welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বায়ু প্রক্রিয়া(Wind Processes)

বায়ু প্রক্রিয়া(Wind Processes)



নদী বা হিমবাহের মতো বায়ু বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। যথা-ক্ষয়, অপসারণ ও সঞ্চয়। বায়ুর বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে ভূমিভাগে পরিবর্তত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। নিম্নে বায়ুর এই তিনটি কাজ এবং তাদের প্রক্রিয়াগুলি আলোচনা করা হল-

ক্ষয়কার্য (Erosion)

বায়ুর কাজের মধ্যে অন্যতম হল বায়ুর ক্ষয়কার্য। ভূপৃষ্ঠে বায়ুর গতিবেগ সর্বত্র সমান না হওয়ায় বায়ুর কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ সর্বত্র সমান হয় না। বায়ুর যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় পদ্ধতিতে ক্ষয়কার্য করে। বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বালুকণার আঘাতে যখন ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং তা পরিবর্তিত হয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বালুকণা বা ধূলিকণাতে পরিণত হয়। আবার অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পের দ্বারা শিলা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হলে পরবর্তী সময়ে তা আরো ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। বায়ুর ক্ষয়কার্যকে যে সমস্ত নিয়ন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত করে, সেগুলি হল-(a) বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ, (b) শিলার গতি ও প্রকৃতি (c) ভূমিভাগের উন্মুক্ততা (d) বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা (e) তাপমাত্রার তারতম্য প্রভৃতি। বায়ু বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য করে থাকে, সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

1. অবঘর্ষ (Abrasion): মরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের অন্যতম হল অবঘর্ষ। এই প্রক্রিয়ায় মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বায়ুবাহিত বালি, ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড শিলাস্তরের উপর আছড়ে পড়ে এবং শিলার উপর আঁচড় কাটা দাগ, গভীর ক্ষত, মৌচাকের মতো দাগ কিংবা অসংখ্য ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। উষু মরু অঞ্চলে উদ্ভিদ না থাকায় বায়ু প্রবলবেগে একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। এই প্রবল বেগে প্রবাহের ফলে মরুভূমিতে অবস্থানরত বালুকণাগুলি প্রচন্ড বেগে শিলাস্তরকে আঘাত করে। যে সমস্ত মরু অঞ্চলে শিলাস্তরে কোয়ার্টজ ও বালুকণা অধিক থাকে, সেখানে এই অবঘর্ষ প্রক্রিয়া অধিক কার্যকরী হয়। অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহের দ্বারা শিলাখণ্ড ও কোয়ার্টজ-এর কণাগুলি উড়ে গিয়ে মরুভূমিতে অবস্থিত শিলা বা প্রস্তরখণ্ডকে ঘর্ষণ করে ক্ষয় করে। বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বাহিত পদার্থসমূহের ঘর্ষণে শিলার ক্ষয়সাধনকে অবঘর্ষ বলে। যদি ভূপৃষ্ঠের উপর ঝোপঝাড় থাকে, তাহলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ কমে যায় আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে অধিক উচ্চতায় বায়ুবাহিত পদার্থের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সেখানেও অতটা কার্যকরী হয় না। তাই ভূপৃষ্ঠ থেকে সামান্য উচ্চতায় (0.5-1 মি) এই প্রক্রিয়া অধিক কার্যকরী।

2. অবনমন (Deflation): মরু অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের আরেকটি অন্যতম হল অবনমন। এই অবনমন প্রক্রিয়া মরু অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের প্রাথমিক অবস্থা বলে মনে করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বায়ুপ্রবাহের দ্বারা মরু অঞ্চলে আলগাভাবে অবস্থিত বালুকণাকে একস্থান থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সেই স্থানে গর্তের সৃষ্টি করে। একে অবনমন প্রক্রিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ার ফলে অপসারণের দ্বারা মরুভূমিতে ছোটো বড়ো গর্ত, অবনমিত স্থান ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে এই ধরনের গর্তকে ধান্দ (dhand) বলে। সাহারা মরুভূমির সাইমুম (Simoom) এবং সোনেরান মরুভূমির ডাস্টবোল (Dust Bowl) অঞ্চলে ধূলিঝড়ের দ্বারা লক্ষ লক্ষ টন বালুকা রাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে যায়।

