welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নদীর পুনর্যৌবন(Rejuvenation of the River)

নদীর পুনর্যৌবন(Rejuvenation of the River)


প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্রতলের উচ্চতার প্রবির্তন ঘটলে ক্ষয়চক্র বিঘ্নিত হয়। নদীর তখন নিম্নক্ষয়ের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। এর ফলে নদী তার যৌবন অবস্থা ফিরে পায় ও আবার ক্ষয়চক্র শুরু করে। একে নদীর ভূমির পুনর্যৌবন লাভ বা Reju-venation বলে। এর ফলে নদীর দৈর্ঘ্য ও পার্শ্বরেখা চিত্র বরাবর বেশ কিছু নতুন ভূমিরূপ গড়ে ওঠে যা আগের ক্ষয়চক্রে দেখা যায় নি।

1. উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা (Valley in Valley): নদী উপত্যকার আড়াআড়ি প্রস্থচ্ছেদে উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা অন্যতম ভূমিরূপ। পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদী দ্রুত ক্ষয় করতে শুরু করে। ফলে অচীরেই নদীর উর্ধ্ব ও নিম্ন প্রবাহের মধ্যে ভূপ্রকৃতির মধ্যে অসঙ্গতি তৈরি হয়। আগের উপত্যকার ঢাল মৃদু থাকে কিন্তু নতুন উপত্যকার ঢাল খাড়াই হয়। ফলে পুরাতন নদী উপত্যকার মধ্যে আবার এক নতুন উপত্যকা তৈরি হয়। একে উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বা দ্বিতল উপত্যকা (two-storyed valley) বলে। উভয় উপত্যকার মধ্যের সংযোগস্থলকে শোল্ডার ভূমি (shoulder land) বলে।

2. নদী মঞ্জু (River Terrace): নদী মণ্য নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত এক আদর্শ ভূমিরূপ। পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদীর দ্রুত নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে পুরনো উপত্যকার মধ্যে নতুন করে গভীর ও সংকীর্ণ উপত্যকার সৃষ্টি হয়। নতুন উপত্যকার দুপাশে পুরনো উপত্যকার ক্ষয়িত অংশ উঁচু মঞ্চর মতো অবস্থান করে একে নদী মঞ্জু বলে। পশ্চিম হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে অসংখ্য নদী মঞ্চ দেখা যায়। নদী মঞ্চ অনেক প্রকারের হতে পারে। যথা-

(a) যুগ্ম নদী মঞ্চ (Paired terrace): নদীর দু'পাশে সমান সংখ্যার নদী মঞ্চ গঠিত হলে এবং তাদের উচ্চতা সমান হলে তাদের প্রতিমঞ্চ বা যুগ্ম নদী মঞ্চ বলে। পুনর্যৌবন লাভের আগে কেবল পার্শ্ব ক্ষয় এবং পুনর্যৌবন লাভের পরে কেবল নিম্ন ক্ষয় হলে এরূপ নদী মঞ্চ তৈরি হয়।

(b) অযুগ্ম নদী মঞ্চ (Non-paired terrace): নদীর দু'পাশে মঞ্চগুলির সংখ্যা ও উচ্চতা অসমান কিংবা বিসদৃশ হলে তাকে অপ্রতিসম বা অযুগ্ম নদী মঞ্চ বলে। নদীর নিম্নক্ষয় ও পার্শ্বক্ষয় উভয়ে একসঙ্গে চললে এবং অসম হারে চললে এজাতীয় নদী মঞ্চ তৈরি হয়। অধিকাংশ নদী মঞ্চ এ জাতীয় 2. অনুগামী নদী (Consequent River): যে সমস্ত নদী ভূমির প্রাথমিক চাল বরাবর সমান্তরাল শিলাস্তরের নতিকে অবলম্বন করে প্রবাহিত হয় তাদেরকে অনুগামী নদী বলা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নদীর আদি প্রবাহপথ ভূমির প্রাথমিক ঢাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিজ্ঞানী ডেভিস (W. M. Davis)-এর মতে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে প্রাথমিক পর্যায়ে অনুগামী নদী গড়ে ওঠে। শিলা স্তরের প্রাথমিক নতিকে অনুসরণ করে বলে এই নদীকে নতি নদীও (ip stream) বলা হয়। ভারতের কুয়া, গোদাবরী, গঙ্গা প্রভৃতি এজাতীয় নদী।

