আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিদ্যা(Meteorology and Climatology)
প্রাকৃতিক ভূগোলের শাখা হিসাবে আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিদ্যার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আবার এই দুই বিদ্যার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সেইসঙ্গে একে অপরের পরিপূরক। 'Meteorology' শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ হল "Discourse on things above"। বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল 350 B.C.-তে প্রথম Meteorologica থেকে 'Meteorology' শব্দটি সংগ্রহ করেন। এখানে আবহবিদ্যায় আবহমণ্ডলের উপাদানগুলি পদার্থ ও রসায়ন নিয়ে আলোচনা করে থাকে। আবহবিদ্যা হল নিম্ন বায়ুমণ্ডলের পদার্থবিদ্যা। এই বিদ্যা বায়ুমণ্ডল বা আবহমণ্ডলের কোনো একটি বিশেষ উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করে। আবার অন্যভাবে বলা যায় যে-আবহবিদ্যা বায়ুমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করে। আবহবিদ্যা মূলত আবহাওয়ার কোনো এক উপাদানের ভৌত অবস্থার বর্ণনা করে থাকে। আবহবিদ্যার কাজ হল পদার্থবিদ্যা ও ভূগোলের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা। এই বিদ্যা তার মৌলিক নীতিগুলি পদার্থবিদ্যা থেকে সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণে গঠিত বায়ুমন্ডলের প্রকৃতির বর্ণনায় প্রয়োগ করে। বিভিন্ন জলবায়ুবিদদের মতে আবহবিদ্যা ভূপৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের দ্বারা প্রভাবিত বায়ুর চাপ, তাপ ও আর্দ্রতার পরিবর্তন সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। এই বিদ্যা সমগ্র বায়ুমণ্ডলের বায়ুর সঞ্চালন সম্পর্কে পর্যালোচনা করে থাকে, কারণ এগুলির অধিকাংশ ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রকের (ভূপ্রকৃতি, সম্বল ও জলভাগের বণ্টন, উচ্চতা, অক্ষাংশ) দ্বারা বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
আবহবিদ্যার ভাগ (Division of Meteorology): আবহাওয়া বিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু হল বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির পর্যবেক্ষণ (observation), বিশ্লেষণ (analysis) এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া (weather forecasting)। আবহবিদ্যাকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
(b) গতিশীল আবহবিদ্যা (Dynamic Meteorology): এই বিদ্যা আবহমণ্ডলের গতি সঞ্চারক শক্তি এবং শক্তিসমূহের কার্যকারিতা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ ও আলোচনা করে।
(c) সিনপ্টিক আবহবিদ্যা (Synoptic Meteorology): এই বিদ্যা আবহমণ্ডলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আবহাওয়ায় বিভিন্ন অবস্থাগুলির বিস্তারিত আলোচনা করে এবং সেই অবস্থাগুলির বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্নে কিংবা সংখ্যার সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতিকে সিনস্টিক আবহবিদ্যা বলে।
(d) এরোনটিক্যাল আবহবিদ্যা (Aeronautical Meteorology): যে বিদ্যায় বিমান পরিবহনের জন্য বায়ুমণ্ডল অধ্যয়ন করা হয় তাকে এরোনটিক্যাল আবহবিদ্যা বলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, যে বিজ্ঞান আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, বায়ুমণ্ডল গঠনকারী উপকরণ ও বায়ুমণ্ডলের ঘটনাবলির বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে তাকে আবহাওয়াবিদ্যা বলে। (meteorology is mainly concerned with the physical analysis of the individual weather element. It explains and analysis the changes of air pressure, temperature and humidity that are brought about due to the effect of insolation on the earth's surface.)
জলবায়ুবিদ্যার ভাগ (Division of Climetology): জলবায়ুবিদ্যা বা Climatology শব্দটি গ্রিক শব্দ Klima এবং logos থেকে এসেছে। 'Klima' কথার অর্থ পৃথিবীর নতি (slope of the earth) এবং 'logos' কথার অর্থ পর্যালোচনা (discourse of study)। অর্থাৎ যে বিদ্যা জলবায়ুগত বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করে তাকে জলবায়ুবিদ্যা বলে। H. Z. Critchfield-এর মতে Climatology is the science that seeks to describe and explain the nature of climate, how it differs from place to place, and how it is related to man's activities.' অর্থাৎ জলবায়ুবিদ্যা হল এমন একটি বিজ্ঞান যা জলবায়ুর প্রকৃতি বিচার বিশ্লেষণ ও স্থানভেদে এর তারতম্যের কারণ ব্যাখ্যা করে, সেইসঙ্গে জলবায়ু প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের কার্যাবলির সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত তার ব্যাখ্যা করে। আবার E. T. Stringer-এর মতে Climatology is an applied science which is strictly metereological but its aims and results are geographical."
