ট্রপোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য(Characteristics of Troposphere)
বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরের নাম ট্রপোস্ফিয়ার। ট্রপোস্ফিয়ার শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী Tesserence de Bost যার অর্থ মিশ্রিত অঞ্চল। এই স্তরে বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় উপাদানের সঙ্গে ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। তাছাড়া মেঘ, ঝড়, বৃষ্টিপাতের কারণও এই মন্ডল। এই কারণে একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে। এই মণ্ডলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল-
1. এই স্তরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে মেরু অঞ্চলে প্রায় ৪-৭ কিমি পর্যন্ত এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে (equator) প্রায় 16-18 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর মেরু অঞ্চল (polar region) চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল স্ফীত এবং তাই মেরু অঞ্চলে আকর্ষণ বল অধিক থাকে, সেই জন্য মেরু অঞ্চলে বায়ুকে টেনে রেখে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কিছুটা কম হয়। তাছাড়া ঋতু পরিবর্তনেও উচ্চতা সামান্য হেরফের হয়।
2. পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় পদার্থের প্রায় 75 শতাংশ এবং প্রকৃতপক্ষে সমস্ত জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা এই স্তরেই সীমাবদ্ধ। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে (বা অক্ষাংশে) এবং বিভিন্ন ঋতুতে এদের পরিমাণ কম বেশি হয়।
3. ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ (tropopause) বা স্তত্থস্তর বলে। অর্থাৎ ট্রপোপজ হল ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের সীমানা নির্দেশক। প্রকৃপক্ষে এটা কোনো সীমারেখা নয় বরং সামান্য ছোট্ট অঞ্চল zone যেখানে কোনো বায়ু চলাচল হয় না এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপের হ্রাস-বৃদ্ধিও হয় না। ট্রপোপজ শব্দের অর্থ হল যেখানে বায়ুর তাপীয় মিশ্রণ থেমে যায় (where mixing stops) |
4. বায়ুমণ্ডলের সমস্ত আবহাওয়া প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বগামী বায়ুস্রোত (vertical air motion) এই স্তরেই সীমাবদ্ধ। তাই মেঘের স্যার, ঝড়, বৃষ্টি এই স্তরেই দেখা যায়।
5. এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই ঊর্ধ্বে যাওয়া যায় বায়ুমণ্ডলের উদ্বুতা ততই কমতে থাকে। এই স্তরকে তাই বলা হয় ক্রমহ্রাসমান উন্নতা স্তর (layer of falling temperature)। এই হ্রাসের হারও সুনির্দিষ্ট। প্রতি 155 মিটার উচ্চতায় গড়ে 1℃ হারে বা প্রতি 1000 মিটারে গড়ে 6.5°C (বা 3.6°F/1000ft)) হারে বায়ুর উন্নতা কমে। এইভাবে নিরক্ষরেখার ঊর্ধ্বে ট্রপোপজে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪০°℃ এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় -60°C।
6. ট্রপোস্ফিয়ারের সর্বনিম্নের অংশ ঘর্ষণ স্তর (friction layer) নামে পরিচিত। এই অংশের সর্বোচ্চ উচ্চতা 1-1.5 কিমি। ভূমিরূপের সঙ্গে সংঘর্ষে বায়ুর গতিবেগ কমে যায় এবং গতিপথ পরিবর্তিত হয়। উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেঙ্গ বায়ুর গতিবেগও বাড়তে থাকে এবং এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমায় বায়ুর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।