লবণাম্বু উদ্ভিদের অভিযোজন (Adaptations of Halophytes)
যে সকল উদ্ভিদ লবণাক্ত জল ও মৃত্তিকায় জন্মায় এবং বৃদ্ধি হয় তাদের লবণাম্বু বা হেলোফাইটস (Halophytes) বলে। এদের বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতান্ত্রিক অভিযোজন লক্ষ করা যায়।
A. অলাস্থানিক বৈশিষ্ট্য (Morphological Feature)
(i) উদ্ভিদগুলোর উচ্চতা কম হয় এবং গম্বুজাকার দেখতে হয়।
(ii) কর্দমাক্ত মাটিতে উদ্ভিদগুলোকে ধরে রাখার জন্য কান্ড থেকে স্তম্ভমূল (prop roots) এবং ধনুকের ন্যায় ঠেসমূল (stilt roots) উৎপন্ন হতে দেখা যায়.
iii) লবণান্ত মাটিতে বায়ু চলাচল করতে পারে না। তাই উদ্ভিদের মধ্যবর্তী মূল থেকে এক ধরনের মূল মাটি ভেদ করে মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে বায়ুতে খাড়াভাবে উঠে এসে বায়ু সংগ্রহ করে। একে শ্বাসমূল (pneumatophores) বলে।
(iv) অধিকাংশ লবণাম্বু উদ্ভিদের পতা পুরু, রসালো, ক্ষুদ্রাকার এবং চকচকে বা মসৃণ হয়ে থাকে.
(v) অনেকক্ষেত্রে বীজগুলি শাখায় থাকা অবস্থাতেই অঙ্কুরিত হয়। একে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম (viviparaous germination) বলে।
(vi) মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবে মাটি থেকে জল ও খনিজ লবণ শোষণ করতে পারে না। সেই কারণে বিস্তৃত মূলজ অঞ্চল সাহায্যে ধীরে ধীরে জল ও খনিজ লবণ শোষণ করে.
vii) বায়ব কাণ্ড খুবই সুগঠিত এবং প্রচুর শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ হলে তা সাধারণত শায়িত অবস্থায় মাটির উপর বৃদ্ধি পায়।
B. শারীরস্থানিক বৈশিষ্টা (Anatomic Features)
(i)অধিকাংশ উদ্ভদের মূল বহু স্তরযুক্ত এবং অন্তত্ত্বকের কোশগুলি পুরু প্রাচীর বিশিষ্ট।
(ii) কান্ড বহুস্তরযুক্ত এবং কিউটিকল যথেষ্ট পুরু এবং সংবহন কলা সুগঠিত হয়।
(iii) পাতাগুলি পুরু, রসালো এবং খসখসে প্রকৃতির। পত্ররন্দ্র কেবলমাত্র পাতার নিম্নপৃষ্ঠের গভীর অংশে অবস্থান করে।
বহিস্তকের কোশগুলি বেশ পুরু হয়।
(iv) মেসোফিল কলায় খুব সামান্য কোশান্তর স্থান থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্যালিসেড এবং স্পঞ্চ কলায় বিভেজিত থাকে না। কিন্তু শুধুমাত্র প্যাসিলেজের ন্যায় কোশ উভয় ত্বকের নীচে থাকে।
(v) স্তম্ভ কলা কম পরিমাণে গঠিত হয়।
উদাহরণ: বোড়া (Rizophora mucronata), গরান (Ceriops raxburghiana), কাঁকড়া (Bruguiera gymnorhiza), সুন্দরী (Sonneratia apetala), গোলপাতা (Nipa fruticans) ইত্যাদি