welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অবনমিত ভূমিরূপ (Erosional Landform)

অবনমিত ভূমিরূপ (Erosional Landform)


1. সিঙ্ক হোল (Sink Hole): চুনাপাথর অঞ্চলে প্রাথমিক অবস্থায় দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে অসংখ্য ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয়। এদের সিঙ্ক হোল বলে। কাস্ট ভূমিরূপ অঞ্চলে সিঙ্ক হোল একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ। এই ভূমিরূপের আকার এবং গভীরতা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন হয়। অধিকাংশ সিঙ্ক হোলের আকৃতি ফানেলের মতো হয় এবং এদের মুখটি যথেষ্ট প্রশস্ত হয়। সিঙ্ক হোলগুলি সাধারণত 3-10 মিটার গভীরতা এবং আয়তন কয়েক বর্গ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। যে সমস্ত চুনাপাথর অঞ্চলে দারণের সংখ্যা বেশি থাকে, সেখানে সিঙ্ক হোল উপরের দিকে বেশি ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ নীচের দিকে অপসারিত হয়। উৎপত্তি অনুসারে সিঙ্ক হোলকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-ডোলাইন (dolines) এবং ধস সিঙ্ক হোল (collapse sink hole)!

2. সোয়ালো হোল (Swallow Hole): যদি সিঙ্ক হোলের উপর মাটির আবরণ না থাকে এবং জল ভূপৃষ্ঠ থেকে সরাসরি গর্ত দিয়ে ভূগর্ভে চলে যায় তখন তাকে সোয়ালো হোল বলে। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহ ভূ-অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করার ফলে সৃষ্ট উন্মুক্ত গহবরকে সোয়ালো হোল বলে। ইংল্যান্ডের 'গ্যালিং মাইল' নামক সোয়ালো হোলটির গভীরতা প্রায় 1100 মিটার। সোয়ালো হোল অনেকটা সরু খালের মতো দেখতে হয়। কুমায়ুন হিমালয়ের দেরাদুনে অসংখ্য সোয়ালো হোল দেখতে পাওয়া যায়। সোয়ালো হোল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন পুইট (Puit), আভেন (Aven), গুফ্রে (Gufre)।

3. পোনর (Ponor): চুনাপাথর যুক্ত সোয়ালো হোল দিয়ে বৃষ্টির জল যে পথে প্রবেশ করে, সেই পথকে পোনর বলে। অর্থাৎ চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত ক্ষয়রোধের ফলে গঠিত গর্ত বা সোয়ালো হোলগুলি দিয়ে জল যে নলাকৃতি পথে ভুগর্ভে প্রবেশ করে, সেই পথগুলিকে পোনর বলে। এই ধরনের পথগুলি উল্লম্ব এবং অত্যন্ত খাড়া ঢালযুক্ত হয়।

4. ডোলাইন (Doline): কার্স্ট অঞ্চলের অবনমিত ভূমিরূপগুলির মধ্যে একটি অন্যতম হল ডোলাইন। স্লভেনিয়ান (slovenian) শব্দ 'ডোলিনা' থেকে 'ডোলাইন' শব্দটি এসেছে। যার অর্থ ভূমিরূপের মধ্যে এক অবনমন। তাই ডোলাইন প্রকৃত পক্ষে সিঙ্ক হোলের নামান্তর। দীর্ঘদিন ধরে চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে দ্রবণ ও ক্ষয়কার্যের ফলে সোয়ালো হোলগুলি ক্রমশ প্রসারিত হয়ে বড়ো গর্তে পরিণত হয়। এই বড়ো গর্তগুলিকে ডোলাইন বলে। প্রকৃতপক্ষে ডোলাইনগুলি এক ধরনের বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকারে আবন্ধ নিম্নভূমি। এদের গভীরতা 1 থেকে 100 মিটার এবং আয়তন 60 থেকে 1000 বর্গমিটার। সাধারণত দারণযুক্ত বিশুদ্ধ চুনাপাথর গঠিত সমতল অঞ্চলে কিংবা শুদ্ধ নদী উপত্যকায় ডোলাইন সৃষ্টি হয়। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেঙ্গ এদের গভীরতা, আয়তন, সংখ্যা এবং ক্ষেত্রফল বাড়তে থাকে। ডোলাইন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যথা-ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে দ্রবীভূত হয়ে দ্রবণ ডোলাইন কিংবা গুহার ছাদ ধসে গিয়ে ধস ডোলাইন তৈরি হতে পারে। রোরাগুহা রেলস্টেশনের বিপরীত পার্শ্বে রোরাগুহা ফানেলের আকৃতির গর্তটি একটি আদর্শ ডোলাইন। এছাড়াও আড্রিয়াটিক উপকূলে অসংখ্য ডোলাইন দেখতে পাওয়া যায়। উৎপত্তি অনুসারে ডোলাইনকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়- (a) দ্রবণ ডোলাইন, (৮) ধস ডোলাইন (c) দ্রবণ-পাইপ ডোলাইন, (d) অবনমিত ডোলাইন (৪) কম্পিট ডোলাইন।

