welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বায়ুপ্রবাহের নিয়ন্ত্রকসমূহ(Controlling Factor of Wind)

বায়ুপ্রবাহের নিয়ন্ত্রকসমূহ(Controlling Factor of Wind)


বায়ুপ্রবাহের দিক (direction) ও গতিবেগ (veloc-ity) মূলত নিয়ন্ত্রিত হয় কতকগুলি বল বা শক্তির দ্বারা। অনুভূমিক তলে এরূপ চার ধরনের শক্তির কথা আবহবিদরা উল্লেখ করেছেন যারা বায়ুকে সংবাহিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। এরা হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, চাপনতিমাত্রাজনিত শক্তি, কোরিওলিসজনিত বল, কেন্দ্রাতিগ বল এবং ঘর্ষণজনিত শক্তি। এদের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং চাপনতিমাত্রা শক্তিকে চালনা শক্তি (driv-ing force) বলে কারণ এরা স্থান কাল ভেদে কাজ করে, সে বায়ুর প্রভাব থাকুক বা না থাকুক। অপরপক্ষে কোরিওলিস, ঘর্ষণ ও কেন্দ্রাতিগ বলকে পরিচালন শক্তি (steering force) বলে। এরা বায়ুর গতিপ্রবাহের সঙ্গে উদ্ভব হয়।

চাপনতিমাত্রাজনিত শক্তি (Pressure Gradient Force)

একই অনুভূমিক তলে অবস্থিত ভিন্ন বা অসম বায়বীয় চাপযুক্ত দুটি স্থানের মাধ্যমে বল বা শক্তি কাজ করে, তাকে চাপনতিমাত্রাজনিত শক্তি বলে। অর্থাৎ দুটি স্থানের মধ্যে চাপের পার্থক্য অধিক হলে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয় এবং বায়ুপ্রবাহের বেগও বাড়ে। যদি দুটি স্থানের মধ্যে চাপের পার্থক্য কম থাকে, তাহলে বায়ুচাপের ঢালটি মৃদু হয় ও বায়ু ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সমচাপরেখাগুলি (isobars) যত ঘনভাবে বিন্যস্ত থাকে ঢালের তীব্রতা তত বৃদ্ধি পায় এবং বায়ু তত প্রবলভাবে প্রবাহিত হয়। অপরপক্ষে সমচাপরেখাগুলির দূরে দূরে অবস্থান বায়ুর গতিকে মন্থর করে। এই চাপ ঢাল সর্বদা সমচাপরেখাগুলির সঙ্গে সমকোণে সৃষ্টি হয়। এই বলকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়। (1) একটি উল্লম্ব ভাগ (vertical component - P_{v} ), (2) অপরটি অনুভূমিক ভাগ (horizontal component - P_{n} ) , সাধারণত উপরের দিকে ক্রিয়াশীল উল্লম্ব বলটি (P_{v}) নীচের দিকে ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ বলের (Gravity) দ্বারা নিষ্ক্রিয় হয় এবং এক সাম্য অবস্থার (hydrostatic equilibrium) সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে অনুভূমিক বলই নতি বা চাপ ঢালের পরিমাণ নির্দেশ করে। যাইহোক, চাপনতিমাত্রা বল (F_{p}) কে নিম্নের সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। F_{p} * (1dp)/(pdn) এখানে P = বায়ুর ঘনত্ব, = ((1dp)/(pdn)) অনুভূমিক বায়ুচাপের অবক্রম (horizontal pressure gradient component)

মাধ্যাকর্ষণ শক্তি (Gravitational Force)

পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর যে কোনো বস্তুকণা (বা বায়ুকণা) যে বলে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয় তাকে মাধ্যাকর্ষণ বল বলে। এই বলের মান 980 সেমি/সেকেন্ড? বা 9.৪ মিটার/সেকেন্ড? (9.8m * s ^ - 2) এই শক্তি কেবল উল্লম্বভাবে (verti-cally) নীচের দিকে কাজ করে বলে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর গতিবেগ কিছুটা হ্রাস পায় এবং নিম্নমুখী বায়ুর বেগ কিছুটা বাড়ে। তবে অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব দেখা যায় না।

কোরিওলিস বল (Coriolis Force)

বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেলের (William Ferrel, 1855) সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর আবর্তনজনিত বিক্ষেপ সর্বাধিক অনুভূত হয় বায়ুপ্রবাহের গতিপথে। এই বিক্ষেপের বলকে কোলিওলিস বল বলে। ফরাসি বিজ্ঞানী গ্যাসপার্ড ডি কোরিওলিস (Gaspard de Coriolis) 1844 সালে প্রথম পরীক্ষার সাহায্যে দেখান যে, পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য এই দিকবিক্ষেপ ঘটে। যদিও প্রকৃতপক্ষে কোরিওলিস কোনো বল (force) নয়, এটি হল একটি ফল (effect)।

যাইহোক, কোনো বস্তুর কোরিওলিস বলের (Fc) পরিমাণ হল 2Vo sino-এর সমান। যেখানে v = বস্তুর গতিবেগ, = পৃথিবীর কৌণিক গতিবেগ এবং ঐ স্থানের অক্ষাংশ। কোরিওলিস বলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

