welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূ-বিপর্যয় আলোড়ন(Diastrophic Movement)

ভূ-বিপর্যয় আলোড়ন(Diastrophic Movement)


সংজ্ঞা (Definition): যেসব আলোড়নের জন্য কঠিন ভূত্বকের ধীর কিংবা দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং ফলস্বরূপ আপেক্ষিক স্থানান্তর ঘটে, তাদের ভূবিপর্যয় আলোড়ন বলে। পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি প্রথম শ্রেণির ভূমিরূপ ভূবিপর্যয় আলোড়নে সৃষ্ট হয়। এ ছাড়া শিলাস্তরে ভাঁজ, ফাটল প্রভৃতিও ভূবিপর্যয়ে সৃষ্ট হয়। ভু-বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট এই আলোড়নকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-ধীর আলোড়ন এবং আকস্মিক আলোড়ন।

1. ধীর আলোড়ন (Slow Movement): যেসব ভূ-আলোড়ন ধীরে ধীরে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটায়, তাদের ধীর আলোড়ন বলে। ধীর প্রক্রিয়ায় ঘটা ভূ-আলোড়নে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি বা অন্যান্য পরিবর্তন এত ধীরে ধীরে ঘটে যার ফলশ্রুতি বিরাট ও ব্যাপক হলেও লক্ষণীয় হয়ে উঠতে সুদীর্ঘ সময় প্রয়োজন। ভূ-আন্দোলনের ফলে অগভীর টেথিস (Tethys) সাগরে সঞ্চিত পলিস্তরে চাপ সৃষ্টি হয়ে হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি ঘটতে সময় লেগেছে কয়েক কোটি বছর। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে এই উত্থান পর্ব এখনও চলছে।

এই আলোড়নকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (1) ভূগাঠনিক আলোড়ন, (ii) সমস্থিতিক আলোড়ন এবং (iii) সমুদ্রতলের আলোড়ন।

(1) ভূগাঠনিক আলোড়ন (Tectonic Movement): যে আলোড়ন ভূত্বকের আপেক্ষিক স্থানান্তর ঘটায় এবং বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে তাকে ভূগাঠনিক আলোড়ন বা টেকটনিক মুভমেন্ট বলে। গ্রিক শব্দ 'টেকটন' (Tecton) কথার অর্থ হল-নির্মাণ বা গঠন। অর্থাৎ এই আলোড়ন ভূত্বকে সরাসরি বিভিন্ন গাঠনিক ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। এই ভূগাঠনিক আলোড়ন দু-প্রকারের হয়, যথা-মহিভাবক ভুআলোড়ন ও গিরিজনি ভূআলোড়ন।

A. মহিভাবক ভূআলোড়ন (Eperogenic Movement): গ্রিক শব্দ 'Epeiros' কথাটির অর্থ-মহাদেশ এবং 'Gen-eses' কথাটির অর্থ হল-সৃষ্টি। যে আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে উল্লম্বভাবে ক্রিয়া করে ভূত্বকের উত্থান বা অবনমন ঘটায়, তাকে মহিভাবক ভূআলোড়ন বলে। অর্থাৎ মহিভাবক আলোড়ন হল একপ্রকার ধীর অন্তর্জাত প্রক্রিয়া যা মহাদেশ সৃষ্টি করে। এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে লম্বভাবে (vertically) কাজ করে। এর ফলে কোনো অঞ্চল অবনত হয়ে হ্রদ, সাগর, উপসাগর, গ্রস্ত উপত্যকায় পরিণত হয়। আবার কোনো অঞ্চল উন্নত হয়ে হোর্স্ট, স্তূপপর্বত, মালভূমি প্রভৃতি গড়ে ওঠে। মহাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে কার্যকরী হয় বলে একে মহীভাবক আলোড়ন বলে। তবে স্থানীয় ভাবেও এর প্রভাব দেখা যায়। উত্তর আমেরিকার হাডসন উপসাগর, জার্মানির রাইন নদীর গ্রস্ত উপত্যকা ভূপৃষ্ঠ অবনমনের ফলে উৎপন্ন হয়েছে। উপকূল সংলগ্ন সমুদ্রে নিমজ্জিত ভূমি উন্নত হয়ে স্থলভূমিতে পরিণত হয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়া উপদ্বীপের কোনো কোনো অংশ মহীভাবক আলোড়নের প্রভাবে উন্নত হয়েছে। মহিভাবক ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে মালভূমি, ভৃগুতট, চ্যুতি, স্তূপ, পর্বত, গ্রস্ত উপত্যকা ইত্যাদি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