3. পরবর্তী নদী (Subsequent River): শিলা ঢাল নয়, শিলার গঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নদী হল অনুগামী নদী। অনুগামী নদীর উৎপত্তির পরই দুপাশ থেকে এই সব নদী উৎপত্তি লাভ করে অনুগামী নদীর সঙ্গ্যে আড়াআড়ি ভাবে মিলিত হয়। এই নদীগুলি শিলাস্তরের আয়াম বরাবর প্রবাহিত হয়। তাই এদের আয়াম নদী (Strike stream) বলে। মস্তক ক্ষয়ের মাধ্যমে এই নদীর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। গল্যার উপনদী শোন আদর্শ পরবর্তী নদীর উদাহরণ।।

4. পুনর্ভবা নদী (Resequent River): একনত গঠনযুক্ত অঞ্চলের মৃদু ঢালে প্রাবাহিত নদীগুলি অনুগামী নদীর সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে পরবর্তী নদীতে মিলিত হয়। এদেরকে পুনর্ভবা নদী বলা হয়। নদীগুলি ক্ষয়চক্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে গঠিত হয় তাই নদীগুলি বয়সে নবীন। হিমালয়ের নদীগুলির অংশবিশেষ পুনর্ভবা নদীর উদাহরণ।

5. পূর্ববর্তী নদী (Antecedent River): সমগ্র নদী না হলেও নদীর অংশবিশেষ অনেক সময় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি ভূ-আন্দোলনের শিকার হয়। এক্ষেত্রে ভূমিভাগের উত্থান হলে কোনো নদী যদি নিম্নক্ষয়ের দ্বারা তার পূর্বের গতিকার্য ফিরে পায় তখন তাকে পূর্ববর্তী নদী বলা হয়। ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয় পর্বতের গঠনকে অনুসরণ না করে আড়াআড়ি ভাবে কেটে অরুণাচলে প্রবেশ করেছে। মনে করা হয় ব্রহ্মপুত্র নদের এই অংশটি পূর্ববর্তী নদীর আদর্শ নদী।

6. বিপরা নদী (Obsequent River): অনুগামী নদীর বিপরীতে অর্থাৎ ভূমির প্রান্তিক ঢালের বিপরীতে নদী প্রবাহিত হলে তাকে বিপরা নদী বলে। শিলাস্তরে নতির বিপরীতে প্রবাহিত হয় বলে একে বিপরীত অনুগামী নদী বলা হয়। এই নদীগুলি সাধারণত ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়। জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী পরিণত পর্যায়ে কুয়েস্তা (cuesta) ভূমির খাড়া ঢালে এই নদী দেখা যায়। হিমাচল হিমালয়ের উত্তর ঢালের শোন ও কোশী নদী বিপরা নদীরূপে প্রবাহিত।

7. অননুক্রম নদী (Discordant Drainage): নদী যে ভূখণ্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তার ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে যদি নদী প্রবাহের কোনো মিল না থাকে তবে তাকে অননুক্রমী নদী বলে।

৪. অনুদৈর্ঘ্য প্রস্থচ্ছেদ (Long Profile of a River): উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী প্রবাহ বরাবর নদী খাতের প্রস্থচ্ছেদকে অনুদৈর্ঘ্য প্রস্থচ্ছেদ বলে।

9. অসংযত নদী (Insequent River): যখন কোনো নদী মস্তকের দিকে ক্ষয় কার্য করতে করতে জলবিভাজিকাকে অতিক্রম করে অন্য দিকের নদীর সঙ্গে মিশে যায় এবং এর সঙ্গে সেই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে নদীর অবস্থানের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না তখন তাকে অসংযত নদী বলে। প্রধান নদীর সঙ্গে যে স্থানে এরা মিলিত হয় তাকে সংগমস্থল বলে।

