স্মৃতি বা পরপক্রিয়া কী? এর চারটি ভরের বর্ণনা দাও।2-6
স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া
স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া হল এক বিশেষ প্রকার মানসিক প্রক্রিয়া। অধীত বিষয়বস্তুকে মনে রাখা এবং প্রয়োজনমতো তাকে অবিকল স্মরণ করাকেই স্মৃতি বলে।
স্মৃতির চারটি স্তর
আধুনিক মতবাদ অনুযায়ী, স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করলে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত চারটি ভরের সন্ধান পাওয়া যায়। এই ভরগুলিকে নীচে চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হল
অভিজ্ঞতা অর্জন (স্মৃতির প্রথম স্তর)
কোনো বিষয় স্মরণে রাখতে হলে সর্বপ্রথম যে মানসিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয়, তাই হল শিখন।
ধারণ বা সংরক্ষণ স্মৃেতির দ্বিতীয় শুর)
সংরক্ষণ বা ধারণ হল এমন এক প্রক্রিয়া যার দ্বারা শিখনজাত নানাপ্রকার বিষয় বা অভিজ্ঞতা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিবর্তিত হয়। বাস্তবে মানুষ শিখন প্রচেষ্টার দ্বারা যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তার অনেক অংশই স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ধারণ বা সংরক্ষণের শর্তাবলি
অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের ধারণ বা সংরক্ষণ কয়েকটি শর্তের ওপর নির্ভর করে। ওই পর্তগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
i.উত্তম শিখন এবং অনুশীলন: সংরক্ষণের প্রথম শর্ত হল উত্তম শিখন। বিষয়বস্তুটিকে খুব ভালো করে অর্থবহ করে তুলে লেখা প্রয়োজন.এক্ষেত্রে বিষয়টির বান্ধব প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা বিচার কর দরকার। ধারণ বা সংরক্ষপের জন্য বিষয়টি বারবার অনুপীগন কর প্রয়োজন।
ii.মনোযোগ: কোনো বিষয় স্মৃতিতে ভালোভাবে ধরে রাখতে গেছে গভীর মনোযোগের প্রয়োজন।
iii. আগ্রহ: কোনো বিষয়ের প্রতি অনুরাগ বা আগ্রহ সেই বিষষাউকে ভালোভাবে অনুশীলন করতে এবং ধীর্ঘদিন মনে রাখতে সাহায্য করে
iv. দেহ ও মনের সুস্থতা: বাক্তির শারীরিক ও মানসিক সুস্বারাও জাম ১৬ বা অভিজ্ঞতা ধারণের জেয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
v.অভিশিথন: সংরক্ষণের জন্য বিষয়টির অতিশিখন প্রয়োজন অতিশিখন বলতে বোঝায় বিষয়টি আয়ত্ত করার পরেও শিখন চালিয়ে যাওয়া।
vi.পুনরাবৃত্তি: সংরক্ষণের জন্য মাঝেমাঝেই বিষয়টির পুনরাবৃতি করা প্রয়োজন। আবৃতি যেভাবে পুনরুদ্রেক করা হবে, সেইভাবে পুনরাবৃদ্ধি করতে হবে।
vii. বিগ্রাম: সংরক্ষণের জন্য শিখনের পরে বিশ্রামের প্রয়োজন। এর ফলে পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ কম হয়। বিশ্রাম শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুগুলিকে সংগঠিত করতে সাহায্য করে, যা সংরক্ষণের সহায়ক।
viii. কৌশল প্রয়োগ: সংরক্ষণের জন্য কিছু কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন-সূর্যের সাতটি রং মনে রাখার জন্য 'VIBGYOR কথাটির ব্যবহার। এখানে ধারণের বিষয়টির অন্তর্ণত শব্দগুলির প্রথম অক্ষরগুলিকে একর করা হয়।
ix. বহু মাধ্যমের ব্যবহার: পরীক্ষায় দেখা গেছে একাধিক মাধ্যমের (multimedia) সহযোগিতায় শিক্ষাদান কাজটি সম্পন্ন হলে সংরক্ষণের উন্নতি ঘটে।
পুনবুদ্রেক (স্মৃতির তৃতীয় স্তর) স্মৃতির বা স্মরণক্রিয়ার তৃতীয় স্বর হল পুনরুদ্রেক। কারণ যে বিষয়টি বা যেসব অভিজ্ঞতা সংররণ করা হয়, তা যদি ঠিক সময়ে, ঠিক জায়গায় এবা সঠিকভাবে পুণরুদ্রেক করা না যায়, তাহলে স্মৃতির কাজটি সম্পূর্ণ হয় না। পুনরুয়েক প্রধানত দুই প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পুনরুদ্রেক।
[1] প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক: যখন কোনো অভিজ্ঞতাকে মনে করার সময় কেবল তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। যেমন-রাম ও হরি দুই বন্ধু। রামের কথা বললে যদি হরির কথা মনে পড়ে, তবে তা প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক।
[2] পরোক্ষ পুনরুদ্রেক: যখন কোনো অভিজ্ঞতাকে মনে করার জন্য তার সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে পরোক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। যেমন-রাম ও হরি দুই বন্ধু। হরির ভাই শিব। এক্ষেত্রে যদি রামের নাম মনে করার সময় হরির ভাই শিবের নাম মনে পড়ে তাহলে বলা হয় সেটি পরোক্ষ পুনরুদ্রেক.
পুরুজেকের শর্তাবলি: উত্তম পুনরুজেকের জন্য যেসব নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন, তাদের পুনরুয়েকের শর্ত বলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
i. উত্তয় বিশ্বখন ও সংরক্ষণ: কার্যকরী শিখনপদ্ধতির ব্যবহার শিখতে হবে ও উত্তম সংরক্ষণের শর্তগুলি মেনে চলতে হবে।
ii.দৈহিক ও মানসিক সুহাহা: দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে হবে। দৈহিক অসুস্থতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা পুনরুদ্রেকের পক্ষে ক্ষতিকর।
iii.সুন্দরনুশীলন এবং পুনরাবৃত্তি: বিষয়বস্তুকে মাঝে মাঝে অনুশীলন এবং আবৃত্তি করা প্রয়োজন।
iv. আয়বিশ্বাস: নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে, অহেতুক ভয় পেলে চলবে না।
v.পরিবেশের সমতা: যে পরিবেশে লিখন হয়েছে, সেই পরিবেশ বা সেই ধরনের পরিবেশ পুনরুদ্রেকের সহায়ক।
vi. সংকেত দেওয়া: অনেক সময় সেখা যায়, কিন্তু সংকেত দিলে আপাতত ভুলে যাওয়া বিষয় মনে পড়ে যায়। একে 'Prompt' করা বলে। প্রয়োজনমতো 'প্র'ম্পন্ন' করে পুনরুদ্রেককে সম্ভব করতে হবে।
প্রত্যভিজ্ঞা (স্মৃতির চতুর্থ শুর)
পুবাজিত অভিজ্ঞতা যখন তার প্রতিরূপের সাহায্যে পুনব্লথাপিত হয়, তখন তাকে প্রতাডিজা বলে। প্রতাড়িজা কথাটির প্রকৃত অর্থ 'চিনে নেওয়া'। পূর্বে প্রত্যক্ষ করা অভিজ্ঞতা বা জানকে বর্তমানে প্রিনে নেওয়ার প্রক্রিয়াকেই প্রতাডিজা বলা হয়। প্রত্যভিজা প্রক্রিয়াটি পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়ার থেকে অনেক বেশি সরল।