welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূমিরূপ প্রক্রিয়া(Geomorphic Processes)

ভূমিরূপ প্রক্রিয়া(Geomorphic Processes)


সংজ্ঞা (Definition): 

ভূমিরূপ বিবর্তন ভূমিরূপবিদ্যা আলোচনার মূল উপাদান। কারণ, ভূমিরূপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ অর্থাৎ ভূমিরূপ অনবরত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। এই পরিবর্তনে শিলার গুণাগুণ, ভূগঠন, বয়স ইত্যাদি যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জলবায়ুর পরিবর্তন, পর্যায়ণ প্রক্রিয়া বা সময় ইত্যাদির গুরুত্বও অপরিসীম। যেসব প্রক্রিয়ায় ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটে, তাদের ভূমিরূপ প্রক্রিয়া (Geomorphic Processes) বলা হয়। ভূমিরূপ প্রক্রিয়াকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-পার্থিব প্রক্রিয়া ও মহাজাগতিক প্রক্রিয়া।

পার্থিব প্রক্রিয়া (Terrestrial Process)

যেসব ভূগঠনকারী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে, তাদের পার্থিব প্রক্রিয়া বলে। ভূমিরূপ সৃষ্টিতে পার্থিব ভূমিকাই প্রধান। একে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়; যথা-অন্তর্জাত বা ভূঅভ্যন্তরীণ শক্তি এবং বহির্জাত বা বাহ্যিক শক্তি।

1. অন্তর্জাত শক্তিসমূহ (Endogenetic Forces): যে সকল প্রক্রিয়ার মাধমে ভূঅভ্যন্তরে সৃষ্ট অন্তর্জাত শক্তিগুলি আকস্মিক বা ধীরভাবে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটায়, তাদের একত্রে অন্তর্জাত বা ভূঅভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া বলা হয়; যথা ধীর আলোড়ন বা আকস্মিক আলোড়ন (Slow or Sudden Movement)। এই শক্তিকে ভূগাঠনিক শক্তি বলে। এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর প্রধান প্রধান ভূমিরূপগুলি (পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি) গঠিত হয় আকস্মিক ভাবে কিংবা ধীরগতিতে।

ভূ-অভ্যন্তরীণ শক্তি দ্বারা ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গড়ে ওঠে বলে একে ভূ-গঠনকারী শক্তি বা টেকটেনিক বল (Tec-tonic Force) বলে। গ্রিক শব্দ 'Tekton'-এর বাংলা অর্থ গঠনকারী (Builder)। ভূ-অভ্যন্তরীণ শক্তি কী কারণে উৎপন্ন হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে। তবে আধুনিক বিজ্ঞানীমহল যে তাপীয় পরিচলন স্রোতের উল্লেখ করেন তা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। বিজ্ঞানী আর্থার হোমস (Arthur Holmes) তাপীয় পরিচলন স্রোত (Thermal Convec-tion Current) সম্পর্কে প্রথম আলোকপাত করে বলেন, ভূত্বকের নীচে নমনীয় মন্ডলে কিছু পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আছে। এইসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ স্বাভাবিক নিয়মে ভেঙে গিয়ে তাপ উৎপন্ন করে। এই তেজস্ক্রিয় পদার্থের বণ্টন মহাদেশ ও মহাসাগরের নীচে সর্বত্র সমান নয়। একই তলে অবস্থিত ভূ-অভ্যন্তরীয় স্তরে উত্তাপের বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ায় উর্ধ্বমুখী তাপীয় পরিচলন স্রোত উৎপন্ন হয়ে ভূ-পৃষ্ঠকে আলোড়িত করে। এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী শক্তিই হল ভূ-অভ্যন্তরীণ শক্তি। পরবর্তীকালে তাপীয় পরিচলন স্রোতের উদ্ভব বিষয়ে আরো বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উপস্থিত করেন।

2. বহির্জাত শক্তিসমূহ (Exogenetic Forces): পৃথিবীপৃষ্ঠের বাইরের শক্তিসমূহ (নদীরবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি) যে পদ্ধতিতে পৃথিবীপৃষ্ঠের ভূমিরূপের পরিবর্তন তথা নগ্নীভবন ঘটায়, সেগুলোই হল বহির্জাত পদ্ধতি। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার প্রধান ভূমিরূপের উপর নানা ধরনের ছোটো ভূমিরূপ তৈরি হয়।

ভূপৃষ্ঠের প্রারম্ভিক বা আদিম ভূমিরূপ যেসব শক্তি দ্বারা অনবরত পরিবর্তিত হয় তাদের বহিঃশক্তি বলে। সূর্যরশ্মি, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, তুষার, হিমবাহ, নদীপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল প্রভৃতি শক্তিগুলি চারটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়। এইগুলি হল বিচূর্ণীভবন (disintegration), ক্ষয়ীভবন (erosion), অপসারণ বা বহন (transportation), এবং অবক্ষেপণ (Deposition)। বিচূর্ণীভবন বলতে শিলাস্তর ফেটে, ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে পরিণত হওয়া বোঝায়। বিচূর্ণীভূত শিলাসমূহের অপসারিত হওয়াকে বলে ক্ষয়ীভবন। ক্ষয়ীভূত পদার্থসমূহ অপসারিত হওয়ায় ভূমির উচ্চতা হ্রাস পাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অবরোহণ প্রক্রিয়া (degradartional process)। পদার্থসমূহ অপসারিত হলে নীচের শিলাস্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, একে নগ্নীভবন (denudation) বলে। অবক্ষেপণের ফলে নিচুস্থান ভরাট হয়ে উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, একে বলে আরোহণ প্রক্রিয়া (aggradational process)। এইভাবে বহিঃশক্তির প্রভাবে বিভিন্ন প্রারম্ভিক ভূমিরূপের উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে একটি সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়। এই কারণে একে ক্রমায়ন শক্তি (force of gradation) বলে।

মহাজাগতিক শক্তিসমূহ (Extra-terrestrial Forces)পৃথিবীর বাইরের কোনো ঘটনা বা প্রক্রিয়া যখন পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো ভূমিরূপের জন্য দায়ী, তখন তা মহাজাগতিক প্রক্রিয়া নামে পরিচিত। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা প্রদেশের মেটিয়ার ক্রেটার (Meteor Crater) নামে সুবিশাল গর্তটি উল্কাপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01