welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস(Layering of the Atmosphere Based on Temperature Variation)

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস(Layering of the Atmosphere Based on Temperature Variation)


বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে উয়তার তারতম্য দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই ওপরের দিকে যাওয়া যায়; ততই বায়ুমণ্ডলের উয়তা ক্রমশ কমতে থাকে। তবে এই হ্রাস পাওয়ার মাত্রা সর্বত্র এক রকম হয় না। বিখ্যাত জলবায়ুবিদ পিটারসন (Pet-terson) বায়ুমণ্ডলকে কতকগুলো ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- (i) ট্রপোস্ফিয়ার, (ii) স্ট্রাটোস্ফিয়ার, (ii) ওজোনোস্ফিয়ার, (iv) আয়নোস্ফিয়ার এবং (v) এক্সোস্ফিয়ার। কিন্তু তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে উল্লম্বভাবে চটি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা- (1) ট্রপোস্ফিয়ার, (2) স্ট্রাটোস্ফিয়ার বা ওজনোস্ফিয়ার (3) মেসোস্ফিয়ার (4) থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার (5) এক্সোস্ফিয়ার এবং (6) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার। এদের মধ্যে প্রথম ওটি সমমণ্ডলের মধ্যে অন্তর্গত এবং শেষের ওটি বিষমমন্ডলের মধ্যে অন্তর্গত। এগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-

ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)

গ্রিক শব্দ 'Tropos'-এর অর্থ Turbulance বা পরিবর্তনশীল বা মিশ্রণ বা গোলযোগ। এবং Sphere-এর অর্থ অঞ্চল বা মন্ডল। এই স্তরটি নিম্ন বায়ুমন্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। Teisserence de Bost, সর্বপ্রথম ট্রপোস্ফিয়ার পদবাচ্যটি ব্যবহার করেন। যার আক্ষরিক অর্থ মিশ্রণ বলয় (region of mixing)। এই স্তরের উচ্চতা ও উপাদান স্থান থেকে স্থানান্তরে পরিবর্তিত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই স্তরের উচ্চতা 16-18 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে এই স্তরে উচ্চতা ৪-9 কিমি কিন্তু সমুদ্র সমতল থেকে গড় উচ্চতা 14 কিমি। বায়ুমন্ডলের এই স্তরে আবহাওয়ার উপাদানসমূহ এবং বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ সবচেয়ে বেশি মাত্রায় হয় বলে এই স্তরকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে। এই স্তরটি খুব ঘন প্রকৃতির। বায়ুমণ্ডলে সমস্ত গাসের প্রায় 75% এবং জলীয়বাষ্প সহ অতি ক্ষুদ্র কণা এই মন্ডলে অবস্থান করে। এই স্তরটি মিশ্রণ অঞ্চল হওয়ায় প্রবল গোলযোগ সহ পশ্চাদগামী বায়ুস্রোত লক্ষ করা যায়। মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, ঝড়, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশা, বিভিন্ন ধরনের অধঃক্ষেপণ সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই স্তরে দেখা যায়। এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে, একে স্বাভাবিক হ্রাস হার (normal lapse rate) বলে। যার পরিমাণ প্রতি কিমিতে 6.5 deg * C বা প্রতি মিটারে 0.6 deg * C বা 1000 ফুটে 3.6°F। মধ্য অক্ষাংশ যুক্ত স্থানে এই স্তরে ঊর্ধ্বসীমায় তাপমাত্রা - 57 deg * C থেকে 60 deg C। এই স্তরের উপরের দিকে কিমি পর বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বাড়তে থাকে। এই স্তরের নিম্নস্তরকে ওটি উপবিভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-(a) ঘর্ষণ স্তর (friction layer) যা ভূত্বক থেকে 1 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, (b) পৃষ্ঠ সীমানাস্তর (surface boundary layer) যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উচ্চতা পর্যন্ত (c) সমতলীয় স্তর (laminar layer) যা ভুত্বক থেকে কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