।. এই বল সর্বদা বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে 90 deg কোণে কাজ করে। সুতরাং কোরিওলিস বলের প্রভাবে গতিশীল বস্তুর দিক পরিবর্তন ঘটে, তার গতির কোনো পরিবর্তন হয় না।

ii. যেহেতু নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ 0 deg অর্থাৎ Sin 0 ^ a এর মান শূন্য (০) তাই নিরক্ষরেখায় কোরিওলিস বলের (2Vw sino°) মান শূন্য অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের কোনো দিকবিক্ষেপ ঘটে না। অপরপক্ষে, মেরু অঞ্চলে Sin 90°-এর পরিমাণ । অর্থাৎ কোরিওলিস বলের পরিমাণ সর্বাধিক।

iii. কোরিওলিস সূত্র থেকে (2V) sino) বোঝা যায় দিক বিক্ষেপের পরিমাণ নির্দিষ্ট অক্ষাংশে বায়ুপ্রবাহের গতির সঙ্গে সমানুপাতিক (Fe)। অর্থাৎ যে বায়ু যত বেগে প্রবাহিত হয় তার দিকবিক্ষেপ তত বেশি হয়।

iv. সাধারণত বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে যে ঢাল বলের (pressure gradient force) সৃষ্টি হয় তার জন্যই বায়ু উচ্চচাপীয় অঞ্চল থেকে নিম্নচাপীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

v. বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করলেই কোরিওলিস বল তাকে প্রভাবিত করে দিকবিক্ষেপ ঘটায়। সেই কারণে স্থির বায়ুর ওপর এর কোনো প্রভাব নেই।

কেন্দ্রবিমুখ শক্তি (Centrifugal Force)

যখন সমচাপরেখাগুলি সমান্তরাল না হয়ে বৃত্ত তৈরি করে এবং বায়ু চক্রপথে বা বৃত্তাকারে প্রবাহিত হয়, তখন সেখানে বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বহির্মুখী এক বলের সৃষ্টি হয়। একে সেন্ট্রিফিউগল (centrifugal) বা কেন্দ্রবিমুখ শক্তি বা বল বলে। ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতগুলিতে এই শক্তির দ্বারা উদ্ভূত বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। পর্যবেক্ষণে আরও লক্ষ করা গেছে, কেন্দ্রবিমুখ বলের প্রভাবে বায়ু উত্তর গোলার্ধে উচ্চচাপের ক্ষেত্রে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং নিম্নচাপের ক্ষেত্রে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চলে। দক্ষিণ গোলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হয়। 1857 সালে হল্যান্ডের আবহবিদ বাইস ব্যালট (Buys Ballot) বিষয়টি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। তাঁর মতে উত্তর গোলার্ধে বায়ুর গতির দিকে পেছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের চেয়ে বাঁদিকের বায়ুর চাপ কম মনে হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা ঘটে। একে বাইস ব্যালট সূত্র বলে। (in the northern hemisphere, if one stands with his back to the wind then the pressure is lower to the left than to the right, in the southern hemishpere the relation is reversed)। যাইহোক এই বলকে নিম্নলিখিত সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

C = (m * v ^ 2)/r

c = কেন্দ্রবহির্মুখী বল, m = ঘূর্ণায়মান বস্তুর ভর, v = বায়ুর রৈখিক গতিবেগ এবং r = 48 ব্যাসার্ধ। এখন একই বস্তু এবং একই বক্রতলের ক্ষেত্রে mও। ধ্রুবক তখন v ^ 2 অর্থাৎ বায়ুর গতিবেগ যত বেশি হবে কেন্দ্রবিমুখ বলের পরিমাণ তত বাড়বে।

ঘর্ষণজনিত শক্তি বা বল (Frictional Force)

ভূপৃষ্ঠের নিম্নভাগে বায়ুপ্রবাহের সময় ঘূর্ণন বলের উৎপত্তি হয়। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ অসমতল বলে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বায়ুর গতিবেগ কমে যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এক কিমি উর্ধ্বের বায়ুতে এই বলের প্রভাব প্রায় দেখা যায় না।

বাতাসের গতিবেগ এবং দিক ঘর্ষণের উপর নির্ভর করে। সমচাপ বিশিষ্ট সমুদ্র ও স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাসের গতিবেগের পার্থক্য দেখে ঘর্ষণের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ঘর্ষণ যত বেশি হবে তত সমচাপরেখার সহিত বায়ুর কৌণিক দূরত্ব বেশি হয়। বন্ধুর ভূমিভাগের ওপর দিয়ে বায়ু সাধারণত সমচাপরেখা থেকে 20 deg - 25 deg কোণে বেঁকে যায়। সমুদ্রের ওপরে এই মান 10 deg -এরও কম হয়। উল্লেখ্য ঘর্ষণজনিত শক্তি যে অভিমুখে কাজ করে বায়ুপ্রবাহ তার বিপরীত অভিমুখে ঘটে।

সুতরাং বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ ও দিক কোনো একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না, একাধিক কারণের বা বলের যোগফলের ওপর নির্ভর করে। এদেরকে একত্রে নিম্নের সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়-

F ot =F p +F c +F ct +F 

যেখানে F_{n} = সামগ্রিক বায়ুপ্রবাহের উপর কার্যকরী বল

F_{0} = বায়ুচাপীয় ঢাল বল

F_{c} = কোরিওলিস বল

F ct = কেন্দ্রবহির্মুখী বল

F_{t} = ঘর্ষণ বল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01