বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসগুলির ধর্ম (Properties of Major Atmospheric Gases)
1. নাইট্রোজেন (N_{2}) : বায়ুমণ্ডলে N_{2} গ্যাসের পরিমাণ সর্বাধিক, শতকরা 78.1 ভাগ। কিন্তু N_{2} নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসাবে বায়ুমণ্ডলে বিরাজ করে। নাইট্রোজেন প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরিতে সাহায্য করে। বিভিন্ন জৈব যৌগের মধ্যে N_{2} প্রধান উপাদান। কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া বায়ু থেকে N_{2} নিয়ে মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন যৌগ গঠন করে।
নাইট্রোজেন আগ্নেয়গিরির গ্যাসে, কয়লা থেকে উদ্ভূত গ্যাসে ও বিভিন্ন প্রস্রবণের গ্যাসেও পাওয়া যায়। প্রাণী ও উদ্ভিদের পক্ষে যদিও নাইট্রোজেন অপরিহার্য, তবুও এরা এই গ্যাস বায়ু থেকে সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না।
2. অক্সিজেন (O_{2}) : বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির মধ্যে O_{2} এর গুরুত্ব সর্বাধিক। O_{2} বায়ুতে আয়তন হিসাবে শতকরা 20.9 ভাগ এবং ওজোন হিসাবে শতকরা 23 ভাগ থাকে। এটি বর্ণহীন, স্বাদহীন ও গন্ধহীন গ্যাস। O_{2} খুব সক্রিয় গ্যাস, নিজে দাহ্য নয়, কিন্তু দহনের সহায়ক। শুধু শ্বসনকার্যে নয়, সাবমেরিনে, পর্বতশৃঙ্গ আরোহণে O_{2} ব্যবহৃত হয়। O_{2} গ্যাস বিভিন্ন শিলার সঙ্গে মিশে আবহবিকারে সাহায্য করে। অক্সিজেনের সংযোগে লোহায় মরচে পড়ে।
3. কার্বন ডাই-অক্সাইড (C*O_{2}) : বায়ুমণ্ডলে C*O_{2} র পরিমাণ খুব সামান্য (0.003%) হলেও এর অভাবে উদ্ভিদ জগৎ লোপ পেত। উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুতিতে (সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া) C*O_{2} অপরিহার্য। শিল্প বিকাশে এবং পরিবহনে উত্তরোত্তর কয়লা, খনিজ তৈল, প্রাকৃতিক গ্যাস, জ্বালানি কাঠের ব্যবহারের ফলে বায়ুতে C*O_{2} গ্যাসের পারিমাণ বাড়ছে। C*O_{2} সৌরতাপ শোষণ এবং বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। C*O_{2} পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকরিত দীর্ঘ তরঙ্গযুক্ত তাপকে শোষণ করে নিম্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। একে গ্রিন হাউস এফেক্ট (green house effect) বলে।
4. ওজোন গ্যাস (O_{3}) : অক্সিজেনের তিনটি পরমাণু মিলিত হয়ে ওজোন অণু সৃষ্টি করে। বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র কম-বেশি O_{3} এর অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও স্ট্রাটোস্ফিয়ারে 15-35 কিমি-এর মধ্যে এর ঘনত্ব সর্বাধিক। সেই কারণে ঐ অংশ ওজোন মণ্ডল (ozonosphere) নামে পরিচিত। অক্সিজেনের সঙ্গে ওজোনের প্রধান পার্থক্য এই যে অক্সিজেন যখন তার ভেতর দিয়ে সূর্যের যে-কোনো আলোকে অতিক্রম করতে (Transparent) সক্ষম, তখন ওজোন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (ultra violet ray)-কে অতিক্রম করতে না দিয়ে শোষণ করে। তাছাড়া ওজোন হলুদ (yellow) সবুজ (green) এবং অবলোহিত (infrared) রশ্মিকেও শোষণ করে। ফলে পৃথিবী অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক দিক থেকে বাঁচে। বর্তমানে অবশ্য ওজোন মণ্ডল আক্রান্ত। কোথাও কোথাও মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে ওজোন স্তর খুবই পাতলা হয়ে যাচ্ছে। একে ওজোন হোল (ozone hole) বলে। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে জানুয়ারি-ডিসেম্বর মাসে এরকম ওজোন হোল দেখা যায়।
5. জলীয় বাষ্প (H²O): বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুমণ্ডলের এই উপাদানের ওপর জলবায়ু অনেকাংশে নির্ভর করে। জলীয় বাষ্প ও ভূপৃষ্ঠে থেকে বিকৃত তাপের তিব তা হ্রাস করে। মেঘ, বৃষ্টিপাত, তুষার পাতে সাহায্য করে। উত্তাপের বিভিন্নতা এবং জলের উৎসের তারতম্যের জন্যে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণে পরিবর্তনশীল তাছাড়া ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় জলীয় বাষ্পের পরিমাপ তত কমতে থাকে।
6. নিষ্ক্রিয় গ্যাস (inert gas ) বায়ুমন্ডলে মোট আয়তনে 99 শতাংশের সামান্য বেশি নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এই তিনটি গ্যাস নিয়ে গঠিত। বাকি 1 শতাংশের সামান্য কম অংশ থাকে একাধিক গ্যাস যেমন- আইন,নিয়ন, হিলিয়াম,জেনন, হাইড্রোজেন । এদেরকে একসঙ্গে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে। নিষ্ক্রিয় গ্যাস গুলি বায়ুমণ্ডল, পৃথিবীর উপরিভাগ অথবা সমুদ্রের উপাদান গুলি সংঘের রাসায়নিক প্রক্রিয়া মিলিত হয় না।
.jpg)