ট্রপোপজ (Tropopause): টুপোপজ একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ মিশ্রণ স্বপ্ন (where the mixing stop), আবহবিদ Sir Napier Shaw এই শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ট্রপোস্ফিয়ারের যে সীমারেখা পর্যন্ত তাপমাত্রা সমধর্মী হয়, সেই সীমারেখাটিকে ট্রপোপজ বলে। অর্থাৎ ট্রপোপজ হল ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা। এর গভীরতা 1.5 কিমি. এবং নিরক্ষীয় ও মেরুপ্রদেশে এর উচ্চতা যথাক্রমে 17 কিমি ও 109 কিমি। এই উচ্চতা ঋতুভেদে পার্থক্য ঘটে। জানুয়ারি মাসে নিরক্ষীয় অঞ্চলে উন্নতা - 70 deg * C কিন্তু মধ্য অক্ষাংশীয় (45 deg * N) অঞ্চলে প্রায় 13 কিমি উতচায় উচ্চতায় - 58 deg * C এবং 15 কিমি উচ্চতায় উদ্বুতা - 60 deg * C হয়। মধ্য অক্ষাংশে জেট প্রবাহের দ্বারা এই স্তরের উচ্চতার পার্থক্য ঘটায়। এই স্তর নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে ক্রমশ ঢালু থাকে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে ট্রপোপজ স্পষ্ট কিন্তু মেরুঅঞ্চলে অস্পষ্ট। এই অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা প্রায় 60 deg * C বেশির ভাগ মেঘে ও ঝড়ের ঊর্ধ্বসীমা হল ট্রপোপজ। এই স্তরের পর থেকে তাপমাত্রা খুব ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়।

স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)

লাতিন শব্দ Stratum-এর অর্থ স্তর। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের নিম্নসীমা হল ট্রপোপজ। অর্থাৎ ট্রপোপজ থেকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের স্তর শুরু হয়েছে। এই স্তরের উচ্চতা ট্রপোপজ থেকে প্রায় 30 কিমি অর্থাৎ সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় 50 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরের নিম্ন অংশে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উদ্বুতার পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ নিম্ন ভাগটি সমতাপ যুক্ত। স্বাভাবিকভাবে এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিশেষ অবস্থায় এর তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

এই স্তরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় তাপমাত্রা প্রায় ০°C। এই স্তরের বায়ু পাতলা ও স্বচ্ছ, শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির। বায়ুর ঘনত্ব এই স্তরে কম থাকার জন্য সামান্য তাপ শোষণের বায়ু উত্তপ্ত হয়। এই স্তরটির তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হল O_{3} গ্যাসের অবস্থান। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে বায়ু উত্তপ্ত হয়। এই স্তরে প্রায় 15-35 কিমির মধ্যে O_{3} গ্যাসের প্রাধান্য লক্ষ করা যায় বলে একে ওজোনোস্ফিয়ার বলে। ওজোনের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি 22 কিমিতে। এই মণ্ডলে বেশির ভাগ O_{3} সৃষ্টি হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে, কিন্তু বায়ু বাহিত হয়ে এই গ্যাস উভয় মেরু অঞ্চলে পৌঁছায়। মেরু অঞ্চলে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওজোনের অণু একটি স্বতন্ত্র অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বিভাজিত হয়। এইভাবে দুটি নতুন অক্সিজেন অণু সৃষ্টি হয়। ০, +002 2 + O_{2}*I গ্রীষ্মে মেরু পর্যন্ত এবং শীতে 50°-60° অক্ষাংশ পর্যন্ত উন্নতা বাড়তে থাকে এই স্তরে। অনেক সময় এই স্তরের ঊর্ধ্বে বায়ু প্রবাহহীন হওয়ায় মেঘ পৌঁছাতে পারে না বলে এখানে বৃষ্টিপাত হয় না। সেই সঙ্গে ঝড়, বিদ্যুৎ, বজ্রপাত সংঘটিত হয় না। তাই এই স্তরের নাম শাস্তমণ্ডল। শান্তমণ্ডল হওয়ায় তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন জেট বিমানগুলি চলাচল করতে পারে নিরাপদে। এই স্তর মূলত মেঘহীন তবুও মাঝে মাঝে এক বিশেষ ধরনের সিরাস মেঘ সৃষ্টি হয়। এই মেঘ দেখতে সাদা বর্ণের যা Mother of Pearl নামে পরিচিত। যা মূলত O_{3} গ্যাসের উপস্থিতির জন্য বলে মনে করা হয়। স্ট্রাটোস্ফিয়ার নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরুপ্রদেশীয় অঞ্চলে এর ঘনত্ব সর্বাধিক। অনেক সময় এই স্তরে 25 কিমি উচ্চতায় মেরু অঞ্চলে শীতকালে তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া (-৪০°℃ থেকে -40°C) ঘটনাকে উত্তাপের বিস্ফোরণ (explosive warming) বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে শব্দ তরঙ্গ এই স্তরে গিয়ে প্রতিফলিত হয়ে আবার ফিরে আসে, যা গবেষণার কাজে লাগে। এই জেট বিমান থেকে নির্গত ধোঁয়া পুচ্ছাকারে সাদা দাগের আকারে দেখা যায়।

