ভারতে পৌরায়ন (Urbanisation in India):
ভারতে স্বাধীনতার পর পৌরায়ন দ্রুততর হয়। শিল্পায়ন ও সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি লগ্নির হাত ধরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে পৌর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে এবং পৌরায়নের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে পৌর জনসংখ্যা ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ১১.৪%। স্বাধীনতার পরবর্তী সেন্সাস-এ অর্থাৎ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে পৌর জনসংখ্যা ছিল ১৭.৬%। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে পৌর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৮.৫৩% ও ২০১১ সেন্সাস অনুসারে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৩১.১৬%। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে পৌর জনসংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৪০% অতিক্রম করবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ভারতে পৌরায়নের প্রধান কারণসমূহ :
শিল্পের প্রসার ও শিল্পাঞ্চলের সংখ্যা এবং আয়তন বৃদ্ধি, ও বিভিন্ন পরিকল্পনাকালে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অঙ্গস্বরূপ পৌরায়নের প্রসার, মহানগর এলাকায় জনসংখ্যার চাপ এড়াতে নতুন নতুন উপনগরী সৃষ্টি, সরকারী পরিষেবাক্ষেত্রগুলির যেমন পরিবহন ও যোগাযোগ, রাস্তাঘাটের উন্নতি, জল সরবরাহ ও বিদ্যুতায়ন, গৃহ নির্মাণ প্রকল্প রূপায়ণ ইত্যাদি, ও দেশভাগের পর থেকে কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যার অভিবাসন,
গ্রাম থেকে শহরে প্রব্রজ্য ইত্যাদি, ও পৌরায়নে ও শিল্পায়নে বেসরকারি লগ্নি বৃদ্ধি, ও পৌর পরিসেবাগত সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, ও পৌর জনসংখ্যার স্থান সংকুলান করতে পৌর এলাকা বৃদ্ধি।
পৌর জনসংখ্যা বৃদ্ধি :
স্বাধীনতার পর মিলিয়ন সিটি (Million Cities) তথা দশ লক্ষাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরের সংখ না অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এরূপ শহরের সংখ্যা ৩৫। স্বাধীনতার পর থেকে পৌর জনসংখ্যা প্রায় ৬ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ৬.২ কোটি থেকে বর্তমানের প্রায় ৩৬ কোটি হয়েছে।
মহানগরীগুলির জনসংখ বা ইতিমধ্যে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ছোট ছোট বিভিন্ন শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বড় বড় শহরের আকার নিয়েছে। পৌর জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন স্থান সংকুলানের জন্য মহানগরীগুলির পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ এলাকাগুলি মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এবং কাছে দূরে বহু উপনগরী গড়ে উঠছে।
দেশভাগের ফলে প্রজন
দেশভাগের পর যে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী আগমন ঘটেছে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তা বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে এবং শহরগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
রাজধানী স্থানান্তর, শিল্প ও বাণিজ্য নগরী স্থাপন বা কলেবর বৃদ্ধি :
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ্য তাদের রাজধানীর এলাকা বৃদ্ধি করেছে অথবা কখনো কখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজধানী স্থানান্তর করেছে; যেমন অসমে দিসপুর, গুজরাটে গান্ধীনগর
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে শিল্প ও বাণিজ্য নগরী স্থাপিত হয়েছে, যেমন পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুর, হলদিয়া
উত্তরপ্রদেশে মিরাট, লখনৌ; অন্ধ্রপ্রদেশে বিশাখাপত্তনম, বিজয়নগর, বিজয়ওয়াড়া; ওড়িষায় রাউরকেলা: ঝাড়খন্ডে বোকারো প্রভৃতি শহরাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
পৌর জনসংখ্যার অভিক্ষেপ :
পৌর জনসংখ্যা বৃদ্ধির পূর্বানুমান দিতে গিয়ে দেখা যায় ভারতের জনসংখ্যা গত ৫০ বছরে যে রূপ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই হিসেবে ২০৩০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পৌর জনসংখ্যার পরিমাণ দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ অর্থাৎ বর্তমানের চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি জনসংখ্যা পৌরাঞ্চলে বৃদ্ধি ঘটবে।
২০৩০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে ৭০টি শহরের জনসংখ্যা ১০ লক্ষ অতিক্রম করবে, অর্থাৎ মিলিয়ন সিটির সংখ্যা হবে ৭০টি। মহানগরীর সংখ্যাও এই সঙ্গে বাড়বে। বলা হয় গত ৫০ বছরে যে পরিমাণ পৌর জনসংখ্যা ভারতে বৃদ্ধি পেয়েছে, আগামী ৩০ বছরে সেই প্রায় সমপরিমাণ পৌর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে।
বৃহৎ শহরগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শহরের তুলনায় বেশি। ভারতে পৌরায়নের হার ধীরে হচ্ছে ঠিকই, তবে এই হারটি যথেষ্ট সুস্থিত হওয়ায় পৌর জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদিও ভারতের পৌরায়নের অগ্রগতি ঘটছে কিন্তু এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। ভারতে যেখানে শতকরা ৩১ জন লোক পৌর এলাকায় বাস করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে সেখানে ৭৫%, জাপানে ৭৭% ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে ৭০% অধিক লোক পৌর এলাকায় বসবাস করে।
ভারতের বৃহত্তম মহানগরীগুলির মধ্যে ১ কোটির অধিক জনসংখ্যা (২০১১) বিশিষ্ট মহানগরী দুটি হল—মুম্বাই (জনসংখ্যা ১-২৫ কোটি) ও দিল্লী (১.১ কোটি)। কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদেও পৌরায়ন দ্রুততর হচ্ছে।
ভারতের পৌরায়ন বা নগরায়নের সমস্যা :
কৃষিজমির সংকোচন ও বাস্তুতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন বৃক্ষাদি, জলাভূমি প্রভৃতির বিনাশ বা ধ্বংসসাধন।
জনসংস্কার চাপ বৃদ্ধি ও বাসগৃহের সমস্যা ও পয়ঃপ্রণালীর অভাবে জলজমা ও দূষণ সমস্যা ও পানীয় জলের সংকট এবং ভৌমজল অধিক উত্তোলনের ফলে ভৌমজলস্তর নেমে যাওয়া বায়ুদূষণ ও যানজট ও পরিবহনযান ও সড়কপথের অপ্রতুলতা
স্বাস্থ্য পরিষেবায় চাপ বৃদ্ধি উদ্বাস্ত আগমনে বস্তি-বসতি সৃষ্টি ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