জলবায়ুবিদ্যায় জলবায়ুর উপাদানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এমনকি এই উপাদানগুলির বণ্টনের নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রকের কারণগুলিও এই বিদ্যার পর্যালোচনার অন্তর্গত।
জলবায়ুবিদ্যা চার ভাগে বিভক্ত।
জলবায়ুবিদ্যা (Climetology)
(a) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিদ্যা(physical climatology)
(b) আঞ্চলিক জলবায়ুবিদ্যা(regional climatology)
(c) ফলিত জলবায়ুবিদ্যা(applied climatology)
(d) বর্ণনামূলক জলবায়ুবিদ্যা(descriptive climatology)
(a) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিদ্যা (Physical Climatology) বলতে বোঝায় যে, যে বিদ্যায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানগুলি যথা সূর্যকিরণ, উয়তা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, কুয়াশা, দৃশ্যমানতা প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়ন করা হয় তাকে প্রাকৃতিক জলবায়ুবিদ্যা বলে।
(b) আঞ্চলিক জলবায়ুবিদ্যা (Regional Climatology) বলতে বোঝায় যে, যে বিদ্যায় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করা এবং বিস্তৃতি অনুসারে বিভক্ত করা।
(c) ফলিত জলবায়ুবিদ্যা (Applied Climatology) বলতে বোঝায় যে, যে বিদ্যায় বিভিন্ন জলবায়ুবিদদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানবজীবনে বিভিন্ন উন্নয়নে ও কল্যাণে প্রয়োগ করা হয় তাকে ফলিত জলবায়ুবিদ্যা বলে।
(d) বর্ণনামূলক জলবায়ুবিদ্যা (Descriptive Climatology) বলতে বোঝায় যে, জলবায়ুগত পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে বর্ণনামূলক জলবায়ুর প্রকৃতি নির্ধারণ করে তাদের বর্ণনা করে। জলবায়ুবিদ্যার কার্যাবলিকে দুটি দিক থেকে আলোচনা করা যায়। প্রথমত, এই বিদ্যার আবহাওয়াগত বিষয়গুলি নিম্নবায়ুমন্ডলের তাপশক্তি হ্রাস ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়াগুলি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেইসঙ্গে মৌলিক নীতিগুলি বিশ্বের যে কোনো স্থানের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করে, দ্বিতীয়ত, এই বিদ্যায় জলবায়ুগত বিষয়সমূহ বিশ্বের তাপীয় পরিবেশের প্রকৃতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, যেগুলি বায়ুর তাপমাত্রার মানের বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রকাশ করে।
জলবায়ুবিদ্যা বিশ্বের জলবায়ুর ধরন ও জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে। ক্রিফিল্ড স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, স্থান ও সময়ভেদে আবহবিদ্যার পর্যবেক্ষণগুলিকে জলবায়ুবিদ্যা সুবিস্তৃত করে। সেইসঙ্গে এই বিদ্যা দীর্ঘ সময়ের আবহগত অবস্থাকে বিবেচনা করে।
(a) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিদ্যা (Physical Climatology) বলতে বোঝায় যে, যে বিদ্যায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানগুলি যথা সূর্যকিরণ, উয়তা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, কুয়াশা, দৃশ্যমানতা প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়ন করা হয় তাকে প্রাকৃতিক জলবায়ুবিদ্যা বলে।
(b) আঞ্চলিক জলবায়ুবিদ্যা (Regional Climatology) বলতে বোঝায় যে, যে বিদ্যায় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করা এবং বিস্তৃতি অনুসারে বিভক্ত করা।
(c) ফলিত জলবায়ুবিদ্যা (Applied Climatology) বলতে বোঝায় যে, যে বিদ্যায় বিভিন্ন জলবায়ুবিদদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানবজীবনে বিভিন্ন উন্নয়নে ও কল্যাণে প্রয়োগ করা হয় তাকে ফলিত জলবায়ুবিদ্যা বলে।
(d) বর্ণনামূলক জলবায়ুবিদ্যা (Descriptive Climatology) বলতে বোঝায় যে, জলবায়ুগত পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে বর্ণনামূলক জলবায়ুর প্রকৃতি নির্ধারণ করে তাদের বর্ণনা করে। জলবায়ুবিদ্যার কার্যাবলিকে দুটি দিক থেকে আলোচনা করা যায়। প্রথমত, এই বিদ্যার আবহাওয়াগত বিষয়গুলি নিম্নবায়ুমন্ডলের তাপশক্তি হ্রাস ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়াগুলি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেইসঙ্গে মৌলিক নীতিগুলি বিশ্বের যে কোনো স্থানের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করে, দ্বিতীয়ত, এই বিদ্যায় জলবায়ুগত বিষয়সমূহ বিশ্বের তাপীয় পরিবেশের প্রকৃতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, যেগুলি বায়ুর তাপমাত্রার মানের বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রকাশ করে।
জলবায়ুবিদ্যা বিশ্বের জলবায়ুর ধরন ও জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে। ক্রিফিল্ড স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, স্থান ও সময়ভেদে আবহবিদ্যার পর্যবেক্ষণগুলিকে জলবায়ুবিদ্যা সুবিস্তৃত করে। সেইসঙ্গে এই বিদ্যা দীর্ঘ সময়ের আবহগত অবস্থাকে বিবেচনা করে।