welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বাস্তুতন্ত্রের জৈব উপাদান(Biotic Component of Ecosystem)

বাস্তুতন্ত্রের জৈব উপাদান(Biotic Component of Ecosystem)


উৎপাদক (Producer)

পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলি হল সজীব (biotic) এবং জড় (abiotic)। এই সজীব উপাদানের মধ্যে উৎপাদক (producer) একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে এটি স্বভোজী অংশ নামে পরিচিত। জীবমণ্ডলের সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের CO₂ ও সূর্যের সৌর শক্তির সাহায্যে সরল অজৈব হতে শর্করা জাতীয় খাদ্য এবং সেখান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রোটিন ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ উৎপন্ন করে বলে সবুজ উদ্ভিদকে উৎপাদক বলা হয়। সবুজ উদ্ভিদ, সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া, কোমোসিন্থেটিক জীবাণু প্রভৃতি বাস্তুতন্ত্রের স্বভোজী উপাদান।

যে সমস্ত জীব নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে তাদের স্বভোজী (autotroph) বলে। এরা নিজেদের দেহের বৃদ্ধির জন্য নিজেরা খাদ্য উৎপাদন করে এবং যে খাদ্য উৎপাদন করে তার বেশিরভাগ খাদ্য এদের দেহে উদ্বৃত্ত থাকে। সেই উদ্বৃত্ত খাদ্য পরভোজীরা গ্রহণ করে। স্বভোজী উপাদানরা হল তৃণভূমির তৃণ, সমুদ্রের শৈবাল, অরণ্যের বৃক্ষরাজি, পুকুরের এবং হ্রদের সবুজ উদ্ভিদ প্রভৃতি। বিভিন্ন জলাশয়ের যে স্তর পর্যন্ত সূর্যালোক প্রবেশ করে সেই অংশে অবস্থানরত আণুবীক্ষণিক ও ভাসমান শেওলা যা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন (phytoplankton) নামে পরিচিত। এরা বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক বাস্তুরীতির উৎপাদক অংশ হিসাবে কাজ করে। বাস্তুতন্ত্রে এদের সংখ্যা সর্বাধিক।

উৎপাদকেরা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষম। ফলে পরিবেশের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম। সেই সঙ্গে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। উৎপাদক বাস্তুতন্ত্রের শক্তির প্রবেশ দ্বার (energy gateway) হিসাবে কাজ করে এবং সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

খাদক (Consumer)

ইকোসিস্টেমের অন্তর্গত যে সব জীব খাদ্য উৎপাদনে অক্ষম এবং খাদ্যের জন্য উৎপাদকের তৈরি খাদ্যের উপর নির্ভরশীল তাদের পরভোজী উপাদান বা খাদক বা কনজিউমার বলে। এরা দুই প্রকার যথা- (i) ম্যাক্রোকনজিউমার এবং (ii) মাইক্রোকনজিউমার।

(1) ম্যাক্রোকনজিউমার (Macroconsumer): এরা শাকাশী (hevivores) এবং মাংসাশী (carnivores) কিংবা সর্বভুক (omivores) শ্রেণিতে বিভক্ত। পুষ্টিস্তর অনুযায়ী এদেরকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়।

(a) প্রথম শ্রেণির খাদক (Primary Consumer): যে সব খাদক খাদ্যের জন্য সরাসরি স্বভোজী জীব অর্থাৎ সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল তাদের প্রথম শ্রেণির খাদক বলে। এরা শাকাশী শ্রেণির, যেমন কীটপতঙ্গ, গোরু, ছাগল ইত্যাদি .

(b) দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক (Secondary Consumer): যে সব খাদক খাদ্যের জন্য প্রাথমিক খাদকদের ওপর নির্ভরশীল তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক বলে। এরা মাংসাশী শ্রেণির, যেমন কুকুর, বিড়াল, ব্যাঙ, টিকটিকি, ছোটো মাছ ইত্যাদি।

(c) তৃতীয় শ্রেণির খাদক (Tertiary Consumer): যেসব খাদক খাদ্যের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির খাদকদের ওপর নির্ভরশীল তাদের তৃতীয় শ্রেণির খাদক বলে। এরা মাংসাশী কিংবা সর্বভুক শ্রেণির হয়। যেমন-বাঘ, সিংহ, মানুষ ইত্যাদি।

(D) মাইক্রোকনজিউমার (Microconsumer): আণুবীক্ষণিক মৃতজীবী জীব সম্প্রদায় যথা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি যারা মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রোটোপ্লাজমকে ভেঙে দেয় বা বিয়োজিত করে এবং কিছু অংশ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে তাদের মাইক্রোকনজিউমার বলে।

বিয়োজক (Decomposer)

জীবমণ্ডলের অন্তর্গত বাস্তুরীতিতে বিভিন্ন উপাদান অংশগ্রহণ করে। গঠনগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিজ্ঞানী ওডাম (Odum, 1971) বাস্তুরীতির উপাদানকে 4টি ভাগে ভাগ করেছেন যথা- (১) অজীবজ (abiotic), (b) উৎপাদক (producer), (c) খাদক (consumer), (d) বিয়োজক (decomposer)। আণুবীক্ষণিক মৃতজীবী যে সকল জীব উৎপাদক ও খাদকের মৃতদেহ বা পরিত্যক্ত দেহাংশ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে তাদের মাইক্রোকনজিউমার (microconsumer) বলে। এরা জীবের দেহাংশে ফিরে যেতে সহায়তা করে বলে এদের বিয়োজক (decomposer) বলে। উৎপাদকেরা পরিবেশ থেকে এইসব উপাদান পুনরায় গ্রহণ করে খাদ্য উৎপাদন করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে জল এবং পাঁকে অবস্থিত মৃতজীবী অণুজীব, যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যাকটিনোমাইসিটিস, ইত্যাদি হল বিয়োজক। এরা মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের প্রোটোপ্লাজমের জটিল যৌগগুলিকে ভেঙে দেয় বা বিয়োজিত করে। এই বিয়োজিত পদার্থের কিছু অংশ বিয়োজকরা গ্রহণ করে এবং বাকি পদার্থগুলিকে অজৈব লবণরূপে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয়, যা উৎপাদকেরা গ্রহণ করে খাদ্য উৎপাদন করে, যা আগেও বলা হয়েছে। বাস্তুতন্ত্রে এই প্রকার সজীব উপাদান শুধুমাত্র মৃত জৈব জীবের ওপর কাজ করে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা মেটায়। এরা মৃত জীবদেহের জৈব অংশকে অজৈব বস্তুতে পরিণত করে এবং অবশিষ্টাংশ মাটিতে মিশিয়ে দেয়। এই প্রকি য়াটিকে মিনারালাইজেশন (mineraliza-tion) বলে। এই কারণে কোনো বাস্তুরীতির মধ্যে নানান প্রকারের বিয়োজক এবং রূপান্তরকারীরা বর্তমান থাকে। মৃত জীবদেহে পচনক্রিয়া সংঘটিত করার সময় বিয়োজকগুলি উৎসেচক নিঃসৃত করে। বাস্তুতন্ত্রে বিয়োজকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে এরা বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। বিয়োজকের উপস্থিতি ছাড়া বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণতা পায় না বা বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠতে পারে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01