10. ইয়াজু (Yazoo): ইয়াজু এক ধরনের উপনদী, যা প্রধান নদীর সাথ সমান্তরালে অনেক দূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে অবশেষে প্রধান নদীর সাথে মিলিত হয়। সাধারণত প্রধান নদীর পাশে গঠিত স্বাভাবিক বাঁধকে অতিক্রম করে এই উপনদী মিলিত হতে পারে না। উত্তরবঙ্গের করোলা নদী তিস্তা নদীর পাশে প্রায় 20 কিমি সমান্তরালে প্রবাহিত হয়েছে।।

11. ঈগার (Eagre): নদীর মোহানাতে সমুদ্রের থেকে জল প্রাচীরের মতো উঁচু হয়ে ভরা জোয়ারের সময় মাঝে মাঝেই ঢোকে, কিন্তু বিপরীতদিক থেকে আসা নদীর জলের স্রোতের জন্য এর তীব্রতা কমতে থাকে এবং তা ভাঙতে থাকে। এই জাতীয় নদীর উপরের দিকে ওঠা প্রাচীরের মতো জলের স্রোতকে বিভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। ঈগার ও এই জাতীয় একটি স্রোত। যা ইংল্যান্ডের ট্রেন্ট নদীর মোহানাতে লক্ষ করা যায়।

12. নদী পর্যায় (River Regime): নদীর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে জলপ্রবাহের প্রকৃতি তথা জলের পরিমাণের বাড়া-কমাকে নদী পর্যায় বলে। ঋতু অনুযায়ী এই পার্থক্য হয়। যেমন বর্ষা ঋতুতে নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আবার শুষ্ক ঋতুতে নদীতে জলের পরিমাণ হ্রাস পায়।

13. নদী গ্রাস (River Capture): দুটি অনুগামী নদী পাশাপাশি প্রবাহিত হলে তাদের মধ্যে একটি জলবিভাজিকার সৃষ্টি হয়। এই জলবিভাজিকার দুই ঢাল থেকে এই দুই অনুগামী নদীর সঙ্গে উপনদী বা পরবর্তী নদী মিলিত হয়।

(C) এছাড়াও আরও কয়েক প্রকার নদী মঞ্চ ভূ-বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন। যেমন প্রশস্ত নদী মন্ত্র (Wide terrace) -নদীর দু'পাশে মাঠের মতো বিস্তৃত সমতল মঞ্চের উপস্থিতি; ক্ষয় ও সন্ময়জাত নদী মণ্য (Cut and field terrace): নদীর পুনর্যৌবন লাভের আগে সঞ্চয়কার্যের প্রাধান্য থাকলে এবং পুনর্যৌবনের লাভের পরে, ক্ষয়কার্যের প্রাধান্য থাকলে; স্লিপ-অফ-স্লোপ মঞ্চ (slip off slope) নদী মঞ্চ স্থানে যদি গতিপথের পরিবর্তন হয়; লুকায়িত মঞ্জু (rock defended terrace)-নদী মঞ্চ স্থানে নদীর প্রবাহ পথে টিলা বা পাহাড় থাকলে শিলার পশ্চাতে নদী মঞ্চ ইত্যাদি।

3. নিক্ বিন্দু (Knick point): নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির মধ্যে অন্যতম হল নিক্ বিন্দু। পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদী অধিক নিম্নক্ষয় করে। গভীর ও সংকীর্ণ উপত্যকার তৈরি করে। এই নতুন উপত্যকা পুরনো অগভীর উপত্যকার সাথে এক খাড়াই ঢালে মিলিত হয় একে নিক্ বিন্দু বলে। নদী খাতের উচ্চ প্রবাহ পথের অংশ উত্থিত হলে কিংবা নিম্ন প্রবাহ অংশ অবনমিত হলে নিক্ গঠিত হতে পারে। অধিকাংশ সময় নিক বিন্দুর ওপরের অংশের মৃদু ঢাল এবং নীচের অংশের খাড়াই ঢালের উচ্চতাগত পার্থক্যের কারণে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। ভারতে নর্মদা নদীর উপর ধুয়াধর জলপ্রপাত এভাবে তৈরি হয়েছে। তবে নিক্ বিন্দু একটি অস্থায়ী ভূমিরূপ, কারণ এক্ষেত্রে মস্তকমুখী ক্ষয়ের (headward erossion) ফলে নিক্ বিন্দুও পিছনে সরতে থাকে এবং একসময় অবলুপ্ত হয়।

