কারেনের শ্রেণিবিভাগ(Classification of Karren)
চুনাপাথর অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠে অবস্থানরত ছোটো বড়ো বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে উঠতে লক্ষ করা যায়। ছোটো আয়তনের ভূমিরূপগুলি সাধারণত ভূপৃষ্ঠে শিলার সঙ্গে বৃষ্টি জলের দ্রবণের ফলে উৎপত্তি লাভ করে। আবার বিভিন্ন আকৃতির আবন্ধ নিম্নভূমি (enclosed depresions) গুলি সাধারণত বড়ো আয়তনের ভূমিরূপ হিসেবে পরিচিত। ছোটো আয়তনের ভূমিরূপগুলির মধ্যে অন্যতম হল কারেন।
কারেন (Karren): খাড়া ঢালযুক্ত চুনাপাথরের শিলাস্তরের উপর বৃষ্টির জল পড়লে, ওই শিলাস্তরের উপর 1-2 সেমি ব্যাসের ছোটো ছোটো গর্ত তৈরি হয়। এই ধরনের গর্তকে 'রেন পিট্' (rain pit) বলে। বৃষ্টির জল যদি কোনো স্থানে জমে থাকে, তাহলে ওই জমে থাকা জল রেন পিটের চারিদিকে দ্রবণের কাজের দ্বারা সূক্ষ্ম আঁচড়ের (grooves) মতো খাঁজ সৃষ্টি করে। ফরাসি ভাষায় একে ল্যাপিস (lapies) বললেও জার্মান ভাষায় একে কারেন বলে। ভূবিজ্ঞানী বোগলি 1960 সালে কারেনের বিভিন্ন ভূমিরূপের মধ্যে পার্থক্যের ভিত্তিতে 13টি কারেন চিহ্নিত করেন। আবার আকৃতি অনুসারে কারেন মোটামুটি চার প্রকারের হয়ে থাকে। নীচে এগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-
1. রিলেন কারেন (Rillen Karren): চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে সংকীর্ণ নিম্নভূমির মধ্যবর্তী উচ্চভূমিগুলি সাধারণত খুব সংকীর্ণ ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়। কিন্তু মাঝারি ঢালযুক্ত চুনাপাথর অঞ্চলে উপরের মাটি অপসারিত হলে, সূক্ষ্ম অগভীর খাঁজের সৃষ্টি হয়। অতি ক্ষুদ্র জলধারার (rill) দ্রবণের ফলে, এই দ্রবণ খাঁজ (solution flute) গুলি সৃষ্টি হয়। এই ধরনের খাঁজকে রিলেন কারেন বলে।
2. রিনেন কারেন (Rinnen Karren): রিনেন খাঁজের এক বৃহৎ রূপ হল রিনেন কারেন। এই কারেনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ মিটার এবং গভীরতা প্রায় 50 সেমির মতো হয়ে থাকে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পর এই বড়ো খাঁজে জল ভরে গেলে এই কারেনগুলি একটা নদীর আকার ধারণ করে।
3. রান্ড কারেন (Rund Karren): চুনাপাথর সমৃদ্ধ অঞ্চলে, মৃত্তিকা স্তরের নীচে গোলাকৃতি প্রস্তরখণ্ড দ্বারা গড়ে ওঠা ভূমিরূপকে রান্ড কারেন বলে। কোনো অঞ্চলে উপরের মাটির স্তর অপসারিত হলে, এই গোলাকার প্রস্তর খণ্ডগুলি মাটির উপর থেকে দেখা যায়। মাটির ভিতরে জলের অনুস্রবণের (percolation) ফলে এই ধরনের কারেনের সৃষ্টি হয়।
4. কালফ্ট কারেন (Kulft Karren): এটি হল একধরনের দ্রবণজাত বড়ো খাত। চুনাপাথর অঞ্চলে দারণ তল (Joint plane) যুক্ত শিলায় সব থেকে বেশি দ্রবণ এই দুর্বল দারণ স্থানগুলিতে হয়ে থাকে। জলীয় দ্রবণের ফলে দারণ তলগুলি ক্রমশ চওড়া হতে থাকে। এই চওড়া ফাটলগুলিকে কারেন বা গ্রাইক্ নামে পরিচিতি। এই ফাটলগুলি 2-4 মিটার প্রস্থ এবং 1-5 মিটার গভীরতা প্রাপ্ত হতে পারে।
যখন এই বড়ো আকৃতির ফাটলের দৈর্ঘ্য 10 মিটার এবং প্রস্থ 2-4 মিটার এবং গভীরতা 30-40 মিটার হয় তখন তাকে বোগাজ (bogoz) বলে। আবার দুটি গ্রাইকের মধ্যবর্তী অংশকে ক্লিন্ট (clint) বলে। ক্লিন্টগুলি ত্রিকোণাকার চূড়াবিশিষ্ট কিংবা চ্যাপটা আকৃতির হতে পারে। আবার ক্লিন্ট ও গ্রাইক দ্বারা আবরণ যুক্ত চুনাপাথরের অঞ্চলকে কারেন ক্ষেত্র বা Karren Field বলে। উপরিউল্লিখিত কারেন ছাড়াও আরো অনেকগুলি কারেনের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলি হল-ওয়ান্ড (wand), হোল্ (hohl), মানডার (maander), ডেকেন (decken), হোলেন (hohlen), ট্রিট্ (tritt), রেজেনরিনেন (regenrinnen), স্পিটজ (spitz) এবং স্কিফুজেন (Schichtfugen) প্রভৃতি।