রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ (Landforms Produced by Chemical Weathering)
কাস্ট ভূমিরূপ (Kurst Landform): সাধারণত চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে 'দ্রবণ' নামক এক ধরনের রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। চুনাপাথর গঠিত যুক্ত শিলায় অতিরিক্ত সংযুক্তি বা দারণের জন্য চুনাপাথরের সংযুক্তিতল বা স্তরায়ণ তল বরাবর আবহবিকারের ফলে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। এই দ্রবণ পদ্ধতিতে ডলোমাইট কিংবা চুনাপাথর অপসারিত হয়। এই অপসারণের হার কোথাও বেশি বা কম হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের উদ্ভব হয়; এই ভূমিরূপগুলি হল-সিঙ্কহোল, উভালা, ডোলাইন, পোলজি কার্স্ট গবাক্ষ, স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট প্রভৃতি। ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন এড্রিঅ্যাটিক সাগরের পূর্ব উপকূল বরাবর ইতালি থেকে যুগোস্লাভিয়া পর্যন্ত প্রায় 20,000 বর্গ কিমি দীর্ঘ অঞ্চলে চুনাপাথরের প্রায় সমস্ত ভূমিরূপগুলি কম-বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া মেক্সিকোর যুকাতন ও তাবাস্কো অঞ্চলে; অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঞ্চলে; যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও নিউ মেক্সিকো অঞ্চলে কার্স্ট ভূমিরূপ দেখতে পাওয়া যায়।
এইসমস্ত ভূমিরূপ কার্ট ভূমিরূপ অধ্যায়ে বিষদে আলোচিত হয়েছে।
GLOSSARY
1. কলয়েড (Colloid): বিজ্ঞানী টমাস গ্রাহাম (Thomas Graham) সর্বপ্রথম কোলোয়েডের জন্ম দেন। যদি কোনো দ্রাবকের মধ্যের একটি পদার্থ কণার আকারে দ্রবীভূত না হয়ে ইতস্তত ঘুরে বেড়ায় তখন সেই অস্বচ্ছ ও অসমসত্ত মিশ্রণকে কলয়েডীয় বস্তু বলা হয়। কণাগুলিকে বলা হয় কোলোহান্ডি। কলয়েডকে খালি চোখে দেখা যায় না। ধোঁয়া, কুয়াশা সাবানের ফেনা ইত্যাদি কলয়েডের উদাহরণ। জলের উপর দিলে তেলের কলয়েড জলের মধ্যে ভালো করে গুলে দিলে তেলের কলয়েড সৃষ্টি করে। কলয়েডের আকার এতটাই ছোটো নয় যে, দ্রাবকের আন্তঃআণবিক ফাঁকের মধ্যে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে যাবে, আবার এতটাই বড়ো নয় যে, নিজেদের মধ্যে আকর্ষণ করে ভারী হয়ে অধ্যক্ষীপ্ত হবে। কলয়েড থাকার মাঝামাঝি, তাই সে ভাসমান অবস্থায় দৃশ্যমান হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে।
2. চিলেসান (Chelation): জৈব অ্যাসিডের দ্বারা শিলার বিয়োজন প্রক্রিয়াকে চিলেসান বলে। নানা প্রকার কীটপতলা ও ব্যাকটেরিয়া পচে ও জৈব অ্যাসিড তৈরি হয়। এই জৈব অ্যাসিড অনেক সময় খনিজের ক্যাটায়ন বিনিময় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে আবার জৈব অ্যাসিডের সংযোগে pH-এর মান পরিবর্তিত হয়। ফলে চিলেসান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
3. ডিউরি কাস্ট (Duri Karst): ডিউরি কার্স্ট হল এক বিশেষ প্রক্রিয়া যা ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে কার্যকরী হয় এর ফলে ল্যাটেরাইট মাটি তৈরি হয়, ডিউরি কার্স্ট পদ্ধতিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খনিজের ধাতব উপাদানগুলি বিয়োজন হয়। ফলে আয়রণ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড তৈরি হয়। বাস্তবে ডিউরি কার্স্ট হল মাটির উপরিভাগের একটি পাতলা স্তর। এটি সাধারণত খনিজ বহনকারী জল দ্বারা দ্রবণীয় খনিজগুলির সঞ্চয়ে গঠিত হয়। মাটি বা শিলাতে বাষ্পীভবন বেশি হলে ডিউরি কার্স্ট সুন্দরভাবে গঠিত হয়।
4. শিলা বুনন (Rock Texture): শিলার বুনন বলেতে বোঝায় শিলা গঠনকারী উপাদান বা খনিজগুলির জ্যামিতিক বিন্যাস। এই বিন্যাস কণাগুলির আকার আকৃতি, উপাদান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। আগ্নেয় শিলার বুনন আবার শিলা গঠনের শীতলীকরণের হার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পাললিক শিলার বুনন পাললিক শিলার ছিদ্রতা, ব্যাপ্তিযোগাতা (permiability) ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। রূপান্তরিত শিলার বুনন তাপ-চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।
5. স্ফটিক (Crystal): স্ফটিক বা কেলাস হল কঠিন পদার্থের এক বিশেষ রূপ। সেখানে পদার্থের অণুগুলি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত থাকে। এক্ষেত্রে অণুগুলি সুনির্দিষ্ট ও সুষম জ্যামিতিক আকার বিশিষ্ট হয়। ছোটো ছোটো কেলাস দানাগুলি কখনো কখনো বড়ো আকারে কেলাস তৈরি করে। স্ফটিক বিভিন্ন আকারের হয়, যেমন-ঘনক, আয়তকার, অর্থোরম্বিক, রম্বোহিড্রাল, ট্রাইক্লিনিক, হেক্সাগোনাল ইত্যাদি।