welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আবহবিকার প্রক্রিয়া(Weathering Processes)

আবহবিকার প্রক্রিয়া(Weathering Processes)


ধারণা (Concept)

ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটাতে ভৌত পদ্ধতিগুলির মধ্যে আবহবিকার অন্যতম। আবহবিকার কথাটি আবহাওয়া থেকে এসেছে। কাজেই আবহবিকার বলতে আমরা বুঝি আবহাওয়ার দ্বারা ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন সাধন। অর্থাৎ আবহবিকার হল এমন এক ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়া যার সাহায্যে শিলা, মৃত্তিকা প্রভৃতি ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ভূপৃষ্ঠের উপরেই পড়ে থাকে। আবহবিকার একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা মাটি সৃষ্টির প্রাক্ প্রক্রিয়া হিসেবে মনে করা হয়। এই প্রক্রিয়ার দ্বারা শিলা ভেঙে ছোটো ছোটো খণ্ডে ও চূর্ণে পরিণত হয়। এই খণ্ড বা চূর্ণগুলি পরবর্তী সময়ে মাটির উৎপত্তিতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। আবহবিকারের ফলে ভূপৃষ্ঠের কঠিন শিলা নমনীয় ও বিয়োজিত হয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও, বিয়োজিত বস্তুর কোনো স্থান পরিবর্তন হয় না। তাই এটি একটি স্থিতিশীল প্রক্রিয়া। সেই সঙ্গে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।

সংজ্ঞা (Definition)

চোলে (Richard J. Chorley)-এর মতে "আবহবিকার শিলা ও খনিজের আবহাওয়ার উপাদানের সংস্পর্শতলের অবক্ষয় ও অসংবন্ধ" হওয়াকে নির্দেশ করে। মঙ্কহাউস (Francis J. Monkhouse-এর মতে আবহবিকার হল শিলার স্থিতিশীল অবস্থায় বিসংযুক্তিকরণকে বোঝায়।

ভূ-বিজ্ঞানী স্পার্ক-এর মতে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন শিলাসমূহকে প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে যান্ত্রিকভাবে ভেঙে ও রাসায়নিক ভাবে বিয়োজিত করে পরিবর্তিত করার প্রক্রিয়াগুলিই হল আবহবিকার। বিখ্যাত ভূ-বিজ্ঞানী ডব্লু. ডি. থর্নবেরির (W. D. Thornbury, 1993) মতে "আবহবিকার হল কোনো শিলার নিজস্থানে বিচুর্ণন বা বিয়োজন (weathering may be defined as the desintegration or dicomposition of rock in place.)

ভূবিজ্ঞানী সি. ডি. ওলেয়ারের (C. D. Ollier, 1969) মতে "ভূপৃষ্ঠের ওপরে অবস্থিত শিলা বা খনিজের বিচুর্ণীভবন বা বিয়োজনের মাধ্যমে, নতুন পরিবর্তিত ভৌত বা রাসায়নিক অবস্থায় পদার্থের অধিকতর ভারসাম্য থাকে তাকে আবহবিকার বলে (weathering is the breakdown and alteration of materials near the earth's surface to products that are more in equilibrium with newly imposed physico-chemical condition.)। ভূমিরূপ বিশারদ বি. ডব্লিউ, স্পার্কস (B. W. Sparks, 1972)-এর মতে ভূপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক শক্তির কারণে শিলার যান্ত্রিক ফাটল বা রাসায়নিক পচনকে আবহবিকার বলে (Weathering may be defined as the mechanical fracturing or chemical decomposition of rocks by natural agents at the surface of the earth.)

ভূ-বিজ্ঞানী আর্থার হোমস (Arther Holmes, 1952)-এর মতে যে প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপবায়বীয় প্রভাবে শিলার ক্ষয় ও বিচুর্ণীকরণ হয় এবং শিলার তেমন কোনো বড়ো স্থানচ্যুতি ঘটে না তাকে আবহবিকার বলে (Weathering is the total effect of all the various subaeri al processes that cooperation Pringing about the decay and disintegration of rocks provided that no large scale transport of the loosened products is involved.)।

আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের প্রভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একই স্থানে থেকে শিলারাশি ভেঙে যাওয়াকে আবহবিকার বলে। আবহবিকার হল বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সংস্পর্শে ভূত্বকের শিলা, খনিজের গঠনগত ভাঙন ও পরিবর্তন যা কিনা ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কিংবা যে কোনো একটি প্রক্রিয়ায় হতে পারে।অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় অথবা বাতাস ও জলের সংস্পর্শে গলে যায় বা দ্রবীভূত হয়। শিলাসহ খনিজের এই ধরনের চূর্ণ-বিচূর্ণ ও দ্রবীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে।

