welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

সামুদ্রিক বাস্তুতান্ত্রিক উপাদান(Components of the Marine Ecosystem)

সামুদ্রিক বাস্তুতান্ত্রিক উপাদান(Components of the Marine Ecosystem)


সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলিকে প্রধানত দুটিভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

(A) জৈবিক উপাদান (Biotic Components)

(B) অজৈবিক উপাদান (Abiotic Components)

নিম্নে উপাদানগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল-

জৈবিক উপাদান (Biotic Components)

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক খাদক এক বিয়োজকরাই জৈবিক উপাদান।

1. উৎপাদক (Prducer): সমুদ্রে বসবাসকারী আণুবিক্ষণিক সবুজ উদ্ভিদ (Phytoplankton) যারা স্বচ্ছ জলে 100-200 গভীরতায় জন্মায় ও সালোকসংশ্লেষ করতে সক্ষম আবার সমুদ্রের ঘোলাটে জলে মাত্র 20-30 মিটার গভীরতায় এরা থাকতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার ডায়াটম, ডাইনোফ্লাজেটোটস, কোকোলিথোফোরস, ফ্রিপটোমোনাড, ব্লু এবং সবুজ এ্যালগি ইত্যাদি উৎপাদক হিসাবে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে পিলেজিক এলাকা যে অংশ পর্যন্ত তলদেশের জলে ওঠা নামা (turbulence) ঘটছে সেখানে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনগুলোর প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদান যেমন-নাইট্রোজেন, ফসফরাস, আয়রন নীচে থেকে ওপরে উঠে আসে এবং উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে পরোক্ষভাবে পুষ্টি ঘটিয়ে সাহায্য করে।

2. খাদক (Consumer): সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে খাদক তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন-

(i) প্রাথমিক খাদক (Primary Consumer): আনুবিক্ষণিক প্রাণী (Micro-zooplanctons) প্রজাতি যেমন-Crustaceans, Molluses, Radiolarion, Foraminifora, Globigerina, ইত্যাদি অমেরুদন্ডী, খোলস আবৃত প্রাণী যারা ছোটো ছোটো শৈবাল, অ্যালগি জাতীয় তৃণ ভক্ষণ করে জীবন ধারণ করে।

(ii) মাধ্যমিক খাদক (Secondary Consumer): Macro Mega Zooplancton যেমন- Ctenophore, Pteropods,যেমন-শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি, Amphipod, Copepod, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি Micro-zooplancton গুলিকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে ও বাস্তুতন্ত্রে সাড়া দেয়। এছাড়া হেরিং, ম্যাকারেল জাতীয় বড়ো মাছ ও secondary consumer

(iii) তৃতীয় বা সর্বোচ্চ সারির খাদক (Tertiary Consumer): হালার, হ্যালিবাট, কড়, প্রভৃতি বড়ো মাছগুলি হ্যারিং ম্যাকারেল, সার্ডিন, পিলচার্ড জাতীয় বড়োমাছ ও শামুক, ঝিনুক, অক্টোপাস, স্কুইড, ইত্যাদি। দ্বিতীয় শ্রেণির খাদকগুলিকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।

3. বিয়োজক (Decomposers): সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত সবুজ উদ্ভিদ এবং ফাইটোপ্লাঙ্কটন, বিভিন্ন অণুজীব, ছোটো ও বড়োমাছ মৃত্যুর পরে সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি পরভোজী তাদের বিয়োজিত করে ফলে জটিল যৌগ সরল যৌগ রূপে প্রকৃতিতে ফিরে আসে যা পুনরায় অভিস্রবণ পদ্ধতিতে উদ্ভিদ গ্রহণ করে।

অজৈব উপাদান (Abiotic Conponents)সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদান যেমন উদ্ভুতা, লবণতা, সূর্যালোক, সমুদ্রস্রোত এবং জৈবিক সহাবস্থান প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জৈবিক উপাদানগুলিকে বাঁচিয়ে রাখে ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ধারা বজায় রাখে। নিম্নে উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

