welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূকম্পন তরঙ্গ(Seismic Wave)

ভূকম্পন তরঙ্গ(Seismic Wave)


ভূমিকম্পের সময় যে শক্তি নির্গত হয় তা পাথরের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে। এই সময় যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে ভূকম্পন তরঙ্গা (seismic wave) বলে। এই তরঙ্গের সাহায্যে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে বিশদভাবে জানা যায় যে কোনো প্রকার ভূমিকম্পের সময় ভূকম্পন কেন্দ্র থেকে একই সঙ্গে তিন ধরনের ভূকম্পীয় তরঙ্গের উৎপত্তি হয়। এইসব তরঙ্গ ভূকম্পন কেন্দ্র হতে বিভিন্ন দিকে, বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন গতিতে এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রবাহিত হয়। ভুভূকম্পন তরঙ্গের বিভিন্ন বিষয়গুলি ভূকম্পলিখ যন্ত্রের (Seismograph) সাহায্যে পাঠ নেওয়া হয়। এখন ভূমিকম্প বিষয়ক অত্যাধুনিক যন্ত্রটিকে সিসমোগ্রাফের (seismograph) বদলে সিসমোমিটার (seismometer) বলা হয়। কম্পনের তরঙ্গের গতিবেগ নির্ভর করে স্তরের ঘনত্বের ওপর। আবার স্তরের অবস্থান যতই ঘন হবে ততই তরঙ্গের গতিবেগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে একই স্থানে অবস্থিত ভুকম্পলেষ যন্ত্রগুলিতে কম্পনের রেখাগুলোর মধ্যে তারতম্য লক্ষ করা যায়।

ভূকম্পলেখ যন্ত্রের সাহায্যে তরঙ্গ। কোনো শিলার মধ্যে দিয়ে, কী প্রকার তরঙ্গ, কতদূর যাবে এবং তার গতিবেগ কী পরিমাণ তা জানা যায়। পৃথিবীর আকার অনুযায়ী এই তরঙ্গগুলি বিভিন্ন গতিতে অগ্রসর হয়।

ভূকম্প তরঙ্গের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Seismic Wave)

ভূমিকম্পের তরঙ্গাগুলিকে তাদের দৈর্ঘ্য ও প্রবেশ্যতা অনুসারে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা (৯) অনুদৈর্ঘ্য। তরঙ্গা বা প্রাথমিক ভালো বা Primary wave, (b) তির্যক তরঙ্গা বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গং বা গৌন তরঙ্গা বা Secondary wave এবং (c) পৃষ্ঠতরক্ষা বা পার্শ্বতরঙ্গা বা Long wave বা Surface wave। এদের মধ্যে P এবং ১ তরঙ্গ ভূগর্ভের মধ্য দিয়ে যায়। তাই এদের ভূ-অভ্যন্তরস্থ ভরলা বা Body wave বলে। । তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে যায় বলে একে ভূপৃষ্ঠস্থ তরঙ্গ বা Surface wave বলে। নীচে ভরজগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-

1. অনুদৈর্ঘ্য তরলা (Primary Wave): P তরঙ্গ হল অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। এক্ষেত্রে তরঙ্গা যেদিকে প্রবাহিত হয়, মাধ্যমের কণাগুলি সেদিকেই কাঁপতে থাকে। এই তরঙ্গা কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় সমস্ত বস্তুকণার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই তরঙ্গটি ভূকম্প পরিলেখন যন্ত্রে লিপিবদ্ধ হওয়ার পর কিছুটা সময় সরলরেখার মতো অঙ্কিত হয়। তারপর কিছুক্ষণ আলোড়ন ঘটে সরলরেখাটি আঁকাবাঁকা রেখা লিপিবদ্ধ হয়। এই তরঙ্গটি পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অপর প্রান্তে চলে যেতে পারে। এই তরঙ্গের গতিবেগ নির্ভর করে পৃথিবীর অভ্যন্তরে অবস্থানরত পদার্থের অবস্থা, ধর্ম ও ঘনত্বের উপর। ভূ-অভ্যন্তরে পদার্থের ঘনত্বও অনড়তার সঙ্গো ? তরঙ্গের গতিবেগের সম্পর্ক সমানুপাতিক। অর্থাৎ পদার্থের ঘনত্ব ও অনড়তা বাড়লে এই তরঙ্গের গতিবেগও বাড়ে আবার কমলে কমে। ভূত্বকে এর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে 4.28-6.5 কিমি, গুরুমণ্ডলে 6.47-13.4 কিমি, এবং কেন্দ্রমন্ডলে 8.0-11.3 কিমি। এই তরঙ্গা বারবার কম্পন সৃষ্টি করে বলে কোনো যন্ত্র ছাড়াই এর শব্দ শোনা যায়।

প্রাথমিক তরঙ্গের গতিবেগ নীচে সমীকরণের সাহায্যে দেখানো হল-

V¹= (k + 4/3 * mu)/p V² = mu/p 

এখানে v_{1} = প্রাথমিক তরঙ্গের গতিবেগ, v_{2} = অনুরতঙ্গের গতিবেগ, k = স্থিতিস্থাপকতার আয়তনাঙ্ক, (bulk modulus of elasticity), mu = 1 কাঠিন্যের মানাঙ্ক (modulus বা rigidity) এবং p = বস্তুর ঘনত্ব।

