতন্ত্র (savana ecosystem (b) জলজ বাস্তুতন্ত্র (Aquatic Ecosystem): জলভাগে গঠিত বাস্তুতন্ত্রকে জলজ বাস্তুতন্ত্র বলে। বাসস্থান বা হ্যাবিট্যাট
অনুযায়ী এরা দুই প্রকারের যেমন-(1) স্বাদুজলের বাস্তুতন্ত্র ও (ii) সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র। স্বাদু জলের বাস্তুতন্ত্র আবার লোটিক (lotic) ও লেনটিক (lentic) বাস্তুতন্ত্রে বিভক্ত। প্রবহমান জল যথা নদী বা প্রস্রবণের বাস্তুতন্ত্র লোটিক বাস্তুতন্ত্ররূপে পরিচিত। অপর পক্ষে পুকুর, বিল বা হ্রদের স্থির জলের বাস্তুতন্ত্রকে লেনটিক বাস্তুতন্ত্র বলে।সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের আবার দুটি ভাগ রয়েছে। যথা- (i) অগভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র (shallow marine ecosystem)
(i) গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র (deep marine ecosystem)
B. কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্র (Artificial Ecosystem): পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিতভাবে মানুষ দ্বারা সৃষ্ট বাস্তুতন্ত্রকে কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্র বলে। এই বাস্তুতন্ত্রের সাম্য প্রায়শই বিঘ্নিত হয়। যেমন শস্যক্ষেত্রের বাস্তুতন্ত্র, শহরের বাস্তুতন্ত্র, অ্যাকোয়ারিয়ামের বাস্তুতন্ত্র ইত্যাদি।
বাস্তুবিদ্যা(Ecology)
সংজ্ঞা (Definition)
1869 সালে জার্মান জীববিজ্ঞানী হেকেল (Ernst Haeckel) প্রথম ইকোলজি শব্দটি ব্যবহার করেন। গ্রিক শব্দ ওকোশ (okos)-এর অর্থ হল ধরা বা পৃথিবী এবং লোগোস (logos)-এর অর্থ বিজ্ঞান। অর্থাৎ হেকেলের মতে ইকোলজি হল পৃথিবীর বাসগৃহে প্রতিপালিত জীবগোষ্ঠীর সাথে পরিবেশের সম্পর্কের বিজ্ঞান (the study of the relationship of organisms with their environment)
কিন্তু ইকোলজি শব্দটি বৃহৎ অর্থে (holistic view) ব্যবহৃত হয়। প্রকৃত অর্থে বাস্তুসংস্থান হচ্ছে পৃথিবী বাসগৃহের প্রতিপালিত জীবগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক বা সম্বন্ধ সমন্বিত বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক ইতিহাসেও বাস্তুসংস্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। 1900 সালের শুরু থেকে বাস্তুসংস্থান, শারীরবিজ্ঞান, সুপ্রজনন বিজ্ঞান প্রভৃতি জীববিজ্ঞানের শাখা বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। 1950 সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাস্তুসংস্থানের গুরুত্ব ভীষণভাবে বিস্তৃত হয়েছে। আধুনিক বাস্তুসংস্থান হল একটি উল্লেখযোগ্য আন্তশাখা বিজ্ঞান (interdisciplinary science)। বাস্তুসংস্থানকে বিজ্ঞান বলার কারণ হল বিজ্ঞানের এই শাখার সলো ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ম্যাকফেডেনের (Macfeden) এর মতে ইকোলজি হল উদ্ভিদ, প্রাণী এবং পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক।
জীববিজ্ঞানী ওডামের (E. P. Odum, 1971) মতে বাস্তুতন্ত্রের অধ্যয়নের বিজ্ঞান হল ইকোলজি (ecology is the study of ecosystem)। গুডাম অবশ্য একে প্রজাতির গঠনগত ও কার্যকারিতার অধ্যয়নকে বুঝিয়েছেন (the study of the structure and function of nature)।
বিজ্ঞানী ক্লেবসের (C. J. Krebs, 1972) মতে, জীবজগতের প্রাচুর্য ও বিস্তারের অন্তঃক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক আলোচনাকে ইকোলজি বলে (the scientific study of the interactions that determine the distribution and abundance of organisms)
বাস্তুবিদ্যার ধারণা (Concept of Ecology)
জার্মান বিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল (Ernst Haeckel) 1866 সালে প্রথম ইকোলজি (Ecology) শব্দটি ব্যবহার করেন। 'E-cology' এই ইংরেজি শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ 'Oikos' এবং 'Logos' এর সমন্বয়ে গঠিত। 'Oikos'-এর অর্থ হল বাসস্থান এবং 'Logos'-এর অর্থ হল জ্ঞান। তাঁর মতে, বাস্তুবিদ্যা হল পৃথিবীতে বসবাসকারী জীবকুলের পরস্পর আন্তঃসম্পর্ক ও পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা আদর্শ বসবাস নীতি। এই বাস্তুবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় হল বাস্তুতন্ত্র। তবে বাস্তুবিদ্যায় সাংগাঠনিক স্তরকে ছয়টি স্তরের মাধ্যমে আলোচনা করা যায়।
ই. ওয়ার্মিং (E. Warming) 1895 সালে বাস্তুবিদ্যার সংজ্ঞায় বলেছেন-"The study of organisms in relation to their environment." অর্থাৎ জীব ও তার পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হল ইকোলজি। আমেরিকান বাস্তুবিদ ফ্রেডরিক ক্লিমেন্টস (Fredrick Clements, 1916-এর মতে, বাস্তুবিদ্যা হল সম্প্রদায়ের বিজ্ঞান (The Science of Community)
চার্লস এলটন (Charles Elton)-এর মতে, ইকোলজি হল এক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রাকৃতিক ইতিহাস (Ecology is a scientific natural history) 1957 সালে ম্যাকফেড্যান (Birtish ecologist Macfadyen) উদ্ভিদ বা প্রাণীর সাথে তার পরিবেশের সম্পর্ককে বাস্তুবিদ্যার আন্তর্গত করেন। কে. ফ্রেডরিকস (K. Fredrichs, 1958)-এর মতে, সমগ্র প্রকৃতির সদস্য হিসাবে সজীব উপাদানসমূহের বিজ্ঞান হল ইকোলজি (Ecology is the science of living beings as members of the whole of nature)। ই. পি. ওডাম (E.P. Odum 1963)-এর মতে, জীবাণু ও তার পরিবেশের আন্তঃসম্পর্কের বিজ্ঞান হল ইকোলজি (Ecology is the science of interrelationships between organisms and environment) |
কিন্তু 1971 সালে ওডাম ইকোলজির সংজ্ঞায় বলেছেন, বাস্তুবিদ্যা হল, বাস্তুতন্ত্র বা প্রকৃতির গঠন ও কার্যাবলির অধ্যয়ন (Ecology is the study of the structure and function of ecosystems or nature)।
পরিশেষে সমস্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে-ইকোলজি হল এক বিজ্ঞান যা জীবজন্তু ও অজীবজ উপাদানগুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক কীভাবে মিথস্ক্রিয়ার দ্বারা সুষ্ঠুভাবে একক বসবাস নীতি গড়ে তোলে এবং অভিযোজন ও অভিব্যক্তিতে সাড়া দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে, বজায় রাখে বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গড়ে ওঠা বাস্তুতন্ত্র তথা জীব বৈচিত্র্যকে।