welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নদীর বহন কার্য ও বহন কার্যের প্রক্রিয়া (Transpotational Work of River and Processes)

নদীর বহন কার্য ও বহন কার্যের প্রক্রিয়া (Transpotational Work of River and Processes)


নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে ক্ষয়জাত পদার্থ যথা নুড়ি, বালি, পলি, কাদা এবং বিভিন্ন ধরনের শিলাখন্ড নদীর জলের দ্বারা পরিবাহিত হয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়। নদীর বহন করার ক্ষমতা নির্ভর করে মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর। যথা-নদীখাতের ঢাল, নদীর গতিবেগ, জলের পরিমাণ এবং পরিবাহিত বস্তুর প্রকৃতি, আকার ও পরিমাণ। কোনো নদীর একটি নির্দিষ্ট গতিবেগে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পদার্থের বহন করার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যদি ওই নদীতে ঢাল এবং জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাহলে তার গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যদি কোনো কারণে নদীর গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়, তাহলে সেই নদীতে বহন করার ক্ষমতা 64 গুণ (25) বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ নদীর বহন করার ক্ষমতা তার গতিবেগের ষষ্ঠ ঘাতে (6th power) বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। একে ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র বা 6th Power Law বলে। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার যে নদীর গতিবেগ বৃদ্ধি না পেয়ে যদি জলের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়, তাহলে কিন্তু নদীর বহন ক্ষমতা শুধু দ্বিগুণই বৃদ্ধি পাবে, 64 গুণ নয়।নদীর বহন কাজের প্রক্রিয়াগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।

1. দ্রবণ প্রক্রিয়ায় বহন (Solution): নদীখাতে প্রবাহিত জলের যদি ধর্মের পরিবর্তন ঘটে, অর্থাৎ যদি জলে অম্লতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাহলে নদীর জলের সঙ্গ্যে শিলাখন্ডগুলি অম্লের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিয়োজিত হয়ে জলের স্রোতের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে দ্রবণ প্রক্রিয়ায় বহন বলে। চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে নদী দ্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহন করে থাকে।

2. আকর্ষণ প্রক্রিয়ায় বহন (Traction): নদীর স্রোতের সঙ্গে পরিবাহিত বস্তুগুলি অনেক সময় নদীখাতের তলদেশে স্রোতের টানে পরিবারিত হয়। এই ধরনের পরিবর্তনকে আকর্ষণ প্রক্রিয়ায় বহন বলে। এই ধরনের বহনে ছোটো ছোটো নুড়ি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি জলস্রোতের টানে পরস্পরের সংঘর্ষের মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পরিবাহিত হতে থাকে।

এই ধরনের পরিবহন প্রক্রিয়া কতকগুলি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যথা- (a) নদীতে জল কমে গেলে (b) নদী কোনো হ্রদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে (c) নদীর ক্ষমতার তুলনায় বেশি পরিমাণ প্রস্তরখণ্ড নদীতে চলে এলে কিংবা (d) নদীর ঢালের পরিবর্তন ঘটলে।

3. ভাসমান প্রক্রিয়ায় বহন (Suspention): নদী প্রবাহ পথে ক্ষয়কার্যের ফলে ছোটো ছোটো প্রস্তরখণ্ডগুলি নদীর স্রোতের সঙ্গে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে ভাসমান অবস্থায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। মূলত এই প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ম পলি ও বালি নদীর জলের সঙ্গে ভাসমান অবস্থায় প্রবাহিত হয়।

4. লম্ফদান প্রক্রিয়ায় বহন (Saltation): অপেক্ষাকৃত বড়ো আকৃতির প্রস্তরখণ্ডগুলি নদীর জলের সঙ্গে নদীর তলদেশে কিংবা ভাসমান নদী গর্বের ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে থাকে বা পরিবাহিত হয়। তাকে লম্বদান প্রক্রিয়া বহন বলে এই প্রক্রিয়ায় পরিবাহিত বস্তু গুলি নিজেদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে থাকে। এইভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নদীর ক্ষয়জাত পদার্থ, পার্বত্য পরিবেশ থেকে ঢাল বেয়ে জলের মাধ্যমে নিচের দিকে নামতে নামতে সমভূমি তথা মোহনার কাছে এসে জমা হয়। উপড়ে উল্লেখিত বিভিন্ন বহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের অবস্থানরত অসংখ্য নদ নদী প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টন ক্ষয়জাত পদার্থ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বয়ে আনে। ভূবিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছে যে সিন্ধু নদীর প্রায় 9 লক্ষ্যের টন ,গঙ্গা নদীর প্রায় 90 হাজার টন এবং ব্রহ্মপুত্র নদ প্রায় 10 লক্ষ্য টন পদার্থ প্রতিদিন অপসারিত করতে চলেছে। অবশ্যই ঋতুভিত্তিক এই অপসারিত পদার্থের পরিবর্তন হয়। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01