ভূগর্ভে গঠিত কার্স্ট ভূমিরূপ (Subterranean Karst Landforms)
1. ভূগর্ভস্থ গৃহা (Cave): চুনাপাথর অন্যলে গৃহা এক বিশেষ ভূমিরূপ। ভূগর্ভে ভৌম জলস্তরের কাছাকাছি কিংবা সামান্য নীচে জলের সঙ্গে কার্বনিক অ্যাসিডের দ্রবণ ক্রিয়ায় শিলাস্তরে যে গর্ত বা শূন্যস্থানের উৎপত্তি হয় তাকে গুহা বলে। অর্থাৎ জলের অনুপ্রবেশের এবং প্রবাহের ফলে শিলার দারণ ও ফাটল বরাবর অংশকে দ্রুত দ্রবীভূত এবং স্থানচ্যুত করে। এই প্রক্রিয়ায় জলপ্রবাহ পথে গুহার সৃষ্টি হয়। ভারতের দেরাদুন ও পাঁচসারিতে এই ধরনের গুহা দেখা যায়। সাধারণত চুনাপাথর ডলোমাইট, ক্যালসাইট প্রভৃতি শিলায় দ্রবীভবনের ফলে বিভিন্ন আয়তনের গুহা সৃষ্টি হয়, এগুলি 10-100 মিটার ব্যাসার্ধ যুক্ত হয়।
2. ভূগহ্বর (Cavern): চুনাপাথরে গঠিত অঞ্চলে জলের দ্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রভাবে ভূগর্ভে সৃষ্ট ভৌমজল চলাচলের পথগুলিকে ভূগর্ভস্থ গৃহা বলে। এই দ্রবণ কার্যের ফলে শিলাস্তর ধসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে। এই গুহা আকারে অনেক বড়ো হলে তাকে ভূগহ্বর বলে। ফ্রান্সের গুফে বারজার (Goufre Berger) বিশ্বের গভীরতম গুহা।
3. স্ট্যালাকটাইট (Stalactite): চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলের গুহায় কার্বনিক অ্যাসিড জলে মিশে চুনাপাথর গলে গেলে চুনাপাথরের জলীয় দ্রবণ গতি ধীরে ধীরে গুহার ছাদ থেকে গুহার মেঝেতে পড়তে থাকে। এই দ্রবণের জল গুহার ছাদ থেকে মেঝেতে পড়ার আগে বাষ্পীভূত হলে দ্রবণের অবশিষ্টাংশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমতে জমতে স্তম্ভের আকারে ছাদ থেকে ঝুলতে থাকে। চুনাপাথরের গৃহায় গঠিত এই ধরনের ঝুলন্ত চুনাপাথরের স্তম্ভকে স্ট্যালাকটাইট বলে। উত্তরপ্রদেশের দেরাদুনের তপকেশ্বর গুহায় এই ধরনের স্ট্যালাকটাইট দেখা যায়।
4. স্ট্যালাগমাইট (Stalagmite): আবার ফাটলের নীচে গর্তের মেঝেতে জল পড়ে এবং বাষ্পীভবনের ফলে এই স্থানে চুনের সঞ্চয় বাড়তে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে এই অধঃক্ষেপিত অংশ স্তম্ভের আকারে মেঝে থেকে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এদের স্ট্যালাগমাইট বলে। ভারতের মেঘালয় মালভূমির চেরাপুঞ্জির কাছে এই ধরনের স্ট্যালাগমাইট দেখা যায়।
5. স্তম্ভ (Pillar): যখন গুহার ছাদ থেকে স্ট্যালাকটাইট ঝুলতে থাকে এবং গুহার মেঝে থেকে স্ট্যালাগমাইট উপরের দিকে উঠতে থাকে। এই দুই ধরনের ভূমিরূপ খুব ধীরে ধীরে সংঘটিত হয় এবং একটা সময় স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট জুড়ে গিয়ে স্তম্ভের সৃষ্টি করে। সাধারণত স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট একই উল্লম্ব রেখায় অবস্থান বা গঠিত হয়। অনেকে এই স্তম্ভকে চুনাস্তম্ভ বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যামথ ও কার্লসবাড গুহায় এই ধরনের ভূমিরূপ লক্ষ করা যায়।
6. হেলিকটাইট (Helictite): হেলিকটাইট চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে চুনাপাথরের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ। অনেক সময় চুনাপাথরের গৃহায় দ্রবণ কার্যের ফলে উৎপন্ন ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) গৃহায় নীচ থেকে উপরের দিকে কিংবা উপরের থেকে নীচের দিকে, আবার অনুভূমিক বা তির্যকভাবে সঞ্চিত হয়ে প্রসারিত হলে যে ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তাকে হেলিকটাইট বলে। মূলত গুহায় জলের সরবরাহ কম থাকার কারণে এই ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। অনেকে মনে করেন যে দ্রবণ সঞ্চয়ের সময় যদি স্ফটিক রূপ ধারণ করে তাহলে সঞ্চয়ের অভিমুখ যে-কোনো দিকে অগ্রসর হতে পারে।