3. ঘর্ষণ (Attrition): শুষ্ক অঞ্চলে বায়ুর ধাক্কার ফলে প্রস্তরখণ্ডগুলির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। ফলে বড়ো বড়ো প্রস্তরখণ্ডগুলি ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণায় পরিণত হয়। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে বাহিত বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখণ্ড ও নুড়ি পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড ও বালুকণায় পরিণত হয়, একে ঘর্ষণ ক্ষয় বলে। মরুভূমিতে যে সুক্ষ্ম বালুকণা দেখা যায় তা এই ঘর্ষণ প্রক্রিয়ার ফল। এই প্রক্রিয়ায় বালুকণা সুক্ষ্মতর হয়ে হালকা হয়ে যায় বলে তা সহজে বাতাসে পরিবাহিত হয়। ফলে কণাগুলি অনেক দূরে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে বাতাসের গতিবেগ প্রবাহিত করে। এই প্রক্রিয়ার ফলে শিলার মসৃণতা, শিলা লম্বা খাঁজ এবং শিলাস্তরে গর্তের সৃষ্টি হয়।

বহন (Transportation)

ক্ষয়কার্যের মতো বায়ু বহন কাজ করে থাকে। প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরু অঞ্চলে ক্ষয়জাত পদার্থ একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হলে একে বহন কাজ বলে। আলগা শিলাখণ্ডগুলি বায়ুর প্রবল গতিবেগের দ্বারা এবং উদ্ভিদ শূন্যতার ফলে বাধাহীনভাবে অগ্রসর হয়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুর বহনকার্য স্থানাভাবে কার্যকরী হয় না। বায়ুর বহনকার্য যে সমস্ত নিয়ন্ত্রকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলি হল যথা-

(a) বায়ুর গতিবেগ (৮) বালির কণার পরিমাণ (c) বালুকণার আয়তন (d) ভূপৃষ্ঠের উন্মুক্ততা (e) বালুকণার ভার প্রভৃতি। যদি বায়ুপ্রবাহের পথে কোনো ধরনের বাধা পায়, তাহলে সেখানেই বায়ুবাহিত পদার্থগুলি সঞ্চিত হয়। বায়ুর পরিবহন কার্য প্রধানত তিনটি প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হয়। যথা-

1. লম্বাদান (Saltation): লম্ফদান একটি অন্যতম বায়ুর বহনকার্য প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত বড়ো বড়ো শিলাখণ্ডগুলি বায়ুর টানে ভূমির সঙ্গে ঠোক্কর খেতে খেতে লাফিয়ে চলতে থাকে। 'Saltation' শব্দটি লাতিন শব্দ 'Saltarte' থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ 'to lefe' অর্থাৎ লাফ দেওয়া। অর্থাৎ যে সমস্ত বালুকণার ব্যাস 0.5 মিমি-2 মিমি সেই ব্যাসযুক্ত বালুকণাগুলি লম্ফদান প্রক্রিয়ায় পরিবাহিত হয়। মরুভূমিতে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বেশি হলে ভূপৃষ্ঠস্ব কণাগুলি উপরের দিকে উত্তোলন করে, ফলে ওই সমস্ত পদার্থগুলি বায়ুর সঙ্গে একদিকে যেমন অনুভূমিকভাবে তাড়িত হয়, তেমনি অপরভাবে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে নিম্নগামী হতে থাকে। ফলে ওই পদার্থগুলি ভূপৃষ্ঠে তির্যকভাবে পতিত হয় এবং পুনরায় ভূমির আঘাতে উত্থিত হয়। এইভাবে মরুভূমিতে অবস্থানরত কণাগুলি বারবার আঘাতের দ্বারা অন্য বস্তুকণাগুলিকে উত্তরণ করে লক্ষ্মদান প্রক্রিয়াকে এগোতে সাহায্য করে।

