welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

টর্নেডো(Tornado)

টর্নেডো(Tornado)


ধারণা (Concept)

পৃথিবীতে যতরকমের ঘূর্ণবাত রয়েছে তার মধ্যে সব চাইতে ভয়ংকর দুর্যোগ হল টর্নেডো (tornado)। স্প্যানিশ শব্দ টর্নেডোর অর্থ বজ্রবিদ্যুতসহ প্রবল ঘূর্ণি। টর্নেডো অত্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানে হয় এবং ব্যাস সাধারণত 100 থেকে 700 মিটারের মধ্যে থাকে। যার মধ্যে বৃত্তাকারে প্রচণ্ড বেগে অর্থাৎ ঘণ্টায় 100 থেকে 500 কিমি বেগে বায়ু ঘুরতে থাকে। কেন্দ্রে বায়ুর চাপ খুবই কম থাকে। ঘূর্ণবাতের ঠিক বাইরের বায়ুর চাপ থেকে কেন্দ্রের বায়ুর চাপ 100 মিলিবারের মতো কমে যায়। কেন্দ্রের বায়ু প্রবল গতিতে কুণ্ডলাকারে ঘুরতে ঘুরতে ভূমি থেকে 40 কিমি পর্যন্ত ওপরে উঠে যায়। ঘূর্ণায়মান এই বাতাসে ধুলো, বালি ও অন্যান্য নানা জিনিস যুক্ত হওয়ায় স্তম্ভের আকার দেখায়। এই স্তম্ভ অনেকটা হাতির শুঁড়ের মতো ওপরের দিকটা মোটা এবং নীচের দিকটা সরু হয়ে মাটিতে নেমে আসে। একে অনেকে ফানেলের (funnel) সঙ্গে তুলনা করেন। ফানেলের ওপরের অংশটি ঘন কালো কিউমুলো-নিম্বাস (cumulo-nimbus) মেঘ দ্বারা আবৃত থাকে। হাতির শুঁড় বা ফানেলের নীচের অংশটি মাটি স্পর্শ করলেই ধ্বংসলীলা শুরু হয়।

টর্নেডোগুলি সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। এদের গতিপথ সাধারণত বক্র হয়। কোনো একটি স্থানে টর্নেডো ঘুরতে ঘুরতে ঘণ্টায় 40-50 কিমি বেগে অগ্রসর হয়। একটি টর্নেডোর গতিপথে গড় দৈর্ঘা 15-30 কিমি।

টর্নেডোর উৎপত্তি (Origin of Tornado)

টর্নেডোর উৎপত্তি সম্বন্ধে মতভেদ আছে কারণ এত অল্প সময়ের স্থায়িত্বকালে গবেষণা করার সুযোগ খুবই কম। কিন্তু বর্তমানে উপগ্রহ ও রাডার চিত্র থেকে এদের সৃষ্টি সম্বন্ধে নতুন কিছু তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। টর্নেডোর উৎপত্তির জন্য চারটি অনুকূল অবস্থা চিহ্নিত করা হয়েছে। যথা- (i) ভূপৃষ্ঠের ওপর 1.5 থেকে 3 কিমি পুরু একটি উদ্বু ও আর্দ্র বায়ুর অবস্থান, (ii) এর ঠিক ওপরে পুরু শুদ্ধ বায়ুর স্তরের উপস্থিতি, (iii) এই দুই স্তরের উপরে অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন জেট স্ট্রিমের (Jet stream) অবস্থান এবং (iv) বায়ুতে আবর্তন সৃষ্টির মতো অনুকূল অবস্থা। এই এটি অবস্থার সমন্বয়ে টর্নেডোর সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে ঊর্ধ্ববায়ুস্থ জেটপ্রবাহ এবং ভূপৃষ্ঠস্থ প্রবল নিম্নচাপ কেন্দ্রের সমন্বয়ে যে বায়বীয় বিস্ফোরণ হয় তাতে টর্নেডো জন্ম নেয়। বেশিরভাগ টর্নেডোর ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ও দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়।

টর্নেডোর বিস্তার (Distribution of Tornado)

ক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্তর্গত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই ঘূর্ণিঝড়ের আগমন ঘটে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগে সর্বাধিক টর্নেডো লক্ষ করা যায়। প্রধানত রকি পর্বতমালার পূর্বে বিশেষ করে মিসিসিপি অববাহিকার মধ্যভাগে মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রবাহিত উদ্বু ও আর্দ্র বায়ুপ্রবাহ ও উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত শুদ্ধ শীতল বায়ুপ্রবাহের সংযোগে এই টর্নেডোর উৎপত্তি হয়। এছাড়া পশ্চিম আফ্রিকার গিনি দ্বীপপুঞ্জে টর্নেডো হয়, একে আফ্রিকান টর্নেডো বলে। অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমিতেও মাঝে মাঝে টর্নেডো দেখা যায়। তবে সব মিলিয়ে পৃথিবীর 70 শতাংশ টর্নেডোর উৎপত্তিস্থল উত্তর আমেরিকা মহাদেশ।

টর্নেডোর ধ্বংসাত্মক ভূমিকা (Destructive Effects of Tornado)টর্নেডোর প্রভাবে মানুষ ও সম্পদের অপরিমেয় ক্ষতি হয়। টর্নেডোর ফলে শুধু আমেরিকায় প্রতিবছর প্রায় 500 কোটি টাকার (100,000,000, US $) সম্পত্তি নষ্ট হয় এবং গড়ে 150 জন মানুষের মৃত্যু হয়। তাই প্রবল টর্নেডোর আঘাতকে আমেরিকায় টর্নেডো মিসাইল (tornado missile) বলে। এই মিসাইলের প্রভাবে গাছপালা যেমন মূলোৎপাটিত হয় তেমনি বড়ো অট্টালিকার ছাদের অংশবিশেষ দূরে নিক্ষিপ্ত হয়। এই মিসাইলের ক্ষমতা এত বেশি যে, 1970 সালে টেক্সাসের লুবকে প্রায় 11 টনের ওজনের এক ফার্টিলাইজার ট্যাঙ্ক 1.21 কিমি দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। কখনো কখনো একাধিক টর্নেডো কোনো বিশেষ স্থানে আঘাত করতে পারে। একে টর্নেডো আউটব্রেক (tornado outbreak) বলে আমেরিকার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ টর্নেডো আউটব্রেক ঘটেছিল 1974 সালের 3 এবং 4 এপ্রিল। ওহিও (Ohio) ও জেনিয়া (Xenia) শহরে দুদিন ধরে প্রায় 14৪টি টর্নেডো আছড়ে পড়েছিল। অপরিমেয় সম্পদের ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে প্রায় 300 মানুষের প্রাণ নষ্ট হয়েছিল।

আমাদের দেশেও মাঝে মাঝে টর্নেডো হয়। নীচের সারণিতে ভারতের কয়েকটি টর্নেডোর উল্লেখ করা হল।

টর্নেডো নিয়ন্ত্রণ (Controls of Tornado)টর্নেডো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা এতই আকস্মিক যে-কোনো আগাম সতর্কতার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে এর তীব্রতা ও বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01