ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রের প্রস্থচ্ছেদ ব্যাখ্যা পদ্ধতি(method of interpretation of cross section on a geological map)
প্রশ্নচ্ছেদ অঙ্কনের পর তা নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণে সমীক্ষা করতে হবে।
ভূমিকা (introduction): প্রদত্ত ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রের নম্বর, স্কেল উল্লেখ করতে হয় এবং প্রস্থচ্ছেদ লাইনটির (section line) দৈর্ঘ্য, দিক উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া প্রদত্ত অঞ্চলটির ক্ষেত্রফল উল্লেখ করতে পারলে ভালো হয়।
ভূপ্রকৃতি (topography): প্রদত্ত ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রটি সর্বাধিক উচ্চতা লক্ষ্য করে কোন প্রাকৃতিক বিভাগ তা উল্লেখ করা প্রয়োজন এবং অঞ্চলটিতে কী কী নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং প্রদত্ত ভূমিরূপগুলির নাম উল্লেখ একান্ত প্রয়োজন।
সাধারণ ভূতত্ত্ব (general geology): প্রদত্ত ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রটিতে বর্তমানে কয়টি যুগের শিলার গঠন আছে তা উল্লেখ করে এবং যুগের উপর থেকে নীচের দিকে সঞ্চিত শিলার নাম উল্লেখ করতে হবে।
গঠন (structure): উর্ধ্বভলা, অধোভঙ্গ, একনত (uniclinal বা monocline) ভাঁজ বিশিষ্ট, চ্যুতি সম্পন্ন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গঠন হতে পারে। সমোন্নতি রেখার সাহায্যে অঙ্কিত ভূমিরূপের প্রস্থচ্ছেদটি লক্ষ্য না করে মুল মানচিত্রের বিভিন্ন শিলাস্তরগুলো লক্ষ্য করে এর গঠন উল্লেখ করতে হবে। অতঃপর শিলান্তর কত ডিগ্রি কোণে কোন দিকে হেলে আছে তা বর্ণনা করতে হবে। উর্দ্ধভঙ্গ বা অধোভঙ্গ হলে ভাঁজের বাহুগুলো কত ডিগ্রি কোণে হেলেছে এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ না সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বর্ণনা করতে হবে।
স্তরবিন্যাস (succession or sequence of beds)বিভিন্ন শিলাস্তর নীচ থেকে উপরে পরপর কীভাবে অবস্থা করে (ভূতাত্ত্বিক প্রস্থচ্ছেদটি লক্ষ্য করলেই বুঝতে পার যাবে) তা লিখতে হবে। পুরাতন শিলাস্তরটি সবচেয়ে নিয় এবং নতুন শিলাস্তরটি সবচেয়ে উপরে লিখতে হবে। এক শিলাস্তরগুলির উল্লম্ব ও প্রকৃত বেধের উল্লেখ করতে হবে।
GEOLOGICAL SUCCESSION
Beds Symbol
Age of Deposition
Thickness Vertical True
Remarks
ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস (geological history): শিলাস্তরগণি বেশিরভাগই পাললিক শিলার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এরা নিশ্চয়ই হয় সমুদ্র অথবা নদীর তলদেশে সঞ্চিত হয়েছে। স্তরাফ লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, সবার আগে কোন শিলাটি সন্বিত হয় এবং তারপর অন্যান্য কোন্ কোন্ শিলাস্তর পরগর সঞ্চিত হয়েছে। সমুদ্র বা নদীর তলদেশে এই শিলাগুলিা সঞ্চয় যখন সম্পূর্ণ হবে তখন ভূ-আন্দোলনের ফলে এ শিলাস্তরগুলি সমুদ্র অথবা নদীগর্ভ থেকে উপরে উঠবে এক তার উপর প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ কাজ করে বর্তমান ভূমিক গঠন করবে।
ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ গঠনের সাথে এর সম্পর (topography and its relation to underlying structure): সমোন্নতি রেখা ও স্থানীয় উচ্চতার সাহাযে এবং প্রস্থচ্ছেদটি লক্ষ্য করে অঞ্চলটির কোন অংশ উঁচু বানী এবং উচ্চতা কত তা বর্ণনা করতে হবে। সর্বোচ্চ স্থানটি সর্বনিম্ন স্থানটির নীচে কোন শিলা রয়েছে তা উল্লেখ করা হবে। সমোন্নতি রেখার গতি লক্ষ্য করে অঞ্চলটির উপর প্রবাহিত নদীগুলো মানচিত্রে বসাতে হবে। শিলা স্তরগুলোর ক্ষয়ের উপর নদীগুলোর প্রভাব এবং ক্ষয় কাজের ফলে নীচের শিলান্তর উন্মুক্ত হয়েছে কিনা তা লক্ষ্য করে বর্ণনা করতে হবে। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিস্থিত ভূমিরূপের উপর আভ্যন্তরীণ শিলা গঠনের প্রভাব কীরূপ তা লক্ষ্য করতে হবে। কঠিন শিলা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, কিন্তু পার্শ্ববর্তী নরম শিলা সহজে ক্ষয় হয়। ফলে কঠিন শিলা উঁচু হয়ে অবস্থান করে। অনেক সময় নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু উপত্যকায় পরিণত হয়। অনেক সময় আভ্যন্তরীণ গঠনের সাথে উপরের ভূ-পৃষ্ঠের ভূমিরূপের মিল বা সামঞ্জস্য দেখতে পাওয়া যায় না। অনেক সময় অঞ্চলটি সর্বোচ্চ স্থানের ঠিক নীচে অভ্যন্তরে অধোভঙ্গা এবং সবচেয়ে নীচু স্থানের নীচে অভ্যন্তরে ঊর্ধ্বভঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়। এরূপ অবস্থাকে 'বন্ধুরতার উৎক্রম' বা বৈপরীত্য ভূমিরূপ/ভূ-প্রকৃতি (inversion of relief) বলে। অর্থাৎ এই অংশে বিভিন্ন যুগের শিলাস্তরগুলির মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে।