welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

হিমবাহ প্রক্রিয়া(Glacier Processes)

হিমবাহ প্রক্রিয়া(Glacier Processes)


অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তিগুলির মতো হিমবাহ ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ করে। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ সাধারণত ক্ষয় ও বহন কাজ করে কিন্তু, পার্বত্য পাদদেশে হিমবাহ মূলত সঞ্চয় কাজ করে। বিভিন্ন পর্যায়ে হিমবাহের সমগ্র কাজ গ্ল্যাসিয়েশন (glaciation) বলে। নীচে হিমবাহের ক্ষয়কার্য, বহনকার্য ও সঞ্চয়কার্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

ক্ষয়কার্য (Erosion)

সাধারণভাবে মনে করা হয় যে হিমবাহ শিলাকে ক্ষয় করে। ক্ষয়কার্য সম্বন্ধে বিভিন্ন ভূ-বিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। অনেকের মতে হিমবাহ গলে গিয়ে যে জলের সৃষ্টি হয়, তার ফলে হিমবাহ ক্ষয়কার্য করে। আবার একদল ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, যে অংশ হিমবাহ দ্বারা আবৃত নয়, সেই অংশে হিমবাহ কাজ করে। যাই হোক হিমবাহ কার্য কতকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সেগুলি হল- (a) হিমবাহের আকার ও আকৃতি, (b) হিমবাহের আয়তন ও বরফের গভীরতা, (c) ভূমিশিলার দারণ ও ফাটলের উপস্থিতি, (d) হিমবাহের গতিবেগ, (e) হিমবাহের গতিপথে শিলার প্রকৃতি, (f) হিমবাহের প্রবাহপথে ভূমির ঢাল, (৪) ভূমিভাগের স্থায়িত্ব প্রভৃতি। নদীর ক্ষয়কার্যের মতো হিমবাহের ক্ষয়কার্যের কতকগুলি প্রক্রিয়া রয়েছে। সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

(1) উৎপাটন কেন্দ্র (Plucking): হিমবাহের চাপে পর্বতগাত্র থেকে শিলাখণ্ডের উঠে আসাকে উৎপাটন বলে। সাধারণত তুষারের নীচে ও তার দুপাশে উঁচু হয়ে থাকা শিলাখণ্ডগুলি প্রবাহিত ভারী হিমবাহের প্রবল চাপে উৎপাটিত হয়। পর্বতগাত্র ও উপত্যকার তলদেশের সঙ্গে হিমবাহের ঘর্ষণের ফলে হিমবাহের কিছু অংশ গলে গিয়ে জলে পরিণত হয়। সেই জল শিলার ফাটলের মধ্যে প্রবেশ করে জমে বরফে পরিণত হলে তার আয়তন বেড়ে যায়। ফলে শিলাস্তরে চাপের সৃষ্টি করে। এই চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিলাস্তর ভেঙে টুকরো টুকরো খন্ড পরিণত হয়। প্রবাহিত হিমবাহের প্রবল চাপে এই সমস্ত অসমান টুকরো শিলাগুলি সহজেই উৎপাটিত হয়ে অপসারিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে উৎপাটন ক্রিয়া বলে। সাধারণত হিমবাহের উল্টো দিকের ঢালে এই রকম পদ্ধতি সহজেই কাজ করে।

(2) অবমর্ষ ক্রিয়া (Abrasion): প্রবহমান হিমবাহের তলদেশে যে সমস্ত প্রস্তরখণ্ড বা শিলাখণ্ড থাকে তাদের ঘর্ষণে পর্বতগাত্রে আঁচড় কাটার মতো দাগ (scratches) পড়ে এবং শিলাসমূহ মসৃণ আকার প্রাপ্ত হয়। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের এই প্রক্রিয়াকে অবঘর্ষ বলে। অর্থাৎ হিমবাহের মধ্যে বিভিন্ন আকৃতির উৎপাটিত শিলাখণ্ড জমাটবদ্ধ অবস্থায় থাকে। হিমবাহ চলতে শুরু করলে ওই সমস্ত জমাটবন্ধ প্রস্তরখণ্ড তলদেশের ভূমিরূপ কিংবা শিলাস্তরের উপর ঘর্ষণের ফলে শিলাস্তরকে ক্ষয় করে। এই অবঘর্ষ প্রক্রিয়ার ফলে ভূমিভাগ ক্রমশ মসৃণ হয়।

বহনকার্য বা অপসারণ কার্য (Transportation)হিমবাহের কার্যের আর একটি উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া হল বহন বা অপসারণ। হিমবাহের ক্ষয়কাজের মতো বহনও এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হিমবাহের সঙ্গে বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড, বালি, নুড়ি, কাদা, পাথর প্রভৃতি খাতের মধ্যে বয়ে নিয়ে চলতে থাকে। হিমবাহের এই ধরনের অপসারণ হিমবাহের পাশে, মাঝে কিংবা সামনের দিক দিয়ে সমস্ত পদার্থসমূহ নিয়ে চলতে থাকে। হিমবাহ দ্বারা গঠিত এই ধরনের কাজকে অপসারণ বা বহন বলে। হিমবাহের সঙ্গে তার উপরে সঞ্চিত সমস্ত পদার্থসমূহ পরিবাহিত হয় এছাড়া বরফের সঙ্গে প্রথিত অবস্থায় হিমবাহের তলদেশে এবং পার্শ্বদেশে শিলাখণ্ড পরিবাহিত হয়ে থাকে। হিমবাহের সঙ্গে বাহিত বোঝাকে হিমগ্রাব বলে। হিমবাহের সঙ্গে কঠিন শিলা বাহিত হলে তা পর্বতের গায়ে আঁচড় কাটতে কাটতে চলতে থাকে। তাই হিমবাহ উপত্যকায় আঁচড় কাটা দাগ (stria-tions) দেখা যায়। হিমবাহের এই পরিবহন কাজকে যে সমস্ত নিয়ন্ত্রক নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলি হল- (a) ক্ষয়জাত বোঝার পরিমাণ, (b) উপত্যকার ঢাল, (c) হিমবাহের প্রবাহপথের গতি-প্রকৃতি, (d) হিমবাহের আকার আয়তন এবং (e) হিমবাহের গতিবেগ।

সঞ্চয়কার্য (Deposition)হিমবাহের কাজগুলির মধ্যে সঞ্চয়কাজ এক ধরনের উল্লেখযোগ্য কাজ। ক্ষয় ও পরিবহনের মতো হিমবাহ সঞ্চয়কার্য করে থাকে। হিমবাহ বাহিত পদার্থসমূহ অনেক সময় হিমবাহের তলদেশে পাশে, মাঝখানে কিংবা, সামনে সঞ্চয় করে। কিন্তু হিমবাহ চলার সময়, ভূমি ঢালের পার্থক্য ঘটলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অনেকসময় সঞ্চয় করে থাকে। তবে অধিকাংশ সঞ্চয় পর্বতের নীচে কিংবা নিম্নভূমিতে করে থাকে। আবার, হিমবাহের প্রান্তদেশে যেখানে হিমবাহ গলতে শুরু করে তখন হিমবাহের পশ্চাদপসরণ লক্ষ করা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01