সামুদ্রিক উদ্বুতা (Oceanic Temperature): সামুদ্রিক পরিবেশ স্থলজ পরিবেশের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল। জলের আপেক্ষিক তাপ অন্যান্য কঠিন পদার্থের চেয়ে বেশি। সাধারণত উন্মুক্ত সমুদ্রে উদ্বুতা - 2 deg * C থেকে 32 deg * C হয়। সামুদ্রিক উদ্বুতার দৈনিক পরিবর্তন 0.2 deg * C থেকে 0.3 deg * C মতো হয়। আবার উপকূলবর্তী আঞ্চলে তা - 0.2 deg * C থেকে বাৎসরিক প্রসরও খুবই কম। তবে এই পার্থক্য নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে কমতে থাকে। সামুদ্রিক উয়তা নিরক্ষরেখায় প্রায় 2°C-8°C উয়তা 35°-45° অক্ষাংশের মধ্যে থাকে। আবার গভীর সমুদ্রে প্রায় একই রকম থাকে। সাধারণত সম্ভন্ন 1.5 কিমি গভীরতায় 3°C উয়তা থাকে। সামুদ্রিক উন্নতা সামদ্রিক ফ্লোরা ফনাসহ সমস্ত উদ্ভিদ প্রাণী ও বিয়োজকের শারীরিক বিপাকক্রিয়ার হার, রাসায়নিক বিক্রয়ার হার, প্রজনন, খাদ্যাভ্যাস এবং সামুদ্রিক বায়োটার আকার, আয়তনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সামুদ্রিক উন্নতা 10°C ও তার বেশি হলে সার্ক এবং টুনা ভালো সাঁতার কাটে। স্বাভাবিক ভাবে উন্নতার প্রসর 14% বৃদ্ধি পেলে সামুদ্রিক প্রাণীদের মেটাবলিক রেট 10% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অনেক মোলাস্ক জাতীয় প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস একটি নির্দিষ্ট উদ্বুতার নীচে কম হয়। যেমন-শীতকালে শ্বসন হার কম হয়, দেহ বৃদ্ধির হারও কম হয়।

সামুদ্রিক লবণতা (Oceanic Salinity): সামুদ্রিক প্রাণীরা সামুদ্রিক লবণতার দ্বারা খুব বেশি প্রতিক্রিয়াশীল।ইউরিহ্যালাইন অর্গানিজমগুলি খুব বেশি লবণতা সহ্য করতে পারে কিন্তু স্টেনোহ্যালাইন প্রাণীরা খুব কম লবণতায় বাঁচতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ইউরিহ্যালাইন প্রাণীরা বেশি লবণতাযুক্ত স্থান খুঁজতে স্থান পরিবর্তন করে ও পরিযায়ী সামুদ্রিক প্রাণী হিসাবে বিচরণ করে। সামুদ্রিক বেনথসরা সমুদ্রের তলদেশে থাকে কখনো ওরা লবণতার স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তনশীলতা মেনে নিতে পারে না। ওয়েস্টার, ক্ল্যাম, বাথাক্যালম কিন্তু লবণতার অধিক পার্থক্য সহ্য করতে পারে। কিন্তু মিষ্টি জল যদি বন্যার কারণে সামুদ্রিক জলে মিলিত হয় ও সামুদ্রিক লবণতা কমিয়ে দেয় তবে তারা তা সহ্য করতে পারে না। স্যালমন মাছ নদীর মিষ্টি জলে বংশবিস্তার করে কিন্তু ছোটো মাছগুলিও বড়ো হলে সমুদ্রের জলই পছন্দ করে কিন্তু কিছু বছর পরে তারা আবার নদীতেই ফিরে যায়। আটলান্টিক ঈল্ মাছ ও শৈবাল সাগরে স্পনিং-এর 2 থেকে ও বছর পর আবার নদীর মিষ্টি জলে আসে সেখান থেকে 10 বছরের মধ্যে আকার সমুদ্রে গমন করে। প্রবাল ও মোলাস্কা জাতীয় প্রাণীদের দেহ আবরণ লবণ দ্বারাই শক্ত হয়। সমুদ্রের গড় লবণতা 35 গ্রাম প্রতি লিটারে।