5. দ্রবণ প্যান (Solution Pan): সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত চুনাপাথরের স্তরে দ্রবণের ফলে উৎপন্ন গর্তগুলি আকারে বড়ো ও গভীর হলে তাকে দ্রবণ প্যান বলে। এই গর্তগুলি প্রশস্ত ও বৃহদাকার হয়। প্রকৃতপক্ষে দ্রবণ প্যান হল ডোলাইনের একটি পরিবর্তিত রূপ যা ডোলাইনের তুলনায় অগভীর এবং বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও ইন্ডিয়ানা প্রদেশে উচ্চ নদী অঞ্চলে একটি দ্রবণ প্যানের সৃষ্টি হয়েছে।

6. কার্স্ট হ্রদ (Karst Lake): ডোলাইনের তলদেশে জলধৌত কাদা সঞ্চিত হয়ে ওর মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠের জল ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে না। তখন সেই ডোলাইনের মধ্যে জল জমে জলাশয় বা হ্রদের সৃষ্টি হয়। এই ধরনের হ্রদকে কার্স্ট হ্রদ বলে। ভৌম জলস্তরের উপরে এই ধরনের জলের সঞ্চয় একটি ক্ষুদ্রাকার কার্স্ট হ্রদ বা সিঙ্ক হোল পুকুর গঠন করে। কার্স্ট হ্রদগুলির জলতল ভৌম জলের উর্ধ্বসীমার সঙ্গে একই তলে অবস্থান করে।

7. কাস্ট জানালা (Karst Window): ভূবিজ্ঞানী ম্যালভের মতে, চুনাপাথর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ নদী সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই গর্ভস্থ নদীর গতিপথে ভূপৃষ্ঠের ধসের ফলে কিংবা সুড়ঙ্গের ছাদ ধসে যাওয়ার ফলে গঠিত। কোনো প্রতিবন্ধকের ভেতর দিয়ে ওই নদীটিকে একটি গুহার থেকে বেরিয়ে অপর একটি গুহার মধ্যে প্রবেশ করতে দেখা গেলে, তাকে কাস্ট জানালা বলে। অর্থাৎ সুড়ঙ্গের ধসে যাওয়া যে অংশ দিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূগর্ভস্থ নদীকে দেখা যায়, তাকে কার্স্ট জানালা বলে। অন্ধ্রপ্রদেশের বোরা গুহা থেকে গোমানী নদীর প্রবাহকে দেখা যায়। ভূগর্ভে প্রবাহিত নদী ধসের জন্য সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে একটি গর্ত থেকে ভূপষ্ঠে বেরিয়ে আসে এবং অপর একটি গর্তের মধ্য দিয়ে পুনরায় ভূগর্ভে প্রবাহিত হয়।

৪. উভালা (Uvala): ভূ-বিজ্ঞানী রে (Wray, 1922)-এর মতে বসনিয়াতে ব্যবহৃত এই শব্দের অর্থ খাড়া প্রান্ত, চওড়া ও প্রশস্ত তলদেশ বিশিষ্ট বিশালাকার নিম্নভূমি। যেটি মূলত ছাদ ধসে তৈরি হয় এটি উভালা নামে পরিচিত। আবার সিজিক (Cvigic, 1960)-এর মতে, অনেকগুলি সিঙ্ক হোল সংযুক্তির ফলে গঠিত যৌগিক সিঙ্ক হোলকে উভালা বলে। অর্থাৎ ডোলাইনগুলি জল মিশ্রিত CO₂-র প্রভাবে দীর্ঘদিন ব্যাপী ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে ক্রমশ বড়ো হয়ে যে বিশাল গুহা বা গর্তের সৃষ্টি করে তাকে উভালা বলে। অনেক সময় জল মিশ্রিত CO₂-র দ্বারা গৃহার ছাদ ধসে পড়লে যে বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে উভালা বলে কিংবা ধসের ফলে দুই বা ততোধিক ডোলাইন একত্রে মিশে যে বিশাল গহ্বরের সৃষ্টি করে তাকে উভালা বলে। এগুলির ব্যাস 4-5 km হয়। চারপাশের প্রান্তভাগে চুনাপাথর গঠিত বন্ধুর ও ভগ্নপ্রায় এবং মাঝে মাঝে উচ্চভূমির মতো অবশিষ্ট চুনাপাথরের ঢিবি উভালায় দেখা যায়। চুনাপাথরের শিলাস্তরে পরপর সজ্জিত ফাটলের প্রসারণকে বলে রৈখিক আকৃতির উভালা (longated uvala) বলে। আবার দ্রবণ কূপের সংযুক্তির ফলে যে ধরনের উভালা তৈরি হয়, যা যৌগিক উভালা (compound uvala) নামে পরিচিত। উভালার মধ্য দেশে কোনো পৃষ্ঠপ্রবাহ থাকে না। বৃষ্টির সমস্ত জল ভূ-অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে, সেই সঙ্গে খাড়া পার্শ্বদেশগুলি ক্রমশ নীচু হয়।