প্রাথমিক তরঙ্গ সংকোচন প্রসারণ তরঙ্গ বলে তার গতিবেগ অনুতরঙ্গের চেয়ে বেশি কারণ অনুতরঙ্গ শুধুই পীড়ন তরঙ্গঙ্গ।

2. তির্যক তরঙ্গ (Secondary Wave): ভূমিকম্পলেখতে প্রাথমিক তরঙ্গা লিপিবন্ধ হওয়ার পর, লেখচিত্রে কিছুটা সময় চিত্রটি সরলরেখার ন্যায় অবস্থান করে। পরবর্তী সময়ে ক্ষণস্থায়ী ভূ-আলোড়ন ঘটলে লেখচিত্রটি সরলরেখার ন্যায় অবস্থান না করে আঁকাবাঁকা রেখার ন্যায় রূপ নেয়। পরে আসা এই তরঙ্গগুলিকে তির্যক তরঙ্গ বা অনুতরঙ্গ বলে। এই তরঙ্গগুলি সাধারণত সমকোণে প্রবাহিত হয়। ভূ-অভ্যন্তরে এই তরঙ্গ বেশি দূর যেতে পারে না। কারণ এই তরঙ্গ শুধুমাত্র কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। সেই কারণে তরল বহি কেন্দ্রমন্ডল অতিক্রম করে এই তরঙ্গ অন্যপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে না। S তরঙ্গ হলে অনুপস্থ তরঙ্গ অর্থাৎ তরঙ্গ যেদিকে প্রবাহিত হয় মাধ্যমিক কনাগুলির তার উল্লেখ্য দিকে কাটতে থাকে। এর এর গতি প্রবাহ আলোক তরঙ্গের মতো। এর গতিবেগ p তরঙ্গ অপেক্ষা কম, অর্থাৎ ভূত্বকের প্রতি সেকেন্ডে 2.29- 3.56 কিমি এবং গুরু মণ্ডল 3.55-7.23 কিমি গতিবেগ। প্রাথমিক তরঙ্গের পরে এই তরঙ্গ উপকেন্দ্রে পৌঁছায়। এই তরঙ্গে এরকম কম্পাঙ্ক যথেষ্ট বেশি থাকে বলে তরঙ্গের দৈর্ঘ্য পরিমাণ কম থাকে ।

3. পৃষ্ঠ তরল্য (Surface Wave): এই তরঙ্গ উপকেন্দ্র থেকে দীর্ঘ পরিধিগত পথে ভূপৃষ্ঠ বরাবর প্রবাহিত হয় বলে একে Long wave-ও বলে। এই তরঙ্গ্য সর্বদা ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠের গভীরে প্রবেশ করা মাত্র হারিয়ে যায়। এই তরঙ্গ অত্যন্ত ধীর গতিসম্পন্ন। এই তরঙ্গো কম্পাঙ্ক (frequency) সবচেয়ে কম বলে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গঠনকারী উপাদানের প্রকৃতি অনুসারে মাধ্যমগুলোকে বিভক্ত করে এটি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছায়। এটি ভূপৃষ্ঠে শিলামণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে সীমারেখা সৃষ্টি করে। এই তরঙ্গের গতিবেগ খুবই কম অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে 5-6.5 কিমি। এই। তরঙ্গোর বৈশিষ্ট্য ও গতিবেগ পর্যবেক্ষণ করে P ও তরঙ্গের কার্যাবলি এবং শিলার প্রকৃতি ও গভীরতা সম্পর্কে জানা যায়। এই তরঙ্গ ভূত্বকের উপর অবস্থিত বস্তুগুলিকে উপরে-নীচে ও দুই পাশে চলনশীল করে এবং ব্যাপকভাবে ভাঙন ঘটায়। অর্থাৎ ভূকম্পনজনিত ধ্বংসকাণ্ডের জন্য এই তরঙ্গ সর্বাধিক দায়ী। এই তরঙ্গ দুই প্রকার যথা-লাভ তরঙ্গ (love wave) এবং র‍্যালে তরঙ্গা (rayleigh wave) 1

S তরঙ্গের মতো বস্তুকণার ওঠানামার মাধ্যমে যে তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হয় তাকে লাভ তরঙ্গ বলে। ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ A. F. H. Love, 1911 সালে সর্বপ্রথম এই তরঙ্গের পরিচিতি ঘটান। ভূপৃষ্ঠে এর গড় গতিবেগ সেকেন্ডে 2-4.4 কিমি।

বিজ্ঞানী Lord Rayleigh, 1885 সালে Rayleigh তরঙ্গের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেন। এই তরঙ্গ বস্তুকণা ওঠানামা এবং সংকোচন প্রসারণ এই দুটি প্রকৃতির সমন্বয়ে ভূপৃষ্ঠের ওপরের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর গতিবেগ সেকেন্ডে 2.0-2.4 কিমি।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01