welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত ভূমিরূপ(Landforms on Basalt)

ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত ভূমিরূপ(Landforms on Basalt)



ব্যাসল্ট হল নিঃসারী ক্ষারকীয় প্রকৃতির আগ্নেয়শিলা। ভূগর্ভের ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরস্থ উত্তপ্ত ম্যাগমা লাভা রূপে ভূ-অভ্যন্তরের বাইরে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে বায়ুর সংস্পর্শে এসে দ্রুত শীতল ও কঠিন হয়ে ব্যাসল্টের জন্ম দেয়। ব্যাসল্ট দ্রুত জমাট বাঁধায় ব্যাসল্টের কণাগুলি খুবই সুক্ষ্ম প্রকৃতির হয়। সাধারণত প্ল্যাজিওক্লেজ ও পাইরক্সিন খনিজের সমন্বয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যাসল্টের জন্ম হয়। এছাড়াও অগাইট ইলমেনাইট, হর্নব্লেন্ড ও অলিভিন প্রভৃতি খনিজের অস্তিত্বও ব্যাসল্টের মধ্যে মেলে। ব্যাসল্ট শিলার মধ্যে বহু বহুভুজাকৃতির দারণের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমে কলম্বিয়া নদী অববাহিকার প্রায় 2.65 লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমির প্রায় 5.18 লক্ষ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল ব্যাসল্ট শিলাদ্বারা গঠিত। ব্যাসল্ট জাতীয় শিলার জন্মের সময়ে এবং এই শিলার উপর বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির ক্রিয়াশীলতার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নীচে এই প্রকার ভূমিরূপগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

1. লাভা মালভূমি (Lava Plateau): ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত প্রারম্ভিক ভূমিরূপ হল লাভা মালভূমি। সাধারণত বৃহদাকৃতির দারণ বা ফাটলের মধ্য দিয়ে বন্যার ন্যায় ভূ-অভ্যন্তরের ক্ষারকীয় ম্যাগমা, লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে ক্রমশ প্রবাহিত হয়ে যে মালভূমির ন্যায় ভূভাগের সৃষ্টি করে, তাকেই লাভা মালভূমি বলে। লাভাপ্রবাহ, এদের মধ্যবর্তী স্তর বা পাইরোক্লাস্ট ও পাললিক শিলার সংকীর্ণ স্তর নিয়ে এই লাভা মালভূমির সৃষ্টি হয়। লাভা মালভূমির উপরিঅংশ সাধারণত চ্যাপটা প্রায় সমতল বা তরঙ্গায়িত প্রকৃতির ও চারপাশ খাড়া সোপান বা ধাপযুক্ত হয়ে থাকে। সাধারণত পাতে পাতে লাভা সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়ে লাভা মালভূমির সৃষ্টি হয় বলে এর চারপাশে ধাপ বা সিঁড়ির জন্ম হয়। লাভা মালভূমির উপরিতলে অনেক সময় বহু ক্ষুদ্রাকৃতির গ্রানাইট গঠিত পর্বত (steptoe)-এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। এছাড়া লাভা মালভূমির উপরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র 'বিস্ফোরণ শঙ্কু' থাকতে পারে। ক্ষয়ের পরবর্তী সময়ে লাভা মালভূমির ভূগুতে অসংখ্য ক্ষুদ্রাকার ধাপ বা গঠনমূলক মঞ্চের উদ্ভব হয়ে থাকে। কলম্বিয়া, কলোরাডো ও পূর্ব আফ্রিকার বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে ও ভারতের দাক্ষিণাত্যের উত্তর পশ্চিমে এই প্রকার লাভা মালভূমি লক্ষ করা যায়। ভারতের দাক্ষিণ্যত্যের লাভা মালভূমি 'ডেকানটট্র্যাপ' (deccan trap) নামে পরিচিত। ব্রাজিলের পারবানা ব্যাসল্ট ফ্ল্যাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া নদীর অববাহিকা ও আইসল্যান্ড লাভা মালভূমির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

2. লাভা সমভূমি (Lava Plains): ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত অপর ভূমিরূপ হল লাভা সমভূমি। সাধারণত নদী উপত্যকার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে স্বল্প লাভাস্রোতের মাধ্যমে যে প্রায় সমতলভূমির সৃষ্টি হয়, তাকেই লাভা সমভূমি বলে। ভূত্বকের বিভিন্ন ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরস্থ অতি তরল ম্যাগনা, ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে প্রবাহিত হয়ে লাভা সমভূমি গঠন করে। লাভা সমভূমির উপর অনেক সময় বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢিবি বা নোলস্ (knolls) গহ্বর ও নানাপ্রকার প্রবাহতলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্নেক ভ্যালি (snake valley) লাভা সমভূমির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

3. লাভা গম্বুজ (Lava Dome): ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত ভূমিরূপ হল লাভা গম্বুজ। ভূ-অভ্যন্তরের তরল ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে প্রবাহিত হয়ে বায়ুর সংস্পর্শে এসে ক্রমশ শীতল হয়ে যে উত্তলাকৃতির গম্বুজের ন্যায় ভূমিরূপের সৃষ্টি করে, তাকেই লাভা গম্বুজ বলে। গম্বুজাকৃতি আকৃতির জন্যই এই ভূমিরূপটির এরূপ নামকরণ। ভূ-অভ্যন্তরের তরল লাভা সহজে দূরবর্তী স্থানে প্রসারিত হয়ে লাভা শিল্ডের গঠনের পরিবর্তে লাভা গম্বুজ সৃষ্টি করে থাকে। হাওয়াই দ্বীপের মৌনাকেয়া (Mauna Kea) এইরূপ লাভা গম্বুজের বিশিষ্ট উদাহরণ। লাভা গম্বুজ মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-(৯) বৃহদাকৃতির লাভা গম্বুজ ও (b) ক্ষুদ্রাকৃতির লাভা গম্বুজ। লাভা গম্বুজের কেন্দ্রীয় অংশে কেন্দ্রমুখী জলনির্গমের ফলে বা, বৃষ্টির জল জমে ক্ষুদ্র হ্রদের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই প্রকার হ্রদের বাইরের দিকের ঢালে কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম প্রণালীর জন্ম হয়ে থাকে।

