গোটা বিশ্ব কে বুড় অঙ্গুুল দেখিয়ে উন্নয়ন ও গবেষণায় দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন
বিশ্বের প্রথম কোন হাইড্রোজেন জ্বালানি চালিত ট্রেন চালু করেছে চীন। মূলত নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এই নতুন উদ্ভাবিত ট্রেনটি গত বুধবার চীনের শিচুয়ান প্রদেশের চেংদুর প্রডাকশন লাইন থেকে রোল আউট করা হয়। জিরো কার্বন ট্রেন হিসেবে হাইড্রোজেন জ্বালানি চালিত ট্রেনটির গতি প্রতি ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার এবং এটি একবার জ্বালানি নিয়ে ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। যতই সমালোচনা করা হোক না কেন, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় চীন কিন্তু ঠিকই খুব দ্রুত বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে ছাপিয়ে গেছে।
নতুন নতুন ডিফেন্স এন্ড সিভিলিয়ান প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি আমেরিকার পর সর্বোচ্চ স্থানে উঠে এসেছে রেড জায়ান্ট চীনের নাম। বর্তমানে দেশটি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থ বিনিয়োগ বা ব্যয় করে থাকে চীনের শি জিং পিং সরকার। যদিও অবশ্য প্রতি বছর প্রায় দুই শতাধিকের অধিক অর্থ ব্যয় করে এদিক থেকে আমেরিকা এখনো পর্যন্ত সবার উপরে রয়ে গেছে।
এদিকে উচ্চ প্রযুক্তির সুপার কম্পিউটার ডিজাইন ও তৈরির দিক দিয়ে আমেরিকার সাথে পাল্লা দিয়ে কিছুটা কম শক্তিশালী হলেও রেড জায়ান্ট চীন কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে গেছে। চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি সানওয়ে তাইহুলাইট সুপার কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ১২৫.৪৪ টেরা(এফএলওপিএস) এবং তাইয়ানহে-২এ সিরিজের সুপার কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ১০০.৬৮ টেরা (এফএলওপিএস) ডাটা এনালাইসিস করতে সক্ষম। যা কিনা আমেরিকা ও জাপান ব্যাতিত বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ চীনের ধারে কাছেও আসার যোগ্যতা রাখে না।
গত ৯ই ডিসেম্বর চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি একটি সি-৯১৯ বেসামরিক যাত্রী পরিবহণ বিমান আনুষ্ঠানিকভাবে সার্ভিসে নিয়ে এসেছে এবং চীনের তৈরি প্রথম কোন প্যাসেঞ্জার জেট লাইনার যাত্রী নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। তবে আশা করা হচ্ছে যে, সি-৯১৯ প্যাসেঞ্জার জেট লাইনারের অফিসিয়াল বানিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে আগামী ২০২৩ সালের বসন্তের শুরুর দিকে। যদিও চীনের এই নতুন উদ্ভাবিত যাত্রী পরিবহণ বিমানটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও মান কতটুকু ভালো হবে তা কিন্তু এখনো পর্যন্ত চীনের বাহিরে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
তাছাড়া চীন সাম্প্রতিক সময়ে তাদের নতুন প্রজন্মের উইং লুং-৩ হেভি কমব্যাট ড্রোন বিশ্বের সামনে উন্মোচন করেছে। চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি উইং লুং-২ কমব্যাট ড্রোনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আরও আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে উইং লুং-৩ কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) ডিজাইন ও তৈরি করে।
চীন তার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের কার্গো ড্রোন (ইউএভি) প্রথম ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করেছে। মুলত ৪ ইঞ্জিন বিশিষ্ট টুইন টেইল্ড এই বিশাল আকারের ড্রোন (ইউএভি) এর উইনস্পেন ২০ মিটারের অধিক। নতুন প্রযুক্তির এই ড্রোনের সফল পরীক্ষাটি মূলত চীনের শিচুয়ান প্রদেশে করা হয়। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে চীন ছাড়া বিশ্বের বুকে অপারেশনাল থাকা চার ইঞ্জিনের ড্রোন অন্য কোন দেশে সার্ভিসে আনেনি।
এর পাশাপাশি চীন কিন্তু চলতি ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মানুষের আবেগ ও অনুভূতি বুঝতে সক্ষম এমনই এক উচ্চ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির রোবট উন্মোচন করেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (আইটি) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই নতুন রবোটিক প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত অনেকটাই গবেষণা ও উন্নয়নের স্তরে থাকলেও আগামী ২০৩০-৩২ সালের মধ্যে এটিকে হয়ত সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু করে দিতে পারে চীন।
এদিকে মহাকাশ গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমেরিকা, ইউরোপ ও রাশিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন। বর্তমানে বিশ্বের ৩০টি দেশ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাজ করে গেলেও বর্তমানে চীন ছাড়া একক কোন দেশের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি মহাকাশ স্টেশন এবং গবেষণা কেন্দ্র নেই। আশির দশকে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন তাদের মির স্পেস স্টেশন মহাকাশে পাঠালেও পরবর্তীতে রাশিয়া আর্থিক সংকটের মুখে তা প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ধ্বংস করে দিতে বাধ্য হয়।
আর এখন ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে চীন কিন্তু তাদের একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির তিয়াংগন স্পেস স্টেশন উন্মোচন করে বিশ্বের বুকে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে চীনের গবেষণামুলক মহাকাশ স্টেশনে স্থায়ীভাবে ৩ জন এবং স্বল্প সময়ের জন্য ৬ জন মহাকাশচারী বা ক্রু অবস্থান করতে পারবেন। চলতি ২০২৩ সালেই কাঠামোগতভাবে এটি সম্পূর্ণভাবে গবেষণার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী চীন।
আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মনের নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় চীন বর্তমানে উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে ছাপিয়ে চমকে যাওয়ার মতো সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে সবার আগে চীন কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক দেশের সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্ব মানের করে গড়ে তুলেছে। তার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক গবেষণা ও রিসার্চ সেন্টারগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না চীনের শি জিং পিং সরকার।
%20(1).jpeg)
.png)