welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

কার্স্ট প্রক্রিয়া(Karst Processes)

কার্স্ট প্রক্রিয়া(Karst Processes)


ধারণা (Concept)

ভূমিরূপ বিদ্যায় কার্স্ট অঞ্চল এক বিশেষ ধরনের ভূমিরূপ। ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়ার আড্রিয়াটিক উপসাগরের উপকূল চুনাপাথর দ্বারা গঠিত। যুগোশ্লাভিয়ার চুনাপাথরে গঠিত অঞ্চলের এই বিশেষ ভূমিরূপ কার্স্ট (Karst) নামে পরিচিত। তাই পৃথিবীর সর্বত্র চুনাপাথর গঠিত ভূমিরূপ কার্স্ট নামে পরিচিত। কার্স্ট একটি জার্মান শব্দ, এটি ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দ 'Kar'

থেকে এসেছে, যার অর্থ শিলা। ইতালিতে 'Carco' ও শ্লোভেনিয়ায় 'Kars' নামে পরিচিত। শ্লোভেনিয়ার 'Kars' শব্দের মানে উন্মুক্ত প্রস্তরময় ভূমি (Open Rocky Ground)। সাধারণত দ্রবণ পদ্ধতিতে চুনাপাথর ও ডলোমাইট শিলা দিয়ে গঠিত অঞ্চলে যে বিশেষ ধরনের ভূমিরূপের সমন্বয় দেখা যায় তাদের কার্স্ট ভূমিরূপ বলে। যুগোশ্লাভিয়ার অন্তর্গত আড্রিয়াটিক উপকূলের চুনাপাথর দ্বারা গঠিত অঞ্চলে ভৌম জলের কাজের জন্য ভূপৃষ্ঠের ওপর এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ গঠিত হয়েছে। পূর্বতন যুগোশ্লাভিয়া চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এ জাতীয় ভূমিরূপ কার্স্ট (Karst) নামে পরিচিত। সর্বপ্রথম এ জাতীয় ভূমিরূপ পূর্বতন যুগোশ্লাভিয়ায় আবিষ্কৃত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ভূপৃষ্ঠের যে কোনো চুনাপাথর বা ডলোমাইট দ্বারা গঠিত অঞ্চলে ভৌম জলের কাজের ফলে সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপকে কাস্ট ভূমিরূপ বলা হয়। ইউরোপের দক্ষিণে সার্বিয়া-মন্টেনিগ্রো এবং বসনিয়া-হার্জেগোভিনা নামক দুটি দেশে ভূমধ্যসাগরের অংশ আড্রিয়াটিক সাগরে পূর্ব উপকূল বরাবর কেলাসিত দারণ যুক্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2000 মিটারের অধিক উচ্চতা, দীর্ঘ 500 কিমি এবং প্রস্থ 75 কিমি এলাকা ক্লাল পার্বত্য মালভূমির অন্তর্গত, যাকে কার্স্ট ভূমি বলে। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি চুনাপাথর দ্বারা গঠিত মালভূমি। অর্থাৎ কার্স্ট একটি জার্মান শব্দ যার অর্থ উন্মুক্ত, উদ্ভিদহীন এক প্রস্তরক্ষেত্র। পূর্বে এই মালভূমিটির আয়তন ছিল প্রায় 20250 কিমি এবং ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থানরত চুনাপাথরের গভীরতা ছিল প্রায় 4000 মিটার।

যে সমস্ত শিলা সহজে জলে দ্রবীভূত হয়ে জলের দ্রবণ ক্রিয়ায় এক বিশেষ ভূমিরূপ অঞ্চলের সৃষ্টি করে, যা ভু-মানচিত্রে কার্স্ট ভূপ্রকৃতি (Karst Landscape) নামে পরিচিত। ভূগর্ভস্থ জলের দ্রবণ ক্রিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের উপর প্রবাহিত জলের ভূ-অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই অঞ্চলের ভুমিরূপের বিকাশ ঘটে থাকে। চুনাপাথর দ্বারা গঠিত ভূমিভাগে ভূমিরূপের বিবর্তন পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য অঞ্চলে গঠিত শিলার বৈশিষ্ট্যের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ এই অঞ্চলে ক্ষয় প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্রবণ প্রক্রিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ুর প্রকৃতি, শিলার চরিত্র, ভূমিরূপের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও চুনাপাথর ও ডলোমাইট গঠিত শিলার ভূমিরূপকে কার্স্ট ভূমিরূপ বলে।

সংজ্ঞা (Definition)

সাধারণত দ্রবণ পদ্ধতিতে চুনাপাথর ও ডলোমাইট দিয়ে গঠিত অঞ্চলে যে বিশেষ ধরনের ভূমিরূপের সক্রিয়তা দেখা যায়, তাদের কার্স্ট ভূমিরূপ বলে। ভূমিরূপ বিদ্যায় কাস্ট হল সেইসব সমস্ত ভূভাগ যেখানে জলের দ্রবণ ক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠ এবং ভূ-অভ্যন্তরের শিলা দ্রবীভূত হয়ে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, সেই সঙ্গে কিছু উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ গড়ে, তোলে। আবার অনেকের মতে কার্স্ট অঞ্চল হল মূলত ভৌম জলপ্রবাহের দ্রবণ কার্যের দ্বারা চুনাপাথর অঞ্চলে গঠিত কিছু শুষ্ক ভূমিরূপ।

আবার Ford এবং Williams-এর মতে, কার্স্ট হল-'a terrain with distinctive hydrology and landforms arising from a combination of high rock solubility and well-developed secondary porosity.

