ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়(Tropical Cyclone)
সংজ্ঞা ও অবস্থান (Definition & Location)
নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 23 1° উত্তর থেকে 23 * দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যের সমুদ্রে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় 2 নামে পরিচিত। এই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রচন্ড বাতাস, প্রবলবৃষ্টি ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। এই ঝড়ের উৎপত্তি সমুদ্রে তবে তা উপকূলের দিকে যাত্রা করে এবং স্বভাগে প্রবেশ করলে এর দাপট কমে যায়। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলভাগ, চিন ও জাপানের উপকূলভাগ, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে এই বিপর্যয় নিয়মিতভাবে দেখা যায়।
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এই ঘূর্ণিঝড় বিভিন্ন নামে পরিচিত। চিন সাহরে টাইফুন, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সাইক্লোন, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন আটলান্টিক সমুদ্রে হ্যারিকেন নামে পরিচিত। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের বেগ থাকে গড়ে ঘণ্টায় 300 কিলোমিটার। সমুদ্রের জল ফুলেফেঁপে ৪ মিটার পর্যন্ত ওঠে। সঙ্গে থাকে প্রবল বর্ষণ। উপকূলে চলে ঝড়ের তাণ্ডব।
কখনো-কখনো খুব অল্প স্বভাগে একধরনের তীব্র ঝড় লক্ষ করা যায়। একে টর্নেডো (tornedo) বলে। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট মাত্র স্থায়ী হয়। তাতেই সব লণ্ডভণ্ড করে বেরিয়ে যায়। গড়ে ঘণ্টায় গতিবেগ থাকে 500 কিলোমিটার। টর্নেডো দূর দেখলে অনেকটা ফানেলের মতো দেখতে হয়। একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সর্বত্র টর্নেডো
হয় কমবেশি। সবচেয়ে বেশি হয় উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি নদীর মোহনা অঞ্চলে।
উৎপত্তি (Origin): ভারতীয় অংশের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় সাধারণত উত্তর ভারত মহাসাগরে। শুরুতে সমুদ্রের উদ্বু জলের থেকে তৈরি হয় কোনো নিম্নচাপ বা ডিপ্রেশন। এই সময় সমুদ্রের জলের উয়তা থাকে অন্তত 27° সেলসিয়াস। সমুদ্রের উদ্বু জল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য শক্তি সহরবাহ করে। ওই সময় আর্দ্র বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প সরবরাহ করে যা ঝড়ের গতিবেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপকে ঘনীভূত হতে সাহায্য করে। বঙ্গোপসাগর হল পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ক্রান্তীয় অঞ্চল যেখানে বছরে গড়ে 6-10টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এগুলির ব্যাপ্তি এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বেশি দেখা যায়। মনে রাখা দরকার ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের বেশির ভাগই উত্তর ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হয়ে বঙ্গোপসাগরে পথে এগিয়ে ঢুকে পড়ে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে। মাঝে মাঝে দু'একটি আরবসাগর পথে মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাত উপকূলে ঢুকে পড়ে।
প্রতিরোধে গৃহীত কৌশল (Prevention Measurement Techniques)
1. উপকূল অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় কংক্রিটের পাকাপোক্ত নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করা হয়েছে।
2. ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি এবং গতিপথের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আধুনিক বিপদ সংকেত জ্ঞাপন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এজন্য উপগ্রহ মারফত তথ্য জাতীয় দূর সংবেদন সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
3. সরকারের 'বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা' বিভাগকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নীত করা হয়েছে। এই বিভাগ উদ্ধার ও ত্রাণ সরবরাহের প্রয়োজনে নৌকা, মেশিন ইঞ্জিন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি মজুত করে রাখে।
4. বেতার-দূরদর্শনের মাধ্যমে আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থাটি আরও জোরদার করা হয়েছে।
5. ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমানোর জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল অঞ্চলে ঝাউ জাতীয় গাছ এবং সুন্দরবন অঞ্চলে নানান জাতের ম্যানগ্রোভ (গরাণ, গর্জন, বাইন ইত্যাদি) লাগানো হয়েছে।