4. কর্তিত নদী বাঁক (Incised Meander): নদী বাঁক পুনর্যৌবন লাভে নতুন নতুন ভূমিরূপ তৈরি করে। পরিণত বা বার্ধক্য পর্যায়ে অধিকাংশ নদীতে বড়ো বড়ো নদীবাঁক দেখা যায়। পুনর্যৌবন লাভে অধিক নিম্নক্ষয়ের ফলে নদী তার বাঁকগুলি বজায় রেখে পলিস্তর কেটে নীচের ভিত্তি শিলার উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। একে কর্তিত নদী বাঁক বলে। এক্ষেত্রে বাঁকের উত্তল পাড়টি অবনত পাড়টির তুলনায় বেশি খাড়াই হয়। কর্তিত নদী বাঁক আবার দু'ধরনের, যথা-

(a) সমঢাল পরিখা নদী বাঁক (Entrenched meander): পুনর্যৌবন লাভে নদীর প্রবল নিম্নক্ষয় শুরু হয়। ফলে যদি নদীর দু'পাশে সমান খাড়া ঢাল বিশিষ্ট কর্তিত নদী বাঁকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তখন তাকে সমঢাল পরিখা নদী বাঁক বলে। এই নদী বাঁকের দু'পাশে যুগ্ম নদী মঞ্চ দেখা যায়।

(b) অসম ঢাল পরিখা নদী বাঁক (Ingrown meander): পুনর্যৌবন লাভে নদীর নিম্নক্ষয় দ্রুত হয়, তেমনি নদীর একপাশে পার্শ্বক্ষয়ও চলতে থাকে তখন নদী বাঁক একদিক খাড়াই ঢাল এবং আর একদিকে মৃদু ঢাল যুক্ত হয়। একে অসম পরিখা নদী বাঁক বলা হয়। এই নদী বাঁকের দু'দিকে অযুগ্ম নদী মঞ্চ গড়ে ওঠে। অসম চাল বিশিষ্ট নদী বাঁকে অনেক সময় অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ তৈরি হয়, একে বিচ্ছিন্ন নদী বাঁক (meander cut off) বলা হয়। এই বিচ্ছিন্ন নদী বাঁকের মাঝের উঁচু অংশ বিচ্ছিন্ন টিলার মতো অবস্থান করে। একে কেন্দ্রবাঁক (meander core) বলে।

5. প্রাকৃতিক সেতু (Natural Bridge): কর্তিত নদী বাঁকের ওপরে যদি ওপরে কঠিন শিলা এবং নীচে কোমল শিলা থাকে তাহলে পার্শ্বমুখী তলদেশ ক্ষয় দ্বারা নদী বাঁকের উভয় দিকে গুহার সৃষ্টি হয়, তখন নদী প্রবাহ পথের ওপরের কঠিন শিলা স্তরটি খিলান বা সেতুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে একে প্রাকৃতিক সেতু বলে। বলরাডো নদীর ওপর রেনবো ব্রিজ (Rainbow Bridge) হল একটি প্রাকৃতিক সেতু। এটি পৃথিবীর উচ্চতম প্রাকৃতিক সেতু।

6. সমোচ্চ শীর্ষভূমি (Accordent Summit Level): সমপ্রায় ভূমি উত্থিত হলেও ভূমির পুনর্যৌবন লাভ হয়। এক্ষেত্রে নদী খুব দ্রুত সমপ্রায় ভূমিকে ব্যবচ্ছিন্ন করে। এই ব্যবচ্ছিন্ন সমতল অংশগুলি জলবিভাজিকার ন্যায় অবস্থান করে। জলবিভাজিকাগুলি সমউচ্চতা হওয়ায় এ জাতীয় ভূমিরূপকে সমোচ্চ শীর্ষ ভূমিরূপ বলে। ভারতের রাঁচি অঞ্চলে প্র্যাট অঞ্চলে সমোচ্চ শীর্ষ ভূমিরূপ দেখা যায়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01