পি. রিচি (P. Reiche, 1950)-এর মতে কোনো শিলা বা খনিজ যেটি আগে শিলামণ্ডলের গভীরে ভারসাম্য অবস্থায় ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে সেটি উন্মুক্ত অবস্থায় বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল এবং সর্বোপরি জীবমণ্ডলের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে যে সাড়া দেয় কিংবা যে যে পরিবর্তন ঘটে তাকে আবহবিকার বলে (weathering is the response of materials which were in equilibrium within the lithosphere to conditions at or near its contact with the atmosphere, the hydrosphere and perhaps still importantly, the biosphere.)।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics)

আধুনিক ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে প্রাকৃতিক শক্তি এবং আবহবিকার ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের গঠনসহ মাটি সৃষ্টির পদ্ধতিতে সাহায্য করে। কিন্তু জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে এদের প্রকৃতি এবং তীব্রতা ভিন্ন ধরনের হয়। আবহবিকার দ্বারা বিয়োজিত বস্তুর কোনো চলন লক্ষ করা যায় না। তবে এই প্রক্রিয়ার কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যথা-

1. এই প্রক্রিয়ার দ্বারা অপ্রবেশ্য শিলাস্তরগুলি বিকারজাত হয়ে প্রবেশ্যতার সৃষ্টি করে, ফলস্বরূপ শিলাস্তরগুলি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

2. এই প্রক্রিয়া মাটি সৃষ্টির প্রথম ধাপ বলে মনে করা হয়। কারণ এই প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট শিলা ভেঙে ছোটো ছোটো খণ্ডে পরিণত হয়ে আদি শিলার ওপরে পড়ে থাকে যাকে রেগোলিথ (regolith) বলে। রেগোলিথ পরে জৈব পদার্থের সাথে মিশে মাটি সৃষ্টি করে।

3. আবহবিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মাত্রায় সংঘটিত হয়। কিন্তু ক্রান্তীয় অঞ্চলে দ্রবীভবন ও কৈশিক প্রক্রিয়ায় অতিদ্রুত আবহবিকার ঘটে। ফলে ডিউরিক্রাস্ট (duricrust) তৈরি হয়।

4. আবহবিকারের দ্বারা বেশ কিছু ছোটো ছোটো ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। আবহবিকারের ফলে শিলায় ঢিবি (mound), টর (tors), বিকারজাত গর্ত (weathering pit), জালিকা গতি (box pit) প্রভৃতি গঠিত হয়।

5. ক্রান্তীয় অঞ্চলে ল্যাটেরাইটের যে শক্ত লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অধ্যুষিত স্তর লক্ষ করা যায় তা পরবর্তী সময়ে বিক্রিয়ার ফলে সহজে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি (Attached Processes)

আবহবিকারের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত প্রধান পদ্ধতিগুলো হল-

ক্ষয়ীভবন (Erosion): আবহবিকারের মাধ্যমে শিলাচূর্ণ কখনোই স্থানান্তরিত হয় না, বরং একই স্থানে জমে থাকে। আবার নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ এই সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা শিলা অনবরত ভাঙতে থাকে। এই ভাঙা শিলাখণ্ডগুলিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি অন্যত্র বয়ে নিয়ে যায়। ভাঙার পর যেখানকার শিলা সেখানে থাকে না বলে একে আমরা আবহবিকার না বলে ক্ষয় (erosion) বলব। বিভিন্ন গতিশীল প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা মূল শিলা থেকে চূর্ণ-বিচূর্ণ পদার্থ অন্যত্র অপসারিত হলে তাকে ক্ষয়ীভবন বলে।

নগ্নীভবন (Denudation): আবহবিকার এবং ক্ষয়ীভবন এই দুটি প্রক্রিয়াকে একত্রে নগ্নীভবন বলে। আবহবিকার এবং তার পরে ক্ষয়ীভবন হলে মূল শিলার ভিতরের অংশ উন্মুক্ত হয়। তখন আবার সেই উন্মুক্ত শিলাস্তরে আবহবিকার শুরু হয়। অর্থাৎ ক্ষয়ীভবনের ফলে ক্ষয়ীভূত অংশ অন্যস্থানে অপসারিত হলে ভূত্বকের অবশিষ্ট অংশ আবরণহীন অর্থাৎ নগ্ন হয়ে পড়ে। এই ধরনের পরিবর্তনকে নগ্নীভবন বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01