welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem)

বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem)


সংজ্ঞা (Difinition)

কোনো একটি নির্দিষ্ট বসতি অঞ্চলে বসবাসকারী জীবগোষ্ঠীর মধ্যে একে অপরের সঙ্গে এবং ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবেশের জড় উপাদানগুলির সঙ্গে পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ার যে বসবাসরীতি তাকে বাস্তুতন্ত্র (ecosystem বলে)। বিজ্ঞানী এ. জি. ট্যান্সলি (A. G. Tansley, 1935) বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে ধারণার প্রবর্তন করেন এবং Ecosystem কথাটি প্রথম প্রচলন করেন। যাইহোক বাস্তুতন্ত্রের প্রচলিত সংজ্ঞাগুলি হল-

এ. জি. ট্যান্সলি (A. G. Tansley, 1935): বাস্তুতন্ত্র হল একটি ক্রিয়ামূলক যে ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অন্তর্গত সজীব এবং অজৈব উপাদানগুলি একত্রে পরস্পরের ওপর ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া করে (a particular category of physical system consisting of organism and inorganic components in a relatively stable equilibrium, open and of various size and kinds)।

আর. লিন্ডেম্যান (Raymond Lindeman, 1942): বাস্তুতন্ত্র হচ্ছে এক পরস্পর অধীন এবং গতিশীল জৈবিক, ভৌতিক এবং রাসায়নিক অবস্থা (ecosystem is a interdependent and dynamic condition of biological, physical and chemical matter)

ই. পি. ওডাম (E. P. Odum, 1963): কোনো একটি অঞ্চলের সমগ্র জীবকুল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যে একক গড়ে তোলে এবং যার মধ্যে শক্তিপ্রবাহের মাধ্যমে সুস্পষ্ট খাদ্যরীতি গড়ে ওঠে এবং জীব ও অজৈব উপাদানের মধ্যে পদার্থের বিনিময় ঘটে তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে (any unit that includes all of the organisms in a given area interacting with the physical environment so that a flow of energy leads to clearly defined trophic structure, biotic diversity and material cycles within the ecosystem is an ecological system of ecosystem) |

ক্লার্ক (Clark, 1945): পরিবেশে জৈব ও ভৌত উপাদানগুলির মধ্যে একত্রে যে জটিল বসবাসনীতি গড়ে ওঠে তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে।

উপাদান (Components)

বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা- (i) অজীব বা (Abiotic) এবং (ii) সজীব বা(Biotic) উপাদান।

(i) অজীৰ উপাদান (Abiotic Components): বায়ু, জল, সূর্যালোক, খনিজ লবণ, হিউমাস, জীবের পরিত্যক্ত বর্জ্য ইত্যাদি দিয়ে abiotic উপাদান গঠিত হয়। এদের মধ্যে বায়ু, উদ্বুতা ও সূর্যালোককে ভৌত উপাদান বলে। জল, মাটি, খনিজ লবণকে অজৈব উপাদান এবং হিউমাস ও জীবের পরিত্যক্ত অংশকে জৈব উপাদান বলা হয়।

(a)ভৌত উপাদান (Physical Components):নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাতাস, জল, আর্দ্রতা, উদ্বুতা, চাপ, সূর্যালোক প্রভৃতি হল সেখানকার ভৌত উপাদান। সবুজ উদ্ভিদ এই সমস্ত উপাদান গ্রহণ করে খাদ্য প্রস্তুত করে। এদের মধ্যে কোনো কোনো উপাদান আবার জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে পরিবেশে আবর্তিত হয়।

(b) অজৈব উপাদান (Inorganic Components): বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদান বলতে জল, খনিজ লবণ ও মাটিকে বোঝায়। জল ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। প্রোটোপ্লাজমের 70-80 ভাগই জল, তাছাড়া সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য জলকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত করে। মাটির ওপর স্থলজ জীব বসতি স্থাপন করে এবং জীবদেহ গঠনের জন্য বিভিন্ন খনিজ লবণ মাটি থেকে সংগ্রহ করে, অবশ্য পরিবেশে জল ও বিভিন্ন খনিজ লবণগুলি জৈব-ভুরাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে আবর্তিত হয়।

(c) জৈব উপাদান (Organic Components): মৃত জীবের গলিত দেহাবশেষ (humus) এবং জীবের পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থকে বাস্তুতন্ত্রের জৈব উপাদান বলে। এইসব পদার্থগুলি বিয়োজকের মাধ্যমে অজৈব উপাদানে রূপান্তরিত হয়।

(ii) সজীব উপাদান (Biotic Components): নানা প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীব হল বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান। পুষ্টিস্তর অনুসারে (Biotic) উপাদানগুলি দুভাগে বিভক্ত যথা-

(a) স্বভোজী বা অটোট্রফিক উপাদান (Autotrophic Components):বাস্তুতন্ত্রে যারা নিজের দেহে খাদ্য প্রস্তুত করে তাকে স্বভোজী বা উৎপাদক (producer) বলে। সব সবুজ উদ্ভিদ, সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া এবং রাসায়নিক সংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া হল বাস্তুতন্ত্রের স্বভোজী উপাদান। এরা পরিবেশের অজীব উপাদান সংগ্রহ করে খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম।

