মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট প্রবাহের সম্পর্ক(Monsoon Wind in Relation to Jet Stream)
বিভিন্ন আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ গভীরভাবে উর্ধ্বাকাশের জেট বায়ুপ্রবাহ (মূলত ক্রান্তীয় পুবালি জেট প্রবাহ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
গ্রীষ্মকালীন জেটপ্রবাহ (Summer Jet Stream): গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-মে) তিকাতীয় মালভূমির দক্ষিণাংশ অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম ভারতে অধিক সৌরতাপের কারণে স্থায়ী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় যা ভারতে ওই সময়ে অবস্থিত উপক্রান্তীয় জেট বায়ুকে আরও উত্তরে সরিয়ে দেয় এবং ক্রান্তীয় পূবালি জেট প্রবাহ (easterly jet stream) এই সময়ে ভারতে আত্মপ্রকাশ করে। গ্রীষ্মের শুরুতে ক্রমশ এই বায়ু প্রায় 13°-14° অক্ষাংশ বরাবর 14-16.5 কিমি উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। পুবালি জেট প্রবাহ গঙ্গা সমভূমি অতিক্রম করার সময় ভারতীয় আকাশে প্রচুর কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি হয়, যা উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কিছু বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টি বলে। এরপর জুনের শুরুতে পুবালি জেট প্রবাহের অক্ষ কলকাতা-বেঙ্গালুরু বরাবর প্রায় 13° অক্ষাংশে থাকে। এই সময় ভারত মহাসাগরে উচ্চচাপ কেন্দ্র থাকে। উচ্চতাপ কেন্দ্রের ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি হলে পুবালি জেট প্রবাহও শক্তিশালী হয় এবং ভারতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে এগোতে থাকে। এই সুযোগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে। সুতরাং পুবালি জেট প্রবাহের শক্তি যত বাড়বে এবং যত দ্রুত উতরে সরবে ততই ভারতে মৌসুমির বায়ুর আগমন দ্রুত হবে। তখন খুব অল্পদিনের মধ্যে সারা দেশে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ তথা মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
শীতকালীন জেটপ্রবাহ (Winter Jet Stream): শীতকালীন মৌসুম প্রবাহের সলোও জেট প্রবাহের সম্পর্ক রয়েছে।
1. উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট স্ট্রিম Oct-Nov মাস নাগাদ অর্থাৎ দক্ষিণ পশ্চিমে মৌসুমি বায়ু ফিরে যাবার পর ভারতের ওপর আবির্ভূত হয় এবং তখন থেকে প্রায় মে মাস পর্যন্ত এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভারতে শীতের তীব্রতা এই পশ্চিমি জেট স্টিমের অবস্থান ও সক্রিয়তার ওপর নির্ভরশীল। এই বায়ুআেতটি শীতকালে যতই দক্ষিণে সরে যায় শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি সর্বাধিক দক্ষিণে আসে এবং তারপর ধীরে ধীরে উত্তরে সরে গিয়ে মে মাসে অন্তর্হিত হয়। শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ুস্রোতটি হিমালয়ে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়। একটি শাখা হিমালয়ের উত্তর এবং অপরটি দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে আবার পূর্বে গিয়ে মিলিত হয়। এইভাবে বায়ুআেতটি যখন দুটি শাখায় ভগ্ন হয় এবং আবার মিলিত হয়ে গতিকা বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং মৌসুমি বায়ুর সমাগম প্রত্যাবর্তন শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব, তীব্রতা প্রভৃতি জেট বায়ুপ্রবাহের উপর নির্ভলশীল।
2. ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে নিম্ন ট্রপোস্ফিয়ারে পুবালি বায়ুর আধিপত্য থাকে, কিন্তু ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব অংশে পশ্চিমা বায়ু ঢুকে পড়ে পশ্চিমা বায়ুর একটি শাখা শীতকালীন পশ্চিমিঝঞ্ঝাকে (western disturbance) নিয়ন্ত্রণ করে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝাগুলি সাধারণত ভূমধ্যসাগর হয়ে ভারত ও পাকিস্তানে প্রবেশ করে। উপক্রান্তীয় জেট প্রবাহ এই ঘূর্ণবাতগুলিকে সক্রিয় করে, ফলে এরা এখনভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে, তখন ঘূর্ণঝড়সহ বৃষ্টিপাত ঘটায়।