মাটির উপাদান(Soil Constituent)
মাটি বলতে আমরা ভূত্বকের ওপরের অংশকেই বুঝি, কারণ এই অংশেই বিভিন্ন উপাদানের প্রভাবে মাটি গড়ে ওঠে। মাটি হল ভূপৃষ্ঠের নির্দিষ্ট অংশে অবস্থানরত প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের সমষ্টি যেখানে উদ্ভিদ জন্মায় এবং যাতে জলবায়ু ও জৈব পদার্থ উৎস শিলাখণ্ডের ওপর ক্রিয়া করে সময়ের ব্যবধানে ভূমিরূপে বিভিন্ন গুণসম্পন্ন মাটি গড়ে তুলছে।মাটি একটি মিশ্র পদার্থ। সাধারণ নিম্নলিখিত চার প্রকারের উপাদান দিয়ে মাটি গঠিত, যথা:
(A) কঠিন উপাদান (solid phase)-খনিজ ও জৈব উপাদান।
(B) জলীয় উপাদান (liquid phase)-জল।
(C) গ্যাসীয় উপাদান (gaseous phase) -বায়ু।
(D) জীবন্ত উপাদান (living phase)-মাটির জীবাণু।
(A) কঠিন উপাদান (solid phase): মাটির কঠিন উপাদানগুলির মধ্যে খনিজ পদার্থ এবং জৈব পদার্থ বিশেষ উল্লেখযোগ্য সেগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।
i) খনিজ পদার্থ (Mineral Matter): মাটির আয়তনের শতকরা 45 ভাগ খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি। মাটির খনিজ পদার্থকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় যথা-
(a) প্রাথমিক খনিজ পদার্থ (Primary minerals: এই প্রকার খনিজ পদার্থ আদিশিলা থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় সোজাসুজি মাটিতে চলে আসে। যেমন, ডোলোমাইট (dolomite, এপাটাইট (apatite), ফেল্ডস্পার (feldspar)।
(b) পরিবর্তিত খনিজ পদার্থ (Secondary minerals): এই প্রকার খনিজ পদার্থ আদিশিলা থেকে বিভিন্ন শক্তির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে মাটি সৃষ্টি করে। যেমনইলাইট (illite), হেমাটাইট (hematite), লিমোনাইট (limonite), জিপসাম (gypsium), সিলিকা (silica)।
(ii) জৈব পদার্থ (Organic Matter): মাটিতে শতকরা 5 ভাগ জৈব পদার্থ থাকে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ মাটিতে মিশে জৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়। মাটির প্রকার ও মাটির উদ্ভিদ সম্পদের ওপর জৈব পদার্থের পরিমাণ নির্ভর করে। যেমন, ল্যাটেরাইট মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম, কিন্তু চারনোজেম ও পিট মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি থাকলে মাটির রং গাঢ় বাদামি বা কালো হয়। মাটির জৈব উপাদান দুই শ্রেণির হয় যথা, (a) আংশিক বিশ্লেষিত ও (b) সম্পূর্ণ বিশ্লেষিত বা হিউমাস।
(B) জলীয় উপাদান (Liquid Phase): মাটির আয়তনের শতকরা 25 ভাগ জল থাকে। মাটির অসংখ্য ছিদ্র বা রপ্ত পরিসর (pore-space) থাকে। ছিদ্রগুলিবায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে। মাটির জল প্রয়োগে জল ঐ বায়ুকে বিতাড়িত করে সফল দখল করে। বৃষ্টি, তুষার এবং সেচের জলই হল মাটির জলের প্রধান উৎস। মাটির ছিদ্রগুলি জলে পূর্ণ থাকলে মাটির সম্পৃক্ত বা পরিপুস্ত অবস্থা পরিণত হয়। এই সময় গাছগুলি মাটি থেকে সহজে জল সংগ্রহ করতে পারে। শুষ্ক মাটি বায়ু থেকে জল শোষণ করে এবং কাদাকণার চারদিকে পাতলা আবরণের সৃষ্টি হয়। এই জলকে হাইগ্রোস্কোপিক (hygro-scopic) জল বলে। এই জল গাছপালা সহজে সংগ্রহ করতে পারে না। আরো জল যুক্ত হলে কাদাকণার চারদিকে জলের আস্তরণ বাড়তে থাকে এবং মাটির ছোটো রন্দ্রের এই ধরনের জলকে বলে কৈশিক জল। মাটির জলীয় দ্রবণের বিক্রিয়া ভিন্ন ধরনের হয়, আম্লিক, নিরপেক্ষ ও ক্ষারীয়। বীজের অঙ্কুরোদ্গম, উদ্ভিদমূলের খাদ্যশোষণ ও পরিবহন, মাটিতে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি প্রভৃতির জন্য নানাভাবে কাজ করে থাকে।
(C) গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous Phase): মাটির আয়তনের শতকরা 25 ভাগ বায়ু থাকে। মাটির ছিদ্রগুলি বাতাস দিয়ে পূর্ণ থাকে। মাটির বাতাসে C*O_{2} এর পরিমাণ বেশি থাকে এবং O_{2} ^ - এর পরিমাণ কম থাকে। মাটিতে বায়ু তিনটি অবস্থায় থাকে। (i) মুক্ত বায়ু এই বায়ু জলমুক্ত অবস্থায় মাটির মধ্যে থাকে, (ii) অধিশোধিত বায়ু: এই বায়ু ঘনীভূত অবস্থায় মাটির মধ্যে থাকে। মাটির বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি পরিমাণে থাকে। মাটিতে O_{2} উদ্ভিদমূল ও মাটিতে জীবাণুর শ্বাসকার্যে সহায়তা করে।
(D) মাটির জীবাণু (Soil Organism): মাটিতে অসংখ্য জীবাণু বাস করে। এরা জৈব পদার্থের বিয়োজন ও উদ্ভিদ খাদ্যোপাদানকে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।