উপাদানের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layering of Atmosphere According to Variation of Component)
উপাদান অনুসারে স্তরবিন্যাস (Layering based on Component)
A. হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) বা সমমণ্ডল: ভূপৃষ্ঠ থেকে 80-100 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের গঠনকারী উপাদানগুলির অনুপাত মোটামুটি সমান বলে এই অংশ হোমোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। নাইট্রোজেন (N_{2}) অক্সিজেন (O_{2}) আর্গন (Ar) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড হল এই অংশের প্রধান গঠনকারী উপাদান এবং মোটামুটি সমসত্ব অনুপাতে থাকে।
B. হেটারোস্ফিয়ার (Heterosphere) বা বিষমমণ্ডল: ৪৪ কিমির ঊর্ধ্ব থেকে অবশিষ্ট বায়ুমণ্ডল অর্থাৎ 10000 কিমি পর্যন্ত অংশে গ্যাসীয় উপাদানগুলির অনুপাত সমান থাকে না। এই অংশকে বলা হয় হেটারোস্ফিয়ার। এই স্তরে বিভিন্ন উপাদান হোমোস্ফিয়ারের মতো এক সঙ্গে মিশ্র অবস্থায় থাকে না, বরং বিভিন্ন গ্যাস তাদের ভর অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে বা উচ্চতায় বিন্যস্ত থাকে। এই স্তরগুলি হল।
1. আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Molecular Nitrogen [N_{2}] Layer): ৪৪ কিমি থেকে 200 কিমি প্রধানত নাইট্রোজেন (N_{2}) গ্যাস দ্বারা গঠিত।
Ⅱ. পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Atomic Oxygen Layer): 200 কিমি থেকে 1125 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রধানত অক্সিজেন (O_{2}) গ্যাস দ্বারা গঠিত।
iii. হিলিয়াম স্তর (Helium Layer): 1125 কিমি থেকে 3540 কিমি প্রধানত হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত এই অংশ।
iv. হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Layer): 3540 কিমি থেকে 10000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রধানত হাইড্রোজেন গ্যাস দ্বারা গঠিত। (H_{2})
রাসায়নিক গঠনানুসারে স্তরবিন্যাস (Layering based on Chemical Composition)রাসায়নিক গঠনানুসারে বায়ুমণ্ডলকে দুটি স্তরে ভাগ করা যায়-
A. কেমোস্ফিয়ার (Chemosphere): বায়ুমন্ডলের যে অংশে সৌরকিরণের (Solar radiation) দ্বারা কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘাটে সেই অঞ্চল ক্রোমোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। ক্রোমোস্ফিয়ার ট্রপোস্ফিয়ার উদ্থে প্রায় 50 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশে উল্লেখযোগ্য বিক্রিয়াগুলি হল-
i. 50-400 mm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকে অতিবেগুনি রশ্মি (Ultra violet ray) বলে। বায়ুমণ্ডলের এই অংশে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অক্সিজেন অণু (O_{2}) থেকে অক্সিজেন পরমাণু (০) উৎপন্ন হয়। এখানে শোষিত ক্ষুদ্রতরঙ্গের অতিবেগুনি রশ্মি পরে ধীরে ধীরে ক্ষীণতর শক্তির দৃশ্য আলোকে পরিণত হয়। একে বায়ুমণ্ডলীয় আভা বা এয়ার গ্লো (air glow) বলে যা রাত্রিবেলায় দেখা যায়।
ii. এই অংশে বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেনের আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত হয়। 125-176 mm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতিবেগুনি রশ্মি অক্সিজেন অণুকে (O_{2}) ভেঙে পারমাণবিক অক্সিজেনে (0) পরিণত করে।
এই উৎপন্ন অক্সিজেন পরমাণু অক্সিজেন অণুর সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন উৎপন্ন করে।
O³ 200 - 330mmray O+O²+M O³ +M
এখানে M কোনো নিরপেক্ষ অনুঘটক বা শক্তি বিনিময়ে সহযোগিতা করে বিক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং বিমুক্ত বা উদ্বৃত্ত শক্তি উত্তাপে পরিণত করে স্ট্রাটোস্ফিয়ারকে উত্তপ্ত রাখে।
iii. উৎপন্ন ওজোন আবার 200-330 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের (UV-B ও UV-C) অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নিজে অক্সিজেন বিয়োজিত হয়ে যায়।
O²* (125 - 176nmray)/
(O³+ O -> 2O²)
= + O + O
ফলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের মোট পরিমাণ বা গাঢ়ত্ব মোটামুটি সিম্বর থাকে। অর্থাৎ অতিবেগুনির রশ্মির একাংশ যতটা ওজোন উৎপন্ন করে, অন্য আর এক অংশ ঠিক ততটাই বিয়োজন করে।
B.নন-কেমোস্ফিয়ার (Non-chemosphere): বায়ুমণ্ডলের বাকি অংশ যেখানে এই রাসায়নিক বিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই তাকে নন-কেমোস্ফিয়ার (Non-chemosphere) বলে।
আয়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে স্তরবিন্যাস (Based on lonisation)
আয়নিক গঠনের উপর ভিত্তি করে বায়ুমণ্ডলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
A. আয়নমণ্ডল (Ionosphere): থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশ 80-400 কিমির মধ্যের বায়ুমণ্ডল আয়নমণ্ডল (ionosphere) নামে পরিচিত। ইলেকট্রন বিবর্ধন দ্বারা এই অঞ্চলে মেরুজ্যোতি (aurora) দেখা যায়। বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে।
B. এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere): পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একেবারে বাইরের অংশ এক্সোস্ফিয়ার (exosphere) নামে পরিচিত। 400 কিমি থেকে 1000 কিমির মধ্যে এই অঞ্চল অবস্থিত। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণু নিয়ে গঠিত। এই স্তরের উদ্বুতা খুবই কম।
C. ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere): এক্সোস্ফিয়ারের বাইরে রয়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে ঘিরে এক চৌম্বকীয় ক্ষেত্র (magnetic field)। এই অংশকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (magnetosphere) বলে। এই চৌম্বকমণ্ডলে রয়েছে প্রচুর ইলেকট্রন ও প্রোটন। এখানে বায়ুর অস্তিত্ব প্রায় অনুভবই করা যায় না। পৃথিবীর যে অংশটি সূর্যের সম্মুখে থাকে সেই অংশে সৌরবাত্যা (solar wind) এসে লাগে বলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বেশি বিস্তৃত হতে পারে না, মাত্র 600 কিমি পর্যন্ত অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু বিপরীত দিকে চৌম্বকমণ্ডলটি অনেক উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই স্তরের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন চলছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা আরও অনেক নতুন তথ্য জানতে পারবো।