তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্র(Grasland Ecosystem)
বার্ষিক গড় উন্নতা 10 deg * C এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৪০ সেমির কম হলে ওই পরিবেশ বৃক্ষ উৎপাদনে অনুকূল হয় না তবে ছোটো গাছ ও তৃণভূমি গড়ে ওঠার আরো অন্যান্য উপাদান যেমন মাটি, সূর্যলোক, বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস C*O_{2} N_{2} O_{2} ইত্যাদি।
অনুকূল ভাবে সরবারাহ থাকলে তৃণভূমি গড়ে ওঠে। পৃথিবীর প্রায় 10 ভাগ এলাকা তৃণভূমির অন্তর্গত। পৃথিবীর দশটি তৃণভূমির মধ্যে প্রথম হল তিব্বতের নাঙ্কু তৃণভূমি, দ্বিতীয় উত্তর আমেরিকার গ্রেট প্লেন, তৃতীয় কানাডার প্রেইরি, চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ার সাভানা, পঞ্চম কাজাখস্তানের স্তেপ, যষ্ঠ আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের পম্পাস, সপ্তম লানোস তৃণভূমি, অষ্টম মাঞ্চুরিয়ান প্লেন, নবম গ্রেট হাঙ্গেরিয়ান প্লেন, দশম জুলুম বুইর তৃণভূমি। এশিয়ার স্তেপ তৃণভূমি গুরুত্বপূর্ণ। ক্রান্তীয় তৃণভূমিগুলি হল-লানোস ক্যাম্বোস ও সাভানা তৃণভূমি, মধ্যঅক্ষাংশীয় প্রেইরি, স্তেপ, পম্পাস, ভেল্ড ও ডাউত্থ হল গুরুত্বপূর্ণ তৃণভূমি যা প্রাকৃতিক জৈব ও অজৈব উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে।
নিম্নে উপাদানগুলি আলোচনা করা হল-
1. অজৈব উপাদান (Aoiotic Components): মাটি খনিজ উপাদান, হিউমাস, সূর্যালোক, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসীয় উপাদান, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস (ফসফেট PO₄³) ইত্যাদি খনিজ উপাদান তৃণ জন্ম ও বংশবিস্তারের দ্বারা তৃণবৈচিত্র্য সৃষ্টির সাথে সাথে বৈচিত্র্যময় প্রাণী প্রজাতির জীবন নিয়ন্ত্রণ করে যা একক বাস্তুরীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। সূর্যালোক ফোটন কণার দ্বারা তৃণের সালোকসংশ্লেষে অংশ নেয় ও উৎপাদন করে শর্করা জাতীয় খাদ্য সংশ্লেষ প্রধান শক্তি সঞ্চার করে।
মাটির প্রথন, গঠন, প্রকৃতি মাটিতে জলের উপস্থিতি, জোগান নিয়ন্ত্রণ করে যা উদ্ভিদ অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মাটিতে জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
কার্বন-ডাই অক্সাইড প্রত্যক্ষভাবে ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে মূলরোম শোষিত জলকে গ্লুকোজে পরিণত করে ও সমপরিমাণ অক্সিজেন পরিত্যাগ দ্বারা বায়ুমণ্ডলীয় O₂ ও CO₂ গ্যাসের ভারসাম্য সৃষ্টি করে পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে।
2. জৈব উপাদান (Biotic Components): উৎপাদক, খাদক এবং বিয়োজক হল তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্রের প্রধান জৈবিক উপাদান। পৃথিবীর অক্ষাংশভেদে জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতা ভিন্ন প্রকৃতির তৃণভূমি সৃষ্টির জন্য দায়ী। যেমন ক্রান্তীয় তৃণভূমি, মধ্যঅক্ষাংশীয় তৃণভূমি ইত্যাদি। তৃণভূমির প্রকৃতি আলাদা হলেও সামগ্রিক ভাবে অভিন্ন এক বাস্তুরীতি লক্ষ করা যায়। যেমন-
(a) উৎপাদক (Producer): তৃণভূমির উৎপাদক তৃণ মূলত একবীজপত্রী দ্বিবীজপত্রী, কখনো কখনো বহুবীজপত্রীও হয় যা প্রধানত বীরুৎ ও গুল্ম প্রজাতির হয়। Eleesine indica, Irongrass, Elephant grass, Imperate, Poa, Dactylis, Festuea ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য তৃণপ্রজাতি যারা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম ও তৃণভূমির বাস্তুতন্ত্রে স্বভোজী হিসাবে বিরাজমান। তৃণের উচ্চতা পাতার পরিমাণ, পাতার আকার ইত্যাদি সালোকসংশ্লেষের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তৃণগুলি বর্ষজীবি, দ্বিবর্ষজীবি বা বহুবর্ষজীবিও হয়ে থাকে। তৃণের পরিমাণ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে খাদক প্রজাতি সৃষ্টি হয়।
b) খাদক (Consumers): তৃণভূমির খাদক সম্প্রদায়কে কতকগুলি সারিতে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যেমন-
(i) প্রাথমিক খাদক (Primary Consumers): ছোটো ছোটো কীটপতঙ্গ যেমন গ্রাসহপার তৃণের কচি পাতা, ডগা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে, অর্থাৎ উৎপাদক বা সবুজ উদ্ভিদকে খায়। আবার ঘোড়া, গোরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হরিণ প্রভৃতি প্রাণীরা ও ঘাস বা তৃণ ভক্ষণ করে জীবন যাপন করে।
(ii) গৌণ খাদক (Secondary Consumers): সাপ, ব্যাঙ, গিরগিটি, টিকটিকি ইত্যাদি আমেরুদণ্ডী প্রাণী ও পতঙ্গরা প্রাথমিক খাদক grasshopper ও পোকামাকড় খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। আবার বাঘ, সিংহ, শৃগাল, বুনো কুকুর, নেকড়ে প্রভৃতি প্রাণীরা ছাগল, মহিষ, গোরু হরিণদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
(ii) প্রগৌণ খাদক (Tertiary Consumers): বাজপাখি, চিল, শকুন, ময়ূর প্রভৃতি মাংশাশী পাখিরা আবার কুকুর, নেকড়ে, বাঘ, সিংহ, গোরু, মহিষের মাংস খাদ্য রূপে গ্রহণ করে।
(c) বিয়োজক (Decomposers): আজোটোব্যাকটর, ক্লাসট্রিডিয়াম, ভলভক্স, নাইট্রোসোমোনাস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক মৃত জীবদেহে বসবাস করে দেহের জটিল যৌগকে ভেঙে সরল যৌগ ও মৌলে পরিণত করে পরিবেশে ফেরত দেয়। মাটির স্তরে তা হিউমাস ও অন্যান্য অজৈব যৌগ রূপে সঞ্চিত ও সমৃদ্ধ হয় যা উৎপাদক অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় শোষণ করে ও সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে শর্করায় প্রোটিন ও ফ্যাটরূপে সঞ্চিত করে। এইভাবে তৃণভূমিতে জৈব ও অজৈব উপাদান পরস্পর আন্তঃক্রিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একক বসবাসনীতি বা আদর্শ বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে।