welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বায়ুমণ্ডলের কণা(Air Particles)

বায়ুমণ্ডলের কণা(Air Particles)


বায়ুমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কণা (particles) যা মূলত নিম্ন বায়ুমণ্ডলে বিরাজ করে। এদেরকে অ-গ্যাসীয় (non-gaseous) উপাদানও বলে। এরা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ধর্ম অনুযায়ী এদেরকে প্রধান দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা: 1. আর্দ্রতাগ্রাহী কণা (Hygroscopic Particles) 2. অ-আর্দ্রতাগ্রাহী কণা (Non-Hygroscopic Particles)

আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প শোষণ করে বাতাসে ঘুরে বেড়ায় সে সমস্ত কণা তাদেরকে আর্দ্রতাগ্রাহী কণা (Hygroscopic Particles) বলে। সমুদ্র লবণ-কণা (sea salt particles) যা মূলত সমুদ্রের জলের বুদবুদ থেকে উৎপন্ন হয় এই জাতীয় কণার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) নামক রাসায়নিক উপাদানের এইসব কণার ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবে সমুদ্রের উপরের বায়ুমন্ডলের স্তরে বেশি থাকে। বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে এই কণাগুলি জলীয় বাষ্প দ্বারা আবন্দ হয় এবং মেঘের বিন্দুকণায় পরিণত হয়।

অপরপক্ষে, অ-আর্দ্রতাগ্রাহী কণাসমূহ জল শোষণ বা ধরে রাখতে পারে না। মৃত্তিকা কণা (soil particles), বিভিন্ন জৈব কণা (hydrocarbon), ধোঁয়ার সঙ্গো উত্থিত কণা (smoke particles) ইত্যাদি এই শ্রেণির। এই সমস্ত কণার উপাদান হল সাধারণত কোয়ার্টজ (quartz), অভ্র (mica), ক্যালসাইট (calcite), ফেল্ডসপার (feldspar) কিংবা সরল কার্বন কণা (carbon particles)। বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র এরা ঘুরে বেড়ায় এবং এদের ব্যাসার্ধের আকার 10µm-এর কম। বায়ুমণ্ডলের 10-15 কিমি উচ্চতার মধ্যে এদের বিস্তার, যদি ৪০ শতাংশ কণা এক কিমির মধ্যে থাকে। এদের উৎস কখনো কখনো প্রাকৃতিক, কখনো কখনো মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ। নীচের সারণিতে এদের প্রধান উৎসগুলি দেওয়া হল।

অ্যারোসল (Aerosols)

বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি ধূলিকণা, ধোঁয়া, কুয়াশা, উৎবায়ী ইত্যাদি পদার্থ যাদের বিস্তার 0.01 থেকে 100 মাইক্রনের মধ্যে। তারা যখন কঠিন বা তরল অবস্থায় কোনো কলয়ডীয় দ্রবণ তৈরি করে তাকে অ্যারোসল (aerosols) বলে। এই বস্তুকণাগুলিকে খালি চোখে দেখা যায় না। সমুদ্রজল তেকে প্রাপ্ত লবণ-কণা, উদ্ভিদের রেণু ও অসংখ্য জীবাণু বায়ুর মাধ্যমে উপরে উত্থিত হয়। তাছাড়া আগ্নেয় বিদারণ ও ধোঁয়া বাহিত হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর ধূলিকণা মেশে। মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, প্রাকৃতিক ঘটনাসমূহ, বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার মিশ্রণের জন্য দায়ী। এই আণুবীক্ষণিক ধূলিকণাগুলি জলাকর্ষক অণু হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অ্যারোসল বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা-

a. ধূলিকণা (Dust): জৈব এবং অজৈব পদার্থের ঘর্ষণ এবং চূর্ণীভবনে ধূলিকণা উৎপন্ন হয়। 5 মাইক্রন বা তার ছোটো ধূলিকণা বায়ুতে স্থায়ীভাবে ভেসে থাকে। কিন্তু তার চেয়ে বড়ো ধূলিকণা অভিকর্ষের টানে স্থলে বা জলে অধঃক্ষিপ্ত হয়। 

b. ধোঁয়া (Smoke): কয়লা বা অন্যান্য দাহ্য বস্তুর অসম্পূর্ণ দহনে উৎপন্ন অতি সূক্ষ্ম কণার বায়ু বিসরণের ধোঁয়া উৎপন্ন। যার ব্যাস 1 মাইক্রনের কম।

c. মিস্ট (Mist): তরল কণার লঘু বায়ু বিসরণে মিস্ট উৎপন্ন হয়। যার ব্যাস 40-500 মাইক্রন।

d. কুয়াশা (Fog): ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুতে জলকণার ব্যাস যখন 1-40 মাইক্রন হয় তখন তাকে কুয়াশা বলে। এই কুয়াশা তরল বা কঠিন কণার বায়ু বিসরণের ফলে সৃষ্ট হয়।

e. উদ্বায়ী পদার্থ (Fume): কোনো গলিত বস্তুর উদ্বায়ীকৃত গ্যাসের ঘনীভবনে উৎপন্ন কঠিন কণাকে উদ্বায়ী পদার্থ বা fume বলা হয়। এরা সাধারণত 1 মাইক্রনের কম হয়।

ধূলিকণার পরিমাণ প্রায় 24%, সমুদ্রের লবণ কণা প্রায় 12%, অগ্নিছাই কণা প্রায় 10%, এছাড়া রয়েছে সালফার ও নাইট্রোনে কণাসমূহ ইত্যাদি।

অ্যারোসল ও তার প্রভাব (Aerosol and Its Effects)

বায়ুস্থিত ভাসমান কণাসমূহের (কঠিন বা তরল) কলয়ডীয় রূপকে অনেক সময় বিজ্ঞানীরা অ্যারোসল বলেন। 'aero' শব্দের অর্থ হল বায়ু এবং 'sol' মানে কণা-অর্থাৎ বায়বীয় কণা। এগুলো খুব সূক্ষ্ম কণা হওয়ায় সাধারণত চোখে দেখা যায় না। শহরাঞ্চলে এদের পরিমাণ বেশি থাকে। কুয়াশা এবং মেঘ সৃষ্টিতে এদের ভূমিকা প্রধান। যথার্থ অ্যারোসলের সাইজ 100µm-এর কম।

বায়ুমণ্ডলে কণাসমূহের ভূমিকা (Role of Particles in Atmosphere)

বায়ুমন্ডলের কণা বা পার্টিকুলেট (কিংবা অ্যারোসল) সমূহের উপকারী এবং অপকারী দু'রকম প্রভাব রয়েছে।

A. প্রধান উপকারী প্রভাব (Positive Effects)

i.বায়ুমণ্ডলের 0.001-10µ ব্যাসের কণাসমূহ মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

ii .আপতিত সৌর রশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রায় সমতা রাখে।

iii .বৃষ্টি ও তুষারকণা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়।

iv বাতাসের SO₂-কে H₂SO₄ (সালফিউরিক অ্যাসিড)-এ পরিণত করে বায়ুদূষণ কমায়।

B. অপকারী বা ক্ষতিকর প্রভাব (Negetive Effects)

i. ধূলিকণার পরিমাণ বাড়লে বাতাসে স্বচ্ছতা বা দৃশ্যমানতা (visibility) কমে।

ii.বাতাসের ধূলিকণা কখনো কখনো আপতিত সৌরকিরণকে ছড়িয়ে কিংবা বিক্ষিপ্ত করে পৃথিবীর তাপমাত্র কমায়।

iii .ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন নিম্ন বায়ুমন্ডলে এদের পরিমাণ বাড়লে তা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে যায় এবং হাঁপানি ও অন্যান্য অসুখের সৃষ্টি করে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01