B. গিরিজনি ভূআলোড়ন (Orogenic Movement): গ্রিক শব্দ 'Oros' কথার অর্থ-পর্বত ও 'Genesis' কথাটির অর্থ-সৃষ্টি। এর থেকে গিরিজনি কথাটির উদ্ভব হয়েছে। যে আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে কাজ করে অর্থাৎ ভূত্বকের কোথাও সংনমন-এর ফলে সংকোচন অথবা কোথাও টান-এর ফলে প্রসারণ ঘটিয়ে ভাঁজ-সমৃদ্ধ ভঙ্গিল পর্বত গঠন করে, তাকে গিরিজনি আলোড়ন বলে। গিরিজনি আলোড়ন হল একপ্রকার ধীর অন্তর্জাত প্রক্রিয়া।

গিরিজনি আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে কাজ করে। একই কেন্দ্রমুখী পার্শ্বচাপের ফলে শিলাস্তরে সংনমন (compres-sion) ঘটলে সংকোচন (contraction) হয়। আবার বিপরীতমুখী অনুভূমিক আলোড়নের ফলে টান (tension) সৃষ্টি হলে শিলাস্তরে প্রসারণ (expansion) ঘটে। সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত পলিস্তরে অনুভূমিক চাপ সৃষ্টি হয়ে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়, আবার শিলাস্তরে টান জাতীয় বলের দ্বারা চ্যুতি সৃষ্টি হয়ে স্তূপ পর্বতের উৎপত্তি ঘটে থাকে। পর্বত সৃষ্টিকারী আলোড়ন হওয়ায় একে গিরিজনি আলোড়ন বলে।

(ii) সমস্থিতিক আলোড়ন (Isostatic Movement): ভূঅভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তরগলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য যে ভূ-আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তাকে সমস্থিতিক ভূ-আলোড়ন বলে। ভূত্বকের বিভিন্ন স্তরগুলির মধ্যে একটা পারস্পরিক সামঞ্জস্য আছে। কিন্তু ভূঅভ্যন্তরে বিভিন্ন শক্তি এবং বাহ্যিক বিভিন্ন শক্তির কাজের ফলে ভূত্বকের স্তরগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিনষ্ট হয়।

(iii) সমুদ্রতলের আলোড়ন (Eustatic Movement): যে শক্তি বা ভু-আলোড়নের প্রভাবে উপকূলভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তলের সামঞ্জস্যবিধান করা হয়, তাকে সমুদ্রতলের আলোড়ন বলে।

2. আকস্মিক আলোড়ন (Sudden Movement): যেসব ভূআলোড়ন হঠাৎ বা আকস্মিকভাবে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন করে, তাকে আকস্মিক আলোড়ন বলে। যথা- (i) 'অগ্ন্যুৎপাত' এবং (ii) 'ভূমিকম্প'। আকস্মিক ভূ-আলোড়ন হঠাৎ ঘটে এবং এর ফল তাৎক্ষণিক ভাবে বোঝা যায়। এই প্রক্রিয়ার প্রভাবে ভুপৃষ্ঠের উপরিভাগে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুদগম এই জাতীয় আক্ষরিক প্রক্রিয়া। তবে আকস্মিক প্রক্রিয়াতে ভূত্বকে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ত্রুটি ঘুরতে পারে। কোন স্থান উন্নত অবনত অথবা হেলে অবস্থান করতে পারে। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01