নদী দ্বারা সৃষ্ট কাস্ট ভূমিরূপ (Karst Landform by Fluvial Erosion)
1. গিরিখাত (Gorge): নদী কার্যের ফলে উল্লেখযোগ্য চুনাপাথর গঠিত ভূমিরূপ হল গিরিখাত। সাধারণত এই ধরনের উপত্যকা তখনই সৃষ্টি হয়, যখন ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে অবস্থানরত চুনাপাথরের স্তরের ওপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। নদী দ্রবণ প্রক্রিয়ায় চুনাপাথরকে নীচের দিকে দ্রুত ক্ষয় করে। নদী পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা আরও সক্রিয়ভাবে উপত্যকাকে গভীর করতে থাকে। ফলস্বরূপ খাড়া ঢাল বিশিষ্ট গিরিখাত সৃষ্টি হয়। আবার সুড়ঙ্গোর ছাদ ধসে পড়ে গিরিখাত সৃষ্টি হতে পারে। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ডার্বিশায়ারের ডোভ (dove) ও ম্যানিফোল্ড (manifold) উপত্যকা ও ফ্রান্সের টার্ন গিরিখাত চুনাপাথর অঞ্চলের গিরিখাতের উদাহরণ। ভারতের গোদাবরী নদীতে এই ধরনের গিরিখাত সৃষ্টি হয়েছে।
2. অন্ন্ধ উপত্যকা (Blind Valley): কার্স্ট অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদী সিঙ্ক হোলে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন নদীটি হঠাৎ তার গতি হারিয়ে ফেলেছে। তাই নদীটির সিঙ্ক হোল পর্যন্ত প্রসারিত অংশকে অন্ধ উপত্যকা বলে। অর্থাৎ চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ক্ষয়কার্য শুরু হওয়ার পর প্রথম পর্বে পৃষ্ঠদেশে নদী বিন্যাসের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে দ্রবীভবনজাত কূপ, ডোলাইন, উভালার মধ্যে পৃষ্ঠদেশের নদী অধোগামী হয়, তখন উপরের শুষ্ক নদীখাতটি অন্ধ উপত্যকা রূপে বিরাজ করে এবং এই উপত্যকায় নদীখাত দেখা যায় কিন্তু কোনো প্রবাহ থাকে না। কিন্তু, নদীর গতিপথের শেষ ভাগে কূপ, ডোলাইন কিংবা গুহার নদীটি অবলুপ্ত হয়। এই উপত্যকায় সিঙ্ক হোল পর্যন্ত অঞ্চল জলে পূর্ণ থাকতে দেখা যায় এবং ক্ষয়কার্য বেশি হয় বলে উপত্যকাটি গভীর হয়।
3. শুদ্ধ উপত্যকা (Dry Valley): চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল নদীর প্রবাহপথে সোয়ালো হোল, ডোলাইন, পোনর প্রভৃতি সৃষ্টি হলে নদীর জল এই সমস্ত গর্তের মধ্যে দিয়ে চুনাপাথরের গহবরে চলে যায়। ফলে উপরের নদী উপত্যকাটি জলের অভাবে শুকিয়ে যায় কিংবা বছরের বেশির ভাগ সময়ে জলশূন্য অবস্থায় থাকে। এই জলহীন উপত্যকাকে শুদ্ধ উপত্যকা বলে। কিন্তু অনেক সময়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে জল সিঙ্ক হোল দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পেরে শুদ্ধ উপত্যকাকেই জলপূর্ণ করে রাখে। আবার, বর্ষা শেষ হয়ে গেলে পুনরায় সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে। বোরা ও কারেগুডা অঞ্চলে এই ধরনের কতকগুলি শুদ্ধ উপত্যকা লক্ষ করা যায়।
4. প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ ও প্রাকৃতিক সেতু (Natural Tunnel and Natural Bridge): কার্স্ট অঞ্চলের ক্ষয়কার্যের শেষ পর্যায়ে ধসের জন্য যেমন উভালা সৃষ্টি হয় তেমনি ভূগর্ভস্থ নদীগুলি প্রস্রবণের আকারে ভূপৃষ্ঠে দেখা যায়, এদের রাইস বা রিসারজেন্ট বলে। ধসের পরে সুড়ঙ্গোর অবশিষ্ট অংশকে স্বাভাবিক সুড়ঙ্গ বলে। মধ্যপ্রদেশের মারাদেও পর্বতে স্বাভাবিক সুড়ঙ্গ লক্ষ করা যায়। ভারজিনিয়া রাজ্যের প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গটি প্রায় 300 মিটার দৈর্ঘ্য 40-42 মিটার প্রস্থ ও 35 মিটার উচ্চ এবং চওড়া 15 মিটার। মূলত চুনাপাথরের দ্রবণ কার্যের মাধ্যমে এই ধরনের সুড়ঙ্গ সৃষ্টি হয়।
উপরের চুনাপাথরের স্তর দুপাশে অবনমিত হলে মাঝের অংশটি সাঁকোর মতো ভূমিরূপ গঠন করে। প্রধানত গহবর ও গুহাগুলির দুপাশ উন্মুক্ত হলে মাঝের শিলাস্তরটি প্রাকৃতিক সাঁকো গঠন করে। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গের ছাদ ধসে পড়তে থাকলে সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ক্রমশ কমতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে ছাদের কিছুটা অংশ সেতুর মতো অবস্থান করে, একে প্রাকৃতিক সেতু বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উটা, মিসৌরি অঞ্চলে বহু প্রাকৃতিক সেতুর সৃষ্টি হয়েছে।