2. ভাসমান অবস্থায় বহন (Suspension): মরুভূমির অতি সূক্ষ্ম বালুকণা বায়ুর সঙ্গে ভাসমান অবস্থায় বহুদূর প্রবাহিত হয়। এই সমস্ত পদার্থসমূহের ব্যাস 0.06 মিমি-র কম হয়। কণাগুলির ব্যাস কম হওয়ায় বায়ুর সঙ্গে এই কণাগুলি বহুদূর বাহিত হয়। তবে যে সমস্ত কণার ব্যাস 0.06 মিমি-র বেশি সেই কণাগুলি এই প্রক্রিয়ায় পরিবাহিত হয় না। বায়ুর গতি সব জায়গায় সমান না হওয়ার ফলেও এই ধরনের প্রক্রিয়া কার্যকরী হয় না।

3. গড়িয়ে গড়িয়ে বহন (Surface Creep): বড়ো বড়ো নুড়ি, পাথর প্রভৃতি বায়ুর টানে ভূমির সঙ্গে গড়িয়ে গড়িয়ে পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কণাগুলির ব্যাস 2 মিমি-র বেশি। অনেক ক্ষেত্রে এই পদার্থগুলি আকর্ষণের দ্বারাও অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। সাধারণত লক্ষ্মদান প্রক্রিয়ার ফলে চলমান ধূলিকণাগুলি বেশি মাত্রায় অংশগ্রহণ করে এবং পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে কণাগুলি উপরদিকে উত্থিত হয় না। পরবর্তী সময়ে কণাগুলির পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে অনুভূমিক দিকে যে বল অবশিষ্ট থাকে, তার দ্বারা কণাগুলি বায়ুপ্রবাহের আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে অপসারিত হয়।

সয় (Deposition)

বায়ু ক্ষয় ও বহনের মতো সঞ্চয় কাজ করে থাকে। বায়ুর গতিপথে কোনো বাধা অর্থাৎ ঝোপঝাড়, বৃহৎ আকৃতির শিলাখন্ড কিবো উচ্চভূমি অবস্থান করলে বায়ুবাহিত বিভিন্ন কণাগুলি বাধা পেয়ে ওই স্থানে সঞ্চিত হয়। একে বায়ুর সঞ্চয় কাজ বলে। বায়ুর সঞ্চয় কাজকে যে সমস্ত নিয়ন্ত্রকগুলি নিয়ন্ত্রিত করে, সেগুলি হল-(a) বায়ুর গতিবেগ (b) প্রবাহপথে বাধা (c) কণার পরিমাণ (d) কণার আকৃতি (e) পারস্পরিক সংঘর্ষ (f) জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি প্রভৃতি। বায়ুপ্রবাহের দ্বারা পরিবহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বালি ও সূক্ষ্ম শিলাচূর্ণকে সবশেষে সঞ্চয় করে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। বায়ুর সঞ্চয় কাজ যে সমস্ত প্রক্রিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

1. অধঃক্ষেপণ (Sedimentation): এই প্রক্রিয়ায় বালুকণা অত্যন্ত ধীর গতিতে প্রবাহিত বায়ুর দ্বারা সঞ্চিত হয়। বায়ুবাহিত বালুকণা ও ধূলিকণা ভূপৃষ্ঠে পতনের সময় শক্তি কমে যাওয়ার ফলে সেই কণাগুলি আর উত্থিত হতে পারে না বলে তখন ধীরে ধীরে কোনো স্থানে সঞ্চিত হয়। এই ধরনের প্রক্রিয়াকে অধঃক্ষেপণ বলে।

2. অনুলেপন (Accretion): এটি এক ধরনের বায়ুর সঞ্চয়কার্যের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে লম্ফদান ও গড়িয়ে গড়িয়ে বালুকণা পরিবাহিত হওয়ার সময় কোনো অঞ্চলে সঞ্চিত হয়।

3. আগ্রাসন (Encroachment): সাধারণত মরুভূমিতে অসমতল ভূপৃষ্ঠে এই ধরনের সঞ্চয়কার্য লক্ষ করা যায়। বায়ু শুষ্ক অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বাধা পেলে ভূমি চুম্বন প্রক্রিয়ার দ্বারা পদার্থের অপসারণ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু উল্লম্ফন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার দরুন বায়ুবাহিত কণাগুলি অসমতল ভূমিভাগের উপর সঞ্চয় ঘটায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01