উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ(Plant Types)
মাটিতে অবস্থিত জলের পরিমাণ এবং মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানী ই. ওয়ার্মিং (E. Warming) 1909 সালে সমগ্র উদ্ভিদকুলকে ৪টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
1. জলজ উদ্ভিদ (Hydrophytes): জলজ পরিবেশে এই উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন-হাইড্রিলা (Hydrilla), কচুরিপানা (Eichhornia) ইত্যাদি।
2. হেলোফাইট (Helophytes): এরা সাধারণত আর্দ্রভূমিতে (marshy land) জন্মায়। যেমন-মার্সিলিসা (Marsilea), টাইফা (Typha) ইত্যাদি।
3. মেসোফাইট (Mesophytes) জলের পরিমাণ স্বাভাবিক এরূপ মাটিতে যে উদ্ভদ জন্মায় তারাই মেসোফাইট উদ্ভিদ, যেমন-আম (Mangifera indica), জাম Syzygium) ইত্যাদি।
4. হ্যালোফাইট (Halophytes): এই শ্রেণির উদ্ভিদ সাধারণত লবণাক্ত মৃত্তিকায় জন্মায়। যেমন-গরান (Ceriops raxburghiana), সুন্দরী (Souneratia apetala) ইত্যাদি।
5. অক্সিফোলাইট (Oxylophytes): যে সব উদ্ভিদ অম্লযুক্ত মাটিতে জন্মায় তাদের অক্সিফোলাইট বলে। যেমন Puroplesaxifrage (Saxifraga oppositifolia)
6. সাইক্রোফাইট (Psychrophytes) যে সব উদ্ভিদ ঠান্ডা তুষারাবৃত মৃত্তিকায় জন্মায় তারা এই নামে পরিচিত। যেমন Snow algae!
7. লিখোফাইট (Lithophytes): এই শ্রেণির উদ্ভিদ শিলা, ও প্রস্তরখণ্ডের উপর জন্মায়। যেমন Orchids, Pitcherplant
৪. সামমোফাইট (Psammophytes): বালি ও কাঁকর পূর্ণ মাটিতে যে উদ্ভিদ জন্মায় তাকে সামমোফাইট বলে। যেমন Genus stipagrostits.
তাপমাত্রাভিত্তিক স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Natural Vegetation Based on Temperature)
উদ্ভিদের ও উয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতে বিজ্ঞানী রনকাইয়ার (C. Raunkaier, 1934) স্বাভাবিক উদ্ভিদকে এটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা-
1. উচ্চতাপনীয় উদ্ভিদ (Megatherms): যে সব উদ্ভিদের জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য সারা বছর অধিক উদ্বুতার প্রয়োজন হয় তারা এই শ্রেণির। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে যেখানে মাসিক গড় তাপমাত্রা 18°C-এর অধিক থাকে সেখানে এই উদ্ভিদ জন্মায়।
2. মধ্যমতাপীয় উদ্ভিদ (Mesotherms): খুব বেশি উষ্ম বা বেশি শীতল নয় এরূপ জলবায়ু অ/চলের উদ্ভিদ এই শ্রেণির। সাধারণত নাতিশীতোয় অঞ্চ যার শীতলতর মাসে গড় তাপমাত্রা 6°-18°C-এর মধ্যে থাকে এবং উদ্ভুতম মাসের তাপমাত্রা 22°C-এর কম হবে না সেখানে এরা জন্মায়।
3. নিম্নতাপীয় (Microtherms): শীতল নাতিশীতোয় অঞ্চলের উদ্ভিদ যাদের বৃদ্ধির জন্য খুব কম তাপমাত্রা প্রয়োজন তারা নিম্নতাপীয় বা মাইক্রোথার্মস উদ্ভিদ নামে পরিচিত। এই অঞ্চলে সাধারণত শীতল মাসের তাপমাত্রা 6°C-এর অধিক থাকে এবং উদ্ভুতম মাসের তাপমাত্রা 10°-22°C-এর মধ্যে থাকে।
4. অতিনিম্নতাপনীয় (Hekistotherms): অত্যন্ত শীতল অঞ্চলে যেমন তুন্দ্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ এই শ্রেণির। একানে উদ্বৃতম মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 10°C-এর ওপরে উঠে না। এখানে মস, ফার্ন, লাইকেন জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।
মরু উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Xerophytes)
জীবনচক্র অনুসারে জেরোফাইটিসকে ও ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) বাৎসরিক ক্ষণজীবী (Ephemeral anuals), (ii) রসালো বা শাঁসযুক্ত (Succulents) এবং (iii) রসহীন চিরজীবী (Non-Succulent Perinnials)
(i) বাৎসরিক ক্ষণজীবী (Ephemeral anuals) যে সব মরু উদ্ভিদের জীবনচক্র 6-8 সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয় তাদের বাৎসরিক ক্ষনজীবী উদ্ভিদ বলা হয়। উদাহরণ- Argemone mexicana, Solannum Xanthocarpum এরা আকৃতিতে ছোটো হয় তবে শেখড়গুলো দীর্ঘ।