4. বৈপরীত্য ভূমিরূপ (Inversion of Relief): বৈপরীত্য ভূমিরূপ হল ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত অন্যতম প্রধান ভূমিরূপ। শৈলশিরা ও উপত্যকা দ্বারা গঠিত বিস্তীর্ণ অংশে বিভিন্ন ফাটল বা ছিদ্রপথের মধ্যে দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে লাভা ৰূপে নির্গত হয়ে উপত্যকা বরাবর বিস্তৃতি লাভ করে। পরবর্তী সময়ে বায়ুর সংস্পর্শে এসে এই বিস্তৃত লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে সমগ্র উপত্যকা অধিকার করে নেয় ও উপত্যকার উচ্চতা বৃদ্ধি করে। এই প্রকার শিলা অত্যন্ত ক্ষয় প্রতিরোধক বলে সামগ্রিক উপত্যকার বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রটি যথেষ্ট ক্ষয় প্রতিরোধক হয়ে ওঠে। কিন্তু শৈলশিরাসমূহ পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হওয়ায় তার মধ্যে কম ক্ষয় প্রতিরোধক শক্তি গড়ে ওঠে। এর ফলে শৈলশিরাসমূহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা উপত্যকা অংশের থেকেও বেশি ক্ষয়ীভূত হয়ে উপত্যকা অঞ্চলের নিম্নে অবস্থান করে। এর ফলে উপত্যকা অঞ্চল শৈলশিরা অংশসমূহের যথেষ্ট অধিক উচ্চতায় বিরাজ করে। এর ফলে সামগ্রিক ভূচিত্রে এরা বিপরীতধর্মী ভূমিরূপে প্রকাশ পায়। এই প্রকার বিপরীত অবস্থার ভূমিরূপকেই বৈপরীত্য ভূমিরূপ বলা হয়।

5. লাভা মাউন্ড (Lava Mounds): ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত এক বিশেষ ভূমিরূপ হল লাভা মাউন্ড। সাধারণত আগ্নেয়গিরিতে কোনো জ্বালামুখের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় না, সেই সমস্ত লাভা গম্বুজের ন্যায় ব্যাসল্ট আগ্নেয়গিরিগুলিকে লাভা মাউন্ড বলে। অনেকেই লাভা গম্বুজের সঙ্গে লাভা মাউন্ডকে গুলিয়ে ফেলেন। লাভা গম্বুজে বেশ কিছু জ্বালামুখের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, কিন্তু লাভা মাউন্ডে কোনো জ্বালামুখের নিদর্শন পাওয়া যায় না। ভিক্টোরিয়া প্রদেশের মাউন্ট কটেরিল (Mt. Cottrell) লাভা মাউন্ডের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

6. কুয়েস্তা (Cuestas): ব্যাসল্ট শিলাদ্বারা গঠিত অপর ভূমিরূপ হল কুয়েস্তা। সাধারণত ব্যাসল্ট শিলাগঠিত ভূভাগের প্রান্তভাগে খাড়া প্রকৃতির ভূগুতটে আবহবিকার, ক্ষয়কার্য, পুঞ্জক্ষয় প্রভৃতি ক্রিয়ার দরুন ভূগুতটের পশ্চাদপসরণ ঘটে। এর পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত পশ্চাদপসরণে একদিকে যথেষ্ট খাড়া ঢালবিশিষ্ট ও অপরদিকে মৃদু ঢালবিশিষ্ট যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাকে কুয়েস্তা বলা হয়।

7. মেসা ও বিউট (Mesa and Butte): ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত অন্যতম প্রধান ভূমিরূপ হল মেসা ও বিউট। লাভা মালভূমির বিস্তীর্ণ প্রান্তভাগে তীব্র আবহবিকার ও অন্যান্য প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা যথেষ্ট হারে ক্ষয় পরিসাধিত হয়ে যে বিচ্ছিন্ন স্বল্প উচ্চতা ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট প্রায় টেবিল প্রকৃতির অবশিষ্ট ভূমিরূপের জন্ম হয়, তাকে মেসা বলা হয়। এই প্রকার মেসার উপর প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির ক্রিয়াশীলতার প্রভাব উত্তরোত্তর বর্ধিত হলে মেসা ক্রমাগত ক্ষয়িত হয়ে যে অতিস্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট অবশিষ্ট ক্ষুদ্র আকৃতির উচ্চভূমির জন্ম দেয়, তাকে বিউট বলা হয়।

৪. প্রান্তশিলা (Rim Rocks): প্রান্তশিলা এক ক্ষুদ্ররূপ বিশিষ্ট ভূমিরূপ হওয়ায় এই ভূমিরূপটিকে অনেকেই আলোচনার মধ্যে রাখেনি। মেসা বা বিউটের লাভা দ্বারা আচ্ছাদনের সীমানায় যে উল্লম্ব বা প্রায় উল্লম্ব ভৃগু ঢালের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়, তাকেই প্রান্তশিলা বলা হয়। এই প্রান্তশিলা এক প্রকার বিশেষ ঢালবিশিষ্ট ভূমিরূপ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01