সূর্যালোক (Sunlight): সূর্যালোকই সামুদ্রিক উদ্ভিদের বিন্যাসে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। সমুদ্রের plotic অঞ্চল অর্থাৎ 200 মিটার গভীর পর্যন্ত সামুদ্রিক অঞ্চল সূর্যালোক পায় এবং সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে সাহায্য করে উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে তাই এই অঞ্চল Producing zone নামে পরিচিত। তবে এই Producing zoneটি কতগুলি উপালন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন-সূর্যরশ্মির পতন কোণ, wavelength শোষণের বিভিন্ন হার এবং ঘূর্ণায়মান মৌলিক কণা য শোষণের হার ত্বরান্বিত বা মন্দীভূত করে। সালোকসংশ্লেষের হার নির্ভর করে আলোর গাঢ়ত্বের উপর। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 40 মিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্র অংশ সবচেয়ে বেশি জৈবিক উৎপাদনে সক্ষম এবং এই অঞ্চলের উদ্ভিদরা তাদের ব্যবহারের চেয়ে বেশি শক্তি দেহে আবন্ধ করে। সমুদ্রের উৎপাদনশীল স্তরের উপরের অংশ খুব পাতলা। পৃথিবীর সমগ্র সামুদ্রিক জলের মাত্র 2% তবুও এই সূক্ষ্ম illumineted band টির উপর সমগ্র সামুদ্রিক জীবন নির্ভরশীল।

মৌলিক উপাদান (Nutrients): সামুদ্রিক জীবদের জীবন মৌল কণাগুলির দ্বারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। নাইট্রোজেন,ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সিলিকন, সালফার, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কপার কোবাল্ট এবং আয়োডিন-এই কণাগুলি কোশের মধ্যে ঢুকে যৌগ গঠন করে যা স্বভোজীরা জৈব পদার্থ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করে। কিছু মৌল জীবের গঠনগত অংশ গঠনের জন্য ব্যবহৃত হওয়ার পরে কিছু ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক উপাদান তৈরিতে যা শক্তিতে বু পান্তরিত হয়। প্রধান অজৈব কণা নাইট্রোজেন নাইট্রেট (NO₂) ফসফরাস ফসফেট (PO₂) রূপে প্রাথমিক উৎপাদন যা অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌল। এই সমস্ত মৌল ভূপৃষ্ঠ প্রবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্রে মেশে ও নানা যৌগ গঠন করে। বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ ও ফাইটোপ্লাঙ্কটন মৌলগুলিকে শোষণ করে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাট উৎপন্ন করে, খাদক খাদ্য হিসাবে ভক্ষণের মাধ্যমে গ্রহণ করে। নাইট্রোজেন ও ফসফরাস স্বভোজীদের অধিক উৎপাদন ও প্রজনদের সময় কমে আসে।

সমুদ্র স্রোত (Ocean Currents): সমুদ্র স্রোত বায়ুপ্রবাহের দ্বারা এক অংশ থেকে অন্য অংশে জলের প্রবাহ দ্বারা সৃষ্টি হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চল উয় স্রোত ও মেরু অঞ্চল শীতল আেতের জন্ম দেয়। নিরক্ষীয় উদ্বু স্রোত মেরুর দিকে ও মেরুদেশীয় শীতল স্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় উভয়ে মিলিত হলে নাতিশীতোয় স্রোতের সৃষ্টি করে যা প্লাঙ্কটনের জন্ম ও প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়া জৈবিক সহাবস্থান, সান্দ্রতা, অনুভূমিক ও উল্লম্ব জল চলাচলও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম উপাদান।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01