9. পোলজি (Polje): উভালা থেকে বড়ো আয়তনের অবনমিত নীচু, প্রায় বড়ো আয়তনের সমতল ভূমি ও খাড়া পাড়যুক্ত ভূমিরূপগুলি পোলজে নামে পরিচিত। চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল জল মিশ্রিত কার্বনিক অ্যাসিডের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত বিশালাকৃতির শুষ্ক উভালাগুলিকে পোলজে বলে। কিন্তু এর গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। অনেকের মতে, ভূ-অভ্যন্তরে জলের অনুপ্রবেশের ফলে জল ও পাথরের দ্রবণ কার্যের ফলে বিশালাকৃতির গুহা ছাদ ধসে পোলজের সৃষ্টি হয়েছে। আবার Trudgill-এর মতে, পোলজের গঠন এবং খাড়া পার্শ্বদেশ চ্যুতির দ্বারা গঠিত। যাইহোক এর মধ্যভাগ খুব সমতল, মধ্যভাগে পৃষ্ঠ প্রবাহযুক্ত নদীবিন্যাস দেখা যায় এবং আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট গভীর কর্দমের স্তর দ্বারা আবৃত থাকে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনার লিভানো পোলজে প্রায় 65 km লম্বা এবং 5-11 km চওড়া। ছত্তিশগড়ের রায়পুর-রাস্তার সড়কের উপর ধামতারিতে পোলজে দেখা যায়। অনেক সময় পোলজের মধ্যে জল জমে পোলজে হ্রদের সৃষ্টি হয়।

10. হামস্ (Hums): চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে জলের সঙ্গেঙ্গ কার্বনিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় শিলার দ্রবণ কার্যের ফলে প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চল বসে গিয়ে যে পোলজের সৃষ্টি হয়, অনেক সময় এই পোলজের উপর চুনাপাথরের বিভিন্ন খণ্ডগুলি সঞ্চিত হয়ে ছোটো ছোটো ডিবি বা টিলার ন্যায় বা অবস্থান করে এগুলিকে হামস বলে। হামসকে কোথাও হেস্ট্যাক পাহাড় এবং কোথাও পেপিলো পাহাড় বলে। বারপুর জেলার কাদাপাথর গঠিত হামসগুলিকে স্থানীয় ভাষায় রাবণ ভাটা বলে। এই টিলাগুলির ঢাল অধিকাংশ ক্ষেত্রে 20°-30° পর্যন্ত হয়ে থাকে।

11. কাস্ট সমভূমি (Karst Plain): বিস্তীর্ণ চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টির জলে সৃষ্ট অসংখ্য সিঙ্ক হোলযুক্ত সমভূমিকে কার্স্ট সমভূমি বলে। এরূপ সমভূমি মৃদু ঢালযুক্ত হয়। এই ধরনের ভূপ্রকৃতিকে সিঙ্ক হোল সমভূমিও বলা হয়। এই কার্স্ট সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহের সময় কেবল বড়ো বড়ো নদী, যেগুলি গভীর নিম্নক্ষয়ের দ্বারা চুনাপাথরের স্তরকে এড়িয়ে চলে, সেগুলি ছাড়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীগুলি ভূ-অভ্যন্তরে হারিয়ে যায়।

12. চুনাপাথরের মেঝে (Limestone Floor): চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে অসংখ্য কারেন ও ক্লিন্টস গঠিত হলে অঞ্চলটি এবড়োখেবড়ো বা বন্দুর আকৃতি ধারণ করে। এই ধরনের ভূপৃষ্ঠকে চুনাপাথরের মেঝে বলে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01