উপাদান অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস(Layering of the Atmosphere Based on Composition)
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layering of the Atmosphere)
বায়ুমণ্ডলের গঠন ও প্রকৃতি উচ্চতা ভেদে বিভিন্ন। বিভিন্ন প্রকার গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতির সমন্বয়ে বায়ুমণ্ডল গঠিত হলেও এর বিভিন্ন অংশে ঘনত্ব, চাপ, তাপ প্রভৃতির পার্থক্য রয়েছে। এই সুন্দর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উচ্চতা অনুসারে উপবৃত্তাকার কতকগুলি স্তর রয়েছে যারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য যুক্ত। প্রত্যেকটি স্তরে নির্দিষ্ট সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে আনুমানিকভাবে। তবুও এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রত্যেক স্তরের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলি স্বতন্ত্র এবং গুণাবলিসমূহের মধ্যে ঘনত্ব, চাপ, রাসায়নিক ও তড়িৎ পরিবহনগত বৈশিষ্ট্য, তাপমাত্রা প্রভৃতি অন্যতম।
বায়ুমণ্ডলের যে স্তর বিন্যাস করা হয় তা প্রধানত দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। এগুলি হল-
(A) উপাদান যা রাসায়নিক গঠন অনুসারে,
(B) উন্নতার তারতম্য অনুসারে। নীচে এগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।
(A) উপাদান বা রাসায়নিক গঠন অনুসারে (Layering According to Elements or Chemical Structure): উপাদান বা রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে দুটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয় যথা
সমমণ্ডল (Homosphere): 'Homo' শব্দের অর্থ সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং Sphere শব্দের অর্থ মন্ডল বা অঞ্চল, অর্থাৎ Homosphere-এর অর্থ সমমণ্ডল। ভূপৃষ্ঠ তথা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় 100 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অংশটিতে বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন এবং বিভিন্ন গ্যাসগুলির অনুপাত এবং বিভিন্ন উপাদানগুলি প্রায় একই থাকে। তাই বায়ুর এই স্তরটি হোমোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এই স্তরে উপাদান বলতে গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি। ডি. এস. লাল (D. 5. Lal)-এর মতে "The term 'Homosphere' means the zone of homogeneous composition" অর্থাৎ বলয় বা অঞ্চল সমসত্ব উপাদান দ্বারা গঠিত। এই স্তরে নাইট্রোজেন (N_{2}) এর পরিমাণ প্রায় 78.084% এবং ভর 75.4%, অক্সিজেন (O_{2}) = এর পরিমাণ 20.9876% এবং 23.1%, আর্গন (Ar)-এর ভর পরিমাণ 0.934% এবং ভর 1.3% এবং বাকি গ্যাসগুলি হল কার্বন ডাই-অক্সাইড (C*O_{2}) নিয়ন (Ne), হিলিয়াম (He), মিথেন (C*H_{2}) ক্রিপ্টন (Kr), হাইড্রোজেন (H_{2}) জেনন (x_{e}) এদের পরিমাণ 0.0056% এবং এদের ভর 0.2% এরা নিষ্ক্রিয় গ্যাস। সূর্যালোকের দ্বারা সমগ্র জলভাগ থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্প, মেঘ, কুয়াশা এবং শিশির রূপে সমমণ্ডলে অবস্থান করে। বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণা, কার্বনকণা ও লবণকণা লক্ষ করা যায় এই স্তরে। এই স্তরে বিভিন্ন উপাদানগুলির অনুপাত বিভিন্ন প্রকৃতির হয়। এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই স্তরে C*O_{2} এর পরিমাণ সামান্য হলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। আবার এই স্তরে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলচক্রকে প্রভাবিত করে। জলীয় বাষ্প ছাড়াও ধূলিকণা লবণ কণা এবং ধোঁয়ার কণা ঘনীভবন ও অধ্যক্ষেপণকে প্রভাবিত করা ছাড়াও বায়ুর তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে, জলীয় বাষ্প ও কণাগুলি বায়ুমণ্ডলে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের পরিমাণ ও সংখ্যা হ্রাস পায়.
বিষমমণ্ডল (Heterosphere): Hetero শব্দের অর্থ বিষম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং Sphere শব্দের অর্থ স্তর বা মন্ডল বা অঞ্চল। বায়ুমণ্ডলে এই অংশে বায়ুর উপাদানগুলির অনুপাত সমান থাকে না। তাই এই স্তরকে বিষমমণ্ডল বলে। সমমণ্ডলের পর অর্থাৎ 90 কিংবা 100 কিমি থেকে 10000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত এই স্তর। এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ বিভিন্ন থাকে। এই স্তরে গ্যাসগুলি আণবিক অবস্থায় রয়েছে। এই স্তরে উয়তা বাড়তে থাকে বলে একে উয়ুমণ্ডলও বলা হয়। এই স্তর চারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক স্তর নিয়ে গঠিত। এই চারটি ভিন্ন ভৌত স্তর হল- (a) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (88-200 কিমি), (b) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (200-1125 কিমি), (c) হিলিয়াম স্তর (1125-3540 কিমি) এবং (d) হাইড্রোজেন স্তর (3540-10000 কিমি)। এই স্তরে সবচেয়ে নীচে রয়েছে আণবিক নাইট্রোজেন স্তর কারণ নাইট্রোজেন সবচেয়ে ভারী এবং সবচেয়ে উপরে রয়েছে হাইড্রোজেন স্তর কারণ হাইড্রোজেন হালকা বলে যা বায়ুমণ্ডলের বহিঃসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পরেই মহাকাশের সীমানা শুরু।