কার্স্ট ক্ষয়কার্য প্রক্রিয়া(Karst Erosional Process)

বৃষ্টির জল বায়ুমণ্ডল থেকে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় বায়ুমণ্ডলে অবস্থানরত CO₂ ও O₂ গ্যাস সংগ্রহ করে এবং পরবর্তী সময়েই রাসায়নিক সংশ্রিণের ফলে ওই গ্যাস দ্রবীভূত হয় এবং ওই জল ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার পর যার কিছু পরিমাণ ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে পৃষ্ঠপ্রবাহ রূপে (surface runoff) প্রবাহিত হয়ে এবং বাকি জল শিলার সচ্ছিদ্রতার মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে শিলাকে দ্রবীভূত করে। এই শিলা তথা চুনাপাথরের দ্রবণ কতকগুলি বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যথা-(a) তাপমাত্রার তারতম্য, (b) উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রভাব, (c) ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহের গতিবেগ, অঞ্চলটির বিবর্তন কতকগুলি পদ্ধতির দ্বারা বিকাশ লাভ করে। সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

1. দ্রবণ প্রক্রিয়া (Solution Process): বৃষ্টির জল বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে মিশে কার্বনিক অ্যাসিড (H₂CO₃) এবং গাছের ডালপালা ইত্যাদি জলে পচে জৈব বা হিউমিক অ্যাসিড (C₂H₃NO%) তৈরি করে। কার্বনিক অ্যাসিড ও হিউমিক অ্যাসিড মিশ্রিত জল চুনাপাথর, ডলোমাইট বা চকের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মাটিকে সহজে গলিয়ে দেয়। ফলে জলপ্রবাহ ভূনিম্নে প্রবাহিত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপ সৃষ্টি করে।

2. অবঘর্ষ প্রক্রিয়া (Corrosion Process): দ্রবীভূত জলের সঙ্গে নিম্নমুখে বাহিত নুড়ি, মোটা দানার বালি প্রভৃতির ঘর্ষণে চুনাপাথর ও ডলোমাইট অঞ্চল ক্ষয় পায়।

3. সঞ্চয় (Deposition): জলের অধিক মাত্রায় শিলা দ্রবীভূত দ্বারা তার দ্রবীভবন ক্ষমতা নষ্ট হয় ফলে দ্রবীভূত খনিজ পদার্থগুলি সজ্জিত হতে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে জলমিশ্রিত খনিজ পদার্থ থেকে তাপের প্রভাবে জল বাষ্পীভূত হলে সেই খনিজ পদার্থগুলি সঞ্চিত হয়।

4. শিলীকরণ (Petrification): রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খনিজ পদার্থের পরিবর্তনকে শিলীকরণ বলে। ভূ-অভ্যন্তরে জল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে খনিজ পদার্থের আকার, আয়তন, বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। এইভাবে ভূ-অভ্যন্তরের জল শিলীকরণ প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। CaCO₃ সমৃদ্ধ শিলায় যে জটিল পদ্ধতিতে দ্রবীভবন ঘটে, সেগুলি হল-

1. জলের সঙ্গে C*O_{2} র বিক্রিয়ায় কার্বনিক অ্যাসিড-এ পরিণত হয়।

 H_{2}*O + C*O_{2} -> H_{2}*C*O_{3}

2. আবার ক্যালসিয়াম বাইকর্বনেট C*O_{2} এবং H_{2}*C র সাথে বিক্রিয়া ঘটায় এবং কার্বনিক অ্যাসিডের দ্বারা ক্যালিসয়াম বাই কার্বনেট সৃষ্টি করে। CaCO3 + CO2 H2O = Ca(HCO3)2

3. ক্যালসিয়াম অক্সাইডের সাথে জলের বিক্রিয়ায় ক্যালিসয়াম হাইড্রক্সাইড গঠিত হয়।

 CaO+ H₂O Ca(OH)2

4. ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড এবং C*O_{2} র বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বনেট গঠিত হয়। 

Ca(OH)2 + CO₂= CaCO3 + H₂O

5. কার্বনিক অ্যাসিড সহজেই ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এবং ঋণাত্মক বাই কার্বনেট আয়ন অথবা হাইড্রোজেন কার্বনেট আয়নে ( HC O 3 ^ - ) বিভাজিত হয়; তখন দ্রাবকরূপে জল প্রবাহের দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায়। 

H₂CO₃H+ HCO3-

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01