(b) পরভোজী বা হেটারোট্রফিক উপাদান (Heterotrophic Compo-nents): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সব জীব খাদ্য উৎপাদনে অক্ষম এবং খাদ্যের জন্য উৎপাদকের ওপর নির্ভরশীল তাদের পরভোজী উপাদান বা খাদক বা কনজিউমার (consumer) বলে। পরভোজী মূলত দুই প্রকারের যথা-মাইক্রোকনজিউমার (microconsumer) বা ক্ষুদ্র খাদক ও ম্যাক্রোকনজিউমার (mac-roconsumer) বা বৃহৎ খাদক। বৃহৎ খাদকগুলিকে আবার নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়।

(i) প্রাথমিক খাদক (Primary Consumer): যে সব খাদক খাদ্যের জন্য সরাসরি স্বভোজী জীব অর্থাৎ উৎপাদককে খাদ্য রূপে গ্রহণ করে তাদের প্রাথমিক খাদক বলে। যেমন-স্থলজ ও জলজ কীটপতঙ্গ, তৃণভোজী প্রাণী, শামুক, গিনিপিগ ইত্যাদি।

(ii) গৌণ খাদক (Secondary Consumer): যে শ্রেণির খাদক প্রাথমিক খাদককে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের গৌণ খাদক বলে। উদাহরণ-ছোটো মাছ, ব্যাঙ, টিকটিকি, কুকুর, বেড়াল ইত্যাদি।

(iii) প্রগৌণ খাদক (Tertiary Consumer): যে সমস্ত মাংসাশী খাদক গৌণ খাদকদের খেয়ে পুষ্টিলাভ করে তাদের। প্রগৌণ খাদক বলে। যেমন-বাঘ, সিংহ, কুমির, হাঙর, বাজপাখি ইত্যাদি।

বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Ecosystem)

নানা বিজ্ঞানী বাস্তুতন্ত্রের সংজ্ঞা দিলেও বিখ্যাত জীব বিজ্ঞানী ইউজিন পি. ওডাম (E. P. Odum, 1953)-এর সংজ্ঞাটি সর্বজনস্বীকৃত, তাঁর মতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাসরত সমস্ত আন্তঃক্রিয়াশীল জীবগোষ্ঠী ও জড় পরিবেশ নিয়ে গঠিত একক যার অন্তর্গত জীব ও জড়ের উপাদানগুলির মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট শক্তিপ্রবাহ ও জৈব ভূ-রাসায়নিক পদার্থের আবর্তন ঘটে তাকে বলে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র (ecosystem)। বাস্তুতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

1. যে কোনো স্থানে যে কোনো সময়ের বাস্তুরীতি হল সমস্ত জীবিত ও মৃত প্রাণী ও ভৌত পরিবেশের যোগফল।

2. বাস্তুতন্ত্র সর্বদা ভূপৃষ্ঠতে একটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত, অর্থাৎ এর স্থানিক অবস্থান জরুরি। এই অঞ্চল ছোটো বড়ো সবরকমই হতে পারে, যেমন পুকুরের বাস্তুতন্ত্র, অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র বা পৃথিবীর সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র।

3. বাস্তুতন্ত্রের কার্যাবলিতে তিনটি উপাদান জরুরি যথা শক্তির উপাদান, সজীব উপাদান ও অজীব উপাদান। বাস্তুতন্ত্রে এদের আবর্তন একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ঘটে এবং বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখে।

4. বাস্তুতন্ত্র সর্বদা গতিশীল, বাস্তুতন্ত্র জড় ও সজীব উপাদানগুলির মধ্যে অনবরত পরিবর্তন ঘটে এবং একটি প্রাণপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ফলে বাস্তুতন্ত্র সর্বদা গতিশীল থাকে।

5. বাস্তুতন্ত্রে জড় ও সজীব উপাদানের অবিরাম পরিবর্তন ঘটলেও সময়ের সাপেক্ষে সমগ্র বাস্তুতন্ত্র অপরিবর্তিত থাকে।

একে বাস্তুতন্ত্রের গতিশীল সাম্যাবস্থা (Dynamic Equilibrium) বলে। যে কোনো সুস্থির বাস্তুতন্ত্র গতিশীল সাম্যাবস্থায় বিরাজ করে।

6. একটি বাস্তুতন্ত্রে প্রত্যেকটি অজীব ও সজীব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি উপাদানের বিলুপ্তি ঘটলে বাস্তুতন্ত্রের সামা বিনষ্ট হয়।

7. সুস্থির বাস্তুতন্ত্রে বছরের পর বছর মোট প্রজাতির সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে, বাস্তুতন্ত্রে প্রতি বছরই একই প্রজাতি দেখা যায়, বাস্তুতন্ত্রে বছরের পর বছর প্রতিটি প্রজাতির জীবের সংখ্যা অপরিবর্তিত।

৪. বাস্তুতন্ত্রের নিজস্ব উৎপাদনশীলতা আছে, যা প্রাপ্যশক্তির পরিমাণের ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদনশীলতা হল একটি নির্দিষ্ট স্থানের সময়ের জৈব পদার্থের বৃদ্ধির মাত্রা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01