স্ট্রাটোপজ (Stratopause): স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা অর্থাৎ যেখানে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ০°C-এ পৌঁছায় তাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে। এই স্ট্রাটোপজ থেকে মেসোস্ফিয়ারের শুরু। এর উপরে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে।

মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)

গ্রিক শব্দের Meso-এর অর্থ মধ্যম ভাগ। স্ট্যাটোপজের পর থেকে মেসোস্ফিয়ারের শুরু। এই স্তবুটি নিম্ন বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর এবং সমমণ্ডলের শেষ স্তর। এই স্তরটির বিস্তার 50 কিমি থেকে ৪০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত। এই স্তরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাপমাত্রা প্রায় -83°C থেকে কখনো -120°C পৌঁছায়। উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা 5°C হারে হ্রাস পাওয়ায় কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্পের অনুপ্রবেশ হওয়ায় মেঘের সঞ্চার ঘটে। মেরুপ্রদেশে গ্রীষ্মকালে নকটিলুসেন্ট (noc-tilucent) মেঘ দেখা যায়। বেশি উচ্চতায় উল্কাপাত থেকে ধূলিকণা ও ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর পরিচলন স্রোত মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে। এই স্তরে বায়ুর চাপ খুব কম, 1mb যা 50 কিমিতে 1mb এবং ৪০ কিমিতে 0.01 mb। শীতকালে নিম্ন মেসোস্ফিয়ারে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা অবস্থান করে। এই স্তরে উল্কাপিণ্ডগুলি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। পৃথিবী থেকে প্রেরিত কৃত্রিম উপগ্রহগুলিও মেসোস্ফিয়ার স্তরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এই স্তরে সামান্য পরিমাণ O_{3} লক্ষ করা যায়।

মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমাকে মেসোপজ বলে। এই স্তরটি সমমণ্ডলের শেষ সীমা যা সমমণ্ডল ও বিষমমণ্ডলের মিলন স্তর। এই স্তরের ওপরে তাপ পুনরায় বাড়তে থাকে।

থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)

Thermo কথার অর্থ উন্নতা এবং Sphere-এর অর্থ মন্ডল অর্থাৎ থার্মোস্ফিয়ারের অর্থ উদ্ভমণ্ডল। উদ্বুতা বেশি বলে স্তরটির নাম থার্মোস্ফিয়ার। বায়ুমন্ডলের সমমণ্ডলের উর্ধ্বে কিংবা মেসোস্ফিয়ারের পর অথবা বিষম মণ্ডলের শুরু হয় থার্মোস্ফিয়ার দিয়ে। বায়ুমণ্ডলে এই স্তরের বিস্তার প্রায় 480 বা 500 কিমি পর্যন্ত। এই স্তরের উপাদানের ঘনত্ব খুব কম, সেইসঙ্গে গ্যাসগুলি হালকা হওয়ায় থর্মোমিটার দিয়ে তাপ পরিমাপ করা যায় না। সেইসঙ্গে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে এবং 200 কিমি উচ্চতায় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে প্রায় 700°C হয়। এই স্তরে অক্সিজেন পরমাণুগুলি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করার ফলে উন্নতা বৃদ্ধি পায়। এই স্তরে উন্নতা বাড়তে বাড়তে প্রায় 350 কিমি উচ্চতায় প্রায় 1000℃ হয়। এই স্তরের উপরের অংশে উয়তার ঋতুভিত্তিক ও ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই স্তরের নীচের অংশে নাইট্রোজেন অণু (N₂), অক্সিজেন পরমাণু (০) এবং অক্সিজেন অণু (O₂) দ্বারা গঠিত। এখানে অতিবেগুনি রশ্মি, রঞ্জন রশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মি, এক্সরশ্মি প্রভৃতির সংঘাতে বায়ুকণা থেকে ইলেকট্রন খসে গিয়ে ধনাত্মক (+ve) ও ঋণাত্মক (-ve) দু'ধরনের আয়নের প্রাচুর্য লক্ষ করা যায়। তাই এই স্তরের নাম আয়নমণ্ডল। আয়ন সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি দিনের বেলায় সংঘটিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানী Kennely ও Heaveside সর্বপ্রথম লক্ষ করেন। এই স্তরে আয়নের আধিক্য থাকায় বেতার তরঙ্গগুলো (radio waves) এই স্তরের মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। আয়ন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন পরমাণু ও নাইট্রোজেন অণু বিভাজিত হয়ে ইলেকট্রনে (electron) পরিণত হয়। মেরুপ্রদেশের উপর এই ইলেকট্রনগুলি যখন 300 কিমি থেকে ৪০ কিমি উচ্চতায় নেমে আসে তখন সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে মৃদু আলোকযুক্ত এক প্রকার উজ্জ্বল রশ্মি বা মেরুজ্যোতির সৃষ্টি হয়। একে সুমেরুতে সুমেরু প্রভা (aurora borealis) এবং কুমেরুতে কুমেরু প্রভা (aurora austra-lis) বলে। ইলেকট্রনের ঘনত্বের ভিত্তিতে আয়নমণ্ডলকে ১টি উপস্তরে যথা-D, E, F, G ও স্তরে ভাগ করা যায়। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি ও এক্সরশ্মিকে বাধা দিয়ে পৃথিবীর জীবকুলকে রক্ষা করে।

এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)

বায়ুমণ্ডলের উচ্চতম স্তর দুটির মধ্যে এটি অন্যতম। থার্মোস্ফিয়ার থেকে প্রায় 750 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ু স্তর আছে তাকে এক্সোস্ফিয়ার বলে। আবার অনেকে এর বিস্তার 1000 কিমি পর্যন্ত চিহ্নিত করেন। অর্থাৎ এই স্তরের বিস্তার প্রায় 500-750 কিমি। এই স্তরে অণু ও পরমাণুর ঘনত্ব ক্রমশ কমে গিয়ে পাতলা হয়ে যায়। এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই স্তরে হিলিয়াম, হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়। এই স্তরে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে প্রায় 5568°C-এ পৌঁছায়। তবে এই তাপমাত্রা ভিন্ন ধরনের এবং তা কখনও অনুভূত হয় না। বায়ুমণ্ডলকে এখানে অনেকটা নীহারিকার মতো মনে হয়। বায়ুমণ্ডলের এই স্তর থেকে গ্যাসীয় অণু-পরমাণু মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায় বলে এই স্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বলে। নিরপেক্ষ হিলিয়াম, হাইড্রোজেন পরমাণু ও অক্সিজেন পরমাণু মহাশূন্যে চলে গেলে এখানে গ্যাসীয় অণু-পরমাণুর ঘাটতি দেখা যায়। বেতার তরঙ্গঙ্গও এই স্তরে প্রতিফলিত হয়।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Megnetosphere)

এক্সোস্ফিয়ারের ওপরে বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা কিংবা বিষম মণ্ডলের সর্বশেষ সীমাকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে। এই স্তর এক্সোস্ফিয়ারে এসে অসীম আন্তঃগ্রহের গ্যাসীয় মন্ডলের সাথে মিশেছে। এই স্তরের পরিসীমা প্রায় 10টি পৃথিবীর ব্যাসার্ধের সমান অর্থাৎ 6400 km × 10 = 64000 km। ভূপৃষ্ঠ থেকে 750-10000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত এই স্তর। এখানে আণবিক অবস্থাযুক্ত ইলেকট্রন ও প্রোটন আয়নগুলি বলয়াকারে অবস্থিত। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টন করে একটি প্রোটন ও ইলেকট্রনের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমা গোলক আকৃতি না হয়ে কিছুটা বুলেট আকৃতি (bullet shaped) বিশিষ্ট বলে মনে হয়। সূর্য থেকে সৌরবায়ু রূপে আগত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম প্রায় সমসংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটনসহ বাইরের দিকে ছিটকে গিয়ে এই স্তরে ধরা পড়ে যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে দুটি ঘন বলয়ে এগুলি অবস্থান করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে 3000-16000 কিমি উচ্চতায় থাকে এই দুটি বলয় যা Van Allen বিকিরণ নামে পরিচিত। এদের আকৃতি ও অবস্থান পৃথিবীর চুম্বক ক্ষুদ্র ও তার শক্তির সাথে সম্পর্কিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01