(ii) রসালো বা শাঁসযুক্ত (Succulents): যে সব মরু উদ্ভিদ বর্ষাকালে জল শাঁসের মধ্যে ধরে রেখে শুদ্ধ সময়ে ব্যবহার করে তাদের রসালো বা শাঁসযুক্ত মরু উদ্ভিদ বলে। যেমন- ফণিমনসা (Opuntia)। এরা পত্ররন্দ্রগুলি রাতে খুলে রাখে, কিন্তু দিনে বন্ধ রাখে।
(iii) রসহীন চিরজীবী (Non-Succulent Perinnials) যে সকল উদ্ভিদ অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের আবহাওয়ায় শুদ্ধতার মধ্যে বেঁচে থাকে তাদের রসহীন চিরজীবী উদ্ভিদ বলে। যেম-বাবলা, এদের শেকড়গুলো বেশ দীর্ঘ হয়। প্রস্বেদনের (transpiration) হার কম করার জন্য পাতাগুলি ভাঁজ হয়ে সরু হয়ে যায় কিংবা পাতার উপর মোমের প্রলেপ দেখা যায়।
জলজ উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Hydrophytes)
জলজ পরিবেশের সঙ্গো সম্পর্কের ভিত্তিতে জলজ উদ্ভিদকে ওটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা-
a. ভাসমান জলজ উদ্ভিদ (Floating Hydrophytes): এই শ্রেণির জলজ উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য জল ও বাতাস উভয়ই দরকার। এরা আবার দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত, যথা-
(i) স্বাধীনভাবে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ (Free Floating Hydrophytes): এরা মুক্তভাবে জলের উপরিতলে ভেসে বেড়ায়। মাটির সঙ্গে এদের কোনো যোগাযোগ নেই। এদের কান্ডের পর্ব থেকে উৎপন্ন অস্থানিক মূলগুলিতে বায়ুপূর্ণকলা (aerenchyma) বর্তমান থাকে বলে জলে সহজেই ভেসে বেড়ায়। এদের মূল নরম স্পঞ্জের মতো হয়। উদাহরণ-টোপাপানা (pistia), কচুরিপানা (Eichhormia), অ্যাজোলা (Azolla) ইত্যাদি।
ii) মূলযুক্ত ভাসমান জলজ উদ্ভিদ (Floating but Rooted Hydrophytes): এদের মূলগুলি জলের নীচে কাদায় (আবন্ধ থাকে কিন্তু দীর্ঘ পত্র বৃস্তমুক্ত গোলাকার পাতাগুলি জলের ওপরে ভাসতে থাকে। উদাহরণ-পানিফল (Trapa bispinosa), পদ্ম (Nelumbium speciosum), শালুক (Nymphaea stellata) ইত্যাদি।
b. নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ (Submerged Hydrophytes): যে সমস্ত উদ্ভিদ সম্পূর্ণরূপে জলের তলায় থাকে তারা এই শ্রেণির। এদের কোনো অংশই বায়ুর সংস্পর্শে থাকে না। এরা দুই শ্রেণিতে বিভক্ত যথা-
(i) নিমজ্জিত ভাসমান জলজ উদ্ভিদ (Submerged Floating Hydrophytes): এরা জলের মধ্যে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকলেও এদের মূল কখনো মাটিতে আবন্ধ থাকে না। এদের মূল খুবই অপরিণত, কান্ড দীর্ঘ ও পাতাগুলি ক্ষুদ্রাকার হয়।উদাহরণ ঝাঁঝি (Ultricularia), নাজাস (Najas), সেরাটোফাইলাম (Ceratophyllum) ইত্যাদি।
(ii)মূলযুক্ত নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ (rooted submerged Hydrophytes): এই শ্রেণির উদ্ভিদগুলো জলে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত থাকলে মূল মাটিতে বা কাদায় আবদ্ধ থাকে। উদাহরণ-হাইড্রিলা (Hydrilla), পাতাশ্যাওলা (Vallisneria Spiralis), ওটেলিয়া (Otelia) ইত্যাদি।
c. উভযন্ত্র জলজ উদ্ভিদ (Amphibious Hydrophytes): এদের কিছু অংশ জলের নীচে এবং কিছু অংশ জলের উপরে থাকে। এরা সাধারণত অগভীর জলাশয়ে বৃদ্ধি পায়। শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য অতিরিক্ত জল প্রয়োজন হয়। এদের আত্তীকরণ অঙ্গাগুলি (assimilatory) আংশিক বা সম্পূর্ণ বায়বীয়। তবে মূলজ অংশ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে বা কাদায় আবন্ধ থাকে। এদের বায়বীয় অংশে মধ্যবর্তী উদ্ভিদের (Mesophytes) বৈশিষ্ট্য এবং জলজ অংশে জলজ উদ্ভিদের (Hydrophytes) বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। ফলে একই গাছে বিভিন্ন আকারের পাতা দেখা যায়। জলের নীচের পাতাগুলো সরু ফিতার মতো এবং উপরের পাতাগুলি বড়ো ও সুদৃঢ় হয়। একে হেটারোফাইলি (Heterophylly) বলে। উদাহরণ-স্যাজিট্রারিয়া (Sagittaria), হোগলা (Typha), হিংচে (Ehydra fluctuans) ইত্যাদি।